অপরাজিত ৮
অপরাজিত ৮
নিবেদনে সম্পাদক
অপরাজিত পত্রিকা যে ভাবে নবীন প্রবীণ মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে , তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ঈশ্বর আর আপনাদের । আমি শুধু তার ইচ্ছের এক ক্ষুদ্র দাস ।
অষ্টম গর্ভের এই সন্তান আপনাদের ভালো লাগবে এটুকু আশা রাখি । কারন এর প্রতিটি লেখায় পরিশ্রম আছে । আপনারা যারা আজ এই সংখ্যা পড়ছেন , তারা একটু মন দিয়ে পড়ুন , সমালোচনা করুন কারন এর প্রতিটা লেখায় ওদের ঘাম ঝরানো খাটনি আমি দেখেছি । আমি দেখেছি ওরা এই সুযোগ পেতে কিভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে । ওদের ভবিষ্যৎ নথি আজকের এই অপরাজিত অনলাইন ৮ ।
পাশাপাশি সিনিয়র লেখক ও লেখিকাদের কাছে বলবো অপরাজিত ৯ , ১০ বা ভবিষ্যতের যে কোন সংখ্যায় লেখা পাঠান । দেখুন আপনাদের লেখা সবাই লুফে নেবে । কিন্তু এই পত্রিকায় লিখলে তরুণরা উৎসাহ পাবে । তাদের জন্য একটি লেখা প্রতি সপ্তাহে প্রতি বড় লেখকের থেকে কি পেতে পারি না !
ভবিষ্যত বাংলা সাহিত্যের দিকে নজর রেখে আজ নত মস্তক আপনাদের চরণে আমার । অপরাজিত অনলাইনে আপনার সেরা লেখা প্রতি সপ্তাহে পাবো , আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য পাবো এই স্বপ্ন নিয়ে আজ শেষ করলাম ।
( এখন শুধু বাংলা নয় , ইংরেজি লেখাও ছাপা হবে অপরাজিত অনলাইন পত্রিকায় ) ...
সম্পাদকীয়
মনে পড়ে, ছোটবেলায় স্কুল জীবনে আমার কয়েকজন সহপাঠীকে দেখতাম প্রায় প্রতি বছরই, বই-লেখাপড়া-ক্লাসের ফাঁকে কয়েকগাছা রঙীন রেশমী সুতোয় পরম যত্নে হাত ও আঙুলের শৈল্পিক নৈপুণ্যে গড়ে তুলত কিছু সুতোর মোটিভ। সুদৃশ্য বস্তুটির মাঝখানে থাকত কৃত্রিম ফুল, কিছু পুঁতি আর অনেকখানি ভালবাসা। ধীরে ধীরে সেগুলো এক একটি গয়নার রূপ নিত। রঙীন সেই গয়নাকৃতির পিঠের দিকে থাকত সার্টিনের সরু ফিতে। এক নিবিড় উৎসাহ ও পরম মমত্ববোধে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম আমি। তৈরী শেষ হলে একটি নির্দিষ্ট দিনে সহপাঠীরা আমাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন এক অজানিত আগ্রহে পেলব অলঙ্কারটি বেঁধে দিত হাতে । আর সেটাই ছিল আমাদের স্কুল জীবনে এক রেশমি উৎসব। রাখি বন্ধন উৎসব।
আমার কাছে রাখি বন্ধনের সংজ্ঞা এভাবেই এসেছে। পরিবারে রাখিবন্ধন বা তাকে ঘিরে কোন উৎসব আমি দেখিনি।
বাবার কাছ থেকেই আমার পাওয়া প্রথম, রাখি বন্ধনের প্রকৃত ও প্রসারিত আভাস---
জেনেছিলাম ,পরাধীন ভারতবর্ষে ধর্মীয় বিভেদ যখন মনুষ্যত্বকে ছাপিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধকে দলিত করে বাংলাভাগের নেশায় মেতে উঠেছিল সেই সময় রাখি বন্ধন সবথেকে বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল। সেই প্রাসঙ্গিকতা রয়ে গেছে আজও।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় রাখি বন্ধনকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু। বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিনটাকে মিলন দিবস হিসেবে উদযাপন করেছিলেন। বাংলায় হিন্দু-মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতাই ছিল রাখিবন্ধনের মূল বিষয়।
সেই দিনটা এমন , বলাই বাহুল্য সেটা রাখিপূর্ণিমার দিন ছিল না।
অসংখ্য মানুষ ও পথ মিশে যাচ্ছিল মিছিলে, মিছিল মিশে চলেছিল এ বাংলার অন্তস্থলে । গলায় ছিল রবি ঠাকুরের লেখা গান, ' বাংলার মাটি , বাংলার জল' । এই সমাগমে কারা ছিলেন না---
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর , দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , আর এই ভিরে ছিলেন পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ছাত্র, গৃহবধূ সমাজের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সে ছিল এক উত্তাল গণ আন্দোলন যা বঙ্গভঙ্গ রোধে কার্যকর হয়েছিল রাখি বন্ধনের প্রতীকী অস্ত্রের মাধ্যমে।
তবে তার সাথে শ্রাবণ মাসে রাখি বন্ধন কিংবা রাখিপূর্ণিমা, তার কোন যোগসূত্র নেই।
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় রাখি বন্ধন উৎসবে ভাই বোনেদের এক স্বর্গীয় সম্পর্ককে উদযাপন করে। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় হাতে রাখি বেঁধে দেওয়া --- এ যেন স্নেহের বন্ধনকে এক উৎসারিত উৎসবের রূপ দেওয়া।
পুরাণ থকে ইতিহাস রাখি বন্ধনের নানান গল্প বলে
--- তার স্বল্প-বিস্তর কাহিনী আমাদের সকলেরই জানা তবুও,
সার্বিকভাবে রাখি বন্ধন' কোথাও ভাই বোনের রক্ষা বন্ধন , অঙ্গীকার......
কোথাও বা মানব সমাজে এক মৈত্রীর বার্তা বাহক, সেখানে তার মাহাত্ম্য রঙীন সুতোয় বাঁধা সহস্র এলোমেলো মন, এক ধর্মের হাত আর এক ধর্মের হাতে হাত রাখার প্রচেষ্টা । যে প্রচেষ্টা একটা দেশকে একতার সুতোয় বেঁধে রেখে উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ করতে পারে : আমাদের দেশবাসী তা জানে।
প্রতিদিনের যাপন যদি হয় একঘেয়েমী তবে তার উল্টো পিঠে থাকে কিছু রঙীন আলো, সেই রামধনুর ছটা, যা উৎসবেরই এক অন্য মানে।রাখি বন্ধন আমার কাছে এক উৎসবের অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। এ ব্যাপারে কিঞ্চিত আমি অনুসন্ধিৎসু , আমাদের মনের নীচে যে পলি জমে আছে, তা সরিয়ে বহতার ভাষা এনে দিতে পারবে কি এই , 'রাখি' ?
পারবে, চারপাশে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারকে উৎসবের আলো দিয়ে হারিয়ে দিতে ?
হয়ত আমি বা আমরা আশাবাদী--- আসবে কোন সেদিনের সেদিন......
বহমান সময়ে, দামী রাখির নীচে ঢাকা পড়ে থাকা রঙীন দু-গাছি সুতোর বন্ধনের ধারণা, হোক্ সে চিরন্তন, যা একান্ত সৌহার্দ্যের।
পবিত্র ভাই বোনের স্নেহের বন্ধনের মতো আমাদের দেশের মাটি , দেশের জল , দেশের মানুষ এক হোক্ , এক হোক্,
হে ভগবান।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মৌসুমী মুখোপাধ্যায়
কভার কাহিনী
নদী যেমন বহমান তেমন আমাদের জীবনধারা, ধরাধামে এলে আর কি পালিয়ে বাঁচা যায়?? ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি আত্মহত্যা নাকি মহাপাপ! মানুষ বেঁচে থেকেই এমন মরণ যন্ত্রণা ভোগ করে যে সে ঈশ্বরের দেওয়া সবচেয়ে দামী উপহার এই নিশ্বাসকে শেষ করে দেয়, সে হয়ত সাময়িক মুক্তি পায়॥ আত্মা কি আর শান্তি পেল? আমার 11-12 এ দর্শন ছিল আমি পড়েছি আর উপলব্ধিও করেছি বটে যে আত্মার মৃত্যু নেই তা যে ঈশ্বরের অংশ! তাই কখনো কখনো যা কিছু ঘটে জীবনে তাকে চলতে দিতে হয়, সময়ের মতো শক্তশালী আর বোধহয় কেও নেই তাই সময় সব পারে, সবার প্রশ্নের উত্তর সে ই দিতে পারে যথাযথ প্রমাণ সহকারে॥তাই তার অপেক্ষা করতে শিখতে হবে আমাদের। আর হল ধৈর্য, এ এক মহান শক্তি যা মানুষের জীবনে ফুল ফোটাতে পারে, ধৈর্য নিয়ে আমাদের বাধার সম্মুখীন হতে হবে এবং অনেককিছু সহ্য করতে হবে,কোনো সফল মানুষের সফলতার দুটো স্তম্ভ হলো এই ধৈর্য আর সহ্যশক্তি,
"বিপদি ধৈর্য্যমথাভ্যুদয়ে ক্ষমা
সদসি বাকপটুতা যুধি বিক্রমঃ।
যশসি চাভিরুচি ব্যসনং শ্রুতৌ
প্রকৃতিসিদ্ধমিদং মহাত্মনাম্ । "
অনেক অনেক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের মধ্যেও এই গুন যথেষ্ট দুর্লভ বলেই বোধ হয় আমার এতদিনের জীবনে! আমি এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে করি আমরা প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো সমস্যার মধ্যে রয়েছি আর এর থেকে বেরোনো যায় একটাই উপায়ে তা হল নিজেকে সবরকম পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে শক্ত মনে হাসিমুখে তাকে কাটিয়ে উঠতে পারি এটাই আমাদের জীবন কাটানোর একমাত্র উপায়... পরিস্থিতি অনেকরকম হবেই কিন্তু তার ভার যেন আমাদের আনন্দকে ছাপিয়ে না যায় সেটাও আমাদের বড় দায়িত্ব কারণ আমরা অন্য সবাইকে ভালো রাখতে চাই আর সেকাজে পিছিয়ে পরি আর ক্লান্ত হলে বলি সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভালো রাখতে পারিনা অথবা আমার খেয়াল রাখার কেও নেই বলে ইন্সেকিউর ফিল করি, অন্যকে দোষারোপ করি আর কষ্ট পাই। কেন এমন হবে? নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব কি নিজেরও নয়? অনেকে মনে করি নিজের কথা ভাবা স্বার্থপরতা, কিন্তু কখনো এটা ভেবেছ যে নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখবে কিভাবে? তোমার কাছে যদি টাকা না থাকে তবে অন্যকে দেবে কেমন করে? ঠিক মনের বিষয়টাও তেমনই... নিজের কাছে সুখ, আনন্দ না থাকলে কেমন করে অন্যকে তা দিতে পারবে? আজ থেকে নিজেকে ভালোবাসো, নিজের জন্য কিছুটা সময় দাও দেখবে অন্যদের আরো বেশী ভালোবাসতে পারবে। দুনিয়া আর স্বার্থপর বলে মনে হবেনা।জীবন চলে যাবে নদীর মতো, থামবে না কারোর জন্য পথে, শুধু শেখার পালা তোমার,জিতলে জিতবে আর হারলে শিখবে...
"প্রবিচার্য্যোত্তরংদেয়ং সহসা ন বদেৎ ক্বচিৎ।
শত্রোরপি গুণা গ্রাহ্যা দোষাস্তাজ্যা গুরোরপি" ।
তাই বাইরের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়ার চেষ্টা করে নিজেকে কষ্ট দিও না, বরং খানিক সময় নিজের মতো মূল্যবান মানুষের সাথে কাটাও দেখবে ঈশ্বরের দেখা মিললেও মিলতে পারে!
বর্ণালী
বিশেষ আলোচনা
সত্যজিৎ রায়(2 রা মে 1921-23 এপ্রিল,1992),শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে একজন দিকপাল।শিল্প ও সাহিত্যের আঁতুরঘর তথা কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করলেও, তাঁর শিল্পসত্ত্বা বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের শিল্পজগতে এনে দিয়েছিল ভিন্নতার স্বাদ।একাধারে তিনি ছিলেন চিত্র নাট্যকার,শিল্প নির্দেশক,সঙ্গীত পরিচালক,লেখক এবং বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক। যিনি বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা জগতের একটি নতুন দিকের উন্মোচন করেছিলেন। সত্যজিৎ এর কর্মজীবন একজন চিত্রকর হিসাবে শুরু হলেও পরবর্তী কালে তৎকালীন সময়ের সিনেমা জগতের সবচেয়ে সফল ব্যাক্তিত্ব ছিলেন সেটা বলার উপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তাঁর চলচ্চিত্র জগতে পদার্পনের নেপথ্যে দুটি ঘটনা খুবই উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে কলকাতায় সাক্ষাৎ হওয়া এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তাঁর লন্ডন সফর। এই ভ্রমন কালে বিখ্যাত পরিচালক ভিটরীয় ডি সিকার এর নব্য বাস্তববাদী চলচ্চিত্র " লাদ্রি দি বিচিক্লিত্তে " যার বাংলা অনুবাদ "বাই সাইকেল চোর" এর দৃশ্যপট তাঁকে ভীষণ পরিমানে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলায় যায়। আলোচ্য প্রবন্ধটিতে চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় ও বহু পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা "পথের পাঁচালী" শুটিং সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। সত্যজিৎ রায় এর সিনেমার বিশেষত্ব হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা,যা তিনি তাঁর শিল্পসত্ত্বার দ্বারা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম।সত্যজিৎ রায়ের মতে - " A film is the highest form of commercial art." তাঁর লেখা প্রবন্ধ " A Long Time on the Road" থেকে আমরা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস "পথের পাঁচালী" অবলম্বনে "পথের পাঁচালী" এর শুটিং সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য জানতে পারি। প্রথমেই বলা যায়, "পথের পাঁচালী" উপন্যাস হিসাবে প্রকাশ করতে হতে বিভূতিভূষণ কে যতটা সমস্যার মধ্যে পরতে হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীণ হতে হয়েছিল সত্যজিৎ কে। মোট আটজনকে নিয়ে তিনি কাজ শুরু করলেও আর্ট ডিরেক্টর বংশী ছাড়া আর কারোর সিনেমার ছবি তোলার বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ও সঙ্গীত শিল্পী রবি শঙ্কর জী, ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র, মূল অভিনেতা ও অভিনেত্রী সবাই অনভিজ্ঞ ছিলেন। শব্দ রেকর্ড করার সেরকম অত্যাধুনিক কোনো যন্ত্র ছিলনা। স্থান,চরিত্র ও নানান খুটিনাটি বিষয় সত্যজিৎ রায়কে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। সত্যজিৎ 1952 সালে সিনেমার শুটিং শুরু করলেও তা শেষ করতে প্রায় 3 বছর সময় লাগে, যার নেপথ্যে ছিল অর্থাভাব, যা সব সমস্যার উর্দ্ধে ছিল। সিনেমার কিছু ছোটখাট দৃশ্য তৈরী করে যদি নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় মেলে,যদি কোনো টাকা ওয়ালা লোক পাওয়া যায়,এসব মাথায় রেখে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে তিনি শুটিং শুরু করেছিলেন। প্রায় দের বছর কোনো কাজ হয়নি, তারপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই সিনেমার শুটিং পূর্ণ হয় ও 1955 সালে এটি রিলিজ হয় আর বাকিটা ইতিহাস! ভারতে "পথের পাঁচালী" নিয়ে মানুষ খুবই আগ্রহী ছিলেন। দেশ বিদেশ জুড়ে সমালোচকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল এই "পথের পাঁচালী"। বলা যায় তখন কার সময়ে এটি ছিল বহুল চর্চিত একটি সিনেমা। The Times of India পত্রিকা এই বিষয়ে লিখেছিল- " It is absurd to compare it with any other Indian Cinema...Pather Panchali is pure Cinema." বসলে কাউথার যিনি ছিলেন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস্ এর লেখক ও বিখ্যাত সিনেমা বিষয়ক সমালোচক তিনি এই সিনেমার বিষয়ে মতামত দিয়েছিলেন। যাইহোক সত্যজিৎ রায়ের 31 টি সিনেমার মধ্যে তাঁর সর্বপ্রথম ও বিখ্যাত সিনেমা ছিল এটি, যার তাঁকে চলচ্চিত্র জগতে সুনাম,খ্যাতি অর্জনে একমাত্র সহায়ক ছিল বলা যায়।
~ শ্রী অংশু
দীর্ঘ কবিতা
একমাত্র তুমি আমায় দিতে পারো
---- বিকাশ দাস
একমাত্র তুমি আমায় দিতে পারো মুক্তি
অথচ তোমার কথার ভঙ্গিমায় আমার অফুরান উৎসাহ
অঘোর অভিব্যক্তি ।
তুমি মৃত্যুর মতো জটিল বা ভয়ানক নও ;
তুমি ভেদাভেদ শূন্য প্রজ্ঞাত মনের অদ্ভুত সান্ত্বনা
তুমি কামনার মিথুন আঙিনায় ছড়ানো
মিথ্যা ফুলের প্রলোভন নও।
তুমি তমসাবৃত ভীরু অন্ধকার ছায়া নীড় নও।
তুমি সাজানো গোছানো পরিছন্ন জীবন খোলসের আবর্জনা নও।
তুমি আমার কল্পনার দোলনায়
মিছিমিছি বা অহেতুক দুলে যাওয়া বিচ্ছেদ
বা অবিশ্বাসের যাতনাও নও।
তুমি আমার মহাকাব্যের
নেশায় পাগল করা মাতাল গদ্য ছন্দ
তোমাতে আমি বাঁধা নই তবু চলে আসার দিনে অশ্রুজল
চোখের কোনে জমতে দেখেছি।
অদ্ভুত মোহ টানে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
আছি
এক অসীম মিলনের মত্ততায় তোমার
দেহের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে
গাঢ় আলাপ প্রলাপের ছলে ক্ষনিকের মতো
বাঁধা থাকার মতো মন অন্তত তোমার কিছুতেই সাড়া দেয় না।
শুধু নিজস্ব প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে
ভালবাসার স্বীকৃতিকে দেহের মধ্যে বন্দীর ছলে
সন্ধির অজুহাতে আবদ্ধ রাখতে তুমি অধীর নও।
তুমি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বয়ে যাওয়ার মতো বহমান নও।
তুমি মুক্তমনা নিজস্ব রুচিতে স্থির বা অস্থির গতিময় লমহা
খোদার দেউড়ীতে তোমার নত জানু দেহে
দুর্বলতার প্রকাশ থাকলেও জাগতিক দুর্বলতার বিষ কামড়ে
তোমার দেহ নীল শূন্য। অদ্ভুত তোমার বোধ শক্তি।
তুমি অদ্ভুত নাচের ছন্দ মাখানো অলৌকিক রূপসী নারীও নও।
তুমি বৃষ্টি হানা নীল আসমানের কালো মেঘও নও।
তুমি কারো হৃৎপিন্ড ভেঙে দেওয়ার মতো
সর্বনাশী চাঁদ ভাঙা চুম্বন নও।
তুমি তপ্ত অন্ধকারে ভয় তরাসের নিঠুর বাঁশির তানও নও।
তুমি আলিঙ্গনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকাস্পর্শ কাতর বক্ষও নও।
তুমি সহসা খসে যাওয়া কারো অহংকার ও নও।
তুমি আমার অসমাপ্ত কবিতার বাকি শব্দমালা।
তুমি ডুবে থাকা স্বস্তির নিশ্চল ভালবাসার আবেগবালা।
তুমি অমাবস্যার ঘোর ব্যাদড়া অন্ধকারের
গোপন ঝিনুকে ঘুমিয়ে থাকা শীতল গোমেদ চাঁদ।
তুমি দৃষ্টিহীন লক্ষ্য বিহীন অসম্ভব অঙ্গীকারের
দু’হাত বাঁধা দৃষ্টান্ত নও ।
তুমি স্বয়ং শ্মশান বন্ধুর চিতা চিতার লেলিহান আগুন নও।
তুমি কুল ভাঙা কারোর নিখাদ গোছানো সংসারে
নিকৃষ্ট আঘাত নিনাদ নও।
তুমি একান্ত গোপনে টুকরো টুকরো ভেঙে যাওয়া
নিঃশব্দ মাঝ রাত নও।
তুমি মুখোমুখী বসে থাকা মিথ্যে উপচে পড়া
অনর্থক প্রেমালাপ নও।
তুমি মহাসত্য তীর্থমৃত যোগ।
তুমি আমার সব হারানোর ফিরে পাওয়া
স্মৃতির অভ্যন্তরে সৃষ্টির গুলজার।
মৃত দেহের চারপাশে ফুল ছড়ানো
নীরব উক্তিহীন মধুর কোমল ভাবময় সফেদ কফন।
তুমি মনে রাখার মতন প্রতিদিন
তুমি না বদলানোর মতন অদ্ভূত নিখুঁত সমীকরণ।
আঁচর বিহীন বেদাগ পাক আমন।
তুমি কারোর দেহে গোপুর দ্বারে যন্ত্রনাময় কঠিন জর্জর ব্যাধি নও ।
তুমি তোয়াক্কাবিহীন তোয়াজ বিহীন খোশামদের তোশিদ অলীক
প্রেমের তোশদান নও।
তুমি কারোর সন্তপ্ত ললাটে ঝরে যাওয়া ঘাম নও ।
তুমি কারোর ভরসায় কেঁপে ওঠা তন্নতন্ন ছিঁড়ে ফেলার মতন বজ্র নিনাদ নও।
তুমি আচমকা ঘটে যাওয়া কারোর সহজ সরল জীবনে মহাকালের বিধান নও।
তুমি আমার সঙ্গিনী আমৃত্যু কালের চির কালের মতো নবীন
অপ্রত্যাশিত আমার সাকার কল্পনার ভালবাসার ইতিহাসে
তুমি এক মাত্র সাক্ষী।
তুমি পুঁথির নিয়ম বাঁধা যুক্তিতক্ক নও
তুমি কামনার অপরাধবোধও নও।
তুমি প্রিয়জনের
একান্ত অনুভব।চেতনা অবচেতনার মনের সঙ্গম।
তুমি ধৈর্যচ্যুত মাটির পুতুল নও।
তুমি কারোর রাঙানরম গাল ভিজে যাওয়া অশ্রু জলও নও।
তুমি অবুঝ মনের চঞ্চলতা নও।
তুমি শিল্পীর মিথ্যা তুলিটান নও।
তুমি সাংসারিক জীবনের একঘেয়েমির চাপে
তিক্তময় বাক্যালাপ নও।
তুমি উদ্ধত আকাশের বীতশ্রদ্ধ বিধগ্ধ সবিতৃ।
তুমি ক্ষমতার প্রবল ঝড়ে সৃজন স্রোতের প্রাবর নও।
তুমি মহাজাগতিক বিধানের কোনো বন্ধন নও।
তুমি বৈধব্যের শুভ্র চির শুচি বসন নও।
তুমি বিচারের অবিচার বাণী নও।
তুমি সদ্য দুলহনের সিতচন্দনে ঢাকা লাজময় নাকাব।
তুমি সত্যটুকুর মতো মহাসত্য আমার কল্পনার সংহিতায়।
তুমি অসীম জ্ঞানের রহস্যময় আকর্ষণ।
তুমি সাহিত্য সাধনার আরাধ্য আরাধনা।
তুমি বাহিরী সৌম্যতার মোহ নও।
তুমি কারোর চরণ ধূলি নও।
তুমি কারোর মরণ শোভাযাত্রা নও।
তুমি কোনো ইঙ্গিতের মিথ্যা গীত নও।
তুমি সীমানা জুড়ে একাকার হয়ে যাওয়া আমার দেহ মনে
জাগিয়ে রাখা কঠিন আত্মবিশ্বাসমাখা জীবন দলিল গোপনে।
বিশেষ কবিতা গুচ্ছ
কবি - শ্রী কাজী
নাম দিতে ভুলে গেছি
১।।
আমি কবিতা লিখি না আজকাল । পথের ধারে ফুটপাথ কাঁপছে দেশজুড়ে । কোনদিন ভোরের আকাশ প্লাবিত হবে লাল রক্তে । সূর্য ঘুমিয়ে পড়বে গ্রহণের নামে ।
ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া । বাড়িটা ভিড়ের মধ্যিখানে বসে আছে । এক এক করে দখল করে নেবে পুরো মানুষটাকে । চিৎকার করে লাভ নেই কোন । দাম দেয় না কেউ । দাম শুধু শরীরের ।
কবিতা লিখতে বসলেই বৃষ্টি নামে । ছুটে যাই মাঝরাস্তায় অন্ধকারে মোমবাতি নিয়ে । ভিড় জমে আছে ওখানেও । মানুষের ভিড় , টাটকা । ওরাও কাল লাশ হবে অন্যের দাবিতে , যারা ওদের লাশ বানাতে পথে নেমেছিল লাখো লাখো বৃষ্টি ফোঁটা উপেক্ষা করে ।
তেলের দাম বাড়লে কলম তুলি । পরেরদিন কাগজে ছেপে আসে লেখাটি । অনেক লেখার ভিড়ে দাঁড়িয়ে বুঝেছিল কবিতাটি , তার সৃষ্টি মানুষের খরচ কমাতে আর ওরা কলম তুলেছে লেখা প্রতি খরচ কমাতে ।
আমি কবিতা লিখি না , গল্প লিখি না আজকাল । বরং লেখা হয়ে ওঠার চেষ্টা করি । লেখক ছবি হয়ে যাবে নিশ্চিত , শুধু লেখা অমর আদী অনন্ত জুড়ে ।
২।।
যোগ্যরা সম্মান পায়
আমার সে যোগ্যতা কোথায়
মাটির চারাগাছটা মুখ বাড়িয়েছিল মাটি থেকে
আবার মাটির ঘরে ফিরে যেতে হবে তাকে হতাশ
উৎসব শেষ হলে ।
আমি জানি না
কেন বৃষ্টি নামে আমার ছাদে
কেন অন্ধকার আমার মন
আমি একাকী নৌকার পাল তুলে দেবো ঠিক
আগুন আকাশে ভাসিয়ে দিয়ে শব ।
সেদিন বুঝবে ভালোবাসা , বুঝবে কি হারালে তোমরা
সেদিন বন্ধ দরজা খুলে দেবে হয়তো , উৎসব করে আমায়
তবু বনজর নদীর স্রোতে পলি কত হারিয়ে যায়
কত জীবন রবি হতে পারে না এখানে , বেজ হয়ে কতজন আর অমর হয়ে রয়ে যায় !!
আমি প্রেমহীনা , উদ্বাস্তু তাই ঘৃণা করেছ এই সত্যকে
একদিন দেখো শিল্পীরা মুছে যাবে সবাই , আমি শিল্প হয়ে বেঁচে থাকবো ঠিক ----
সেদিন আমায় তেল দিও না , কলকব্জা রক্ষনাবেক্ষনে ।
৩।।
আয় নেমে আয় খোলা মাঠে ধানের ক্ষেতে
অন্ধকারে কত দিন আর পুড়বি তোরা ছন্নছাড়া
এই মাটির মালিক তোরা , জেনে রাখ
লড়তে হবে , প্রয়োজনে মারতে হবে
মরলে কিন্তু চলবে না ।
সামনে চেয়ে দ্যাখ , বিশাল পথ
হিমালয়ের কঠিন শপথ
সব বাঁধা চূর্ণ করে , ভাঙতে হবে
ধর্মের কল বজ্রাঘাতে
তোরাই তো রক্ষক ভবিষ্যতের
তোদের হাতেই মায়ের আঁচল
ওরে ভুলে যাস না তোরা
তোদের ক্ষমতা , তোদের জেদ , তোদের বল
চারিদিকে আজ অচলায়তন
মানুষ আজ ভীত , সন্ত্রস্ত
আইন কানুন কেনা গোলাম
তোরাই এখন সর্বনাশের মাথায় বাজ ।
ওঠ , জাগ , তুলে নে অস্ত্র এবার
সিংহ নিনাদে গর্জিত হোক রন হুংকার
ঈশ্বর বিরাজে মানুষের মাঝে যখন
ভাঙ যত ধর্ম নামের ওই পাষান বন্দীশালা ।
মুছে দে বিবাদ যত ,
ছিঁড়ে ফ্যাল বাঁধনের ওই কাঁটাতার
মিলনের রাখি ঝুলিয়ে দিয়ে
চল গড়বো আমরা এক পৃথিবী , এক পরিবার ।
৪।।
মহাভারত শেষ হয়নি আজও
যুদ্ধ শেষ হতে পারে নি কোনদিন
অর্জুনের বানে যাদের রক্ত ভেসেছিল সেদিন
তারাই দেখো আজ ইন্দ্রপ্রস্থের সভায়
দেখতে পাও না দুঃশাসনের হাতে বন্দি দ্রৌপদী
কাঁদছে ভরা রাজসভায়
দেখতে পাও না চেয়ে কুটিল শকুনির পাশায়
কত মানুষ ফিরছে পথে সর্বস্বান্ত হয়ে
চেয়ে দেখো চারপাশে কত লাশের ওপর
আজও আমরা দাঁড়িয়ে আছি
তাকিয়ে দেখো সুখের নামাবলি গায়ে
ভয়ংকর কালো অন্ধকার আমাদের করছে গ্রাস ।
মহাভারত শেষ হয়নি এখনো এখানে
কর্ণ অভিমন্যু এখনো অযোগ্য গুরু দ্রনেদের বিচারে
এখনো হিংসার বাতাসে ভেসে আসে হত্যার ষড়যন্ত্র
এখনো কুরুক্ষেত্রে লেখা হয় হাজার চক্রব্যূহের মন্ত্র
কুন্তীর মত কত রমণীরা ঢলে পড়ে পরকীয়ার লোভে
এখনো কত সন্তান ভেসে যায় কুমারি মায়ের বুকচিরে ।
এখানে মহারাজ , মুখে তার যুদ্ধের আহবান
রাজ্য জুড়ে হীরক সাম্রাজ্য , বিভেদের জয়গান
কৃষ্ণের দেখা নেই , রথের দড়ি আজ সামলাবে কে
কে বলবে সমাজের ব্যাথা ,কে আজ গিতার বাণী শোনাবে ?
তাই পথে নেমেছি কলম নিয়ে দুই হাতে
এসো উঠতে জ্বলে , নিজের অধিকারে
নেমে আনো পরিবর্তন , গণতন্ত্রের খাতিরে
মনে রেখো মহাভারত হবেনা শেষ
যতদিন গদি থাকবে ওই পুরুষের দখলে ।
নতুন সকাল বসে আছে পাঁচটা অমাবস্যা জুড়ে
চলো , আহবান করি শক্তি তার ;অতীতের সকল প্রত্যুত্তরে ।
৫।।
আজ থেকে হাজার বছর পরে , এই পৃথিবীর কথা ভেবে
আঁতকে উঠি মাঝে মাঝে । শিউরে উঠি আতঙ্কের প্রহর গুনে । মান আর হুশ হারিয়ে আজ আমরা এক একটা রাজনীতির পুতুল । পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীটি এখন বিচার চিন্তা ছেড়ে স্বার্থের দালালি করতে ব্যস্ত ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
ভালোবাসা এখন কিছুদিনের যৌন চাহিদা শুধু । মনের মিলনের থেকে শরীরের মিলনটা অনেক আগে । আজকাল সোহাগ , আদর এসমস্ত শব্দে যৌন গন্ধ বিকট । শরীর খুলে দিয়েছে দুদিকেই পেতে রাখা বিছানায় অথবা পথের ধারে গজিয়ে ওঠা ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে --- ঠিক করে একে অপরকে চিনে ওঠা হলো না যদিও কোনদিন ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
শিক্ষায় আজ বদল সুস্পষ্ট । মেধা এখন অর্থের কেনা গোলাম । ফেললে কড়ি অথবা মাখালে তেল ; সব মিলে যাবে অনায়াসে । প্রতিটা সাবজেক্টে টিউটর ভুড়ি ভুড়ি । একটার পিছনে অন্তত দুটো থাকবেই আর যদি সে ইস্কুলের হয় তবে তো কথাই নেই ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
খেলাধুলা মানেই মোবাইল--- ক্রিকেট থেকে ফুটবল সারাদিন । আর মাঠগুলোয় এখন , গজিয়ে উঠছে আবাসন
প্রমোটিং হাজার হাজার । কোটি কোটি ইনভেস্টমেন্ট , কি হবে বানিয়ে হেলথ । তার চেয়ে জিমে নিয়ে ফেলে এডমিশন -- পকেটের বাকি টুকুর শ্রাদ্ধ হয়ে যাক ।
এভাবেই এগিয়ে চলেছে সমাজ , উন্নতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে নদীর জল আজ ---- মূলটুকু ভুলে
সামান্য কিছু সুদের লোভে আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
আজ থেকে হাজার বছর পরে , এই পৃথিবীর কথা ভেবে
আঁতকে উঠি মাঝে মাঝে ।
৬।।
ও মশাই , কি যা তা লিখছেন ?
মহাভারত ছেড়ে একটু ভারতে ফিরে আসুন ,
দ্রৌপদীর শাড়ির আঁচল ধরে টান দুশাসনের ,
তাতেই সবাই চুপ ।।
আজ তো কাপড় খোলা ,
ফাটা জিন্স এমনিই ঝুলছে তলায় ;
চুপ না থাকলে কি চলে ?
ও মশাই কি যা তা লিখছেন ?
মনে আছে পাশা খেলা আর শকুনির চাল ,
রাজ্য হারিয়ে পাণ্ডব দল জঙ্গলে গেল ,
আজ তো চাল টুকুও লাগে না
শুধু একটা ক্লিক ,
দেখবেন সব খুইয়েছেন ।।
আর জঙ্গল !! সে তো ইটে ঠাসা
গরম গরম দামে ভেজে পরিবেশিত হচ্ছে ঠোঙায় ।।
তখন যাবেন টাই কোথায়, কুরুক্ষেত্রে ??
দেশের মধ্যে হাজার হাজার যুদ্ধ তো চলছে এমনিতেই ,
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ---
গীতা র কত এডিসন বাজারে পচছে-পুনর্মুদ্রণ কপি।
কে শোনাবে আর কে শুনবে ?
শুনতে গিয়ে কে দক্ষিনা গুনবে , মোটা টাকা ।।
সারথি একলাই না হয় নিলেন ,
মাইনে দেবেন কোথা থেকে --- আগেই তো এত ধার !!
ও মশাই কি যা তা বিবর্তন দেখাচ্ছেন ,
পরিবর্তন বলুন পরিবর্তন ।।
৭।।
ভয় পাই । ভালোবাসতে তোমাকে ভীষন ভয় পাই । আসলে অভিজ্ঞতার ভিড়ে যখন পাতা উল্টে অতীত দেখি ,
যখন মোড়কের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দেওয়া এই বোকা হাঁদাটাও মন খুলে মনের কথা বলেছিল ,
যখন বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে যে অনুভূতি জেগে উঠেছিল ,
তাও সবটাই দ্বিতীয়বার ।
তখন ভেবেছিলাম , হয়তো ভগবান আজও আছে । হয়তো আমার জন্য সে ভালো কিছু তুলে রেখেছে বস্তায় ভরে ।
তারপর যেদিন ঝড় উঠলো । সব কিছু ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল
এক নিমেষে ।
স্বপ্নের বাসায় ডিম গুলোয় তা দিচ্ছিলাম এত দিন ধরে । সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো ।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম । ভাবছিলাম । এভাবেও সব শেষ হয়ে যায় বারবার ।
মন ভেঙেছে বলে জানতে পারেনি কেউ । কান্নাগুলো রাতের কুয়াশা করে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম । ভিজেছিলাম আমি , আমার বালিশ , বিছানা সব ....
তবু তোমার মনে দাগ কাটে নি কোনদিন । বরং অভিশাপের পাশাপাশি অনেক অভিযোগ জমা করেছি এক এক করে ।
তৃতীয় হবার আগে ভয় পাই .... এমন নয় যে হৃদয়ের বাগানে ফুল ফোটেনি আর ,
পুড়িয়ে দিয়েছি প্রত্যেকটি যেমন আজ করছি এই ভর্তি কামরায় এগিয়ে যেতে যেতে । মেয়েটি খুব ভালো । একটু বোকা আর অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা ....
ভয় পেয়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে দিলাম । যদি প্রেম লিখে ফেলি আবার ।
৮।।
যে কথা বাকি রেখে যায় মেঘ ; সূর্যের জন্য
আমি সে কথা তুলে রাখি ; আচারের বয়ামে ।
বর্ষায় যে মাছ ডিম পাড়তে পারলো না ; এ বছর
আমি তাদের পৌঁছে দিই নদীর আলপথে ।
যে পথ কারো অপেক্ষায় জেগে থাকে
যে বাড়িতে শোকেরা প্রতিদিন হানা দেয় অতিথি হয়ে
যে শরীর কেঁপে ওঠে ; হেরে যাওয়ার ভয়ে
আমি তাদের স্বান্তনা দিই ; প্রতিবার ।
মানুষ হয়ে মানুষের জন্য ; এটুকু করাই যায়
অসুস্থ সমাজে টোটকাটুকু , এটলিস্ট ।
সকালের রোদ ওদের সুস্থ করে দিলে
ভাঙা মন নিয়ে মৃত কবরের পিছনে ছুটে যাই ।
এভাবেই দিন কাটে ; ফুরিয়ে আসে প্রয়োজন আমার
তারপর নদী বয়ে যায় , রামধনুরা জেগে ওঠে
ঘুম ভাঙা পাখিরা ফিরে আসে , ব্যস্ততায়
পৃথিবীও নিজের খেয়ালে কক্ষদৌড়ে নাম লেখায় ।
আমার খবর রেখো না ,
সুটি হয়ে একদিন ; জড়িয়ে নেবো দুটো শেষ অধ্যায় ।
সেদিনও দেখবে অনেক মৃত জেগে রুগি হাসপাতালে
আদালতে বিচার পাইনি অনেকে ।
মন্দির মসজিদ ; কত এলো কত গেলো
ভেঙে পড়া কংক্রিটে , নতুন রক্তবীজ জেগে উঠলো ।
বাকি রেখে যাওয়া কথাগুলো , কাঁচের বয়ামে সেদিন
কান্না হয়ে ঝড়বে ; প্রেমিকার দুচোখে ।
৯।।
শেষ পাত । অনাহার শরীর তারপর
তিনদিন , তিনরাতেই ; তিনশো বছরের পার ।
মৌমাছি বদলেছে রেণু , ফুলের পরাগে ভ্রূণ আর সাজে না
বসন্ত সেজেছে এ বুকে , হেমন্তের গান তবু থামে না ।
পাড়ার কুকুরেরা দুই ছিল ; আজ কয়েক ডজন
ফাঁকা গোয়াল , ভরে আছে এখন ; বাছুরে কেবল ।
গোলকের এক দিকে ঊষা যেখানে , অন্যদিকে ভরে অন্ধকার
গোলাপের লাল ঠোঁট উষ্ণ যত , কাঁটায় ততটাই যন্ত্রণার চিৎকার ।
আমি আজ ভালো আছি , হাসি ভরে থাকে মুখে
কিন্তু হাসির পেছনের গল্পটা , ভালোর হাহাকারগুলো
কেউ বোঝে না ।
যুধ্বং সাজে সেজে , আমরা চলেছি যুদ্ধে
যুদ্ধ : দারিদ্র্যের সঙ্গে , বেকারত্বের সঙ্গে ; প্রতিদিনকার ছেড়ে
যুদ্ধ করছি কান্না মুছতে , হাসি খুশি মুখেদের বিরুদ্ধে ।
আমরা কষ্ট বুঝেছি , যন্ত্রনা বুঝেছি খুব
বুঝেছি গরমের চাঁদি পোড়া রোদে
লাশ সাজা কত বড় অসুখ
একটা চোখের জল অন্য চোখে স্থানান্তর হয়ে গেলে
মানুষ জন্ম সম্পূর্ণ ; যার একক সূত্র
থিওরি অভ আই ওয়াশ ।
১০।।
আমরা আজ ধর্মের ঘরে চুরি করেছি । বুঝতে চাইনি কোনদিন কেমন লাগে ধর্ম আর অধর্মের ফারাক ।
আমরা মানুষের রক্তে নিবেদন করেছি অর্ঘ -- ঈশ্বরকে , আল্লাহকে ,
বুঝতে চাইনি মানুষের মধ্যে বিরাজমান তার অবস্থান ।
যুগে যুগে দুত এসেছে পৃথিবীতে শান্তির বাণী বয়ে
মুছে গেছে তারাও , ক্ষত বিক্ষত হয়েছে তাদের কথাও ।
তারা বলেছিল ভালোবাসতে মানুষকে , তারা জীবের জীবনে খুঁজে দিতে চেয়েছিল
বিধাতার অধিষ্ঠান ।
আমরা বুঝি নি তাদের কথা , গিলে গেছি গ্রন্থের লেখা গলা ঠুসে
বদলে চেয়েছি হিংসা আর রক্ত ধারা , মন্দির মসজিদ গঠনে ।
কত রাজা এসেছে , হারিয়ে গেছে তারা কালের স্রোতে
প্রতি পাঁচ বছরের দিন রাত আমাদের
কেটেছে অমাবস্যার আঁধারে ।
সুদিন আসবে -- এই প্রতীক্ষায় জীবন কাটিয়েছি আমরা
আসে নি ভালো দিন , বদলে জীবন আমাদের
হয়েছে আরও বেশি ম্লান ।
বন্ধু , মরতেই হবে যখন একবার
তখন ভয় কিসের ?
এগিয়ে চলো , একলা পথেই
গণতন্ত্র আজ আবার দিচ্ছে ডাক ।
যবনিকা হোক পতন , মুছে ফেলি চলো কুলাঙ্গারদের পরিচয়
মুখোস ওদের ছিড়ে ফেলে দাও দূরে
গদি চ্যুত করো যত রাক্ষসে , এ বুকে যারা দখল করেছিল আশ্রয় ।
একবার চলো রনে নামি সকলে মিলে
একবার , দোহাই তোমাদের , শুধু একবার
বেরিয়ে এসো মাটির মাঝে , সুখের বিছানা ছেড়ে ।
মুখে মুখে গেয়ে উঠুক আজ , আমরা করি না দানবে কোন ভয়
মা আমাদের বিপদে যখন
তখন হানতেই হবে ধর্মের জয় , নিশ্চয় ।
১১।।
দুর্গম সময় হেঁটে চলেছে বাতাসে । সূর্য উল্টো বইছে । আমরা শেষ থেকে শুরু করেছি যে পথ
সেখানে বন্ধু , সাথীহারা আমরা প্রত্যেকে ।
বিশ্বাস করি না আর নিজেকে , পাছে অন্যকে সন্দেহ করতে হয়
মানুষ রূপে নারায়ণ মরছে দেখছি পথের ধারে
আর আমরা কংক্রিকেটের শিল্প স্থাপনেই উন্মাদ ।
খেয়াল করে দেখো বন্ধু , যে সুভাষ গান্ধী সুকান্ত ভাঙছি আমরা
দেশের কোনায় কোনায়
তারা তো কবে ভেঙে গেছিল মানুষের অসহায় অবস্থায় ।
বীর ভগত , বিশ্ব রবি অথবা বিদ্রোহী কবির কণ্ঠে সেদিন
নতুন ধর্মের আহবান ছিল , মানবিকতার বিস্তার ছিল আর ছিল ভালোবাসার সন্দেশ
ঠিক যেমন ছিল কৃষ্ণের বাঁশিতে , নবীর ভাষণে অথবা যীশুর গল্পের আড়ালে
কিন্তু আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও , আমরা বিভক্ত বিষাক্ত চিন্তাধারায় ।
ভেবে দেখো , ঈশ্বর আজ লড়ছে নবীর বিরুদ্ধে , জেশাস গত রাতে খুন হয়েছিল লংকায়
আর আমরা নিজেদের ছেড়ে ধর্ম রক্ষায় এক এক করে শহীদ হবো
স্বজনদেরই বিপক্ষে --
ধর্মের কয়েনটা নিচে নেমে আসছে
গিলোটিন জেনেও আঁকড়ে ধরছি
নিজেদের রক্ষা করবো বলে :
এপিঠে রাজনীতি আর ওদিকে আতংকবাদ
যারা ধর্ম বানায় কনজিউম করতে ....
আমাদের কোনটাই চাই না --- কিছু মানুষ পেলে যোগাযোগ করুন
নোয়া-র নৌকার জন্য ।
কবিতা
" মূল্যহীন উপহার "
~ কিশলয় বসু
একঝাঁক জোনাকির মালা গেঁথে ,
তোমার গলায় পরিয়ে দিলাম ।
কিছুক্ষণ পরেই মালাটি ছিঁড়ে ---
জোনাকিগুলো আকাশে উড়িয়ে দিয়ে বললে ,
এর তো কোনো রি-সেল্ ভেল্যু নেই।।
প্রত্যাবর্তন
ড.মহীতোষ গায়েন
মানুষের স্থানচ্যুতি ঘটতে ঘটতে যখন
সে পুরানো অতীতের উদ্ভ্রান্ত চরে ছিটকে
পড়তে চায় এবং পড়েও;ঠিক তখনই
তিরবিদ্ধ মরালের মত সে অনুভব করে
তাবৎ পৃথিবীটা যৌক্তিক রেখায় দোদুল্যমান।
ক্রমশ ধূসর গোধূলিতে ঢাকা পড়ে মন,
ধোঁয়াশার মধ্যে পড়ে ছটফটে মন
মুক্ত বাতাসের খোঁজ করে,নৈ:শব্দ এসে
বলে দেয়: চেতনার অলীক গাছে
কুঁড়ি আসলেও তা ঝরে যাবে সমস্বরে।
সময়ের নির্ভেজাল বীভৎসতা চরাচরে-
যে কটা দিন বাকি পারলে সেখানেই
সহাবস্থানের আশ্বাস আসে একান্তেই
সঙ্গোপনে;জীবনের জলতরঙ্গে নবজীবনের
উদ্বোধনী সংঙ্গীত সমূহ সমাজে ভাস্বরিত।
অন্তহীন....
গোবিন্দ মোদক
সিঁড়ি ।
ধাপের পরে ধাপ ।
তারও পরে ধাপ ।
ধাপে ধাপ। ক্রমশঃ ওপরে ওঠার পরাকাষ্ঠা।
#
আবার সিঁড়ি ।
ধাপের পরে ধাপ ।
তারও পরে ধাপ ।
ধাপে ধাপ। ক্রমশঃ নিচে নামার অবলম্বন।
#
নদীর ঢেউ ।
ঢেউয়ের পরে ঢেউ ।
তারও পরে ঢেউ ।
ঢেউ আর ঢেউ। অনন্তের দিকে ছুটে চলা।
#
পথ ।
পথের পরে পথ।
পথ, আরও পথ ।
পথ ফুরায় না। শুধু হারিয়ে যায় দিকচক্রবালে।
"গোপন চিঠি "
প্রদীপ দে।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^
প্রিয়
প্রানের ' রোদ ',
সত্যি কথা তোকে বলেই, বলি।
কি বোকারে তুই ?
সব কথা কি বলে বোঝানো যায়?
না কি সে টা সম্ভব ?
যতোই যুগ পাল্টাক, আমি তো সেই নারী ই !
তবে বারে বারে আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
আমার সতীত্ব মাপতে চাইছিস কেন ?
বিশ্বাস হয় না আমায়, তাই না?
আমার কিন্তু অপার বিশ্বাস তোর ' পর
বিশ্বাস হারানো মহাপাপ !
নিজের উষ্ণতায়
আমার শরীরকে ভিজিয়ে,
ঢেলে ঢেলে,
নিজেকে হারাচ্ছিস কেন ?
আমি তো তোর ই
তুই কি আমার ন ' স?
ইতি ,
তোর শুধু তোর ই ,
' বৃষ্টি '
কবিগুরু জয়ন্তী
মাওলানা মহবুবুর রহমান
হে অমর শিল্পী বিশ্বকবি
বিশ্বমানের সুরকার
লহো মোর অশেষ শ্রদ্ধা
শুভ জনমদিন তোমার ৷
মশি হাতে বসে আমি
ভাবছি নিরন্তর
কী লিখব জলকণা হয়ে
তুমি যে জ্ঞানের সাগর ৷
স্বীয় কীর্তিতে অমর তুমি
বিশ্ববাঙালির গৌরব
তোমাসদৃশ ধরুক জ্ঞান
ছড়াক মোদের সৌরভ ৷
ছন্দমালার শেষ পানে
তব কলি তোমার সনে-
"তোমার কীর্তির চেয়ে
তুমি যে মহৎ
তাই তব জীবন রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায়
কীর্তিরে তোমার
বারংবারই তাই
চিহ্ন তব পড়ে আছে
তুমি হেথা নাই " ৷
ঝুলন
-অরুন্ধতী চৌধুরী
ঝুলন বলতে আমার একটুকরো স্মৃতি কথা মনে পরে। এইসময় টা বড় আনন্দে কাটত। আমি মন্দিরে গিয়ে সাজানো ঠাকুর দেখতাম। দেখতাম কত সুন্দর ছোট ছোট পুতুল দিয়ে সাজানো থাকতো মন্দিরের বারান্দা। কত ভালো লাগতো। খুব মজা পেতাম।
সেইসব দিনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, পুরোনো ঐতিহ্য গুলো একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। পুরোনো স্মৃতি যা যতই মধুর হোক , ব্যথার হোক , তাকে একটা সময়ের পর ছেড়ে যেতে হয়। ভুলে যেতে হয়। কিন্তু আমরা যদি একটু স্মৃতি আকড়ে পরে থাকি তাহলে খুব কি ক্ষতি ?? একটা দুটো স্মৃতি একটা দুটো মধুর অতীত যা মন কে বার বার নাড়া দেয় তা যদি বর্তমান কে ভরিয়ে তোলে তাহলে তা অব্যশই ভালোর জন্যই। উদযাপন যদি আবাহন ও বিসর্জন দুই এরই হয় , তাহলে সেই যাপন কে মনের মধ্যে আকড়ে ধরি আবার ও কোনো আয়োজন আর আবাহন এর প্রতীক্ষায় যদিও জানি বিসর্জন এর ঘন্টা আড়ালে বাজে।
এই ভাবেই জীবন কে যাপন করি আর ভাঙা জীবনে ঝুলন সাজানোর চেষ্টা করি ।
চিঠি ও গল্প
কল্যাণীয়াষু!
নীলাঞ্জনা তোমার প্রথম পত্র পেয়েছিলাম সেই নব যৌবন প্রারম্ভে।তুমি তোমার নরম হাতে উষ্ণ মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে একখানি পত্র পেরণ করেছিলে।সেই পত্রতে তুমি জানতে চেয়েছিলে---"প্রিয়তমা এ নব যৌবনা তোমার যৌবন অরণ্যে মন হারিয়েছে।এ যৌবনা তোমার যৌবন সরোবরে পদ্ম হয়ে বিকশিত হতে চাই।আমার মনতরী তোমার যৌবন সরোবরে সাঁতার দিতে চাই।তুমি কি আমার সে অধিকার টুকু দিবে?"তোমার সেদিনের সে পত্রখানি আমার মনে মণি কোঠায় জায়গা করে নিতে পারেনি।তুমি নবযৌবনা, অল্প বয়সী বলে হয়ত আমি তোমার পত্রের ও পবিত্র মনের মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম যন্ত্রনা সরোবরে।তুমিও রেখেছিলে।প্রতিরাতে যন্ত্রনায় বিদ্ধ হয়েছে আমার মন।তুমি মনহরিণী হয়ে বিচরণ করেছে আমার যৌবন অরণ্যে।প্রতিনিয়ত তোমাকে ধরার চেষ্টা করেছি।কিন্তু শিকারীর শিকারের ভয়ে ভীত হয়ে আমাকে অন্ধগুহায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে।শিকারিরা চায়না যে আমি তোমার সঙ্গম লাভ করি।যদি বিশ্বাস করো তাহলে বলতে পারি যে তাদেরই ভয়ে তোমার পবিত্র ভালোবাসার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছি।যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে বলতে পারো আমার ভীরু মনের ব্যর্থতা।তোমার হয়ত এখনো মনে পড়ে সেদিনের সেই নবযৌবনা যুবক-যুবতীর ক্ষনিক মুহূর্ত।তুমি অশ্রুসজল চোখে জিঘাংসা করেছিলে,"তুমি আমায় ভালোবাসা?"সেদিনও নিরুত্তর ছিলাম। তাই তীব্রকন্ঠে ব্যঙ্গবান বিদ্ধ করে বলেছিলে "সৌন্দর্যের অহং তাই না?"তুমি তীব্র ভাষায় আঘাত করে শুধু নিজের যন্ত্রণা বুঝিয়ে দিয়েছিলে।কিন্তু সেদিন একটিবারও কি তোমার নয়ন দেখেছিল আমার অশ্রুরঝরা নয়নকে!সেদিন আমি কি যন্ত্রনাই না পেয়েছি।তোমাকে বোঝানোর সে ভাষা আমার নেই।ভেবেছিলে তুমি একাই শুধু ভালোবেসেছিলে তাই না!কিন্তু না এ ভীরু মনও তোমায় ভালোবেসেছিল।তফাৎ শুধু একটাই তুমি বলেছিলে আর আমি ব্যর্থ হয়েছি।কিন্তু তুমি একবারও আমার ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধ্যান করলে না,দেখেছ শুধু আমার ব্যর্থতা।আজ পনেরো বছর পর তোমার পত্রের উত্তর দিতে উদ্যোগী হয়েছি।কেননা আজ আমার কোনো কিছুতেই ভয় নেই ,হারানোরও কিছু নেই।আজ আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব আর তুমি পরিপূর্না।তুমি স্বামী ,সন্তান নিয়ে সুখের সাগরে ভেসে চলেছো।আমি দুঃখ সাগরের বুকে অন্তত কাল হেঁটে চলেছি।যদিও এর আগেও একবার তোমায় পত্রের উত্তর দেওয়ার প্রয়াস করেছি।জানি তুমি সেটা চোখেও দেখনি।যদি দেখতে তাহলে আমার সব হারানো বেদনার বেদনাটুকু থাকত না।যাই হোক পুরোনো বেদনাস্মৃতির ডালি দিয়ে তোমায় নতুন করে আঘাত করতে চাইনা।আমি চাই তুমি সুখী হও জন্ম জন্মান্তরে পতিব্রতা স্ত্রীর সৌভাগ্য অর্জন করো।তুমি আমায় ভালোবেসে ছিলে ,তাই পিতার দেখা রাজপুত্রের গলায় সহজে বরমাল্য পড়াতে পেরেছ।আমি বলতে ব্যর্থ হয়েছি তাই তোমার স্মৃতি আঁকড়ে আছি।আমি পারতাম কোনো রাজকুমারীর গলায় মাল্য দিতে।কিন্তু আমার বিবেগ আমাকে সে পাপ কাজ হতে বিরত রেখেছে।আজ তোমার পত্রের উত্তর দিয়ে তোমাকে জানাতে চাইছি আমি তোমায় ভালোবাসি,আর নবযৌবনেও বাসতাম,বাধ্যকেও বাসবো।শুধু প্রশ্ন তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসেছিলে?যদি বাসতে তাহলে কি অন্যের গলে বরমাল্য দিতে পারতে?আজ তোমাকে ফিরে আসাতে বলব না।আজ পত্র পেরণ করলাম শুধু এই কথাটা বলতে "ভালোবাসিছো যারে ,প্রেমেরও বাঁধনে অনন্তকাল রেখো তারে।নাইবা সে বাসলোভালো, তুমি তো তারে বেসেছো ভালো ।তাই মৃত্যুর অন্তিম ক্ষনমুহূর্ত অপেক্ষায় থেকো যদি সে আসে ফিরে..."
ইতি
নিত্য শুভার্থী___
শ্রাবন
চিন্তা ও সব্জি প্রভৃতি
---- ঋভু চট্টোপাধ্যায়
এখন জানলা দরজা সব বন্ধ করে রেখেছি, খুললেই বুদ্ধি ঢুকে যাচ্ছে। অবশ্য একে বুদ্ধি না বলে চিন্তা বলাই ভালো, তারমানে চিন্তা আর বুদ্ধির মধ্যে একটা বড় লাইন টেনে দিলাম।বললাম এটাই হল দুটো দেশের সীমানা, অবশ্য এতে কোন বিতর্ক চাইনা, যেমন চাইনা আমার মত আর কোন আম বাঙালি আমাশয়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক ওষুধের সাথে সহবাস করে শেষে অন্য কারোর সাথে লিভ-ইন করুক।আমি তো আর সেরকম কবি নয় যে বুক ঠুকে বলব, ‘ রাস্তায় ভাঙা রোদ খুঁটে খাই-‘ কারণ রাস্তা আর ঘরের মধ্যে সেরকম কোন অসমীকরণ এখন পর্যন্ত আবিস্কার করতে পারিনি, যেমন ভাবতে পারিনি কয়েকটা ছায়ার আড়ালে মায়ের স্নান দেখতে গেলেও কেন শুধু ইডিপাশের দোষ হয়, অথবা মেয়েরা তাদের বাবাকে বেশি ভালো বাসলেও শুধু শুধু ইলেকট্রার হাটে হাঁড়ি ভাঙে এই আম জনতা। আচ্ছা আম জনতা সব থেকে কোন আম খেতে ভালোবাসে?এই সব ভাবনা মাঝে মাঝে মাথার ভিতর এমন ভাবে হামলা আরম্ভ করে তখন কথা আটকে যায়, তখন শব্দ নদীতে ভাসে নিদেন পক্ষে পাড়ার ড্রেনে হামলাতে কি প্রতিবেশি কোন দেশের নাম জড়ালে কেউ বলবে না তো, ‘ উগ্র জাতিয়তাবাদ?’কল্কি পুরাণ বলছে , রাগের বোন হল হিংসা, হিংসার গর্ভে রাগের ঔরসে কলি নামের এক পুত্র সন্তান জন্মায়, এর পেট নাকি কাকের মত, মাল আর মাগী নিয়ে দিন রাত এক করে শেষে বোনকেও ছাড়ে না। তারমানে সব কিছুই পুরাণ বর্ণিত। অথচ শুনেছি কোন এক বিদেশী মশাপুরুষ সরি মহাপুরুষ নাকি বলেছিলেন, ‘ ভারতের সব শাস্ত্র রাখতে আলমারির একটা তাকই যথেষ্ট।‘কথাটা মন্দ না, এই যেমন আমি পড়াশোনার পি মেরে এখন সকাল থেকে উদমায় খিস্তি দিচ্ছি, সকালের পটি থেকে রাতের রেদ পর্যন্ত, এখন বাদের তালিকায় কোন শালা মশাপুরুষ নেই। কয়েক দিন আগেই বৌয়ের চেল্লানির জ্বালায় একটা এজেন্সির সাথে প্রারম্ভিক চুক্তি করে নিয়েছে এবার থেকে ওরাই আমার হয়ে ভাববে আর গাল দেবে, অবশ্য সব গালই ভদ্র, এটা আমি নিশ্চিত।ধরা যাক কোন নেতা আমার ঘরে ভোট চাইতে এল, আমি হয়ত সামনেই বলে দিতাম, ‘ শুয়োরের বাচ্ছা , কিন্তু এজেন্সির ছেলেটা বলে উঠবে, ‘এই আপনি না একটা বরাহনন্দন, এবার রাস্তার পাশের ড্রেনটা না তৈরী হলে আপনাকে তরকারির খোসা ছুঁড়ে মারব।‘ তার পরেই একটু মিষ্টি করে হাসি , একটু দুষ্টু করে চাওয়া, অবশ্য এর জন্য আমার গ্যাঁটের কড়ি খরচা করতে হচ্ছে, আর বৌ একটা শর্ত দিয়েছে কোন মহিলাকে ঘরে ডাকা যাবে না। সেটা আমি ডাকিনা, ছোট থেকেই আমার চরিত্রটা চপের মতই পবিত্র, যেকেউ খেতে পারে, তবে পেট খারাপের দায় আরোহীর।এর মধ্যে আমি একা হলেই ভাবতে আরম্ভ করতাম, চপ তো এখন একটা শিল্প, আগামী দিনে বিদেশী বই পত্রের পাতায় বিল গেটস, স্টিভ জোনসের পাশে আমাদের অথবা আপনাদের পাড়ার পচা, দেবা বা অন্য কারোর নামও পেছে সরি ছেপে যেতে পারে,আপনাকে শুনতে হতে পারে এই ভদ্রলোক শুধু একটা ছোট দোকানে চপ বিক্রি করতেন ,আজ ন’শ কোটি টাকার মালিক, বৃহস্পতি গ্রহে ইনভেস্টমেন্টের জন্য একটা শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে যাবে। আমরা সবাই দেখতে যাবো, লোকজন তাঁকে দেখবে আর বলবে, ‘ দাদা, আপনি চপে কোন মশলাটা বেশি দিতেন একটু বলবেন খেলেই হাগতাম।‘ ও সরি, আবার সেই বিরোধী চক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, পেট খারাপ মানেই কিন্তু হাগা নয়, আমাশয় নয়, গুড় গুড়ানিটাও একটা রোগের মধ্যেই পড়ে।কোন এক ধর্মে বলে, ‘ ঈশ্বরকে ভক্তি না করলে রোগ হবে।‘ বোঝো, ভাবছি ভক্তি করাটাও এজেন্সিকে দিয়ে দেব, আমার হয়ে মন্দির, গীর্জা, মসজিদ, সব জায়গায় ধূপ ধুনো জ্বালিয়ে আসবে, ফুল বেলপাতা চড়িয়ে আসবে আর আমি শুধু দেখব।
-কি দেখবে ?পাশের বাড়ির ঐ বৌদিটাকে, যে তোমাকে দেখিয়ে ব্যালকোনিতে কাপড় মেলে?
-নাগো, আমি কবিতা দেখবো।
–খ্যাপা, তোমাকেও কবিতা পাচ্ছে ?
–কেন হাগা পেলে কবিতা পাবে না কেন?
এই প্রশ্নের কি উত্তর দেব, কিভাবে বলব কবিতা কোন এক ঐশ্বরিক চেতনার মত, হয়ত কেউ বলেন গায়ের রক্ত মাংস, মেদ, মজ্জা, কবিতা একটা জমকালো দমকালো বস্তু অসম্ভের উপকরণ একটা অস্থির অবস্থিতির থেকে কোন রকমে মুক্তি পাবার একটা মাধ্যম।যে সময়ে মানুষ ভুল করে সে সময় শুধু মানুষটাই নয় তার ভিতরের শয়তানটাও জেগে ওঠে। তারমানে কবিতা লেখাটাও একটা ভুল, খাওয়াটাও একটা ভুল শোওয়াটাও একটা, বসাটাও এমনকি ভাবাটাও।ও সরি আবার ভাবার কথা আসছে, আমি তো এখন একটা এজেন্সির ক্লায়েন্ট, আমার হয়ে ভাবনার এবং গাল দেবার লোক আছে, আমার তো সেরকম কোন চিন্তা করবার দরকার নেই।সকালে পটি হোল কি না হোল চিন্তা নেই, আবার দুধ দেবার লোকটা দেরি করলেও নো চিন্তা, শুধু এজেন্ট অন আর ভাবনা অফ্। সকালে বাজার গেলাম কেউ যদি বলে ওঠে, ‘ দেখেছেন, কি দাম এখন, কিছু কেনাই যাচ্ছে না।‘ আমি জবাব দেবার আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নেব, তার পর বাইট, ও সরি উত্তর, তার আগে স্পিকটি নট।‘বাড়ি ফিরতেই বৌ তো বলবেই, ‘এই কয়েকটা দিন সকালের পুজোটা বা সন্ধেটা দিতে হবে।‘ সঙ্গে সঙ্গে ফোন, অবশ্য এখন শুধু মাত্র সন্ধে দিলেই হয় না, দেখতে হয় ঠাকুরটা কে, কোন মদ খেয়ে মৃত লোক, নাকি কোন লোকাল দাদার ক্লাব, নাকি আরো কেউ? মানে সেই হায়ার অথারিটি? কে জানে, এজেন্ট আবার এই সব ব্যাপারে খুব সাবধানে পা ফেলে। তা ফেলুক, যার যা খুশি ফেলুক, যেখানে খুশি ফেলুক, শুধু দেখতে হবে পড়লেও যেন দাঁড়িয়ে থাকে, সকালের ঢিকচ্যাক আলোর মধ্যেও যেন বুঝে বলতে পারি, ‘ তার জন্যে যতক্ষণ সম্ভব অপেক্ষা করব, যদি চিনতে না পারি? পারব, কারণ, ‘ সে নাকি আলোর চেয়েও বেশি আলোকিত।‘
কবিতা পুনরায়
কবিতা
সৌম্য শংকর দাশগুপ্ত
কবিতা, তুমি মাঝরাতের প্রেমিকা।
তোমার সাথে ডুবেছি একটা নদী,
একসাথে বয়েছি হাজার খরস্রোতা।
কবিতা তুমি বড্ড অভিমানী।
কবিতা তুমি আমায় ভালোবাসো?
জানোই তো শহরে আজ প্রেমটা ভীষন দামী।
কবিতা তুমি রাতের কান্না লোকাও কেন? তোমার লজ্জা কীসের এত?
তোমার কাছে একটা আবদার আছে, আজ রাতে আমার কান্না শুনো।
কবিতা তুমি ছেঁড়া পাতার পেন আঁচড়ের দাগ,
তোমার সাথ কথা হয়নি রোজ, দেখা হয়নি কাজল চোখের নীল গোলাপের মাঠ।
কবিতা, তুমিই তো সে যার জন্য সাজিয়েছি আজ কথা।
যার জন্য গুছিয়েছি ঘর, ভরিয়েছি এত খাতা।
কবিতা তুমিই আমার একলা রাতের সই।
তুমিই কেবল আমার সাথে থাকো,
ইতি তোমার প্রেমিক কবির বই।।
লকডাউন
কাঞ্চন রায়
আজ হঠাৎ করে সন্ধ্যা নেমেছে
সন্ধ্যা হওয়ার আগে;
মাঝ আকাশে হারিয়ে রবি
"অস্তে" গেছে পূবে ।
যারা রেশন কুড়াতে বেরিয়েছিল
তারা ফিরল খালি হাতে ;
জলের হাঁড়ি, ছাই উনুনে
দুমুঠো চালের আশে ।
সূর্যমুখী ফুটেছিল কিছু
বুনো পথের ধারে,
ছিঁড়ল কিছু হন্যে ছোড়া
রাত্রির অজুহাতে।
কেউ কিনেছিল দিন-- অনেক দামে
কেউ কিনেছিল সস্তায় ;
আজ চার দেওয়ালে সমান সবাই ,
বন্দি অসহায় !
মৃত্যু উপত্যকায় একদিন
মানস চক্রবর্ত্তী
আমি একটি মৃত্যু উপত্যকা পার হয়ে এসেছি
শয়ে শয়ে লাস এসেছি পায়ে মাড়িয়ে
রক্তের দাগ এখনও তাতে লেগে
গঙ্গা জলে শুদ্ধ করিনি নিজেকে |
একটি ল্যাংটো কিশোর
তার বাবার লাসের পাশে বসে কাঁদছিল ,
আমি মুছিয়ে দিইনি তার চোখের জল
কান্না মানুষকে নির্মল করে |
যে কাঁদতে জানে না
হাজারো পাঠক্রম তাকে
ক্লেদ , গ্লানি , অবজ্ঞা থেকে বাঁচাতে পারে না |
মৃত্যু উপত্যকায় আমি দেখেছিলাম
বিশ্বসুন্দরীর দুটি স্তন , যা
কেউ খুবলে খেয়ে খেয়ে গেছে |
কে সে ?
কোনো ইঁদুর ? প্যাঁচা ? অথবা
কালো চুলের কোনো মাথা ?
যে অনেক দিন বুভুক্ষু ছিল |
আমি দেখেছি
এক উন্মাদিনী পাগলী মৃত পুরুষের ঠোঁট
চুম্বন দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছিল ,
সে কি চিনে নিতে চাইছিল
এক কালে কে তার প্রেমিক ছিল ?
আমি এককালে এক যুবককে চিনতাম
তাকেও দেখেছি ঐ মৃতদের ভিড়ে ,
কী অসম্ভব পাংশু বর্ণের ছিল তার মুখ |
অহনাকে সে পায়নি
এই কি তার একমাত্র দুঃখ ?
প্রেয়সীকে না পেলে প্রণয় এত বিবর্ণ হয় ?
মৃত্যু উপত্যকায় আমি আর এক যুবককে দেখেছি
থ্যাতলানো পুরুষাঙ্গ নিয়ে শুয়ে থাকতে ,
পুরো দেহ তার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত
অপরাধ তার একটিই
মাতৃভূমির মুক্তি চেয়ে সে লিখেছিল একটি কবিতা |
যুবতীর পাশে শুয়েছিল এক বৃদ্ধাও
বুকের মাই ঝুলে পড়েছে , চামড়াও অমসৃণ
মৃত্যুতে তার এমন কিছু ক্ষতি ছিল না
কিন্তু একটি নিরাপত্তাহীনতার প্রতিচ্ছবি
সে উপহার দিয়ে গেল তার পরবর্তী প্রজন্মকে |
স্বর্গীয় কথোপকথন
---- সুমন ঘোষ
বলি হে চিত্তগুপ্ত, হিসাব রাখা বড্ড চাপের মনে হচ্ছে? আজ্ঞে হজুর কি যে করি, কে মরছে ভাইরাসে,কেওবা আবার পিশাচ গুলোর লালসায়; কতকগুলো ক্ষিদের চোটে আর বাকি গুলো দুর্ঘটনায়। তা এত সব একসাথে হলে কোনটা যাবে স্বর্গে, কোনটা নরকে বুঝে উঠতে পারি নে বাপু। বুঝি বুঝি চিত্তগুপ্ত! কিন্তু, করি বলো উপায় নেই, তার উপর কি যেন চলছে ওই লকডাউন না কি? তোমার জন্য খাতা গুলো আনতে পারছি না, বইপাড়া ডুবল সব গেছে ভেসে। হজুর, এরম ভাবে চলবে কেনো? তা ওই বেইমানি বাবু আছে না,ওনাকে বলে যদি একটু ল্যাপটপ্ না কি কই আর ওয়াইফাই এনে দিতেন,বড়ো সুবিধা হতো। এই বুড়ো বয়সে,চোখে সেই আদম যুগের চশমা আবার তার ওপর মাস্ক পারি না বাবু। দেখেন না হজুর যদি কিছু করা যায়। আচ্ছা এতো ব্যতিব্যস্ত হইয়ো না তো দেখছি, দেখছি।
নিয়ন্ত্রণ
---- রিকি ঘোষ
নিয়ন্ত্রিত এই জীবনযুদ্ধের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে
মনকে নিয়ন্ত্রণ করা তেমন কঠিন নয়,
যদি না থাকে চিন্তার গৃহ
যদি পালিয়ে যায় হাজারও ভয়।
মনকে নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে যেতে
অতিরিক্ত পূর্বানুমান বাদ দিয়ে,
কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পেছনে যতটা শ্রমের প্রয়োজন চিতততা দুহাতের মুঠোয় নিয়ে।
পরিবর্তনে আস্থা রেখে ফলাফলের অপেক্ষায় বসে
খারাপ অভ্যাসগুলোর ইস্তফায় স্বাক্ষর করে,
মনকে ধোঁয়াশার প্রাচীরের বাইরে নিয়ে
বসবাস করান শান্তির ঘরে।
চেতনা
সুবর্ণা বর্মন
চারদিকে সংক্রমণের ঝুলি
বইছে মানব সঙ্গ,
ভাগ্যের দোহাইয়ে নিরন্তর অভিপ্রায় ।
সংকটের বিহ্বলতা মজ্জমান-
মান অপমান বিরোধ ধুয়ে
বিলীন হোক মানব - হৃদয়ে।
জাগুক মানবতাবাদের অঙ্গীকার ,
বিদ্ধেষ ঈর্ষার শত্রু নাশ হোক।
আপন জ্ঞানের রূপে পূজিত হোক জাহ্নবী,
আত্মার চেতনা বিবেক চেতনা বোধে,
জীবন মুখি ছন্দে দুর্দিনে
চিত্ত -উদার বানী পরিশুদ্ধিত হোক
মননশীলতায়।
প্রবন্ধ
আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুভাবনা -
---- রাহুল পাত্র
'সুখ-এর বিপরীত দুঃখ, কিন্তু আনন্দের বিপরীত তা নয়, বস্তুত দুঃখ আনন্দেরই অন্তর্ভুক্ত' l
বাইরে কোন দুঃখজনক ঘটনা দেখলে আমাদের চোখে জল আসে l সেখানে কবির প্রতিভার পরিচয় থাকে না l কবি যখন তার অঘটন ঘটান পটীয়সী প্রতিভার বলে তখন সেই লৌকিক 'শোক' আর তার মধ্যে থাকে না l তার দ্বারা তখন পাঠকের হৃদয়-এ অলৌকিক করুণ রসের সৃষ্টি হয় l অলৌকিক করুণরস হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক l এভাবেই' দুঃখের তীব্র উপলব্ধি ' হয়ে ওঠে আনন্দকর তা না হলে কেউ 'রামায়ণ' পাঠ করত না, দুঃখের ছায়াছবিও দেখতো না l পাঠক যখন দুঃখের কাব্য পাঠ করে তখন কাব্যের যাদুশক্তিতে একাত্ম হয়ে যায় l পাঠক অনুভব করে এই দুঃখ একই সঙ্গে তার এবং অপরের, আবার তারও নয় অপরের নয়- তখনই আনন্দলাভ ঘটে l করুণ রসের মানবিক উপাদান দুঃখদায়ক হলেও তার পরিনামি রস আনন্দের সামগ্রী l জীবনের পথচলার ক্ষেত্রে দুঃখকে আমরা পছন্দ না করলেও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে আকর্ষণীয় l সাহিত্যের ক্ষেত্রে ট্রাজেডি মনোরঞ্জন করে বলেই তা উপভোগ্য l জীবনের ক্ষেত্রে দুঃখ-বেদনা হলো পরম সত্য l সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই সত্য জীবনের গভীর তাৎপর্যকে অনুভব করতে শেখায় l সার্থক সাহিত্য পাঠ করলে রসিক ব্রহ্মানন্দের মত আনন্দ লাভ করে, মৃত্যুও সেখানে দুঃখ ও বেদনাকে অতিক্রম করে নিত্য আনন্দের লীলা হয়ে ওঠে l জীবনের সত্যতা অনুভব-এর মানদন্ড মৃত্যু, আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের কাছে l মহান মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল মন দিয়েই জয় করেছেন l তিনি জীবনের মহিমাকে প্রকাশ করেছেন মৃত্যুর ভিতর দিয়েই আর এখানে মৃত্যু তথা দুঃখ আনন্দকর হয়ে উঠেছে l
রবীন্দ্রনাথ আনন্দ বলতে সুখকে যেমন বুঝিয়েছেন, দুঃখ কেও তেমনই বলেছেন l
তিনি বলেছেন দুঃখকে বাদ দিয়ে আনন্দ লাভ সম্ভব নয় l এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ট্রাজিক সত্য হল জীবনের মূল সত্য l রামচন্দ্রের নির্বাসন মন্থরার উল্লাস, দশরথের মৃত্যু - এর মধ্যে ভালো কিছু নেই নিয়ে l তবুও এ ঘটনা নিয়ে কত কাব্য, নাটক, ছবি, গান, পাঁচালী বহুকাল থেকে তৈরি হয়ে আসছে, ভিড় জমছে কত, আনন্দ পাচ্ছে মানুষ l দুঃখের মহনীয়তা মানুষের মহত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে l তাই দুঃখের কাব্যকে আমরা সুখের কাব্য অপেক্ষা অধিক সমাদর করি l দুঃখ অনুভবে আমাদের চিত্তে অধিকতর আনন্দ উপস্থিত হয় l ট্রাজেডি মানুষকে বিশেষ সত্যের মুখোমুখি করে আনন্দ দান করে l
অ্যারিস্টটল জানিয়েছেন, লৌকিক জগতের বেদনাবহুল ঘটনা সাহিত্যে অনুকৃতি হলেও আনন্দদায়ক হয় l নিকল বলেছেন, ট্রাজেডির আনন্দ হল শৈল্পিক অনুভূতির আনন্দ l রবীন্দ্রনাথ ট্রাজেডি পাঠ বা দর্শনের সময় পাঠক বা দর্শককে ট্রাজেডির নায়কের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কথা বলেছেন l নায়ক-এর সুখ-দুঃখের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ অনুভব করে পাঠক, দর্শক আনন্দ লাভ করে l এভাবে তারা ক্রমশ চলে যায় লৌকিক মায়ার জগতে, সেখানে দুঃখ আরামবোধের চেয়ে প্রবল হয়ে ওঠে l ট্রাজেডির দুঃখকর ঘটনা তখন আর দুঃখ করে থাকে না l আসলে প্রকাশের আনন্দই হল সাহিত্যের আনন্দ l যা আনন্দরূপে প্রকাশিত হয় তা সবরকম দুঃখ, যন্ত্রণা, মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায় l ট্রাজেডি আনন্দ সৃষ্টি করতে সক্ষম বলেই সাহিত্যে এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে l তথ্যের সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়াই হলো কাব্য, সাহিত্য ও শিল্পের লক্ষ্য l আর দুঃখ এখানে আনন্দদায়ক l
শেলী জানিয়েছেন, মানুষের আত্মা জৈবিক সত্তা ও অন্তরতম সত্তা - এই দুই ভাগে বিভক্ত l এই দুইভাগের সামঞ্জস্য দানে আনন্দের সৃষ্টি হয় l গভীর দুঃখ আনন্দের জন্ম দেয় l জীবনের ক্ষেত্রে দুঃখ-বেদনা পরম সত্য l রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর অর্থাৎ চরম দুঃখের ভিতর দিয়ে জীবনের মহিমাকে প্রকাশ করতে শিখেছিলেন উপনিষদের মন্ত্র থেকে - বলা হয়েছে 'মানুষ অমৃতের সন্তান' l অমৃতের জগতে প্রবেশের চাবিকাঠি আছে মৃত্যুর কাছে, দুঃখের কাছে l আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের কাছে এই-ই জীবনের সত্যতা অনুভব-এর মানদন্ড হয়েছে মৃত্যু এবং দুঃখ l তাই রবীন্দ্রসাহিত্যে মৃত্যুও দুঃখ অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এবং পাঠকের অন্তরে তা অপরিসীম আনন্দ প্রদান করেছে l সুখ ও দুঃখের সম্মিলিত রুপই হল রবীন্দ্রচিন্তায় 'আনন্দ' l
রবীন্দ্রনাথের মতে মৃত্যু এই অস্তিত্বের ভীষণ ভারকে সর্বদা লঘু করে রেখেছে আর জগতে বিচরণ করার অসীম ক্ষেত্র দিয়েছে l যেদিকে মৃত্যু সেদিকেই জগতের অসীমতা l আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু তথা দুঃখকে আনন্দেরই পরিপূরক হিসেবে দেখেছেন l রবীন্দ্রসাহিত্যে তাই
মৃত্যু অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এবং পাঠকের অন্তরে দায়িত্ব অপরিসীম আনন্দ দান করেছে l এই আনন্দ হল লীলার আনন্দ, বিচরণের আনন্দ l
আর মৃত্যু ও দুঃখ এখানে আনন্দেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং এগুলি আনন্দেরই অপর নাম হয়ে ওঠে l
মানবিক মূল্যবোধ
---- টুলটুল দেবনাথ
*********************
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো একটি উন্নত মানব জাতির জন্ম দেওয়া অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ তৈরি করা।যাদের মধ্যে থাকবে দেশ প্রেম, নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ।আদর্শ মানবিক মূল্যবোধ এর সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। যেটা না থাকলে মানুষ প্রকৃত মানুষ এ পরিণত হতে পারে না।মানুষের তখনই মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটবে যেদিন সে ভালো এবং উত্তম মানের কাজ করতে পারবে।যখন একটি মানুষ সৎ হয় আর নিজের কাজ সম্পর্কে দৃঢ় হয় তখন তার চরিত্র ধীরে ধীরে মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী হতে থাকে।
প্রাত্যহিক আমরা যে জীবন যাপন করি সেখানে একজন ব্যক্তি যে জিনিসটি একান্ত প্রয়োজন সেটি হল মূল্যবোধ। মূল্যবোধ যে চারিত্রিক গুণ সেটা আমরা নিজেদের পরিবারের নিকট জন্মলগ্ন থেকে পেয়ে থাকি।সকল সৎ গুণের মধ্যে মূল্যবোধ শব্দটি মানুষের চরিত্রের একটি বলিষ্ঠ গুণ যা আমরা রপ্ত করতে সক্ষম হই পরিবার ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে।
একজন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ সমাজ কল্যাণ বা রাষ্ট্র কল্যাণে যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন এগিয়ে আসতে দ্বিধা বোধ করেননা।একই সাথে অন্য একজন মানুষ তার নিজের চোখের সামনে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়া কিংবা তার নিজের সাথে কোন অন্যায় মেনে নিচ্ছেন নতমস্তকে বুঝতে হবে তার নিজের মানবিক চেতনা লোপ পেয়েছে। সে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। অর্থাৎ মূল্যবোধ লালন পালনে তার নিজের কোন ইচ্ছাই নেই। সে যেমন প্রতিবাদ করতে পারে না তেমনি সে অন্যায় মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
আমাদের নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গৌরবময় ইতিহাস কে যদি টিকিয়ে রাখতে চাই তাহলে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এর প্রয়োজন। নচেৎ আমরা কিছুতেই পারব না নিজেদের অতীত ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমাদের দরকার একনিষ্ঠ লক্ষ সুষ্ঠু মূল্যবোধসম্পন্ন মনুষ্যত্ব অর্জন করার জন্য। মনুষ্যত্বের সাথে মানুষের নৈতিকতার প্রয়োজন রয়েছে সঠিক মানবিক মূল্যবোধের জন্য। মানুষের মূল্যবোধ পারে মানুষকে যথার্থভাবে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে এবং তার চরিত্রের সৌন্দর্যায়ন করতে। মানুষের এই মানবিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে সমাজের মূল ভিত্তি। উন্নত রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি হচ্ছে এই মানবিক মূল্যবোধ। যার মূল্যবোধ আছে তিনি বিবেকবান ব্যক্তি। আর সেরকম একজন ব্যক্তি সহমর্মী হয়ে থাকেন। তিনিই পারেন সমাজ কল্যাণ কার্য ব্রতী হতে আর একসাথে নিজের ও অন্যের সুখ সুবিধা দেখতে এবং সেই কাজে তার বিবেক তাকে সাহায্য করে থাকে।
যার মানবিক বিবেক নেই সে অন্যের সমস্যায় দুঃখে কষ্টে এগিয়ে আসতে পারেন না ফলে তার নিজের বেলাতেও কেউ এগিয়ে আসেন না। যখন আমাদের মানবিক বিবেক কাজ করে তখন নিজের অজান্তেই আমরা অন্যের ভালো চাই। ফলস্বরূপ অন্যের কাছ থেকেও আমরা সহমর্মিতা পেয়ে থাকি। একজন মানবিক মানুষ সবসময় আদর্শে বলীয়ান হয়ে থাকেন। তিনি সহমর্মিতা,সৌজন্যবোধ ,মানবিকতা, বিনয় শিষ্টাচার এসব গুণের অধিকারী হয়ে নিজেকে আলোকমন্ডিত করে তুলেন।সাথে নিজের আলো বিকিরণ করে মূল্যবোধের বিকাশ সাধন করেন এবং সুস্থ-সবল সমাজ গঠন করতে সক্ষম হয়ে থাকেন।
মূল্যবোধ হচ্ছে নিজের বুদ্ধি আর দক্ষতার সাহায্যে প্রত্যেকটা জিনিস এবং কাজের ভালো-মন্দ দোষগুণ বিচার-বিশ্লেষণ বা মূল্যায়ন করতে পারাকে বুঝায়। সুস্থ এবং সুষ্ঠু নীতির প্রতি
সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন থেকে আসতে পারে নীতিবোধ আর নীতিবোধ থেকে আসবে নৈতিকতা। চলমান সমাজ গঠনে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা অতি প্রয়োজনীয় এবং এর ভূমিকা অপরিসীম।এই শিক্ষার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অনুশীলন যার বীজ গ্রন্থন ঘটে পরিবার থেকে এবং ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে সমাজে। এই নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রথম আর প্রধান উৎস হলো শিশুর বাবা ও মা। একজন শিশুর উপর মা এর প্রভাব সব থেকে বেশি। তাই প্রত্যেকটি পরিবারের মাকে নৈতিক শিক্ষার অধিকারী এবং পরিমার্জিত হওয়া দরকার।মূল্যবোধ সততা এবং সৎ চিন্তা থেকে জন্ম নেয় যা মানুষকে মানবিক বোধশক্তি তে উজ্জীবিত করে তোলে এবং ন্যায়ের পথে চালিত করে।
তাহলে মূল্যবোধ বলতে আমরা বুঝি একজন ব্যক্তির সার্বজনীন আচরণ যা সত্য ন্যায় এবং ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষের মূল্যবোধ এমন এক জিনিস যা কালের পরিবর্তনেও পরিবর্তিত হয় না। মানবিক মূল্যবোধ মানুষের শাশ্বত গুন। আর এই মূল্যবোধ সুষ্ঠ সমাজে সর্বজন স্বীকৃত।
আমাদের সমাজের আচার নীতি এবং মনোভাব সমাজের অনুমোদিত পরস্পরিক ব্যবহারে একজন ব্যক্তির মধ্যে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালবাসা আর সততা ইত্যাদি ভাবের সৃষ্টি করে থাকে।এমনটা হয়ে থাকলে সেখানে নৈতিক ,সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রবাহমান আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আর এমন নৈতিক আদর্শ যে সমাজে বিদ্যমান সেখানে কোন অনাচার থাকতে পারে না।যেমন-ঘুষ ,প্রবঞ্চনা ,শোষণ ,প্রতারণা ,স্বার্থপরতা এসব দুর্নীতি থেকে সমাজ মুক্ত থাকবে এবং জীবনে আদর্শের প্রতিফলন ঘটবে। ন্যায় নীতি যুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত জীবনই আদর্শ জীবন।
দুঃখের বিষয় যতদূর চোখ যায় দেখা যায় সব দিকে হীন তৎপরতার পাহাড় গড়ে উঠেছে। সমাজের ক্ষমতাবান লোকেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। স্বীয় বৈভবের পাহাড় তৈরি করছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ,মানব সেবা, সব জায়গায় শুধু অর্থের মুনাফা দেখছেন। সকল ক্ষেত্রেই অনৈতিকতা ও অরাজকতা বিরাজ করছে। কোথাও স্বচ্ছতা নেই। প্রত্যেকেই সামাজিক বা মানবিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলছেন। ন্যায় অন্যায়ের মাঝখানে কোন ব্যবধান নেই। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি বিশেষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে শিশু এবং যে কোন অবলা প্রাণ এরা অপরাধী না হলেও শিকার হচ্ছে কিছু বিবেকহীন মানুষের দ্বারা।
পরিকাঠামো হীন বুনিয়াদ ও উন্নয়ন অনেক দেখা যায়। কিন্তু মানতেই হবে যে কোথাও একটা গলদ হয়ে রয়েছে। নয়তো সমাজের এত অবক্ষয় কেন? পুষ্টিগত কারণে হোক বা ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য হউক মনে হয় সমাজে অন্যায় অনাচার বেড়েই চলেছে। মানুষের মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় স্বরূপ দিনে দিনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ লুপ্ত হচ্ছে আর এর ফলস্বরূপ ভবিষ্যৎ দিনে মানুষের উপর কি ধরনের বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে তা ভাবলেও আতঙ্কিত হতে হয়। মনের ভিতর ছোঁয়াচে রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে এ বিপর্যয় দেশ ও সমাজের প্রতিটি কোণে কোণে। সামাজিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় হচ্ছে।এই বিপর্যয়ের প্রতিকার আমরা কমবেশি সকলেই জানি।কিন্তু সঠিক কি করতে হবে জানবার পরও সেই কাজ কেউ করছি না শুধুমাত্র নিজেদের কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য।
এখানে কেউ কারো সর্বনাশ করার আগে দুবার ভেবে দেখার জন্য নিজেদের কাছে সময় নেই। নিজেদের লোভের বশে কচি শিশুর কাচা মন নিয়ে নির্দ্বিধায় খেলছি।
রেখে যাচ্ছি নিষ্ঠুর অমানবিকতার চিহ্ন সরল শিশুমনে। তাদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক আর ভয়। আতঙ্কে তাদের শৈশব খর্ব হচ্ছে।ভুলে যাচ্ছি যে সব অন্যায় আমরা করছি সেসব পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও আমাদেরকেই করতে হবে ।সমাজের অমানুষদের দ্বারা গঠিত অন্যায় বা অমানবিকতা সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করছে। দুর্বিষহ করে তুলছে মানুষের বেঁচে থাকা।
মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে আর আশংকায় দিন কাটাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন আর এই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাবনার বিষয় ।
আজকাল সংবাদ মাধ্যমে প্রায় আমরা দেখতে পাই শিশু অপহরণ ধর্ষণ খুন এসব ঘটনা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। নির্লজ্জের মত আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে তাদের অসহায় অবস্থা।বিবেকহীন দুর্বৃত্ত বর্বরদের একমাত্র লক্ষ বস্তুর হচ্ছে নিরপরাধ অসহায় নিষ্পাপ শিশুরা। কেন এভাবে শিকার হচ্ছে তারা? তাহলে কি আমাদের সমাজ সভ্যতা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি?তাহলে কি দুরাশয় ব্যক্তিরা সামাজিক শিক্ষা ও সভ্যতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ? তবে কি আমাদের স্বাধীনতা থেকে আমরা কিছু অর্জন করতে পারিনি এখনো?
আমাদের সমাজে নারীরাও সুরক্ষিত নয় ।যে নারী একটি সমাজের সৃষ্টি করে থাকে। যে নারী এই অনন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কারিগর তার আজ নিজেরই সুরক্ষা নেই।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বা একটা পরিবারেই হোক নারীরা
অবহেলিত হচ্ছে ।অনেক অন্যায় অত্যাচারএবংমানসিক
নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু মাত্র আমাদের সমাজের হীন মূল্যবোধের জন্য।নারীদের প্রতি আমরা নিজের শ্রদ্ধাও সন্মান হারিয়ে ফেলেছি সেটা আমাদের মানবিক চেতনাবোধের অবনতির জন্যই। চাইলেই একে অপরের সাথে পা মিলিয়ে চলতে পারি ।শুধু মাত্র আমাদের বিবেক বুদ্ধিকে সঠিক ব্যাবহার করে।একটা সুন্দর পরিবার ও সমাজ গড়ে তুলতে পারি অনায়াসে।
নারীদের ও নিজেদের অবলা না ভেবে শিরদাঁড়া শক্ত করে ঘুরে দাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।নিজেদের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিতে হবে।এখানে
স্বামিবিবেকানান্দের একটি উক্তি তুলে ধরা যেতে পারে।
"বেদান্তে সংগ্রামের স্থান আছে কিন্তু ভয় এর স্থান নেই। যখন এসব সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে সচেতন হইতে শুরু করিবে, তখনই সব ভয় চলিয়া যাইবে। নিজেকে বদ্ধ মনে করলে বদ্ধই থাকিবে, মুক্ত ভাবিলে মুক্তই হইবে।"
আজকাল ঘরে ঘরে দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা মায়েদের অসহায় অবস্থা। যে বাবা মা নিজের সমস্তটা দিয়ে তার সন্তানদের মানুষ করেন সেই সন্তানই একদিন তাদের বাবা মায়ের বৃদ্ধ কালে অসহায় অবস্থার সন্মুখীন হতে বাধ্য করে। সন্তানের ঘরে বাবা মায়ের জায়গা হয়না।তাদের ঠিকানা হয় কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অনাথ আশ্রম। এসবই মানবিক চেতনা বোধের অভাব ।
তবে কি জন্য এত হাজার হাজার স্কুল কলেজ আর পঠন পাঠন! যদি কোন কিছুই আমাদের মনের দুনিয়ায় দাগ কাটতে পারেনি। কেন জাগলো না মানুষের মানবিক চেতনা!কেন কোনো ব্যবস্থাই জাগাতে পারলো না মানুষের মনের সহানুভূতিশীল সত্তাকে? কেন হচ্ছে মনুষ্যত্বের পরাজয়? কেন মানুষ নিজের বিবেকের কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছে?একই সমাজে থাকার পরও একে অপরের কাছে অপরিচিত থেকে যাচ্ছি।
সংসার সমাজ এবং দেশকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এটাই মোক্ষম সময় প্রত্যেকের মানব চেতনা বোধ জাগিয়ে তোলার। নিজের বিবেককে ভালো কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভাবনার সৃষ্টি করার। নিজেদের সুন্দর অনুভূতি দিয়ে মানব মনের আঙ্গিনায় সুন্দর বাস্তব সাবলীল স্বপ্ন এঁকে দেওয়া।যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকার এক নতুন দিশা খুঁজে পায়। সকলেই যেনএক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। এবং নিজের সৎকর্ম সৎ চিন্তার দ্বারা সমাজ ও দেশের উন্নতি সাধন করে নিজেদের গৌরবান্বিত করে তুলতে পারে।
সকলকে ভাল রাখতে হলে প্রত্যেককেই নিজের ভালো লাগার বিষয়ে সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং সাধ্যমত সেই সংকল্প পূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। ধর্ম ও রাজনীতি এসব বিষয়ে যেন আমাদের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে না পারে। মানুষ হয়ে যেন আমরা মানুষ হিসাবেই পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে পারি।"প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"। এই মানব চেতনার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের মনকে।
অনুগল্প
বৃষ্টি সংক্রান্ত বিড়ম্বনা
আরশাদ আল গালিব
-------------------------------
বাস থেকে নেমে স্টেশনে দাঁড়ালাম। কি বিষ্টিরে বাবা ঝরছে তো ঝরছে ই থামবার আর নাম নেই। এদিকে হাবলুটার ও নিতে আসার কথা ছিল স্টেশনে। কিন্তু কই ওর টিকিটাও তো দেখা যাচ্ছে না।
'যাহ বাবা ভুলে গেলো না তো। তাহলেই সেরেছে।'
কি মুশকিল এ পড়া গেলো দেখছি। আগে যদি জানতাম যে এরকম ফাঁটা বাঁশের চিপায় পড়তে হবে তাহলে আর এমুখো হবার নাম নিতাম না। কিনতু হাবলুটা এত করে বলল যে ফেলতে পারলাম না। অগত্য ব্যাগ কাঁধে করে চলেই এলাম। এদিকে এসে বাস থেকে নেমে হাবলুর কোনো পাত্তা নেই।
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর এবার সিদ্ধান্ত নিলাম হাঁটা শুরু করব। যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করলাম হাঁটা।
তবে হাঁটা তো শুরু করলাম কিন্তু পৌছাব কিভাবে সেটা তো জানি না। না জানি হাবলুর বাড়ির ঠিকানা, না জানি ওদোর বাড়ির কারো নাম।তাই কি আার করা উদ্দেশ্যেহীন ভাবে হাঁটছি আর ভাবছি যে রাস্তায় কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করে নিবো।
কিন্তু হায় হায় একি!!! আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো সারা রাস্তায় একটা লোক ও নেই!! কি করে পৌছাই। ভাবছি আর হাটছি। এসময় একবার যদি হাবলুটাকে হাতের কাছে পেতাম বুঝিয়ে দিতাম।
'উঃ বাবারে গেলাম গেলাম,, কি মশাই দেখে চলতে পারেন না। চোখ কোথায় থাকে? আসমানে নাকি। '
'যাক বাবা অবশেষে কাউকে পেলাম। আংকেল সরি দেখতে পাই নি।'
'ঠিক আছে বাবা ঠিকাছে তা কোথায় যাচ্ছিলে এমন গজেন্দ্র গমনে।'
আজ্ঞে এ গ্রামের হাবলুদের বাসাটা খুজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। একটু বলবেন প্লিজ।
'ও এই কথা, আসো আমার সাথে।'
আমিও লোকটার পিছু পিছু চললাম। প্রায় বিশ মিনিট পর একটা বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম।
আসার পর আমাকে দেখে বের হয়ে আসলো হাবু। সাথের লোকটিকে দেখিয়ে বললো, আরে এই তো আমার বাবা।
আর এদিকে আমি পূর্বোক্ত ব্যাবহারের জন্য লজ্জায় অবনত।
কবিতা শেষ ভাগ
বর্ষা তুমিও এলে
----আলোক মন্ডল
আতঙ্কে এখনোও আছি, আবহাওয়ার শুষ্ক বাতাসে। বর্ষা তুমি কেন এলে, প্রকৃতির খোলা আকাশে। জানি তুমি নতুন সবুজ, জানি তুমি নতুন আশা। জানি তুমি রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি, জানি তুমি ছাতার ভালবাসা। বর্ষা তুমি কেন এলে, চাষীর মন করলে জোয়ার। ফুল ফুটুক না ফুটুক, তারা চায়না কিছু আর। বছর ফিরে আসো একবার, খানিক রূপের দিশায়। কষ্ট দাও দুঃখ দাও, তাও মিথ্যে ঝলকের আশায়।
সহবাস with পান্ডুলিপি
সত্যব্রত ধর
পরে থাকা ছায়া কুড়িয়ে,
অবেলায় বাঁচাতে চাইছে
কিছু স্বপ্ন।
বাজারের হরতালে ছাপোষা সংসারে,
মাসের হিসাবে গোজামিল
চলে ক্রমাগত।
বিধবা বছরে সাপের বিষাক্ত ছোবল,
সমাজের বুক থেকে ছিনিয়ে
নিচ্ছে লোকাচার।
আঙুল ছাড়িয়ে নিয়েছি,
ফুটফুটে সম্পর্কের মায়াভরা
আহ্লাদ থেকে।
গভীরতার বীজ পরীক্ষামূলকভাবে,
চুরি গেছে চিরুনির ফাঁকে থাকা
বীর্য থেকে।
অন্যায় বেঁচে চিন্তাশক্তি হারিয়ে,
পান্ডুলিপির সাথে সহবাস
চলছে...চলবে।
"জেতার চেয়ে জিতিয়ে দেওয়ায় আনন্দ"
---- নৈর্মিষা প্রামানিক
কিছু কিছু খেলায় নিজে জেতার চেয়ে কাউকে জিতিয়ে দেওয়ায় আনন্দটা অনেক বেশি।তাই বলে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে তা নয়,তবে ত্যাগী হতে হবে। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে তিতাসের শীতল ঢেউয়ে প্রিয়জনকে ভেসে যেতে দেখার চেয়ে, নিজেকে ভাসিয়ে দিতে কার না ইচ্ছে হয়।তাহলে নিজেই বেঁচে যায়,আর নাহলে জীবিত এক লাশে পরিনত হয়।জীবন আর জগতের তৃষ্ণা কারোর কোনদিন মেটে না কিন্তু বিরহ আর যন্ত্রনার তৃষ্ণা তো একদিন মেটে। প্রকৃতি যদি পুরুষ হয়,তাহলে নারী তার সৌন্দর্য। আমি সেই নারী হতে চাই।যে নারী জিততে শেখেনি কোনোদিন, শুধু শিখেছে জেতাতে ---
অভিমান
ব্যর্থ লেখক
তোমার জন্য আবেগ বুনি পড়ি ভূমিকার সেই প্রথম বই।
প্রথম পাতায় তুমি ছিলে উপসংহারের শেষটা কই।
বর্ষা আমার ভালোলাগে, ভালোলাগে শ্রাবণের সেই কোলাহল।
বৃষ্টিতে এখন হাঁটতে ভালোবাসি দেখায় না তাই চোখের জল।
তুমি ছিলে সভ্যতা,জাতি আমার ধর্ম তোমার জন্য আনব জলের তলের মরীচিকা।
আজ বজ্রশোকে কোথায় তুমি হারিয়ে যাওয়া আমার একলা ঘরের অনামিকা।
দাবানলে পুড়ছে আজ বসন্ত বাগান মাসের-পর-মাস।
স্মৃতির ছাইয়ে ফুটে উঠেছে ক্লান্ত রাতে রক্ত পলাশ।
গড়ার আগেই ভেঙে গিয়েছে শুনেছি গম্বুজের সেই ইতিকথা।
ভাবছি ভালোবাসায় প্রলেপ লাগাবো যদিও রইবে পড়ে নীরবতা।
তোমার পাশে পাই না আর স্মৃতির মায়ার গন্ধ আতর।
ঘুমহীন রাতে জেগে উঠি হয়েছি আমি বিবশ পাথর।
পায়ের ছাপে মরছে পড়েছে হচ্ছে আমার প্রবল রক্তপাত।
তোমার বুকে শান্ত হাওয়া উঠবে কেন আর জোর জলোচ্ছ্বাস।
প্রেমের জালে মরছি জ্বলে আসেনি সে সানুতলে।
রংধনু আজ ওঠে না বৃষ্টির পর আকাশ মেলে।
পাইনা আমি তুচ্ছ ভেবে ভুলে যাওয়ার তোমার একটা কারণ।
উপসংহার পড়বো না আমি করো না তুমি নাম উচ্চারণ।
নৌকো খন্ডে দাঁড়িয়ে তুমি বলছো সূর্য যেন বড়ই স্বার্থপর।
তোমায় খুঁজতে আমি ব্যস্ত নই, নয়তো আমি কারিগর।
শ্রাবনী ----
---- পার্থ চক্রবর্ওী
----------------
এলোকেশী হয়ে চলেছো কোথায় অভিসারে
সিক্তবসনে অপরূপ শরীরী আহবানে
যেন এখনই উন্মুক্ত হবে প্রনয়ের স্বপ্নচারা
দেখ, আমার কৃষ্ণ যেন না হয় রাধাছাড়া
অলস মন বিরহে যেন সাথীহারা
ভিজে বাতাসের গন্ধে হৃদয় বাঁধনহারা
হঠাৎ ভ্রূকুটি মেলে দামিনী বাঁকা পলকে
নীরবতার প্রেম যেন অসহ্য তার কাছে
সহসা শুষ্ক কানন নাচে উচ্ছল বারিধারায়
বিজলির অট্টহাসে প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়
অনন্ত তৃষ্ণার চাহিদা কি আর মেটে একবারে?
তুমি আছ বলেই না যৌবন এখনো আসে বারেবারে।
ENGLISH SECTION
Discussion
A tribute to Satyajit Ray
---- - Moutrisha Pyne
From the vastness of Pather Panchali,
to the trilogy of Aparajito,
You stimulated and subdued and sublimed
every word which was emasculated,
measured every breath,
enwrapped reality in tenderness.
Your every step unravelled the tree of soul-
Whose roots being passion and creativity, spread deep and firm in soil.
From the heart warming fiction of Feluda's goyendagiri to Proffessor shanku, Tarini khuro and Banku babur Bandhu,
With constant endeavor;
You marked your presence in the memoirs of Fatik chand and Mullah nashiruddin.
A splendid epitome of a miraculous mind!
Every drop of you seemed to be diluted in dimensions of a writer, illustrater, publisher and a maverick filmmaker !
A whole new revolution of black and white cinema!
As the saying goes of Akira Kurosawa-
"To have not seen the films of Ray is to have lived in the world without ever having seen the moon and the sun.”
You were a ray of hope.
A ray of eye dazzling light in the profound haystack of chaos and cacophony.
A ray of alluring rainbow bounded by flavours of art and curiosity.
Its blue ink smudged the white,
intwined the bizarre fragrance of sudden tumultuous feelings.
Your swift words dripping down thee old nib of that fountain pen, cascading through paper,
giving them an identity, a look-out and
Witness to love, loss and all that's life.
The era bewitched by the glam stricken glowing charms of Bahshahi angti Robertsoner Rubi and the astonishing story of Jahangirer swarnamudra,
along with
Phrases scribbled in Dr munshis Diary,
ignited fire within each spell bound critic.
Such was your mindblowing power of captivity !
Words that inspire them,
Words that mesmerize,
Words, structured in forms of verses, poems, stories, proses, essays,
Speeches, dedications and what not.
Perhaps its just like Sonar kella,
only the lost treasure here is the lost era of the evergreen, immortal Satyajit ray.
Poetry
You
---Suman Ghosh
You are a rainfall in which I wanna quench my thirst. You are like a simoom,I'm the Sand Cusk.You are such a lovely rose which I can't pluck it out; rather it's mesmerising my mind.You are a sky and I am the horizon line, praying together to attach forever.
নিবেদনে সম্পাদক
অপরাজিত পত্রিকা যে ভাবে নবীন প্রবীণ মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে , তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ঈশ্বর আর আপনাদের । আমি শুধু তার ইচ্ছের এক ক্ষুদ্র দাস ।
অষ্টম গর্ভের এই সন্তান আপনাদের ভালো লাগবে এটুকু আশা রাখি । কারন এর প্রতিটি লেখায় পরিশ্রম আছে । আপনারা যারা আজ এই সংখ্যা পড়ছেন , তারা একটু মন দিয়ে পড়ুন , সমালোচনা করুন কারন এর প্রতিটা লেখায় ওদের ঘাম ঝরানো খাটনি আমি দেখেছি । আমি দেখেছি ওরা এই সুযোগ পেতে কিভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে । ওদের ভবিষ্যৎ নথি আজকের এই অপরাজিত অনলাইন ৮ ।
পাশাপাশি সিনিয়র লেখক ও লেখিকাদের কাছে বলবো অপরাজিত ৯ , ১০ বা ভবিষ্যতের যে কোন সংখ্যায় লেখা পাঠান । দেখুন আপনাদের লেখা সবাই লুফে নেবে । কিন্তু এই পত্রিকায় লিখলে তরুণরা উৎসাহ পাবে । তাদের জন্য একটি লেখা প্রতি সপ্তাহে প্রতি বড় লেখকের থেকে কি পেতে পারি না !
ভবিষ্যত বাংলা সাহিত্যের দিকে নজর রেখে আজ নত মস্তক আপনাদের চরণে আমার । অপরাজিত অনলাইনে আপনার সেরা লেখা প্রতি সপ্তাহে পাবো , আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য পাবো এই স্বপ্ন নিয়ে আজ শেষ করলাম ।
( এখন শুধু বাংলা নয় , ইংরেজি লেখাও ছাপা হবে অপরাজিত অনলাইন পত্রিকায় ) ...
সম্পাদকীয়
মনে পড়ে, ছোটবেলায় স্কুল জীবনে আমার কয়েকজন সহপাঠীকে দেখতাম প্রায় প্রতি বছরই, বই-লেখাপড়া-ক্লাসের ফাঁকে কয়েকগাছা রঙীন রেশমী সুতোয় পরম যত্নে হাত ও আঙুলের শৈল্পিক নৈপুণ্যে গড়ে তুলত কিছু সুতোর মোটিভ। সুদৃশ্য বস্তুটির মাঝখানে থাকত কৃত্রিম ফুল, কিছু পুঁতি আর অনেকখানি ভালবাসা। ধীরে ধীরে সেগুলো এক একটি গয়নার রূপ নিত। রঙীন সেই গয়নাকৃতির পিঠের দিকে থাকত সার্টিনের সরু ফিতে। এক নিবিড় উৎসাহ ও পরম মমত্ববোধে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম আমি। তৈরী শেষ হলে একটি নির্দিষ্ট দিনে সহপাঠীরা আমাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোন এক অজানিত আগ্রহে পেলব অলঙ্কারটি বেঁধে দিত হাতে । আর সেটাই ছিল আমাদের স্কুল জীবনে এক রেশমি উৎসব। রাখি বন্ধন উৎসব।
আমার কাছে রাখি বন্ধনের সংজ্ঞা এভাবেই এসেছে। পরিবারে রাখিবন্ধন বা তাকে ঘিরে কোন উৎসব আমি দেখিনি।
বাবার কাছ থেকেই আমার পাওয়া প্রথম, রাখি বন্ধনের প্রকৃত ও প্রসারিত আভাস---
জেনেছিলাম ,পরাধীন ভারতবর্ষে ধর্মীয় বিভেদ যখন মনুষ্যত্বকে ছাপিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধকে দলিত করে বাংলাভাগের নেশায় মেতে উঠেছিল সেই সময় রাখি বন্ধন সবথেকে বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল। সেই প্রাসঙ্গিকতা রয়ে গেছে আজও।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় রাখি বন্ধনকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু। বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে হলুদ সুতো বেঁধে দিনটাকে মিলন দিবস হিসেবে উদযাপন করেছিলেন। বাংলায় হিন্দু-মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতাই ছিল রাখিবন্ধনের মূল বিষয়।
সেই দিনটা এমন , বলাই বাহুল্য সেটা রাখিপূর্ণিমার দিন ছিল না।
অসংখ্য মানুষ ও পথ মিশে যাচ্ছিল মিছিলে, মিছিল মিশে চলেছিল এ বাংলার অন্তস্থলে । গলায় ছিল রবি ঠাকুরের লেখা গান, ' বাংলার মাটি , বাংলার জল' । এই সমাগমে কারা ছিলেন না---
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর , দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , আর এই ভিরে ছিলেন পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ছাত্র, গৃহবধূ সমাজের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সে ছিল এক উত্তাল গণ আন্দোলন যা বঙ্গভঙ্গ রোধে কার্যকর হয়েছিল রাখি বন্ধনের প্রতীকী অস্ত্রের মাধ্যমে।
তবে তার সাথে শ্রাবণ মাসে রাখি বন্ধন কিংবা রাখিপূর্ণিমা, তার কোন যোগসূত্র নেই।
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় রাখি বন্ধন উৎসবে ভাই বোনেদের এক স্বর্গীয় সম্পর্ককে উদযাপন করে। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় হাতে রাখি বেঁধে দেওয়া --- এ যেন স্নেহের বন্ধনকে এক উৎসারিত উৎসবের রূপ দেওয়া।
পুরাণ থকে ইতিহাস রাখি বন্ধনের নানান গল্প বলে
--- তার স্বল্প-বিস্তর কাহিনী আমাদের সকলেরই জানা তবুও,
সার্বিকভাবে রাখি বন্ধন' কোথাও ভাই বোনের রক্ষা বন্ধন , অঙ্গীকার......
কোথাও বা মানব সমাজে এক মৈত্রীর বার্তা বাহক, সেখানে তার মাহাত্ম্য রঙীন সুতোয় বাঁধা সহস্র এলোমেলো মন, এক ধর্মের হাত আর এক ধর্মের হাতে হাত রাখার প্রচেষ্টা । যে প্রচেষ্টা একটা দেশকে একতার সুতোয় বেঁধে রেখে উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ করতে পারে : আমাদের দেশবাসী তা জানে।
প্রতিদিনের যাপন যদি হয় একঘেয়েমী তবে তার উল্টো পিঠে থাকে কিছু রঙীন আলো, সেই রামধনুর ছটা, যা উৎসবেরই এক অন্য মানে।রাখি বন্ধন আমার কাছে এক উৎসবের অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। এ ব্যাপারে কিঞ্চিত আমি অনুসন্ধিৎসু , আমাদের মনের নীচে যে পলি জমে আছে, তা সরিয়ে বহতার ভাষা এনে দিতে পারবে কি এই , 'রাখি' ?
পারবে, চারপাশে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারকে উৎসবের আলো দিয়ে হারিয়ে দিতে ?
হয়ত আমি বা আমরা আশাবাদী--- আসবে কোন সেদিনের সেদিন......
বহমান সময়ে, দামী রাখির নীচে ঢাকা পড়ে থাকা রঙীন দু-গাছি সুতোর বন্ধনের ধারণা, হোক্ সে চিরন্তন, যা একান্ত সৌহার্দ্যের।
পবিত্র ভাই বোনের স্নেহের বন্ধনের মতো আমাদের দেশের মাটি , দেশের জল , দেশের মানুষ এক হোক্ , এক হোক্,
হে ভগবান।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মৌসুমী মুখোপাধ্যায়
কভার কাহিনী
নদী যেমন বহমান তেমন আমাদের জীবনধারা, ধরাধামে এলে আর কি পালিয়ে বাঁচা যায়?? ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি আত্মহত্যা নাকি মহাপাপ! মানুষ বেঁচে থেকেই এমন মরণ যন্ত্রণা ভোগ করে যে সে ঈশ্বরের দেওয়া সবচেয়ে দামী উপহার এই নিশ্বাসকে শেষ করে দেয়, সে হয়ত সাময়িক মুক্তি পায়॥ আত্মা কি আর শান্তি পেল? আমার 11-12 এ দর্শন ছিল আমি পড়েছি আর উপলব্ধিও করেছি বটে যে আত্মার মৃত্যু নেই তা যে ঈশ্বরের অংশ! তাই কখনো কখনো যা কিছু ঘটে জীবনে তাকে চলতে দিতে হয়, সময়ের মতো শক্তশালী আর বোধহয় কেও নেই তাই সময় সব পারে, সবার প্রশ্নের উত্তর সে ই দিতে পারে যথাযথ প্রমাণ সহকারে॥তাই তার অপেক্ষা করতে শিখতে হবে আমাদের। আর হল ধৈর্য, এ এক মহান শক্তি যা মানুষের জীবনে ফুল ফোটাতে পারে, ধৈর্য নিয়ে আমাদের বাধার সম্মুখীন হতে হবে এবং অনেককিছু সহ্য করতে হবে,কোনো সফল মানুষের সফলতার দুটো স্তম্ভ হলো এই ধৈর্য আর সহ্যশক্তি,
"বিপদি ধৈর্য্যমথাভ্যুদয়ে ক্ষমা
সদসি বাকপটুতা যুধি বিক্রমঃ।
যশসি চাভিরুচি ব্যসনং শ্রুতৌ
প্রকৃতিসিদ্ধমিদং মহাত্মনাম্ । "
অনেক অনেক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদের মধ্যেও এই গুন যথেষ্ট দুর্লভ বলেই বোধ হয় আমার এতদিনের জীবনে! আমি এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে করি আমরা প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো সমস্যার মধ্যে রয়েছি আর এর থেকে বেরোনো যায় একটাই উপায়ে তা হল নিজেকে সবরকম পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে শক্ত মনে হাসিমুখে তাকে কাটিয়ে উঠতে পারি এটাই আমাদের জীবন কাটানোর একমাত্র উপায়... পরিস্থিতি অনেকরকম হবেই কিন্তু তার ভার যেন আমাদের আনন্দকে ছাপিয়ে না যায় সেটাও আমাদের বড় দায়িত্ব কারণ আমরা অন্য সবাইকে ভালো রাখতে চাই আর সেকাজে পিছিয়ে পরি আর ক্লান্ত হলে বলি সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভালো রাখতে পারিনা অথবা আমার খেয়াল রাখার কেও নেই বলে ইন্সেকিউর ফিল করি, অন্যকে দোষারোপ করি আর কষ্ট পাই। কেন এমন হবে? নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব কি নিজেরও নয়? অনেকে মনে করি নিজের কথা ভাবা স্বার্থপরতা, কিন্তু কখনো এটা ভেবেছ যে নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখবে কিভাবে? তোমার কাছে যদি টাকা না থাকে তবে অন্যকে দেবে কেমন করে? ঠিক মনের বিষয়টাও তেমনই... নিজের কাছে সুখ, আনন্দ না থাকলে কেমন করে অন্যকে তা দিতে পারবে? আজ থেকে নিজেকে ভালোবাসো, নিজের জন্য কিছুটা সময় দাও দেখবে অন্যদের আরো বেশী ভালোবাসতে পারবে। দুনিয়া আর স্বার্থপর বলে মনে হবেনা।জীবন চলে যাবে নদীর মতো, থামবে না কারোর জন্য পথে, শুধু শেখার পালা তোমার,জিতলে জিতবে আর হারলে শিখবে...
"প্রবিচার্য্যোত্তরংদেয়ং সহসা ন বদেৎ ক্বচিৎ।
শত্রোরপি গুণা গ্রাহ্যা দোষাস্তাজ্যা গুরোরপি" ।
তাই বাইরের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়ার চেষ্টা করে নিজেকে কষ্ট দিও না, বরং খানিক সময় নিজের মতো মূল্যবান মানুষের সাথে কাটাও দেখবে ঈশ্বরের দেখা মিললেও মিলতে পারে!
বর্ণালী
বিশেষ আলোচনা
সত্যজিৎ রায়(2 রা মে 1921-23 এপ্রিল,1992),শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে একজন দিকপাল।শিল্প ও সাহিত্যের আঁতুরঘর তথা কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করলেও, তাঁর শিল্পসত্ত্বা বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের শিল্পজগতে এনে দিয়েছিল ভিন্নতার স্বাদ।একাধারে তিনি ছিলেন চিত্র নাট্যকার,শিল্প নির্দেশক,সঙ্গীত পরিচালক,লেখক এবং বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক। যিনি বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা জগতের একটি নতুন দিকের উন্মোচন করেছিলেন। সত্যজিৎ এর কর্মজীবন একজন চিত্রকর হিসাবে শুরু হলেও পরবর্তী কালে তৎকালীন সময়ের সিনেমা জগতের সবচেয়ে সফল ব্যাক্তিত্ব ছিলেন সেটা বলার উপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তাঁর চলচ্চিত্র জগতে পদার্পনের নেপথ্যে দুটি ঘটনা খুবই উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে কলকাতায় সাক্ষাৎ হওয়া এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তাঁর লন্ডন সফর। এই ভ্রমন কালে বিখ্যাত পরিচালক ভিটরীয় ডি সিকার এর নব্য বাস্তববাদী চলচ্চিত্র " লাদ্রি দি বিচিক্লিত্তে " যার বাংলা অনুবাদ "বাই সাইকেল চোর" এর দৃশ্যপট তাঁকে ভীষণ পরিমানে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলায় যায়। আলোচ্য প্রবন্ধটিতে চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় ও বহু পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা "পথের পাঁচালী" শুটিং সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। সত্যজিৎ রায় এর সিনেমার বিশেষত্ব হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা,যা তিনি তাঁর শিল্পসত্ত্বার দ্বারা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম।সত্যজিৎ রায়ের মতে - " A film is the highest form of commercial art." তাঁর লেখা প্রবন্ধ " A Long Time on the Road" থেকে আমরা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস "পথের পাঁচালী" অবলম্বনে "পথের পাঁচালী" এর শুটিং সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য জানতে পারি। প্রথমেই বলা যায়, "পথের পাঁচালী" উপন্যাস হিসাবে প্রকাশ করতে হতে বিভূতিভূষণ কে যতটা সমস্যার মধ্যে পরতে হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীণ হতে হয়েছিল সত্যজিৎ কে। মোট আটজনকে নিয়ে তিনি কাজ শুরু করলেও আর্ট ডিরেক্টর বংশী ছাড়া আর কারোর সিনেমার ছবি তোলার বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ও সঙ্গীত শিল্পী রবি শঙ্কর জী, ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র, মূল অভিনেতা ও অভিনেত্রী সবাই অনভিজ্ঞ ছিলেন। শব্দ রেকর্ড করার সেরকম অত্যাধুনিক কোনো যন্ত্র ছিলনা। স্থান,চরিত্র ও নানান খুটিনাটি বিষয় সত্যজিৎ রায়কে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। সত্যজিৎ 1952 সালে সিনেমার শুটিং শুরু করলেও তা শেষ করতে প্রায় 3 বছর সময় লাগে, যার নেপথ্যে ছিল অর্থাভাব, যা সব সমস্যার উর্দ্ধে ছিল। সিনেমার কিছু ছোটখাট দৃশ্য তৈরী করে যদি নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় মেলে,যদি কোনো টাকা ওয়ালা লোক পাওয়া যায়,এসব মাথায় রেখে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে তিনি শুটিং শুরু করেছিলেন। প্রায় দের বছর কোনো কাজ হয়নি, তারপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই সিনেমার শুটিং পূর্ণ হয় ও 1955 সালে এটি রিলিজ হয় আর বাকিটা ইতিহাস! ভারতে "পথের পাঁচালী" নিয়ে মানুষ খুবই আগ্রহী ছিলেন। দেশ বিদেশ জুড়ে সমালোচকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল এই "পথের পাঁচালী"। বলা যায় তখন কার সময়ে এটি ছিল বহুল চর্চিত একটি সিনেমা। The Times of India পত্রিকা এই বিষয়ে লিখেছিল- " It is absurd to compare it with any other Indian Cinema...Pather Panchali is pure Cinema." বসলে কাউথার যিনি ছিলেন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস্ এর লেখক ও বিখ্যাত সিনেমা বিষয়ক সমালোচক তিনি এই সিনেমার বিষয়ে মতামত দিয়েছিলেন। যাইহোক সত্যজিৎ রায়ের 31 টি সিনেমার মধ্যে তাঁর সর্বপ্রথম ও বিখ্যাত সিনেমা ছিল এটি, যার তাঁকে চলচ্চিত্র জগতে সুনাম,খ্যাতি অর্জনে একমাত্র সহায়ক ছিল বলা যায়।
~ শ্রী অংশু
দীর্ঘ কবিতা
একমাত্র তুমি আমায় দিতে পারো
---- বিকাশ দাস
একমাত্র তুমি আমায় দিতে পারো মুক্তি
অথচ তোমার কথার ভঙ্গিমায় আমার অফুরান উৎসাহ
অঘোর অভিব্যক্তি ।
তুমি মৃত্যুর মতো জটিল বা ভয়ানক নও ;
তুমি ভেদাভেদ শূন্য প্রজ্ঞাত মনের অদ্ভুত সান্ত্বনা
তুমি কামনার মিথুন আঙিনায় ছড়ানো
মিথ্যা ফুলের প্রলোভন নও।
তুমি তমসাবৃত ভীরু অন্ধকার ছায়া নীড় নও।
তুমি সাজানো গোছানো পরিছন্ন জীবন খোলসের আবর্জনা নও।
তুমি আমার কল্পনার দোলনায়
মিছিমিছি বা অহেতুক দুলে যাওয়া বিচ্ছেদ
বা অবিশ্বাসের যাতনাও নও।
তুমি আমার মহাকাব্যের
নেশায় পাগল করা মাতাল গদ্য ছন্দ
তোমাতে আমি বাঁধা নই তবু চলে আসার দিনে অশ্রুজল
চোখের কোনে জমতে দেখেছি।
অদ্ভুত মোহ টানে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
আছি
এক অসীম মিলনের মত্ততায় তোমার
দেহের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে
গাঢ় আলাপ প্রলাপের ছলে ক্ষনিকের মতো
বাঁধা থাকার মতো মন অন্তত তোমার কিছুতেই সাড়া দেয় না।
শুধু নিজস্ব প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে
ভালবাসার স্বীকৃতিকে দেহের মধ্যে বন্দীর ছলে
সন্ধির অজুহাতে আবদ্ধ রাখতে তুমি অধীর নও।
তুমি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বয়ে যাওয়ার মতো বহমান নও।
তুমি মুক্তমনা নিজস্ব রুচিতে স্থির বা অস্থির গতিময় লমহা
খোদার দেউড়ীতে তোমার নত জানু দেহে
দুর্বলতার প্রকাশ থাকলেও জাগতিক দুর্বলতার বিষ কামড়ে
তোমার দেহ নীল শূন্য। অদ্ভুত তোমার বোধ শক্তি।
তুমি অদ্ভুত নাচের ছন্দ মাখানো অলৌকিক রূপসী নারীও নও।
তুমি বৃষ্টি হানা নীল আসমানের কালো মেঘও নও।
তুমি কারো হৃৎপিন্ড ভেঙে দেওয়ার মতো
সর্বনাশী চাঁদ ভাঙা চুম্বন নও।
তুমি তপ্ত অন্ধকারে ভয় তরাসের নিঠুর বাঁশির তানও নও।
তুমি আলিঙ্গনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকাস্পর্শ কাতর বক্ষও নও।
তুমি সহসা খসে যাওয়া কারো অহংকার ও নও।
তুমি আমার অসমাপ্ত কবিতার বাকি শব্দমালা।
তুমি ডুবে থাকা স্বস্তির নিশ্চল ভালবাসার আবেগবালা।
তুমি অমাবস্যার ঘোর ব্যাদড়া অন্ধকারের
গোপন ঝিনুকে ঘুমিয়ে থাকা শীতল গোমেদ চাঁদ।
তুমি দৃষ্টিহীন লক্ষ্য বিহীন অসম্ভব অঙ্গীকারের
দু’হাত বাঁধা দৃষ্টান্ত নও ।
তুমি স্বয়ং শ্মশান বন্ধুর চিতা চিতার লেলিহান আগুন নও।
তুমি কুল ভাঙা কারোর নিখাদ গোছানো সংসারে
নিকৃষ্ট আঘাত নিনাদ নও।
তুমি একান্ত গোপনে টুকরো টুকরো ভেঙে যাওয়া
নিঃশব্দ মাঝ রাত নও।
তুমি মুখোমুখী বসে থাকা মিথ্যে উপচে পড়া
অনর্থক প্রেমালাপ নও।
তুমি মহাসত্য তীর্থমৃত যোগ।
তুমি আমার সব হারানোর ফিরে পাওয়া
স্মৃতির অভ্যন্তরে সৃষ্টির গুলজার।
মৃত দেহের চারপাশে ফুল ছড়ানো
নীরব উক্তিহীন মধুর কোমল ভাবময় সফেদ কফন।
তুমি মনে রাখার মতন প্রতিদিন
তুমি না বদলানোর মতন অদ্ভূত নিখুঁত সমীকরণ।
আঁচর বিহীন বেদাগ পাক আমন।
তুমি কারোর দেহে গোপুর দ্বারে যন্ত্রনাময় কঠিন জর্জর ব্যাধি নও ।
তুমি তোয়াক্কাবিহীন তোয়াজ বিহীন খোশামদের তোশিদ অলীক
প্রেমের তোশদান নও।
তুমি কারোর সন্তপ্ত ললাটে ঝরে যাওয়া ঘাম নও ।
তুমি কারোর ভরসায় কেঁপে ওঠা তন্নতন্ন ছিঁড়ে ফেলার মতন বজ্র নিনাদ নও।
তুমি আচমকা ঘটে যাওয়া কারোর সহজ সরল জীবনে মহাকালের বিধান নও।
তুমি আমার সঙ্গিনী আমৃত্যু কালের চির কালের মতো নবীন
অপ্রত্যাশিত আমার সাকার কল্পনার ভালবাসার ইতিহাসে
তুমি এক মাত্র সাক্ষী।
তুমি পুঁথির নিয়ম বাঁধা যুক্তিতক্ক নও
তুমি কামনার অপরাধবোধও নও।
তুমি প্রিয়জনের
একান্ত অনুভব।চেতনা অবচেতনার মনের সঙ্গম।
তুমি ধৈর্যচ্যুত মাটির পুতুল নও।
তুমি কারোর রাঙানরম গাল ভিজে যাওয়া অশ্রু জলও নও।
তুমি অবুঝ মনের চঞ্চলতা নও।
তুমি শিল্পীর মিথ্যা তুলিটান নও।
তুমি সাংসারিক জীবনের একঘেয়েমির চাপে
তিক্তময় বাক্যালাপ নও।
তুমি উদ্ধত আকাশের বীতশ্রদ্ধ বিধগ্ধ সবিতৃ।
তুমি ক্ষমতার প্রবল ঝড়ে সৃজন স্রোতের প্রাবর নও।
তুমি মহাজাগতিক বিধানের কোনো বন্ধন নও।
তুমি বৈধব্যের শুভ্র চির শুচি বসন নও।
তুমি বিচারের অবিচার বাণী নও।
তুমি সদ্য দুলহনের সিতচন্দনে ঢাকা লাজময় নাকাব।
তুমি সত্যটুকুর মতো মহাসত্য আমার কল্পনার সংহিতায়।
তুমি অসীম জ্ঞানের রহস্যময় আকর্ষণ।
তুমি সাহিত্য সাধনার আরাধ্য আরাধনা।
তুমি বাহিরী সৌম্যতার মোহ নও।
তুমি কারোর চরণ ধূলি নও।
তুমি কারোর মরণ শোভাযাত্রা নও।
তুমি কোনো ইঙ্গিতের মিথ্যা গীত নও।
তুমি সীমানা জুড়ে একাকার হয়ে যাওয়া আমার দেহ মনে
জাগিয়ে রাখা কঠিন আত্মবিশ্বাসমাখা জীবন দলিল গোপনে।
বিশেষ কবিতা গুচ্ছ
কবি - শ্রী কাজী
নাম দিতে ভুলে গেছি
১।।
আমি কবিতা লিখি না আজকাল । পথের ধারে ফুটপাথ কাঁপছে দেশজুড়ে । কোনদিন ভোরের আকাশ প্লাবিত হবে লাল রক্তে । সূর্য ঘুমিয়ে পড়বে গ্রহণের নামে ।
ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া । বাড়িটা ভিড়ের মধ্যিখানে বসে আছে । এক এক করে দখল করে নেবে পুরো মানুষটাকে । চিৎকার করে লাভ নেই কোন । দাম দেয় না কেউ । দাম শুধু শরীরের ।
কবিতা লিখতে বসলেই বৃষ্টি নামে । ছুটে যাই মাঝরাস্তায় অন্ধকারে মোমবাতি নিয়ে । ভিড় জমে আছে ওখানেও । মানুষের ভিড় , টাটকা । ওরাও কাল লাশ হবে অন্যের দাবিতে , যারা ওদের লাশ বানাতে পথে নেমেছিল লাখো লাখো বৃষ্টি ফোঁটা উপেক্ষা করে ।
তেলের দাম বাড়লে কলম তুলি । পরেরদিন কাগজে ছেপে আসে লেখাটি । অনেক লেখার ভিড়ে দাঁড়িয়ে বুঝেছিল কবিতাটি , তার সৃষ্টি মানুষের খরচ কমাতে আর ওরা কলম তুলেছে লেখা প্রতি খরচ কমাতে ।
আমি কবিতা লিখি না , গল্প লিখি না আজকাল । বরং লেখা হয়ে ওঠার চেষ্টা করি । লেখক ছবি হয়ে যাবে নিশ্চিত , শুধু লেখা অমর আদী অনন্ত জুড়ে ।
২।।
যোগ্যরা সম্মান পায়
আমার সে যোগ্যতা কোথায়
মাটির চারাগাছটা মুখ বাড়িয়েছিল মাটি থেকে
আবার মাটির ঘরে ফিরে যেতে হবে তাকে হতাশ
উৎসব শেষ হলে ।
আমি জানি না
কেন বৃষ্টি নামে আমার ছাদে
কেন অন্ধকার আমার মন
আমি একাকী নৌকার পাল তুলে দেবো ঠিক
আগুন আকাশে ভাসিয়ে দিয়ে শব ।
সেদিন বুঝবে ভালোবাসা , বুঝবে কি হারালে তোমরা
সেদিন বন্ধ দরজা খুলে দেবে হয়তো , উৎসব করে আমায়
তবু বনজর নদীর স্রোতে পলি কত হারিয়ে যায়
কত জীবন রবি হতে পারে না এখানে , বেজ হয়ে কতজন আর অমর হয়ে রয়ে যায় !!
আমি প্রেমহীনা , উদ্বাস্তু তাই ঘৃণা করেছ এই সত্যকে
একদিন দেখো শিল্পীরা মুছে যাবে সবাই , আমি শিল্প হয়ে বেঁচে থাকবো ঠিক ----
সেদিন আমায় তেল দিও না , কলকব্জা রক্ষনাবেক্ষনে ।
৩।।
আয় নেমে আয় খোলা মাঠে ধানের ক্ষেতে
অন্ধকারে কত দিন আর পুড়বি তোরা ছন্নছাড়া
এই মাটির মালিক তোরা , জেনে রাখ
লড়তে হবে , প্রয়োজনে মারতে হবে
মরলে কিন্তু চলবে না ।
সামনে চেয়ে দ্যাখ , বিশাল পথ
হিমালয়ের কঠিন শপথ
সব বাঁধা চূর্ণ করে , ভাঙতে হবে
ধর্মের কল বজ্রাঘাতে
তোরাই তো রক্ষক ভবিষ্যতের
তোদের হাতেই মায়ের আঁচল
ওরে ভুলে যাস না তোরা
তোদের ক্ষমতা , তোদের জেদ , তোদের বল
চারিদিকে আজ অচলায়তন
মানুষ আজ ভীত , সন্ত্রস্ত
আইন কানুন কেনা গোলাম
তোরাই এখন সর্বনাশের মাথায় বাজ ।
ওঠ , জাগ , তুলে নে অস্ত্র এবার
সিংহ নিনাদে গর্জিত হোক রন হুংকার
ঈশ্বর বিরাজে মানুষের মাঝে যখন
ভাঙ যত ধর্ম নামের ওই পাষান বন্দীশালা ।
মুছে দে বিবাদ যত ,
ছিঁড়ে ফ্যাল বাঁধনের ওই কাঁটাতার
মিলনের রাখি ঝুলিয়ে দিয়ে
চল গড়বো আমরা এক পৃথিবী , এক পরিবার ।
৪।।
মহাভারত শেষ হয়নি আজও
যুদ্ধ শেষ হতে পারে নি কোনদিন
অর্জুনের বানে যাদের রক্ত ভেসেছিল সেদিন
তারাই দেখো আজ ইন্দ্রপ্রস্থের সভায়
দেখতে পাও না দুঃশাসনের হাতে বন্দি দ্রৌপদী
কাঁদছে ভরা রাজসভায়
দেখতে পাও না চেয়ে কুটিল শকুনির পাশায়
কত মানুষ ফিরছে পথে সর্বস্বান্ত হয়ে
চেয়ে দেখো চারপাশে কত লাশের ওপর
আজও আমরা দাঁড়িয়ে আছি
তাকিয়ে দেখো সুখের নামাবলি গায়ে
ভয়ংকর কালো অন্ধকার আমাদের করছে গ্রাস ।
মহাভারত শেষ হয়নি এখনো এখানে
কর্ণ অভিমন্যু এখনো অযোগ্য গুরু দ্রনেদের বিচারে
এখনো হিংসার বাতাসে ভেসে আসে হত্যার ষড়যন্ত্র
এখনো কুরুক্ষেত্রে লেখা হয় হাজার চক্রব্যূহের মন্ত্র
কুন্তীর মত কত রমণীরা ঢলে পড়ে পরকীয়ার লোভে
এখনো কত সন্তান ভেসে যায় কুমারি মায়ের বুকচিরে ।
এখানে মহারাজ , মুখে তার যুদ্ধের আহবান
রাজ্য জুড়ে হীরক সাম্রাজ্য , বিভেদের জয়গান
কৃষ্ণের দেখা নেই , রথের দড়ি আজ সামলাবে কে
কে বলবে সমাজের ব্যাথা ,কে আজ গিতার বাণী শোনাবে ?
তাই পথে নেমেছি কলম নিয়ে দুই হাতে
এসো উঠতে জ্বলে , নিজের অধিকারে
নেমে আনো পরিবর্তন , গণতন্ত্রের খাতিরে
মনে রেখো মহাভারত হবেনা শেষ
যতদিন গদি থাকবে ওই পুরুষের দখলে ।
নতুন সকাল বসে আছে পাঁচটা অমাবস্যা জুড়ে
চলো , আহবান করি শক্তি তার ;অতীতের সকল প্রত্যুত্তরে ।
৫।।
আজ থেকে হাজার বছর পরে , এই পৃথিবীর কথা ভেবে
আঁতকে উঠি মাঝে মাঝে । শিউরে উঠি আতঙ্কের প্রহর গুনে । মান আর হুশ হারিয়ে আজ আমরা এক একটা রাজনীতির পুতুল । পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীটি এখন বিচার চিন্তা ছেড়ে স্বার্থের দালালি করতে ব্যস্ত ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
ভালোবাসা এখন কিছুদিনের যৌন চাহিদা শুধু । মনের মিলনের থেকে শরীরের মিলনটা অনেক আগে । আজকাল সোহাগ , আদর এসমস্ত শব্দে যৌন গন্ধ বিকট । শরীর খুলে দিয়েছে দুদিকেই পেতে রাখা বিছানায় অথবা পথের ধারে গজিয়ে ওঠা ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে --- ঠিক করে একে অপরকে চিনে ওঠা হলো না যদিও কোনদিন ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
শিক্ষায় আজ বদল সুস্পষ্ট । মেধা এখন অর্থের কেনা গোলাম । ফেললে কড়ি অথবা মাখালে তেল ; সব মিলে যাবে অনায়াসে । প্রতিটা সাবজেক্টে টিউটর ভুড়ি ভুড়ি । একটার পিছনে অন্তত দুটো থাকবেই আর যদি সে ইস্কুলের হয় তবে তো কথাই নেই ।
আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
খেলাধুলা মানেই মোবাইল--- ক্রিকেট থেকে ফুটবল সারাদিন । আর মাঠগুলোয় এখন , গজিয়ে উঠছে আবাসন
প্রমোটিং হাজার হাজার । কোটি কোটি ইনভেস্টমেন্ট , কি হবে বানিয়ে হেলথ । তার চেয়ে জিমে নিয়ে ফেলে এডমিশন -- পকেটের বাকি টুকুর শ্রাদ্ধ হয়ে যাক ।
এভাবেই এগিয়ে চলেছে সমাজ , উন্নতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে নদীর জল আজ ---- মূলটুকু ভুলে
সামান্য কিছু সুদের লোভে আমরা সত্যিই বদলে যাচ্ছি কি সুন্দর ! সত্যি দিনগুলো বদলে যাচ্ছে এখন ।
আজ থেকে হাজার বছর পরে , এই পৃথিবীর কথা ভেবে
আঁতকে উঠি মাঝে মাঝে ।
৬।।
ও মশাই , কি যা তা লিখছেন ?
মহাভারত ছেড়ে একটু ভারতে ফিরে আসুন ,
দ্রৌপদীর শাড়ির আঁচল ধরে টান দুশাসনের ,
তাতেই সবাই চুপ ।।
আজ তো কাপড় খোলা ,
ফাটা জিন্স এমনিই ঝুলছে তলায় ;
চুপ না থাকলে কি চলে ?
ও মশাই কি যা তা লিখছেন ?
মনে আছে পাশা খেলা আর শকুনির চাল ,
রাজ্য হারিয়ে পাণ্ডব দল জঙ্গলে গেল ,
আজ তো চাল টুকুও লাগে না
শুধু একটা ক্লিক ,
দেখবেন সব খুইয়েছেন ।।
আর জঙ্গল !! সে তো ইটে ঠাসা
গরম গরম দামে ভেজে পরিবেশিত হচ্ছে ঠোঙায় ।।
তখন যাবেন টাই কোথায়, কুরুক্ষেত্রে ??
দেশের মধ্যে হাজার হাজার যুদ্ধ তো চলছে এমনিতেই ,
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ---
গীতা র কত এডিসন বাজারে পচছে-পুনর্মুদ্রণ কপি।
কে শোনাবে আর কে শুনবে ?
শুনতে গিয়ে কে দক্ষিনা গুনবে , মোটা টাকা ।।
সারথি একলাই না হয় নিলেন ,
মাইনে দেবেন কোথা থেকে --- আগেই তো এত ধার !!
ও মশাই কি যা তা বিবর্তন দেখাচ্ছেন ,
পরিবর্তন বলুন পরিবর্তন ।।
৭।।
ভয় পাই । ভালোবাসতে তোমাকে ভীষন ভয় পাই । আসলে অভিজ্ঞতার ভিড়ে যখন পাতা উল্টে অতীত দেখি ,
যখন মোড়কের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দেওয়া এই বোকা হাঁদাটাও মন খুলে মনের কথা বলেছিল ,
যখন বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে যে অনুভূতি জেগে উঠেছিল ,
তাও সবটাই দ্বিতীয়বার ।
তখন ভেবেছিলাম , হয়তো ভগবান আজও আছে । হয়তো আমার জন্য সে ভালো কিছু তুলে রেখেছে বস্তায় ভরে ।
তারপর যেদিন ঝড় উঠলো । সব কিছু ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল
এক নিমেষে ।
স্বপ্নের বাসায় ডিম গুলোয় তা দিচ্ছিলাম এত দিন ধরে । সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো ।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম । ভাবছিলাম । এভাবেও সব শেষ হয়ে যায় বারবার ।
মন ভেঙেছে বলে জানতে পারেনি কেউ । কান্নাগুলো রাতের কুয়াশা করে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম । ভিজেছিলাম আমি , আমার বালিশ , বিছানা সব ....
তবু তোমার মনে দাগ কাটে নি কোনদিন । বরং অভিশাপের পাশাপাশি অনেক অভিযোগ জমা করেছি এক এক করে ।
তৃতীয় হবার আগে ভয় পাই .... এমন নয় যে হৃদয়ের বাগানে ফুল ফোটেনি আর ,
পুড়িয়ে দিয়েছি প্রত্যেকটি যেমন আজ করছি এই ভর্তি কামরায় এগিয়ে যেতে যেতে । মেয়েটি খুব ভালো । একটু বোকা আর অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা ....
ভয় পেয়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে দিলাম । যদি প্রেম লিখে ফেলি আবার ।
৮।।
যে কথা বাকি রেখে যায় মেঘ ; সূর্যের জন্য
আমি সে কথা তুলে রাখি ; আচারের বয়ামে ।
বর্ষায় যে মাছ ডিম পাড়তে পারলো না ; এ বছর
আমি তাদের পৌঁছে দিই নদীর আলপথে ।
যে পথ কারো অপেক্ষায় জেগে থাকে
যে বাড়িতে শোকেরা প্রতিদিন হানা দেয় অতিথি হয়ে
যে শরীর কেঁপে ওঠে ; হেরে যাওয়ার ভয়ে
আমি তাদের স্বান্তনা দিই ; প্রতিবার ।
মানুষ হয়ে মানুষের জন্য ; এটুকু করাই যায়
অসুস্থ সমাজে টোটকাটুকু , এটলিস্ট ।
সকালের রোদ ওদের সুস্থ করে দিলে
ভাঙা মন নিয়ে মৃত কবরের পিছনে ছুটে যাই ।
এভাবেই দিন কাটে ; ফুরিয়ে আসে প্রয়োজন আমার
তারপর নদী বয়ে যায় , রামধনুরা জেগে ওঠে
ঘুম ভাঙা পাখিরা ফিরে আসে , ব্যস্ততায়
পৃথিবীও নিজের খেয়ালে কক্ষদৌড়ে নাম লেখায় ।
আমার খবর রেখো না ,
সুটি হয়ে একদিন ; জড়িয়ে নেবো দুটো শেষ অধ্যায় ।
সেদিনও দেখবে অনেক মৃত জেগে রুগি হাসপাতালে
আদালতে বিচার পাইনি অনেকে ।
মন্দির মসজিদ ; কত এলো কত গেলো
ভেঙে পড়া কংক্রিটে , নতুন রক্তবীজ জেগে উঠলো ।
বাকি রেখে যাওয়া কথাগুলো , কাঁচের বয়ামে সেদিন
কান্না হয়ে ঝড়বে ; প্রেমিকার দুচোখে ।
৯।।
শেষ পাত । অনাহার শরীর তারপর
তিনদিন , তিনরাতেই ; তিনশো বছরের পার ।
মৌমাছি বদলেছে রেণু , ফুলের পরাগে ভ্রূণ আর সাজে না
বসন্ত সেজেছে এ বুকে , হেমন্তের গান তবু থামে না ।
পাড়ার কুকুরেরা দুই ছিল ; আজ কয়েক ডজন
ফাঁকা গোয়াল , ভরে আছে এখন ; বাছুরে কেবল ।
গোলকের এক দিকে ঊষা যেখানে , অন্যদিকে ভরে অন্ধকার
গোলাপের লাল ঠোঁট উষ্ণ যত , কাঁটায় ততটাই যন্ত্রণার চিৎকার ।
আমি আজ ভালো আছি , হাসি ভরে থাকে মুখে
কিন্তু হাসির পেছনের গল্পটা , ভালোর হাহাকারগুলো
কেউ বোঝে না ।
যুধ্বং সাজে সেজে , আমরা চলেছি যুদ্ধে
যুদ্ধ : দারিদ্র্যের সঙ্গে , বেকারত্বের সঙ্গে ; প্রতিদিনকার ছেড়ে
যুদ্ধ করছি কান্না মুছতে , হাসি খুশি মুখেদের বিরুদ্ধে ।
আমরা কষ্ট বুঝেছি , যন্ত্রনা বুঝেছি খুব
বুঝেছি গরমের চাঁদি পোড়া রোদে
লাশ সাজা কত বড় অসুখ
একটা চোখের জল অন্য চোখে স্থানান্তর হয়ে গেলে
মানুষ জন্ম সম্পূর্ণ ; যার একক সূত্র
থিওরি অভ আই ওয়াশ ।
১০।।
আমরা আজ ধর্মের ঘরে চুরি করেছি । বুঝতে চাইনি কোনদিন কেমন লাগে ধর্ম আর অধর্মের ফারাক ।
আমরা মানুষের রক্তে নিবেদন করেছি অর্ঘ -- ঈশ্বরকে , আল্লাহকে ,
বুঝতে চাইনি মানুষের মধ্যে বিরাজমান তার অবস্থান ।
যুগে যুগে দুত এসেছে পৃথিবীতে শান্তির বাণী বয়ে
মুছে গেছে তারাও , ক্ষত বিক্ষত হয়েছে তাদের কথাও ।
তারা বলেছিল ভালোবাসতে মানুষকে , তারা জীবের জীবনে খুঁজে দিতে চেয়েছিল
বিধাতার অধিষ্ঠান ।
আমরা বুঝি নি তাদের কথা , গিলে গেছি গ্রন্থের লেখা গলা ঠুসে
বদলে চেয়েছি হিংসা আর রক্ত ধারা , মন্দির মসজিদ গঠনে ।
কত রাজা এসেছে , হারিয়ে গেছে তারা কালের স্রোতে
প্রতি পাঁচ বছরের দিন রাত আমাদের
কেটেছে অমাবস্যার আঁধারে ।
সুদিন আসবে -- এই প্রতীক্ষায় জীবন কাটিয়েছি আমরা
আসে নি ভালো দিন , বদলে জীবন আমাদের
হয়েছে আরও বেশি ম্লান ।
বন্ধু , মরতেই হবে যখন একবার
তখন ভয় কিসের ?
এগিয়ে চলো , একলা পথেই
গণতন্ত্র আজ আবার দিচ্ছে ডাক ।
যবনিকা হোক পতন , মুছে ফেলি চলো কুলাঙ্গারদের পরিচয়
মুখোস ওদের ছিড়ে ফেলে দাও দূরে
গদি চ্যুত করো যত রাক্ষসে , এ বুকে যারা দখল করেছিল আশ্রয় ।
একবার চলো রনে নামি সকলে মিলে
একবার , দোহাই তোমাদের , শুধু একবার
বেরিয়ে এসো মাটির মাঝে , সুখের বিছানা ছেড়ে ।
মুখে মুখে গেয়ে উঠুক আজ , আমরা করি না দানবে কোন ভয়
মা আমাদের বিপদে যখন
তখন হানতেই হবে ধর্মের জয় , নিশ্চয় ।
১১।।
দুর্গম সময় হেঁটে চলেছে বাতাসে । সূর্য উল্টো বইছে । আমরা শেষ থেকে শুরু করেছি যে পথ
সেখানে বন্ধু , সাথীহারা আমরা প্রত্যেকে ।
বিশ্বাস করি না আর নিজেকে , পাছে অন্যকে সন্দেহ করতে হয়
মানুষ রূপে নারায়ণ মরছে দেখছি পথের ধারে
আর আমরা কংক্রিকেটের শিল্প স্থাপনেই উন্মাদ ।
খেয়াল করে দেখো বন্ধু , যে সুভাষ গান্ধী সুকান্ত ভাঙছি আমরা
দেশের কোনায় কোনায়
তারা তো কবে ভেঙে গেছিল মানুষের অসহায় অবস্থায় ।
বীর ভগত , বিশ্ব রবি অথবা বিদ্রোহী কবির কণ্ঠে সেদিন
নতুন ধর্মের আহবান ছিল , মানবিকতার বিস্তার ছিল আর ছিল ভালোবাসার সন্দেশ
ঠিক যেমন ছিল কৃষ্ণের বাঁশিতে , নবীর ভাষণে অথবা যীশুর গল্পের আড়ালে
কিন্তু আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও , আমরা বিভক্ত বিষাক্ত চিন্তাধারায় ।
ভেবে দেখো , ঈশ্বর আজ লড়ছে নবীর বিরুদ্ধে , জেশাস গত রাতে খুন হয়েছিল লংকায়
আর আমরা নিজেদের ছেড়ে ধর্ম রক্ষায় এক এক করে শহীদ হবো
স্বজনদেরই বিপক্ষে --
ধর্মের কয়েনটা নিচে নেমে আসছে
গিলোটিন জেনেও আঁকড়ে ধরছি
নিজেদের রক্ষা করবো বলে :
এপিঠে রাজনীতি আর ওদিকে আতংকবাদ
যারা ধর্ম বানায় কনজিউম করতে ....
আমাদের কোনটাই চাই না --- কিছু মানুষ পেলে যোগাযোগ করুন
নোয়া-র নৌকার জন্য ।
কবিতা
" মূল্যহীন উপহার "
~ কিশলয় বসু
একঝাঁক জোনাকির মালা গেঁথে ,
তোমার গলায় পরিয়ে দিলাম ।
কিছুক্ষণ পরেই মালাটি ছিঁড়ে ---
জোনাকিগুলো আকাশে উড়িয়ে দিয়ে বললে ,
এর তো কোনো রি-সেল্ ভেল্যু নেই।।
প্রত্যাবর্তন
ড.মহীতোষ গায়েন
মানুষের স্থানচ্যুতি ঘটতে ঘটতে যখন
সে পুরানো অতীতের উদ্ভ্রান্ত চরে ছিটকে
পড়তে চায় এবং পড়েও;ঠিক তখনই
তিরবিদ্ধ মরালের মত সে অনুভব করে
তাবৎ পৃথিবীটা যৌক্তিক রেখায় দোদুল্যমান।
ক্রমশ ধূসর গোধূলিতে ঢাকা পড়ে মন,
ধোঁয়াশার মধ্যে পড়ে ছটফটে মন
মুক্ত বাতাসের খোঁজ করে,নৈ:শব্দ এসে
বলে দেয়: চেতনার অলীক গাছে
কুঁড়ি আসলেও তা ঝরে যাবে সমস্বরে।
সময়ের নির্ভেজাল বীভৎসতা চরাচরে-
যে কটা দিন বাকি পারলে সেখানেই
সহাবস্থানের আশ্বাস আসে একান্তেই
সঙ্গোপনে;জীবনের জলতরঙ্গে নবজীবনের
উদ্বোধনী সংঙ্গীত সমূহ সমাজে ভাস্বরিত।
অন্তহীন....
গোবিন্দ মোদক
সিঁড়ি ।
ধাপের পরে ধাপ ।
তারও পরে ধাপ ।
ধাপে ধাপ। ক্রমশঃ ওপরে ওঠার পরাকাষ্ঠা।
#
আবার সিঁড়ি ।
ধাপের পরে ধাপ ।
তারও পরে ধাপ ।
ধাপে ধাপ। ক্রমশঃ নিচে নামার অবলম্বন।
#
নদীর ঢেউ ।
ঢেউয়ের পরে ঢেউ ।
তারও পরে ঢেউ ।
ঢেউ আর ঢেউ। অনন্তের দিকে ছুটে চলা।
#
পথ ।
পথের পরে পথ।
পথ, আরও পথ ।
পথ ফুরায় না। শুধু হারিয়ে যায় দিকচক্রবালে।
"গোপন চিঠি "
প্রদীপ দে।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^
প্রিয়
প্রানের ' রোদ ',
সত্যি কথা তোকে বলেই, বলি।
কি বোকারে তুই ?
সব কথা কি বলে বোঝানো যায়?
না কি সে টা সম্ভব ?
যতোই যুগ পাল্টাক, আমি তো সেই নারী ই !
তবে বারে বারে আমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ,
আমার সতীত্ব মাপতে চাইছিস কেন ?
বিশ্বাস হয় না আমায়, তাই না?
আমার কিন্তু অপার বিশ্বাস তোর ' পর
বিশ্বাস হারানো মহাপাপ !
নিজের উষ্ণতায়
আমার শরীরকে ভিজিয়ে,
ঢেলে ঢেলে,
নিজেকে হারাচ্ছিস কেন ?
আমি তো তোর ই
তুই কি আমার ন ' স?
ইতি ,
তোর শুধু তোর ই ,
' বৃষ্টি '
কবিগুরু জয়ন্তী
মাওলানা মহবুবুর রহমান
হে অমর শিল্পী বিশ্বকবি
বিশ্বমানের সুরকার
লহো মোর অশেষ শ্রদ্ধা
শুভ জনমদিন তোমার ৷
মশি হাতে বসে আমি
ভাবছি নিরন্তর
কী লিখব জলকণা হয়ে
তুমি যে জ্ঞানের সাগর ৷
স্বীয় কীর্তিতে অমর তুমি
বিশ্ববাঙালির গৌরব
তোমাসদৃশ ধরুক জ্ঞান
ছড়াক মোদের সৌরভ ৷
ছন্দমালার শেষ পানে
তব কলি তোমার সনে-
"তোমার কীর্তির চেয়ে
তুমি যে মহৎ
তাই তব জীবন রথ
পশ্চাতে ফেলিয়া যায়
কীর্তিরে তোমার
বারংবারই তাই
চিহ্ন তব পড়ে আছে
তুমি হেথা নাই " ৷
ঝুলন
-অরুন্ধতী চৌধুরী
ঝুলন বলতে আমার একটুকরো স্মৃতি কথা মনে পরে। এইসময় টা বড় আনন্দে কাটত। আমি মন্দিরে গিয়ে সাজানো ঠাকুর দেখতাম। দেখতাম কত সুন্দর ছোট ছোট পুতুল দিয়ে সাজানো থাকতো মন্দিরের বারান্দা। কত ভালো লাগতো। খুব মজা পেতাম।
সেইসব দিনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, পুরোনো ঐতিহ্য গুলো একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। পুরোনো স্মৃতি যা যতই মধুর হোক , ব্যথার হোক , তাকে একটা সময়ের পর ছেড়ে যেতে হয়। ভুলে যেতে হয়। কিন্তু আমরা যদি একটু স্মৃতি আকড়ে পরে থাকি তাহলে খুব কি ক্ষতি ?? একটা দুটো স্মৃতি একটা দুটো মধুর অতীত যা মন কে বার বার নাড়া দেয় তা যদি বর্তমান কে ভরিয়ে তোলে তাহলে তা অব্যশই ভালোর জন্যই। উদযাপন যদি আবাহন ও বিসর্জন দুই এরই হয় , তাহলে সেই যাপন কে মনের মধ্যে আকড়ে ধরি আবার ও কোনো আয়োজন আর আবাহন এর প্রতীক্ষায় যদিও জানি বিসর্জন এর ঘন্টা আড়ালে বাজে।
এই ভাবেই জীবন কে যাপন করি আর ভাঙা জীবনে ঝুলন সাজানোর চেষ্টা করি ।
চিঠি ও গল্প
কল্যাণীয়াষু!
নীলাঞ্জনা তোমার প্রথম পত্র পেয়েছিলাম সেই নব যৌবন প্রারম্ভে।তুমি তোমার নরম হাতে উষ্ণ মনের মাধুরী মিশিয়ে আমাকে একখানি পত্র পেরণ করেছিলে।সেই পত্রতে তুমি জানতে চেয়েছিলে---"প্রিয়তমা এ নব যৌবনা তোমার যৌবন অরণ্যে মন হারিয়েছে।এ যৌবনা তোমার যৌবন সরোবরে পদ্ম হয়ে বিকশিত হতে চাই।আমার মনতরী তোমার যৌবন সরোবরে সাঁতার দিতে চাই।তুমি কি আমার সে অধিকার টুকু দিবে?"তোমার সেদিনের সে পত্রখানি আমার মনে মণি কোঠায় জায়গা করে নিতে পারেনি।তুমি নবযৌবনা, অল্প বয়সী বলে হয়ত আমি তোমার পত্রের ও পবিত্র মনের মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম যন্ত্রনা সরোবরে।তুমিও রেখেছিলে।প্রতিরাতে যন্ত্রনায় বিদ্ধ হয়েছে আমার মন।তুমি মনহরিণী হয়ে বিচরণ করেছে আমার যৌবন অরণ্যে।প্রতিনিয়ত তোমাকে ধরার চেষ্টা করেছি।কিন্তু শিকারীর শিকারের ভয়ে ভীত হয়ে আমাকে অন্ধগুহায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে।শিকারিরা চায়না যে আমি তোমার সঙ্গম লাভ করি।যদি বিশ্বাস করো তাহলে বলতে পারি যে তাদেরই ভয়ে তোমার পবিত্র ভালোবাসার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছি।যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে বলতে পারো আমার ভীরু মনের ব্যর্থতা।তোমার হয়ত এখনো মনে পড়ে সেদিনের সেই নবযৌবনা যুবক-যুবতীর ক্ষনিক মুহূর্ত।তুমি অশ্রুসজল চোখে জিঘাংসা করেছিলে,"তুমি আমায় ভালোবাসা?"সেদিনও নিরুত্তর ছিলাম। তাই তীব্রকন্ঠে ব্যঙ্গবান বিদ্ধ করে বলেছিলে "সৌন্দর্যের অহং তাই না?"তুমি তীব্র ভাষায় আঘাত করে শুধু নিজের যন্ত্রণা বুঝিয়ে দিয়েছিলে।কিন্তু সেদিন একটিবারও কি তোমার নয়ন দেখেছিল আমার অশ্রুরঝরা নয়নকে!সেদিন আমি কি যন্ত্রনাই না পেয়েছি।তোমাকে বোঝানোর সে ভাষা আমার নেই।ভেবেছিলে তুমি একাই শুধু ভালোবেসেছিলে তাই না!কিন্তু না এ ভীরু মনও তোমায় ভালোবেসেছিল।তফাৎ শুধু একটাই তুমি বলেছিলে আর আমি ব্যর্থ হয়েছি।কিন্তু তুমি একবারও আমার ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধ্যান করলে না,দেখেছ শুধু আমার ব্যর্থতা।আজ পনেরো বছর পর তোমার পত্রের উত্তর দিতে উদ্যোগী হয়েছি।কেননা আজ আমার কোনো কিছুতেই ভয় নেই ,হারানোরও কিছু নেই।আজ আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব আর তুমি পরিপূর্না।তুমি স্বামী ,সন্তান নিয়ে সুখের সাগরে ভেসে চলেছো।আমি দুঃখ সাগরের বুকে অন্তত কাল হেঁটে চলেছি।যদিও এর আগেও একবার তোমায় পত্রের উত্তর দেওয়ার প্রয়াস করেছি।জানি তুমি সেটা চোখেও দেখনি।যদি দেখতে তাহলে আমার সব হারানো বেদনার বেদনাটুকু থাকত না।যাই হোক পুরোনো বেদনাস্মৃতির ডালি দিয়ে তোমায় নতুন করে আঘাত করতে চাইনা।আমি চাই তুমি সুখী হও জন্ম জন্মান্তরে পতিব্রতা স্ত্রীর সৌভাগ্য অর্জন করো।তুমি আমায় ভালোবেসে ছিলে ,তাই পিতার দেখা রাজপুত্রের গলায় সহজে বরমাল্য পড়াতে পেরেছ।আমি বলতে ব্যর্থ হয়েছি তাই তোমার স্মৃতি আঁকড়ে আছি।আমি পারতাম কোনো রাজকুমারীর গলায় মাল্য দিতে।কিন্তু আমার বিবেগ আমাকে সে পাপ কাজ হতে বিরত রেখেছে।আজ তোমার পত্রের উত্তর দিয়ে তোমাকে জানাতে চাইছি আমি তোমায় ভালোবাসি,আর নবযৌবনেও বাসতাম,বাধ্যকেও বাসবো।শুধু প্রশ্ন তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসেছিলে?যদি বাসতে তাহলে কি অন্যের গলে বরমাল্য দিতে পারতে?আজ তোমাকে ফিরে আসাতে বলব না।আজ পত্র পেরণ করলাম শুধু এই কথাটা বলতে "ভালোবাসিছো যারে ,প্রেমেরও বাঁধনে অনন্তকাল রেখো তারে।নাইবা সে বাসলোভালো, তুমি তো তারে বেসেছো ভালো ।তাই মৃত্যুর অন্তিম ক্ষনমুহূর্ত অপেক্ষায় থেকো যদি সে আসে ফিরে..."
ইতি
নিত্য শুভার্থী___
শ্রাবন
চিন্তা ও সব্জি প্রভৃতি
---- ঋভু চট্টোপাধ্যায়
এখন জানলা দরজা সব বন্ধ করে রেখেছি, খুললেই বুদ্ধি ঢুকে যাচ্ছে। অবশ্য একে বুদ্ধি না বলে চিন্তা বলাই ভালো, তারমানে চিন্তা আর বুদ্ধির মধ্যে একটা বড় লাইন টেনে দিলাম।বললাম এটাই হল দুটো দেশের সীমানা, অবশ্য এতে কোন বিতর্ক চাইনা, যেমন চাইনা আমার মত আর কোন আম বাঙালি আমাশয়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক ওষুধের সাথে সহবাস করে শেষে অন্য কারোর সাথে লিভ-ইন করুক।আমি তো আর সেরকম কবি নয় যে বুক ঠুকে বলব, ‘ রাস্তায় ভাঙা রোদ খুঁটে খাই-‘ কারণ রাস্তা আর ঘরের মধ্যে সেরকম কোন অসমীকরণ এখন পর্যন্ত আবিস্কার করতে পারিনি, যেমন ভাবতে পারিনি কয়েকটা ছায়ার আড়ালে মায়ের স্নান দেখতে গেলেও কেন শুধু ইডিপাশের দোষ হয়, অথবা মেয়েরা তাদের বাবাকে বেশি ভালো বাসলেও শুধু শুধু ইলেকট্রার হাটে হাঁড়ি ভাঙে এই আম জনতা। আচ্ছা আম জনতা সব থেকে কোন আম খেতে ভালোবাসে?এই সব ভাবনা মাঝে মাঝে মাথার ভিতর এমন ভাবে হামলা আরম্ভ করে তখন কথা আটকে যায়, তখন শব্দ নদীতে ভাসে নিদেন পক্ষে পাড়ার ড্রেনে হামলাতে কি প্রতিবেশি কোন দেশের নাম জড়ালে কেউ বলবে না তো, ‘ উগ্র জাতিয়তাবাদ?’কল্কি পুরাণ বলছে , রাগের বোন হল হিংসা, হিংসার গর্ভে রাগের ঔরসে কলি নামের এক পুত্র সন্তান জন্মায়, এর পেট নাকি কাকের মত, মাল আর মাগী নিয়ে দিন রাত এক করে শেষে বোনকেও ছাড়ে না। তারমানে সব কিছুই পুরাণ বর্ণিত। অথচ শুনেছি কোন এক বিদেশী মশাপুরুষ সরি মহাপুরুষ নাকি বলেছিলেন, ‘ ভারতের সব শাস্ত্র রাখতে আলমারির একটা তাকই যথেষ্ট।‘কথাটা মন্দ না, এই যেমন আমি পড়াশোনার পি মেরে এখন সকাল থেকে উদমায় খিস্তি দিচ্ছি, সকালের পটি থেকে রাতের রেদ পর্যন্ত, এখন বাদের তালিকায় কোন শালা মশাপুরুষ নেই। কয়েক দিন আগেই বৌয়ের চেল্লানির জ্বালায় একটা এজেন্সির সাথে প্রারম্ভিক চুক্তি করে নিয়েছে এবার থেকে ওরাই আমার হয়ে ভাববে আর গাল দেবে, অবশ্য সব গালই ভদ্র, এটা আমি নিশ্চিত।ধরা যাক কোন নেতা আমার ঘরে ভোট চাইতে এল, আমি হয়ত সামনেই বলে দিতাম, ‘ শুয়োরের বাচ্ছা , কিন্তু এজেন্সির ছেলেটা বলে উঠবে, ‘এই আপনি না একটা বরাহনন্দন, এবার রাস্তার পাশের ড্রেনটা না তৈরী হলে আপনাকে তরকারির খোসা ছুঁড়ে মারব।‘ তার পরেই একটু মিষ্টি করে হাসি , একটু দুষ্টু করে চাওয়া, অবশ্য এর জন্য আমার গ্যাঁটের কড়ি খরচা করতে হচ্ছে, আর বৌ একটা শর্ত দিয়েছে কোন মহিলাকে ঘরে ডাকা যাবে না। সেটা আমি ডাকিনা, ছোট থেকেই আমার চরিত্রটা চপের মতই পবিত্র, যেকেউ খেতে পারে, তবে পেট খারাপের দায় আরোহীর।এর মধ্যে আমি একা হলেই ভাবতে আরম্ভ করতাম, চপ তো এখন একটা শিল্প, আগামী দিনে বিদেশী বই পত্রের পাতায় বিল গেটস, স্টিভ জোনসের পাশে আমাদের অথবা আপনাদের পাড়ার পচা, দেবা বা অন্য কারোর নামও পেছে সরি ছেপে যেতে পারে,আপনাকে শুনতে হতে পারে এই ভদ্রলোক শুধু একটা ছোট দোকানে চপ বিক্রি করতেন ,আজ ন’শ কোটি টাকার মালিক, বৃহস্পতি গ্রহে ইনভেস্টমেন্টের জন্য একটা শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে যাবে। আমরা সবাই দেখতে যাবো, লোকজন তাঁকে দেখবে আর বলবে, ‘ দাদা, আপনি চপে কোন মশলাটা বেশি দিতেন একটু বলবেন খেলেই হাগতাম।‘ ও সরি, আবার সেই বিরোধী চক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, পেট খারাপ মানেই কিন্তু হাগা নয়, আমাশয় নয়, গুড় গুড়ানিটাও একটা রোগের মধ্যেই পড়ে।কোন এক ধর্মে বলে, ‘ ঈশ্বরকে ভক্তি না করলে রোগ হবে।‘ বোঝো, ভাবছি ভক্তি করাটাও এজেন্সিকে দিয়ে দেব, আমার হয়ে মন্দির, গীর্জা, মসজিদ, সব জায়গায় ধূপ ধুনো জ্বালিয়ে আসবে, ফুল বেলপাতা চড়িয়ে আসবে আর আমি শুধু দেখব।
-কি দেখবে ?পাশের বাড়ির ঐ বৌদিটাকে, যে তোমাকে দেখিয়ে ব্যালকোনিতে কাপড় মেলে?
-নাগো, আমি কবিতা দেখবো।
–খ্যাপা, তোমাকেও কবিতা পাচ্ছে ?
–কেন হাগা পেলে কবিতা পাবে না কেন?
এই প্রশ্নের কি উত্তর দেব, কিভাবে বলব কবিতা কোন এক ঐশ্বরিক চেতনার মত, হয়ত কেউ বলেন গায়ের রক্ত মাংস, মেদ, মজ্জা, কবিতা একটা জমকালো দমকালো বস্তু অসম্ভের উপকরণ একটা অস্থির অবস্থিতির থেকে কোন রকমে মুক্তি পাবার একটা মাধ্যম।যে সময়ে মানুষ ভুল করে সে সময় শুধু মানুষটাই নয় তার ভিতরের শয়তানটাও জেগে ওঠে। তারমানে কবিতা লেখাটাও একটা ভুল, খাওয়াটাও একটা ভুল শোওয়াটাও একটা, বসাটাও এমনকি ভাবাটাও।ও সরি আবার ভাবার কথা আসছে, আমি তো এখন একটা এজেন্সির ক্লায়েন্ট, আমার হয়ে ভাবনার এবং গাল দেবার লোক আছে, আমার তো সেরকম কোন চিন্তা করবার দরকার নেই।সকালে পটি হোল কি না হোল চিন্তা নেই, আবার দুধ দেবার লোকটা দেরি করলেও নো চিন্তা, শুধু এজেন্ট অন আর ভাবনা অফ্। সকালে বাজার গেলাম কেউ যদি বলে ওঠে, ‘ দেখেছেন, কি দাম এখন, কিছু কেনাই যাচ্ছে না।‘ আমি জবাব দেবার আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নেব, তার পর বাইট, ও সরি উত্তর, তার আগে স্পিকটি নট।‘বাড়ি ফিরতেই বৌ তো বলবেই, ‘এই কয়েকটা দিন সকালের পুজোটা বা সন্ধেটা দিতে হবে।‘ সঙ্গে সঙ্গে ফোন, অবশ্য এখন শুধু মাত্র সন্ধে দিলেই হয় না, দেখতে হয় ঠাকুরটা কে, কোন মদ খেয়ে মৃত লোক, নাকি কোন লোকাল দাদার ক্লাব, নাকি আরো কেউ? মানে সেই হায়ার অথারিটি? কে জানে, এজেন্ট আবার এই সব ব্যাপারে খুব সাবধানে পা ফেলে। তা ফেলুক, যার যা খুশি ফেলুক, যেখানে খুশি ফেলুক, শুধু দেখতে হবে পড়লেও যেন দাঁড়িয়ে থাকে, সকালের ঢিকচ্যাক আলোর মধ্যেও যেন বুঝে বলতে পারি, ‘ তার জন্যে যতক্ষণ সম্ভব অপেক্ষা করব, যদি চিনতে না পারি? পারব, কারণ, ‘ সে নাকি আলোর চেয়েও বেশি আলোকিত।‘
কবিতা পুনরায়
কবিতা
সৌম্য শংকর দাশগুপ্ত
কবিতা, তুমি মাঝরাতের প্রেমিকা।
তোমার সাথে ডুবেছি একটা নদী,
একসাথে বয়েছি হাজার খরস্রোতা।
কবিতা তুমি বড্ড অভিমানী।
কবিতা তুমি আমায় ভালোবাসো?
জানোই তো শহরে আজ প্রেমটা ভীষন দামী।
কবিতা তুমি রাতের কান্না লোকাও কেন? তোমার লজ্জা কীসের এত?
তোমার কাছে একটা আবদার আছে, আজ রাতে আমার কান্না শুনো।
কবিতা তুমি ছেঁড়া পাতার পেন আঁচড়ের দাগ,
তোমার সাথ কথা হয়নি রোজ, দেখা হয়নি কাজল চোখের নীল গোলাপের মাঠ।
কবিতা, তুমিই তো সে যার জন্য সাজিয়েছি আজ কথা।
যার জন্য গুছিয়েছি ঘর, ভরিয়েছি এত খাতা।
কবিতা তুমিই আমার একলা রাতের সই।
তুমিই কেবল আমার সাথে থাকো,
ইতি তোমার প্রেমিক কবির বই।।
লকডাউন
কাঞ্চন রায়
আজ হঠাৎ করে সন্ধ্যা নেমেছে
সন্ধ্যা হওয়ার আগে;
মাঝ আকাশে হারিয়ে রবি
"অস্তে" গেছে পূবে ।
যারা রেশন কুড়াতে বেরিয়েছিল
তারা ফিরল খালি হাতে ;
জলের হাঁড়ি, ছাই উনুনে
দুমুঠো চালের আশে ।
সূর্যমুখী ফুটেছিল কিছু
বুনো পথের ধারে,
ছিঁড়ল কিছু হন্যে ছোড়া
রাত্রির অজুহাতে।
কেউ কিনেছিল দিন-- অনেক দামে
কেউ কিনেছিল সস্তায় ;
আজ চার দেওয়ালে সমান সবাই ,
বন্দি অসহায় !
মৃত্যু উপত্যকায় একদিন
মানস চক্রবর্ত্তী
আমি একটি মৃত্যু উপত্যকা পার হয়ে এসেছি
শয়ে শয়ে লাস এসেছি পায়ে মাড়িয়ে
রক্তের দাগ এখনও তাতে লেগে
গঙ্গা জলে শুদ্ধ করিনি নিজেকে |
একটি ল্যাংটো কিশোর
তার বাবার লাসের পাশে বসে কাঁদছিল ,
আমি মুছিয়ে দিইনি তার চোখের জল
কান্না মানুষকে নির্মল করে |
যে কাঁদতে জানে না
হাজারো পাঠক্রম তাকে
ক্লেদ , গ্লানি , অবজ্ঞা থেকে বাঁচাতে পারে না |
মৃত্যু উপত্যকায় আমি দেখেছিলাম
বিশ্বসুন্দরীর দুটি স্তন , যা
কেউ খুবলে খেয়ে খেয়ে গেছে |
কে সে ?
কোনো ইঁদুর ? প্যাঁচা ? অথবা
কালো চুলের কোনো মাথা ?
যে অনেক দিন বুভুক্ষু ছিল |
আমি দেখেছি
এক উন্মাদিনী পাগলী মৃত পুরুষের ঠোঁট
চুম্বন দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছিল ,
সে কি চিনে নিতে চাইছিল
এক কালে কে তার প্রেমিক ছিল ?
আমি এককালে এক যুবককে চিনতাম
তাকেও দেখেছি ঐ মৃতদের ভিড়ে ,
কী অসম্ভব পাংশু বর্ণের ছিল তার মুখ |
অহনাকে সে পায়নি
এই কি তার একমাত্র দুঃখ ?
প্রেয়সীকে না পেলে প্রণয় এত বিবর্ণ হয় ?
মৃত্যু উপত্যকায় আমি আর এক যুবককে দেখেছি
থ্যাতলানো পুরুষাঙ্গ নিয়ে শুয়ে থাকতে ,
পুরো দেহ তার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত
অপরাধ তার একটিই
মাতৃভূমির মুক্তি চেয়ে সে লিখেছিল একটি কবিতা |
যুবতীর পাশে শুয়েছিল এক বৃদ্ধাও
বুকের মাই ঝুলে পড়েছে , চামড়াও অমসৃণ
মৃত্যুতে তার এমন কিছু ক্ষতি ছিল না
কিন্তু একটি নিরাপত্তাহীনতার প্রতিচ্ছবি
সে উপহার দিয়ে গেল তার পরবর্তী প্রজন্মকে |
স্বর্গীয় কথোপকথন
---- সুমন ঘোষ
বলি হে চিত্তগুপ্ত, হিসাব রাখা বড্ড চাপের মনে হচ্ছে? আজ্ঞে হজুর কি যে করি, কে মরছে ভাইরাসে,কেওবা আবার পিশাচ গুলোর লালসায়; কতকগুলো ক্ষিদের চোটে আর বাকি গুলো দুর্ঘটনায়। তা এত সব একসাথে হলে কোনটা যাবে স্বর্গে, কোনটা নরকে বুঝে উঠতে পারি নে বাপু। বুঝি বুঝি চিত্তগুপ্ত! কিন্তু, করি বলো উপায় নেই, তার উপর কি যেন চলছে ওই লকডাউন না কি? তোমার জন্য খাতা গুলো আনতে পারছি না, বইপাড়া ডুবল সব গেছে ভেসে। হজুর, এরম ভাবে চলবে কেনো? তা ওই বেইমানি বাবু আছে না,ওনাকে বলে যদি একটু ল্যাপটপ্ না কি কই আর ওয়াইফাই এনে দিতেন,বড়ো সুবিধা হতো। এই বুড়ো বয়সে,চোখে সেই আদম যুগের চশমা আবার তার ওপর মাস্ক পারি না বাবু। দেখেন না হজুর যদি কিছু করা যায়। আচ্ছা এতো ব্যতিব্যস্ত হইয়ো না তো দেখছি, দেখছি।
নিয়ন্ত্রণ
---- রিকি ঘোষ
নিয়ন্ত্রিত এই জীবনযুদ্ধের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে
মনকে নিয়ন্ত্রণ করা তেমন কঠিন নয়,
যদি না থাকে চিন্তার গৃহ
যদি পালিয়ে যায় হাজারও ভয়।
মনকে নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে যেতে
অতিরিক্ত পূর্বানুমান বাদ দিয়ে,
কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পেছনে যতটা শ্রমের প্রয়োজন চিতততা দুহাতের মুঠোয় নিয়ে।
পরিবর্তনে আস্থা রেখে ফলাফলের অপেক্ষায় বসে
খারাপ অভ্যাসগুলোর ইস্তফায় স্বাক্ষর করে,
মনকে ধোঁয়াশার প্রাচীরের বাইরে নিয়ে
বসবাস করান শান্তির ঘরে।
চেতনা
সুবর্ণা বর্মন
চারদিকে সংক্রমণের ঝুলি
বইছে মানব সঙ্গ,
ভাগ্যের দোহাইয়ে নিরন্তর অভিপ্রায় ।
সংকটের বিহ্বলতা মজ্জমান-
মান অপমান বিরোধ ধুয়ে
বিলীন হোক মানব - হৃদয়ে।
জাগুক মানবতাবাদের অঙ্গীকার ,
বিদ্ধেষ ঈর্ষার শত্রু নাশ হোক।
আপন জ্ঞানের রূপে পূজিত হোক জাহ্নবী,
আত্মার চেতনা বিবেক চেতনা বোধে,
জীবন মুখি ছন্দে দুর্দিনে
চিত্ত -উদার বানী পরিশুদ্ধিত হোক
মননশীলতায়।
প্রবন্ধ
আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুভাবনা -
---- রাহুল পাত্র
'সুখ-এর বিপরীত দুঃখ, কিন্তু আনন্দের বিপরীত তা নয়, বস্তুত দুঃখ আনন্দেরই অন্তর্ভুক্ত' l
বাইরে কোন দুঃখজনক ঘটনা দেখলে আমাদের চোখে জল আসে l সেখানে কবির প্রতিভার পরিচয় থাকে না l কবি যখন তার অঘটন ঘটান পটীয়সী প্রতিভার বলে তখন সেই লৌকিক 'শোক' আর তার মধ্যে থাকে না l তার দ্বারা তখন পাঠকের হৃদয়-এ অলৌকিক করুণ রসের সৃষ্টি হয় l অলৌকিক করুণরস হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক l এভাবেই' দুঃখের তীব্র উপলব্ধি ' হয়ে ওঠে আনন্দকর তা না হলে কেউ 'রামায়ণ' পাঠ করত না, দুঃখের ছায়াছবিও দেখতো না l পাঠক যখন দুঃখের কাব্য পাঠ করে তখন কাব্যের যাদুশক্তিতে একাত্ম হয়ে যায় l পাঠক অনুভব করে এই দুঃখ একই সঙ্গে তার এবং অপরের, আবার তারও নয় অপরের নয়- তখনই আনন্দলাভ ঘটে l করুণ রসের মানবিক উপাদান দুঃখদায়ক হলেও তার পরিনামি রস আনন্দের সামগ্রী l জীবনের পথচলার ক্ষেত্রে দুঃখকে আমরা পছন্দ না করলেও সাহিত্যের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে আকর্ষণীয় l সাহিত্যের ক্ষেত্রে ট্রাজেডি মনোরঞ্জন করে বলেই তা উপভোগ্য l জীবনের ক্ষেত্রে দুঃখ-বেদনা হলো পরম সত্য l সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই সত্য জীবনের গভীর তাৎপর্যকে অনুভব করতে শেখায় l সার্থক সাহিত্য পাঠ করলে রসিক ব্রহ্মানন্দের মত আনন্দ লাভ করে, মৃত্যুও সেখানে দুঃখ ও বেদনাকে অতিক্রম করে নিত্য আনন্দের লীলা হয়ে ওঠে l জীবনের সত্যতা অনুভব-এর মানদন্ড মৃত্যু, আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের কাছে l মহান মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল মন দিয়েই জয় করেছেন l তিনি জীবনের মহিমাকে প্রকাশ করেছেন মৃত্যুর ভিতর দিয়েই আর এখানে মৃত্যু তথা দুঃখ আনন্দকর হয়ে উঠেছে l
রবীন্দ্রনাথ আনন্দ বলতে সুখকে যেমন বুঝিয়েছেন, দুঃখ কেও তেমনই বলেছেন l
তিনি বলেছেন দুঃখকে বাদ দিয়ে আনন্দ লাভ সম্ভব নয় l এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ট্রাজিক সত্য হল জীবনের মূল সত্য l রামচন্দ্রের নির্বাসন মন্থরার উল্লাস, দশরথের মৃত্যু - এর মধ্যে ভালো কিছু নেই নিয়ে l তবুও এ ঘটনা নিয়ে কত কাব্য, নাটক, ছবি, গান, পাঁচালী বহুকাল থেকে তৈরি হয়ে আসছে, ভিড় জমছে কত, আনন্দ পাচ্ছে মানুষ l দুঃখের মহনীয়তা মানুষের মহত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে l তাই দুঃখের কাব্যকে আমরা সুখের কাব্য অপেক্ষা অধিক সমাদর করি l দুঃখ অনুভবে আমাদের চিত্তে অধিকতর আনন্দ উপস্থিত হয় l ট্রাজেডি মানুষকে বিশেষ সত্যের মুখোমুখি করে আনন্দ দান করে l
অ্যারিস্টটল জানিয়েছেন, লৌকিক জগতের বেদনাবহুল ঘটনা সাহিত্যে অনুকৃতি হলেও আনন্দদায়ক হয় l নিকল বলেছেন, ট্রাজেডির আনন্দ হল শৈল্পিক অনুভূতির আনন্দ l রবীন্দ্রনাথ ট্রাজেডি পাঠ বা দর্শনের সময় পাঠক বা দর্শককে ট্রাজেডির নায়কের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কথা বলেছেন l নায়ক-এর সুখ-দুঃখের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ অনুভব করে পাঠক, দর্শক আনন্দ লাভ করে l এভাবে তারা ক্রমশ চলে যায় লৌকিক মায়ার জগতে, সেখানে দুঃখ আরামবোধের চেয়ে প্রবল হয়ে ওঠে l ট্রাজেডির দুঃখকর ঘটনা তখন আর দুঃখ করে থাকে না l আসলে প্রকাশের আনন্দই হল সাহিত্যের আনন্দ l যা আনন্দরূপে প্রকাশিত হয় তা সবরকম দুঃখ, যন্ত্রণা, মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায় l ট্রাজেডি আনন্দ সৃষ্টি করতে সক্ষম বলেই সাহিত্যে এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে l তথ্যের সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়াই হলো কাব্য, সাহিত্য ও শিল্পের লক্ষ্য l আর দুঃখ এখানে আনন্দদায়ক l
শেলী জানিয়েছেন, মানুষের আত্মা জৈবিক সত্তা ও অন্তরতম সত্তা - এই দুই ভাগে বিভক্ত l এই দুইভাগের সামঞ্জস্য দানে আনন্দের সৃষ্টি হয় l গভীর দুঃখ আনন্দের জন্ম দেয় l জীবনের ক্ষেত্রে দুঃখ-বেদনা পরম সত্য l রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর অর্থাৎ চরম দুঃখের ভিতর দিয়ে জীবনের মহিমাকে প্রকাশ করতে শিখেছিলেন উপনিষদের মন্ত্র থেকে - বলা হয়েছে 'মানুষ অমৃতের সন্তান' l অমৃতের জগতে প্রবেশের চাবিকাঠি আছে মৃত্যুর কাছে, দুঃখের কাছে l আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথের কাছে এই-ই জীবনের সত্যতা অনুভব-এর মানদন্ড হয়েছে মৃত্যু এবং দুঃখ l তাই রবীন্দ্রসাহিত্যে মৃত্যুও দুঃখ অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এবং পাঠকের অন্তরে তা অপরিসীম আনন্দ প্রদান করেছে l সুখ ও দুঃখের সম্মিলিত রুপই হল রবীন্দ্রচিন্তায় 'আনন্দ' l
রবীন্দ্রনাথের মতে মৃত্যু এই অস্তিত্বের ভীষণ ভারকে সর্বদা লঘু করে রেখেছে আর জগতে বিচরণ করার অসীম ক্ষেত্র দিয়েছে l যেদিকে মৃত্যু সেদিকেই জগতের অসীমতা l আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথ মৃত্যু তথা দুঃখকে আনন্দেরই পরিপূরক হিসেবে দেখেছেন l রবীন্দ্রসাহিত্যে তাই
মৃত্যু অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এবং পাঠকের অন্তরে দায়িত্ব অপরিসীম আনন্দ দান করেছে l এই আনন্দ হল লীলার আনন্দ, বিচরণের আনন্দ l
আর মৃত্যু ও দুঃখ এখানে আনন্দেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং এগুলি আনন্দেরই অপর নাম হয়ে ওঠে l
মানবিক মূল্যবোধ
---- টুলটুল দেবনাথ
*********************
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো একটি উন্নত মানব জাতির জন্ম দেওয়া অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ তৈরি করা।যাদের মধ্যে থাকবে দেশ প্রেম, নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ।আদর্শ মানবিক মূল্যবোধ এর সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। যেটা না থাকলে মানুষ প্রকৃত মানুষ এ পরিণত হতে পারে না।মানুষের তখনই মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটবে যেদিন সে ভালো এবং উত্তম মানের কাজ করতে পারবে।যখন একটি মানুষ সৎ হয় আর নিজের কাজ সম্পর্কে দৃঢ় হয় তখন তার চরিত্র ধীরে ধীরে মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী হতে থাকে।
প্রাত্যহিক আমরা যে জীবন যাপন করি সেখানে একজন ব্যক্তি যে জিনিসটি একান্ত প্রয়োজন সেটি হল মূল্যবোধ। মূল্যবোধ যে চারিত্রিক গুণ সেটা আমরা নিজেদের পরিবারের নিকট জন্মলগ্ন থেকে পেয়ে থাকি।সকল সৎ গুণের মধ্যে মূল্যবোধ শব্দটি মানুষের চরিত্রের একটি বলিষ্ঠ গুণ যা আমরা রপ্ত করতে সক্ষম হই পরিবার ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে।
একজন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ সমাজ কল্যাণ বা রাষ্ট্র কল্যাণে যেকোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন এগিয়ে আসতে দ্বিধা বোধ করেননা।একই সাথে অন্য একজন মানুষ তার নিজের চোখের সামনে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়া কিংবা তার নিজের সাথে কোন অন্যায় মেনে নিচ্ছেন নতমস্তকে বুঝতে হবে তার নিজের মানবিক চেতনা লোপ পেয়েছে। সে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না। অর্থাৎ মূল্যবোধ লালন পালনে তার নিজের কোন ইচ্ছাই নেই। সে যেমন প্রতিবাদ করতে পারে না তেমনি সে অন্যায় মেনে নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
আমাদের নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গৌরবময় ইতিহাস কে যদি টিকিয়ে রাখতে চাই তাহলে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এর প্রয়োজন। নচেৎ আমরা কিছুতেই পারব না নিজেদের অতীত ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমাদের দরকার একনিষ্ঠ লক্ষ সুষ্ঠু মূল্যবোধসম্পন্ন মনুষ্যত্ব অর্জন করার জন্য। মনুষ্যত্বের সাথে মানুষের নৈতিকতার প্রয়োজন রয়েছে সঠিক মানবিক মূল্যবোধের জন্য। মানুষের মূল্যবোধ পারে মানুষকে যথার্থভাবে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে এবং তার চরিত্রের সৌন্দর্যায়ন করতে। মানুষের এই মানবিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে সমাজের মূল ভিত্তি। উন্নত রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি হচ্ছে এই মানবিক মূল্যবোধ। যার মূল্যবোধ আছে তিনি বিবেকবান ব্যক্তি। আর সেরকম একজন ব্যক্তি সহমর্মী হয়ে থাকেন। তিনিই পারেন সমাজ কল্যাণ কার্য ব্রতী হতে আর একসাথে নিজের ও অন্যের সুখ সুবিধা দেখতে এবং সেই কাজে তার বিবেক তাকে সাহায্য করে থাকে।
যার মানবিক বিবেক নেই সে অন্যের সমস্যায় দুঃখে কষ্টে এগিয়ে আসতে পারেন না ফলে তার নিজের বেলাতেও কেউ এগিয়ে আসেন না। যখন আমাদের মানবিক বিবেক কাজ করে তখন নিজের অজান্তেই আমরা অন্যের ভালো চাই। ফলস্বরূপ অন্যের কাছ থেকেও আমরা সহমর্মিতা পেয়ে থাকি। একজন মানবিক মানুষ সবসময় আদর্শে বলীয়ান হয়ে থাকেন। তিনি সহমর্মিতা,সৌজন্যবোধ ,মানবিকতা, বিনয় শিষ্টাচার এসব গুণের অধিকারী হয়ে নিজেকে আলোকমন্ডিত করে তুলেন।সাথে নিজের আলো বিকিরণ করে মূল্যবোধের বিকাশ সাধন করেন এবং সুস্থ-সবল সমাজ গঠন করতে সক্ষম হয়ে থাকেন।
মূল্যবোধ হচ্ছে নিজের বুদ্ধি আর দক্ষতার সাহায্যে প্রত্যেকটা জিনিস এবং কাজের ভালো-মন্দ দোষগুণ বিচার-বিশ্লেষণ বা মূল্যায়ন করতে পারাকে বুঝায়। সুস্থ এবং সুষ্ঠু নীতির প্রতি
সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন থেকে আসতে পারে নীতিবোধ আর নীতিবোধ থেকে আসবে নৈতিকতা। চলমান সমাজ গঠনে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা অতি প্রয়োজনীয় এবং এর ভূমিকা অপরিসীম।এই শিক্ষার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অনুশীলন যার বীজ গ্রন্থন ঘটে পরিবার থেকে এবং ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে সমাজে। এই নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রথম আর প্রধান উৎস হলো শিশুর বাবা ও মা। একজন শিশুর উপর মা এর প্রভাব সব থেকে বেশি। তাই প্রত্যেকটি পরিবারের মাকে নৈতিক শিক্ষার অধিকারী এবং পরিমার্জিত হওয়া দরকার।মূল্যবোধ সততা এবং সৎ চিন্তা থেকে জন্ম নেয় যা মানুষকে মানবিক বোধশক্তি তে উজ্জীবিত করে তোলে এবং ন্যায়ের পথে চালিত করে।
তাহলে মূল্যবোধ বলতে আমরা বুঝি একজন ব্যক্তির সার্বজনীন আচরণ যা সত্য ন্যায় এবং ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠিত করে। মানুষের মূল্যবোধ এমন এক জিনিস যা কালের পরিবর্তনেও পরিবর্তিত হয় না। মানবিক মূল্যবোধ মানুষের শাশ্বত গুন। আর এই মূল্যবোধ সুষ্ঠ সমাজে সর্বজন স্বীকৃত।
আমাদের সমাজের আচার নীতি এবং মনোভাব সমাজের অনুমোদিত পরস্পরিক ব্যবহারে একজন ব্যক্তির মধ্যে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালবাসা আর সততা ইত্যাদি ভাবের সৃষ্টি করে থাকে।এমনটা হয়ে থাকলে সেখানে নৈতিক ,সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রবাহমান আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আর এমন নৈতিক আদর্শ যে সমাজে বিদ্যমান সেখানে কোন অনাচার থাকতে পারে না।যেমন-ঘুষ ,প্রবঞ্চনা ,শোষণ ,প্রতারণা ,স্বার্থপরতা এসব দুর্নীতি থেকে সমাজ মুক্ত থাকবে এবং জীবনে আদর্শের প্রতিফলন ঘটবে। ন্যায় নীতি যুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত জীবনই আদর্শ জীবন।
দুঃখের বিষয় যতদূর চোখ যায় দেখা যায় সব দিকে হীন তৎপরতার পাহাড় গড়ে উঠেছে। সমাজের ক্ষমতাবান লোকেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। স্বীয় বৈভবের পাহাড় তৈরি করছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ,মানব সেবা, সব জায়গায় শুধু অর্থের মুনাফা দেখছেন। সকল ক্ষেত্রেই অনৈতিকতা ও অরাজকতা বিরাজ করছে। কোথাও স্বচ্ছতা নেই। প্রত্যেকেই সামাজিক বা মানবিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলছেন। ন্যায় অন্যায়ের মাঝখানে কোন ব্যবধান নেই। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি বিশেষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজে শিশু এবং যে কোন অবলা প্রাণ এরা অপরাধী না হলেও শিকার হচ্ছে কিছু বিবেকহীন মানুষের দ্বারা।
পরিকাঠামো হীন বুনিয়াদ ও উন্নয়ন অনেক দেখা যায়। কিন্তু মানতেই হবে যে কোথাও একটা গলদ হয়ে রয়েছে। নয়তো সমাজের এত অবক্ষয় কেন? পুষ্টিগত কারণে হোক বা ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য হউক মনে হয় সমাজে অন্যায় অনাচার বেড়েই চলেছে। মানুষের মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় স্বরূপ দিনে দিনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ লুপ্ত হচ্ছে আর এর ফলস্বরূপ ভবিষ্যৎ দিনে মানুষের উপর কি ধরনের বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে তা ভাবলেও আতঙ্কিত হতে হয়। মনের ভিতর ছোঁয়াচে রোগের মত ছড়িয়ে পড়ছে এ বিপর্যয় দেশ ও সমাজের প্রতিটি কোণে কোণে। সামাজিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় হচ্ছে।এই বিপর্যয়ের প্রতিকার আমরা কমবেশি সকলেই জানি।কিন্তু সঠিক কি করতে হবে জানবার পরও সেই কাজ কেউ করছি না শুধুমাত্র নিজেদের কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য।
এখানে কেউ কারো সর্বনাশ করার আগে দুবার ভেবে দেখার জন্য নিজেদের কাছে সময় নেই। নিজেদের লোভের বশে কচি শিশুর কাচা মন নিয়ে নির্দ্বিধায় খেলছি।
রেখে যাচ্ছি নিষ্ঠুর অমানবিকতার চিহ্ন সরল শিশুমনে। তাদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আতঙ্ক আর ভয়। আতঙ্কে তাদের শৈশব খর্ব হচ্ছে।ভুলে যাচ্ছি যে সব অন্যায় আমরা করছি সেসব পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও আমাদেরকেই করতে হবে ।সমাজের অমানুষদের দ্বারা গঠিত অন্যায় বা অমানবিকতা সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করছে। দুর্বিষহ করে তুলছে মানুষের বেঁচে থাকা।
মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে আর আশংকায় দিন কাটাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন আর এই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাবনার বিষয় ।
আজকাল সংবাদ মাধ্যমে প্রায় আমরা দেখতে পাই শিশু অপহরণ ধর্ষণ খুন এসব ঘটনা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। নির্লজ্জের মত আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে তাদের অসহায় অবস্থা।বিবেকহীন দুর্বৃত্ত বর্বরদের একমাত্র লক্ষ বস্তুর হচ্ছে নিরপরাধ অসহায় নিষ্পাপ শিশুরা। কেন এভাবে শিকার হচ্ছে তারা? তাহলে কি আমাদের সমাজ সভ্যতা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি?তাহলে কি দুরাশয় ব্যক্তিরা সামাজিক শিক্ষা ও সভ্যতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ? তবে কি আমাদের স্বাধীনতা থেকে আমরা কিছু অর্জন করতে পারিনি এখনো?
আমাদের সমাজে নারীরাও সুরক্ষিত নয় ।যে নারী একটি সমাজের সৃষ্টি করে থাকে। যে নারী এই অনন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কারিগর তার আজ নিজেরই সুরক্ষা নেই।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বা একটা পরিবারেই হোক নারীরা
অবহেলিত হচ্ছে ।অনেক অন্যায় অত্যাচারএবংমানসিক
নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু মাত্র আমাদের সমাজের হীন মূল্যবোধের জন্য।নারীদের প্রতি আমরা নিজের শ্রদ্ধাও সন্মান হারিয়ে ফেলেছি সেটা আমাদের মানবিক চেতনাবোধের অবনতির জন্যই। চাইলেই একে অপরের সাথে পা মিলিয়ে চলতে পারি ।শুধু মাত্র আমাদের বিবেক বুদ্ধিকে সঠিক ব্যাবহার করে।একটা সুন্দর পরিবার ও সমাজ গড়ে তুলতে পারি অনায়াসে।
নারীদের ও নিজেদের অবলা না ভেবে শিরদাঁড়া শক্ত করে ঘুরে দাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।নিজেদের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সাহসের পরিচয় দিতে হবে।এখানে
স্বামিবিবেকানান্দের একটি উক্তি তুলে ধরা যেতে পারে।
"বেদান্তে সংগ্রামের স্থান আছে কিন্তু ভয় এর স্থান নেই। যখন এসব সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে সচেতন হইতে শুরু করিবে, তখনই সব ভয় চলিয়া যাইবে। নিজেকে বদ্ধ মনে করলে বদ্ধই থাকিবে, মুক্ত ভাবিলে মুক্তই হইবে।"
আজকাল ঘরে ঘরে দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা মায়েদের অসহায় অবস্থা। যে বাবা মা নিজের সমস্তটা দিয়ে তার সন্তানদের মানুষ করেন সেই সন্তানই একদিন তাদের বাবা মায়ের বৃদ্ধ কালে অসহায় অবস্থার সন্মুখীন হতে বাধ্য করে। সন্তানের ঘরে বাবা মায়ের জায়গা হয়না।তাদের ঠিকানা হয় কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অনাথ আশ্রম। এসবই মানবিক চেতনা বোধের অভাব ।
তবে কি জন্য এত হাজার হাজার স্কুল কলেজ আর পঠন পাঠন! যদি কোন কিছুই আমাদের মনের দুনিয়ায় দাগ কাটতে পারেনি। কেন জাগলো না মানুষের মানবিক চেতনা!কেন কোনো ব্যবস্থাই জাগাতে পারলো না মানুষের মনের সহানুভূতিশীল সত্তাকে? কেন হচ্ছে মনুষ্যত্বের পরাজয়? কেন মানুষ নিজের বিবেকের কাছে বারবার পরাজিত হচ্ছে?একই সমাজে থাকার পরও একে অপরের কাছে অপরিচিত থেকে যাচ্ছি।
সংসার সমাজ এবং দেশকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এটাই মোক্ষম সময় প্রত্যেকের মানব চেতনা বোধ জাগিয়ে তোলার। নিজের বিবেককে ভালো কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভাবনার সৃষ্টি করার। নিজেদের সুন্দর অনুভূতি দিয়ে মানব মনের আঙ্গিনায় সুন্দর বাস্তব সাবলীল স্বপ্ন এঁকে দেওয়া।যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকার এক নতুন দিশা খুঁজে পায়। সকলেই যেনএক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। এবং নিজের সৎকর্ম সৎ চিন্তার দ্বারা সমাজ ও দেশের উন্নতি সাধন করে নিজেদের গৌরবান্বিত করে তুলতে পারে।
সকলকে ভাল রাখতে হলে প্রত্যেককেই নিজের ভালো লাগার বিষয়ে সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং সাধ্যমত সেই সংকল্প পূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। ধর্ম ও রাজনীতি এসব বিষয়ে যেন আমাদের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে না পারে। মানুষ হয়ে যেন আমরা মানুষ হিসাবেই পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে পারি।"প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"। এই মানব চেতনার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের মনকে।
অনুগল্প
বৃষ্টি সংক্রান্ত বিড়ম্বনা
আরশাদ আল গালিব
-------------------------------
বাস থেকে নেমে স্টেশনে দাঁড়ালাম। কি বিষ্টিরে বাবা ঝরছে তো ঝরছে ই থামবার আর নাম নেই। এদিকে হাবলুটার ও নিতে আসার কথা ছিল স্টেশনে। কিন্তু কই ওর টিকিটাও তো দেখা যাচ্ছে না।
'যাহ বাবা ভুলে গেলো না তো। তাহলেই সেরেছে।'
কি মুশকিল এ পড়া গেলো দেখছি। আগে যদি জানতাম যে এরকম ফাঁটা বাঁশের চিপায় পড়তে হবে তাহলে আর এমুখো হবার নাম নিতাম না। কিনতু হাবলুটা এত করে বলল যে ফেলতে পারলাম না। অগত্য ব্যাগ কাঁধে করে চলেই এলাম। এদিকে এসে বাস থেকে নেমে হাবলুর কোনো পাত্তা নেই।
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর এবার সিদ্ধান্ত নিলাম হাঁটা শুরু করব। যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করলাম হাঁটা।
তবে হাঁটা তো শুরু করলাম কিন্তু পৌছাব কিভাবে সেটা তো জানি না। না জানি হাবলুর বাড়ির ঠিকানা, না জানি ওদোর বাড়ির কারো নাম।তাই কি আার করা উদ্দেশ্যেহীন ভাবে হাঁটছি আর ভাবছি যে রাস্তায় কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করে নিবো।
কিন্তু হায় হায় একি!!! আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো সারা রাস্তায় একটা লোক ও নেই!! কি করে পৌছাই। ভাবছি আর হাটছি। এসময় একবার যদি হাবলুটাকে হাতের কাছে পেতাম বুঝিয়ে দিতাম।
'উঃ বাবারে গেলাম গেলাম,, কি মশাই দেখে চলতে পারেন না। চোখ কোথায় থাকে? আসমানে নাকি। '
'যাক বাবা অবশেষে কাউকে পেলাম। আংকেল সরি দেখতে পাই নি।'
'ঠিক আছে বাবা ঠিকাছে তা কোথায় যাচ্ছিলে এমন গজেন্দ্র গমনে।'
আজ্ঞে এ গ্রামের হাবলুদের বাসাটা খুজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। একটু বলবেন প্লিজ।
'ও এই কথা, আসো আমার সাথে।'
আমিও লোকটার পিছু পিছু চললাম। প্রায় বিশ মিনিট পর একটা বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম।
আসার পর আমাকে দেখে বের হয়ে আসলো হাবু। সাথের লোকটিকে দেখিয়ে বললো, আরে এই তো আমার বাবা।
আর এদিকে আমি পূর্বোক্ত ব্যাবহারের জন্য লজ্জায় অবনত।
কবিতা শেষ ভাগ
বর্ষা তুমিও এলে
----আলোক মন্ডল
আতঙ্কে এখনোও আছি, আবহাওয়ার শুষ্ক বাতাসে। বর্ষা তুমি কেন এলে, প্রকৃতির খোলা আকাশে। জানি তুমি নতুন সবুজ, জানি তুমি নতুন আশা। জানি তুমি রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি, জানি তুমি ছাতার ভালবাসা। বর্ষা তুমি কেন এলে, চাষীর মন করলে জোয়ার। ফুল ফুটুক না ফুটুক, তারা চায়না কিছু আর। বছর ফিরে আসো একবার, খানিক রূপের দিশায়। কষ্ট দাও দুঃখ দাও, তাও মিথ্যে ঝলকের আশায়।
সহবাস with পান্ডুলিপি
সত্যব্রত ধর
পরে থাকা ছায়া কুড়িয়ে,
অবেলায় বাঁচাতে চাইছে
কিছু স্বপ্ন।
বাজারের হরতালে ছাপোষা সংসারে,
মাসের হিসাবে গোজামিল
চলে ক্রমাগত।
বিধবা বছরে সাপের বিষাক্ত ছোবল,
সমাজের বুক থেকে ছিনিয়ে
নিচ্ছে লোকাচার।
আঙুল ছাড়িয়ে নিয়েছি,
ফুটফুটে সম্পর্কের মায়াভরা
আহ্লাদ থেকে।
গভীরতার বীজ পরীক্ষামূলকভাবে,
চুরি গেছে চিরুনির ফাঁকে থাকা
বীর্য থেকে।
অন্যায় বেঁচে চিন্তাশক্তি হারিয়ে,
পান্ডুলিপির সাথে সহবাস
চলছে...চলবে।
"জেতার চেয়ে জিতিয়ে দেওয়ায় আনন্দ"
---- নৈর্মিষা প্রামানিক
কিছু কিছু খেলায় নিজে জেতার চেয়ে কাউকে জিতিয়ে দেওয়ায় আনন্দটা অনেক বেশি।তাই বলে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে তা নয়,তবে ত্যাগী হতে হবে। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে তিতাসের শীতল ঢেউয়ে প্রিয়জনকে ভেসে যেতে দেখার চেয়ে, নিজেকে ভাসিয়ে দিতে কার না ইচ্ছে হয়।তাহলে নিজেই বেঁচে যায়,আর নাহলে জীবিত এক লাশে পরিনত হয়।জীবন আর জগতের তৃষ্ণা কারোর কোনদিন মেটে না কিন্তু বিরহ আর যন্ত্রনার তৃষ্ণা তো একদিন মেটে। প্রকৃতি যদি পুরুষ হয়,তাহলে নারী তার সৌন্দর্য। আমি সেই নারী হতে চাই।যে নারী জিততে শেখেনি কোনোদিন, শুধু শিখেছে জেতাতে ---
অভিমান
ব্যর্থ লেখক
তোমার জন্য আবেগ বুনি পড়ি ভূমিকার সেই প্রথম বই।
প্রথম পাতায় তুমি ছিলে উপসংহারের শেষটা কই।
বর্ষা আমার ভালোলাগে, ভালোলাগে শ্রাবণের সেই কোলাহল।
বৃষ্টিতে এখন হাঁটতে ভালোবাসি দেখায় না তাই চোখের জল।
তুমি ছিলে সভ্যতা,জাতি আমার ধর্ম তোমার জন্য আনব জলের তলের মরীচিকা।
আজ বজ্রশোকে কোথায় তুমি হারিয়ে যাওয়া আমার একলা ঘরের অনামিকা।
দাবানলে পুড়ছে আজ বসন্ত বাগান মাসের-পর-মাস।
স্মৃতির ছাইয়ে ফুটে উঠেছে ক্লান্ত রাতে রক্ত পলাশ।
গড়ার আগেই ভেঙে গিয়েছে শুনেছি গম্বুজের সেই ইতিকথা।
ভাবছি ভালোবাসায় প্রলেপ লাগাবো যদিও রইবে পড়ে নীরবতা।
তোমার পাশে পাই না আর স্মৃতির মায়ার গন্ধ আতর।
ঘুমহীন রাতে জেগে উঠি হয়েছি আমি বিবশ পাথর।
পায়ের ছাপে মরছে পড়েছে হচ্ছে আমার প্রবল রক্তপাত।
তোমার বুকে শান্ত হাওয়া উঠবে কেন আর জোর জলোচ্ছ্বাস।
প্রেমের জালে মরছি জ্বলে আসেনি সে সানুতলে।
রংধনু আজ ওঠে না বৃষ্টির পর আকাশ মেলে।
পাইনা আমি তুচ্ছ ভেবে ভুলে যাওয়ার তোমার একটা কারণ।
উপসংহার পড়বো না আমি করো না তুমি নাম উচ্চারণ।
নৌকো খন্ডে দাঁড়িয়ে তুমি বলছো সূর্য যেন বড়ই স্বার্থপর।
তোমায় খুঁজতে আমি ব্যস্ত নই, নয়তো আমি কারিগর।
শ্রাবনী ----
---- পার্থ চক্রবর্ওী
----------------
এলোকেশী হয়ে চলেছো কোথায় অভিসারে
সিক্তবসনে অপরূপ শরীরী আহবানে
যেন এখনই উন্মুক্ত হবে প্রনয়ের স্বপ্নচারা
দেখ, আমার কৃষ্ণ যেন না হয় রাধাছাড়া
অলস মন বিরহে যেন সাথীহারা
ভিজে বাতাসের গন্ধে হৃদয় বাঁধনহারা
হঠাৎ ভ্রূকুটি মেলে দামিনী বাঁকা পলকে
নীরবতার প্রেম যেন অসহ্য তার কাছে
সহসা শুষ্ক কানন নাচে উচ্ছল বারিধারায়
বিজলির অট্টহাসে প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়
অনন্ত তৃষ্ণার চাহিদা কি আর মেটে একবারে?
তুমি আছ বলেই না যৌবন এখনো আসে বারেবারে।
ENGLISH SECTION
Discussion
A tribute to Satyajit Ray
---- - Moutrisha Pyne
From the vastness of Pather Panchali,
to the trilogy of Aparajito,
You stimulated and subdued and sublimed
every word which was emasculated,
measured every breath,
enwrapped reality in tenderness.
Your every step unravelled the tree of soul-
Whose roots being passion and creativity, spread deep and firm in soil.
From the heart warming fiction of Feluda's goyendagiri to Proffessor shanku, Tarini khuro and Banku babur Bandhu,
With constant endeavor;
You marked your presence in the memoirs of Fatik chand and Mullah nashiruddin.
A splendid epitome of a miraculous mind!
Every drop of you seemed to be diluted in dimensions of a writer, illustrater, publisher and a maverick filmmaker !
A whole new revolution of black and white cinema!
As the saying goes of Akira Kurosawa-
"To have not seen the films of Ray is to have lived in the world without ever having seen the moon and the sun.”
You were a ray of hope.
A ray of eye dazzling light in the profound haystack of chaos and cacophony.
A ray of alluring rainbow bounded by flavours of art and curiosity.
Its blue ink smudged the white,
intwined the bizarre fragrance of sudden tumultuous feelings.
Your swift words dripping down thee old nib of that fountain pen, cascading through paper,
giving them an identity, a look-out and
Witness to love, loss and all that's life.
The era bewitched by the glam stricken glowing charms of Bahshahi angti Robertsoner Rubi and the astonishing story of Jahangirer swarnamudra,
along with
Phrases scribbled in Dr munshis Diary,
ignited fire within each spell bound critic.
Such was your mindblowing power of captivity !
Words that inspire them,
Words that mesmerize,
Words, structured in forms of verses, poems, stories, proses, essays,
Speeches, dedications and what not.
Perhaps its just like Sonar kella,
only the lost treasure here is the lost era of the evergreen, immortal Satyajit ray.
Poetry
You
---Suman Ghosh
You are a rainfall in which I wanna quench my thirst. You are like a simoom,I'm the Sand Cusk.You are such a lovely rose which I can't pluck it out; rather it's mesmerising my mind.You are a sky and I am the horizon line, praying together to attach forever.
শ্রী কাজী র "নাম দিতে ভুলে গেছি", সত্যিই মন ছুঁয়ে গেলো।
ReplyDeleteএছাড়া পার্থ চক্রবর্তী র "শ্রাবণী" ও কোনো অংশে কম যায় না।