অপরাজিত ৭



অপরাজিত ৭ 




সম্পাদকীয়

আমার দখিনের বারান্দা , তার অনেকটা জুড়ে
একটা  সুখী আরাম কেদারা। যার মাঝে শুয়ে  একা ধূসর চালচিত্র আর একটি ক্ষীয়মান স্থবির স্মৃতি। ভিড় করে আসছে ইচ্ছেরা, ভিড়  করে আসছে অনুক্ত শব্দ গুলো।
ভিড় শব্দটির এক সমূহ আলিঙ্গন আছে তাই না?
উষ্ণ আদরের ছোঁয়া আছে, মিঠে কড়া আচারের টক্ ঝাল দুপুর আছে ।
তবু'ও কি ভিড় শব্দটির মধ্যে অবাঞ্ছিত বোধ'-এর অবিরাম প্রবেশের লজ্জাটুকু লেগে নেই? আছে কেবলই অনায়াস সমূহের উতরোল যাতায়াত ?
না কি এই ভিরটুকুই উৎসবের রঙীন পোশাক
যে পোশাক গায়ে না চড়ালে উৎসব অসম্পূর্ণ !
       এ পৃথিবীর মধ্যাহ্নে-- রোদেরা ভিড় করে আসে, মেঘেরা ভিড় করে আসে শরতের আকাশে,  উৎসবেরা ভিড় করে আমাদের সমাজে  ; তবে শান্তিরা ভিড় করে আসে না কেন মনুষ্য জীবনে ?
যখন জগজ্জননী এক চালের তলায় ছেলে মেয়ে নিয়ে ভিড় করে আসেন , সে ভিড় বড়ো গৌরবের। তাকে ঘিরে একটা আস্ত উৎসব পালন হয় দিকে দিকে। ঘরে বাইরে  তার কি দুর্দমনীয় তোড়জোড় ! যৌথ পরিবারের সাথে একচালায় আনন্দময়ীর সংসার কোথায় যেন আমার চোখে সরলরেখায় হাসে।
যদিও এখন একচালার ঠাকুরের চল প্রায় মিলিয়েই এসেছে, সাবেকি ও কয়েকটি বাড়ীর পূজো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কিছু অর্থে, তাও তা পলি পড়ে চলা নিরন্তর নদীর মতো।
তাই বোধ হয় ভিড় করে আসা জীবনে  বৃদ্ধ পিতা-মাতার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে তো তাদের ঘন হয়ে আসা চোখের জলের কোনো উৎসব পালন হয় না ! সেখানেও তো ভির জমে ; স্বপ্ন ভঙ্গের ভিড়,  হতাশার ভিড় , জানলায় চোখ রাখা অনন্ত প্রতীক্ষার ভির ! না কি সে নীরব যন্ত্রণা চিরকালীন নিরলঙ্কারে মূক ও বধির !
        'যৌথ পরিবার' শব্দটাই এখন 'ঐতিহাসিক' 'প্রাচীন'--  সিন্দুকে সযত্নে রাখা এক কৌলিন্য । শৌখিন স্মৃতি রোমন্থনেই শোভা বর্ধন হয় তার।
সে যে কবে থেকে অমন কালজয়ী উপাধির বাহক হল তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই।
 কাকা জ্যাঠা ঠাকুর্দা ঠাকুরমা চরিত্র গুলোও এখন কোনো সম্পর্কের অভিধানসমগ্রে পাওয়া যাবে হয়ত।
 যাঁরা আজ পিতামাতা, কখনও ক্রমে বয়সে পরিণত হতে হতে স্বত্ত্বায় ও মনে আবার ফিরে  নাবালকটি হয়ে জানলার সামনে , বা বারান্দায় সজল দৃষ্টিটুকু সাজিয়ে পেতে রাখেন সন্তানরূপী আশ্রয়ের আশ্রয়ে।

আজকাল দেখি দুর্গোপুজোয় তৃতীয়া বা চতুর্থীর দিন থেকেই মানুষের ঢল নামে রাস্তায় ঠাকুর দেখার ; কোথাও তো তেমনভাবে পরিবারের ছেলেমেয়েদের জীবনের ভিড় ঠেলে বৃদ্ধ পিতামাতা কে দেখতে আসার ঢল নামে না !

মর্ত্যে আনন্দময়ী-র আবাহন কি তবে মৃন্ময়ী রূপেই আবদ্ধ?
চিন্ময়ী অর্থে চৈতন্যস্বরূপিনী। মনে করা হয় যিনি পূজো করেন তাঁর হৃদয়ের প্রাণটিকে মৃৎ-মূর্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। মনের সকল বৈশিষ্ট্য গুলো দেবতার মধ্যে কল্পনা করার জন্যই প্রাণ প্রতিষ্ঠা। সেই অর্থে বাস্তবিক জীবনে মৃন্ময়ী প্রতিমায় চিন্ময়ী রূপ সৃষ্টিতে মানবকুলের সকল আয়োজনই কেন থমকে যায়, শুধুই আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে।                           
           বিগত কয়েক বৎসর তো আমাদের  সালঙ্কারা মা' নামী অলঙ্কার সংস্থার অব্যর্থ মডেল । সেখানেও দেখি বাণিজ্যিক ভিড়ের  চোখ ধাঁধানো উদযাপন ।
মাঝে মধ্যে মনে হয় ভিড় শব্দ টিকে বোধ হয় আমরা অনায়াস উদযাপন করি। সে যেন নিজস্ব আঙ্গিকে রঙীন বেলুনের সমাহার। কি মান পায় সে !
অনেক প্রশ্ন ছেড়ে গেলাম--- ওরা'ও ভিড় করে আসছে চারপাশে আমার , সঠিক চৈতন্যবোধের আশায় ।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
                           মৌসুমী মুখোপাধ্যায়

                             
কভার কাহিনী 

' *ধর্ম, বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের নীরিখে অতিমারী কোভিড-19'*       

                   'ধর্ম যখন বিজ্ঞান কে বলে রাস্তা ছাড়ো! বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?' কবি বিরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতার লাইনটা বর্তমান সময়ের নীরিখে খুবই প্রাসঙ্গিক আজ। সত্যিই 'রাস্তা কারও একার নয়।'  এক অপ্রতিরোধ্য ভাইরাস,যা প্রথমে মহামারী তারপর অতিমারীর রুপ ধারণ করে সারা দুনিয়াকে ছেয়ে ফেলে,ভয়াবহতার সৃষ্টি করেছে বলা যায়। তাই ধর্ম ও বিজ্ঞান এই ভাইরাস কে নিয়ন্ত্রন করবার এবং চিরতরে মুছে ফেলবার চেষ্টায় রত, বলা যায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত এই অতিমারী দাবানলের মতো প্রায় 210 টি দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। গোটা বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় 1 কোটি 33 লক্ষ 44 হাজার 159 জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন প্রায়  5 লক্ষ 77 হাজার 944 জন মানুষ।বলা যায় একটা অতিক্ষুৃদ্র ভাইরাসের কারণে মৃত্যু আজ হোলি খেলায় রুপান্তরিত। এর শেষ কোথায়,উত্তরটা সকলেরই অজানা। সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যাটা শেষমেষ কোথায় পৌঁছতে পারে কোনো বিশেষজ্ঞ,বৈজ্ঞানিক কিংবা কম্পিউটার মডেল আজ বলতে ব্যার্থ। এই প্রবন্ধে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে,বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া তথ্যাদির ভিত্তিতে 'ধর্ম', 'বিজ্ঞান' ও 'কুসংস্কার' এর নীরিখে অতিমারী কোভিড-19 এর বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। 'ধর্ম' বলতে বোঝায় যা আমাদের ধারণ করে।আর এই বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রত্যেকটি বিষয়েরই একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বা গুণাবলী রয়েছে। আগুনের ধর্ম উত্তাপ, জলের ধর্ম তরল্য,শৈত্য ও সমুচ্চশীলতা বজায় রাখা। আর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ আমাদের ধর্ম হল মানবতা। সে যাইহোক সৃষ্টির শুরু থেকেই বিশ্বপরিবেশে 'ধর্মের' বিষয়ে মতবাদ ভিন্ন এবং তাই তার শ্রেনীবিভাগও রয়েছে হাজার। তা নানা মত, নানা পরিধানের দেশে সবাই যে যার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাশীল এবং সংস্কার রীতি বজায় রাখতে যত্নশীল ও যথেষ্ট বদ্ধপরিকর। এবার আসি বিজ্ঞানের বিষয়ে, 'বিজ্ঞান' সারাজীবনই তথ্য,প্রমান,গবেষণা এর ভিত্তিতেই বিশ্বাসী ও আস্থাশীল। এ পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক, কিন্তু 'কুসংস্কার', যা সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগ পেরিয়ে এই একবিংশ শতাব্দী, এই অতিমারীর মতোই অপ্রতিরোধ্য ও অপরিবর্তনশীল।বিশ্ব পরিবেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের রীতিমত অবাক ও শঙ্কিত হতে হয়। এক দিকে অতিক্ষুদ্র ভাইরাস আর তারই সাথে ঘটে যাওয়া একের পর এক বিপর্যয়ে শঙ্কিত আজ পৃথিবী মাতৃকা,শঙ্কিত আমরা।বিপর্যস্ত আজ স্বাভাবিক জনজীবন।চেনা পৃথিবীর রুপ,রং,বর্ন সবই পরিবর্তিত।'গৃহবন্দি' থাকতে থাকতে আমরা রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছি; একটু মুক্তি চাই।আবারও ওই খোলা আকাশটার নীচে দাঁড়িয়ে প্রাণভরা নিঃশ্বাস নিতে উদগ্রীব মন আমাদের। কিন্তু কোথায় সে মুক্তির পথ? 'ধর্ম' না 'বিজ্ঞান' কে দেবে মুক্তি।উত্তরটা অজানা।আমরা যারা স্রষ্টায় বিশ্বাসী,সেই পরমপিতার কাছেই প্রার্থনারত।আর বিজ্ঞান তার মত করে চেষ্টায় রত।'হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন', ' রেমডেসেভির' কখনও 'প্লাজমা থেরাপি' কিংবা 'ব্রায়োনিয়া অ্যালবা', 'আরসেনিকাম অ্যালবাম' আবার কখনও সেই ভারতীয় আয়ুশমন্ত্রকের পরামর্শ সবই আজ বৃথা।বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা স্বীকার করে নিয়েছে ভ্যাকসিন্ ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই।তাই এই অতিমারী কে ঠেকাতে সব দেশের বিজ্ঞানীরা নিজেদের করেছে ব্যস্ত।অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরী প্রতিষেধক(ChAdox1 ncov-19) চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল কিংবা মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা 'ফাইজার' ও জার্মান সংস্থা 'বায়োনটেক এসই', ভারতের হাইদ্রাবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা 'ভারত বায়োটেক' এর তৈরী 'COVAXIN' এবং গুজরাটের আহমেদবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা 'জাইডাস ক্যাডিলার' 'Zycov-D' এর হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে। আর তারই মাঝে সব সম্ভবনা কে দূরে ঠেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন্ কে বাজারজাত করতে উদ্যোগী হয়েছে রাশিয়া।এদিকে এই কোভিড কে বাতাসে ভাস্যমান ভাইরাস হিসাবে স্বীকারুক্তি এবং আবারও উদ্বেগজনক ঘোষণা করেছেন বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস্ আ্যাডহানোম গ্যাব্রিয়েসাস। তাঁর মতে 'ওল্ড নর্মাল' এ ফেরা কোনোমতেই সম্ভব নয়, এখন ' নিউ নর্মাল-ই ' ভবিষ্যৎ। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা যখন আশাহীন তখন আমরা অর্থ্যাৎ সাধারণ মানুষ এর অবস্থান টা ঠিক কি।মাস্ক পড়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাস্থ্য বিধি মানা এসব তো দূর, আমরা এই মারণ ব্যাধির বিরুদ্ধে রীতিমত পুতুল খেলায় রত। তা নাহলে কখনো কাঠ কয়লার টিকা,কখনো গোমুত্র পান,কিংবা হনুমান চল্লিশা পাঠে করোনা মুক্তি,অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার্ এর বদলে অ্যালকোহল্ পান করে কিংবা শরীরে ছড়িয়ে চির অন্ধকারের যুগে ফিরে যাবার চেষ্টা করে যাবার কোনো যুক্তি ছিল না। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা কমাতে পারে 'গাজা-ভাং',আমেরিকার নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেক্সাস বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দেওয়া তথ্য আধুনিক বিজ্ঞানের পরিসর কে কতটা বাড়াতে পেরেছে জানা নেই,তবে একশ্রেণীর মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিয়ে আরও নেশা করার প্রবণতা কে বাড়িয়ে দিয়েছে বলায় যায়। তবুও অবশেষে বলি, সব ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, অন্ধকার কে পিছনে ফেলে আশার আলোর সন্ধানে আমাদের হতে হবে 'চরৈবেতি' মন্ত্রে দীক্ষিত।                                           
  ~ সুমন ঘোষ
                                           




গল্প



স্বপ্নকুসুম
ডা. মহীতোষ গায়েন

সকাল থেকেই রিমঝিম বৃষ্টি,সৃজনে মন নেই মঞ্জিলের,আজ মৌঝুরির ফোন আসেনি,মঞ্জিলও করেনি,টিভিতে খবর-করোনার ভ‍্যাকসিন ডিসেম্বরে।অতদিন বাঁচবোতো?এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়,কলেজের অধ্যাপনা আর ভালো লাগেনা,যদিও লকডাউনেও মাস গেলে না পড়িয়েও বেতন।
দুপুরের খাওয়া সেরে তিনটেয় সবে বিছানায় গা এলিয়েছে,হঠাৎ দমকলের ইঞ্জিন ভীষণ সাইরেন বাজিয়ে ছুটে আসছে,আগুন লেগেছে কোথাও,মঞ্জিল ব‍্যালকনিতে যায়,দু’চোখে অন্ধকার দেখে।মেল বক্স,স্প‍্যাম বক্স,বক্সবি ওয়েটিং-এ দু'দিন কোন মেল নেই,মনে হয় ইন্টারনেটেও লকডাউন।

                               আগুনে পুড়ে যাচ্ছে গোটা দেশ,পুড়ছে,ঈর্ষা,হিংসা,মান,অভিমান, দম্ভ,রাজনীতির জঙ্গলে মঞ্জিলও দাউ দাউ জ্বলছে,মৌঝুরিকে নিয়ে বাটপাররা চলে যাচ্ছে,ওকে বেহমানীর শাস্তি দেবে।রুটির মত চাঁদ হাসে,ভোর হয়,কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে তার,দরজা খুলে সে দেখে দু’হাত ভরা মল্লিকা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে মৌ,ভালোবাসার স্বপ্নকুসুম,সমূহ সমাজে তখন নবজীনের উদ্ভবোধনী সঙ্গীত।



পুরস্কার
--ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

সোফায় বসে বসে টিভি দেখতে দেখতে হাততালি দিয়ে উঠল কুন্তলা। সত্যি এ খবরটা দারুন। একটা দারুন গর্বের ব্যাপার। এমন কাজ সত্যিই প্রশংসা করার মত বটে। এ যেন মরুভূমির বুকে মরূদ্যানের মত। হতাশা ভরা একটা শুষ্ক জমিতে আশার সবুজ নরম ঘাসের মত স্নিগ্ধ। নরম ঘাস বিছোন জমির ওপর দিয়ে যেমন অনেকক্ষণ ধরে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে তেমনি কান পেতে শুনতে ইচ্ছে করে এমন খবর দ্যীর্ঘক্ষণ ধরে।

এতক্ষণ পর্দায় সাংবাদিকের তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বেশ মুষড়ে পড়ছিল। সত্যি অতিমারীটা ভীষণ ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুতেই যেন আর ঠেকানো যাচ্ছে না।

কুন্তলাদের বাস এলাকা এখনও কন্টেনমেন্ট ঘোষিতে হয় নি। তবে একজন নাকি ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে মানে ডিটেক্টেড হয়েছে। ধরা পড়েছে কথাটা বড় খারাপ শোনায়। বললেই মনে হয় যেন চোর-ডাকাত বা গুন্ডা-বদমাস ধরা পড়েছে। খুব খারাপ লাগে কুন্তলার এই কথাটা শুনতে। আচ্ছে যার অসুখ ধরা পড়ল সে বেচারির কি দোষ বল? ইচ্ছে করে কি কেউ রোগকে ডেকে আনতে পারে? এখন তো সব এলাকা্তেই লক ডাউন চলছে। ঘর থেকে পা বাড়ানো নিষেধ। সাতসকালে ময়লা ফেলার লোকটা আসে। তার পেছনে পেছনে আসে কাঁচা বাজার নিয়ে জগুর ভ্যান। সারা দিনে একবার। মিস করলেই কপালে নুন-ভাত। ফোন করে দিলে মুদিদোকানের ছেলেটা বাইকে চেপে দোকানের থলি ভরে দিয়ে যায় তাই। নাহলে নুনটাও জোটান বেশ কঠিন বই কি।

বাবা ডাক্তার। আপাতত তাকে হাসপাতালের কাছেই একটা ব্যবস্থা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। কুন্তলাকে এখন অফিসের কাজ বাড়ি থেকে করতে হচ্ছে। এজন্যে নেট-ফেটের সব ব্যবস্থা অফিস করে দিয়েছে। সারাদিনে কয়েকটা ঘন্টার মত কাজ। আর মাঝেমধ্যে মোবাইল ধরা। প্রয়োজন হলে ভিডিও কল অ্যাটেন্ড করতে হয়।

প্রথম কিছুদিন খারাপ না লাগলেও পরে খারাপ লাগছিল তার। যতই সংক্রমণ বাড়ছিল। আর যতই রঙহীন অঞ্চলগুলো রেড, অরেঞ্জ এই সমস্ত বর্ণমালায় সজ্জিত হচ্ছিল। মনে ভয় আর আশংকা। এক সময় আশংকাকে সত্যি প্রমাণিত করে তাদের পাড়াতেও রোগটা মোষের মত ঢুঁ মারল। তারপর আর কি আইসোলেশন হ্যানা ত্যানা আর শেষে এই কন্টেনমেন্টের তখমা পেয়ে যেন ক্ষান্ত হবে হয়ত।

অতএব এই অখন্ড অবসরে টিভি আর ল্যাপটপ ঘাঁটা ছাড়া আর কি থাকে বাকি? যা মনে হচ্ছে পুজোটা এবার হয়ত হবেই না। অথবা হলেও আর প্রাণের বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে ঠেকিয়ে ঘোরা যাবে না। ঘুরতে হবে মুখোস পরে। বলা যাবে না কারোর কাঁধে হাত রেখে কথা বলাও। এত ডিস্ট্যান্স রেখে কি আর আনন্দ করা যায়? নাকি সেটা ঠিক মত উপভোগ করা যায়?

টিভি চ্যানেলগুলো আগে যারা আখচার বড় বড় মানুষের মুখোস খুলে দিত আজ তারা বস্তির ছোট ছোট মানুষদের পর্যন্ত কিভাবে মুখোস পরতে হয় আর কেন পরতে হয় তা শেখাচ্ছে। এখন ভাল ভাল নানা রঙ বেরঙেয়ের মুখোস বেরিয়ে গেছে। মুখ যদি ঢাকা থাকে তো ক্ষতি কি? মুখোসের জৌলুসে আভিজাত্য আর আনন্দ দুইই বাড়তে পারে।

তাই অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার জন্যে মুখোস বাছছিল সে। টিভিটা চলছিল। এমনি চলে সারাক্ষণ। কেউ না কেউ দেখে। নানা কাজ করতে করতে একবার করে উঁকি দিয়ে যায়। প্রতি মুহূর্তেই খবর বদলাচ্ছে। যেন সেই বন্যার খবরের মত রুদ্ধশ্বাসে চোখ বড় বড় করে শুনতে হয়। এই এখানে বাঁধ ভাঙল তো ওখানে ঘরবাড়ি ধূলিস্মাৎ। এই নদীর জল বিপদ সীমার ওপরে চলে গেল। এই অমুক নদীর জল দশটা গ্রামে ঢুকে গিয়ে সব ডুবিয়ে দিল। ওই তমুক শহরে নদী আর রাস্তা-জমি-ঘরবাড়ি সব একাকার হয়ে গেল।

এখন করোনা যোদ্ধা কথাটা বেশ চালু হয়েছে। ডাক্তার, পুলিশ, সরকারী কর্মী এসব নিয়ে সবাই গর্বিত। তার বাবার সম্পর্কেও সে খুব গর্বিত। তিনি একজন ডাক্তার।

টিভিতে তখন স্বদেশবাবুকে দেখাচ্ছিল। এই উচ্চপদস্থ সরকারী আধিকারিক এক করোনা সেন্টারের দেখভালের দায়িত্বে আছেন। কাগজে আর সোশাল মিডিয়াতেও খুব প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভদ্রলোক। সত্যি এমন কাজের লোক আর হয় না। নিজেকে বিপদে ফেলে অন্যকে বিপদ থেকে উদ্ধার করছেন। এমন একজন মানুষকে সশরীরে দেখতে বেশ গর্ব হয় কুন্তলার। শুনেছে এই অঞ্চলেই বাড়ি ওনার। তবে কখন উনি অফিসে বেরোন তা বোঝা যায় না। কুন্তলা নিজে কখনও দেখে নি।

একটু আগে মা-ও এসে দেখে গেছে টিভি চ্যানেলের খবরটা। তার সারা মুখে গর্বের ছোঁয়াটাও লক্ষ করেছে কুন্তলা। সত্যিই তো এযুগে এমন কোনও মানুষের খবর শুনতে ভাল লাগাই তো স্বাভাবিক।

-জানিস মিনু, স্বদেশ বাবু আমাদের পাড়ার লোক।

-জানি। আস্তে করে করে বলেছিল কুন্তলা। জোরে বললে যদি গর্বের ভাবটা মিইয়ে যায়।

-আমি সত্যি জানতাম না রে কথাটা। এই টিভি দেখে জানছি। এই তো রিপোর্টার আবার ওনার থাকার জায়গাটাও বলে দিলেন। সত্যি বলতে কি জানিস কত ভাল ভাল মানুষ আছে আমাদের কাছে পিঠেই। হয়ত বা এই পাড়াতেই। যেমন ধর এই স্বদেশবাবুর কথা। কিন্তু কে আর এত খোঁজ রাখে বল?

-তাই তো। উত্তর দিল কুন্তলা। সে-ই যে তার অফিসে এত দায়িত্ব সামলায় সেটাই বা পাড়ার ক’টা লোক জানে শুনি? আসলে খবর না হলে আমাদের টনক নড়ে না।

স্বদেশবাবুকে দেখার আশা পূরণ হল কুন্তলার। তবে তা এমন ভাবে হবে তা সে আশা করে নি। একটা চিৎকার। বেশ কিছু লোকের। জানলার সামনে গিয়ে দেখল একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অনেক লোক সেই গাড়িকে ঘিরে জটলা করছে।

-না স্যার আপনার এ পাড়ায় ঢোকা চলবে না। একজন লোকের জাঁদরেল গলা শোনা গেল। কথা বলার সুবিধের জন্যে মুখের মুখোস সে নামিয়ে এনে দাড়িতে ঠেকিয়েছে। আর তার দু’পাশে আর দুই জাঁদরেল প্রায় গলাগলি করে দাঁড়িয়ে। তাদের মুখোস কারোর মাথায়, কারোর কানে আবার কারো বা কপালে। সে হয়ত মুখোসের থেকেও কপালকে বেশি ভরসা করে।

কুন্তলা দেখল প্রথম যে জাঁদরেল সুউচ্চ গলায় কথা বলছিল সে তার নিজের কাকা। আর বাকি দু’জনের একজন পাড়াতো জ্যাঠা আর একজন পাড়াতো দাদা। দু’একটা দিদি-বৌদিও জুটে গেছে।

-দেখুন আমি কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত নই। আমি টেস্টও করিয়েছি। কিচ্ছু নেই একেবারে ক্লিয়ার।

স্বদেশ বাবু অতিকষ্টে বলার চেষ্টা করছেন। দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন বোধহয় ভাল করে খাওয়া বা বিশ্রাম পর্যন্ত হয় নি। চোখদুটো পর্যন্ত ঘুম না হওয়ার জন্যে বসে গেছে। এখন নিজের বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম পেলে ভাল হবে।

-দেখুন স্যার কিছু মনে করবেন না। কুন্তলার জাঁদরেল কাকা বেশ ভরাট গলায় বলে উঠল, টি-ভি কাগজে সব তো শুনছি মশাই। এই যে কোনও লক্ষণ নেই কি যেন বলে ওই অ্যাসিম্পটোম্যাটিক। ভেতরে রোগ বাইরে তার প্রকাশ নেই। এটা মোটে ভাল নয়।

-আহা সে সব কিছু নেই। প্লিজ আমাকে একটু যেতে দিন। একটা দিন অতিকষ্টে ছুটি পেয়েছি। আজ বিশ্রাম নিয়ে আবার পরশু সকালে বেরোতে হবে। বুঝতেই তো পারছেন রোগের ভয়াবহতা?

-ঠিক বুঝতে পারছি। আপনি বরং বুঝতে পারছেন না। অথবা বুঝতে চাইছেন না।

কে একজন পেছন থেকে বলে উঠল।

আর একজন বলল, এখন সিম্পটম নেই তো কি? এত রুগী ঘেঁটেছেন ভেতরে কি কিছুই ঢোকেনি বলছেন?

-আমিও তো তাই বলছি বিকাশ। কুন্তলার কাকা বলল, দেখুন আমার নিজের দাদা ডাক্তার। আমি সব জানি।

মুহ্যমান স্বদেশ বাবু অনেকক্ষণ কিছু বলতে পারলেন না। তারপর খানিক অধৈর্য হলেন।

-দেখুন আমি রোগী ঘাঁটব কেন? সে সব ডাক্তারের কাজ। আমি তো শুধু তদারকিতে ছিলাম।

জোর গলায় একজন বলল, তাতে কি সংস্পর্শে তো ছিলেন নাকি? জানেন না একটা পচা আম ঝুড়ির সব আম পচিয়ে দেয়? আপনার একার জন্যে সারা পাড়া ভুগুক এটা তো হতে দেওয়া যায় না।

যে লোকটা কথাটা বলল সে একটা প্রকান্ড জ্ঞানের কথা বলেছে ভেবে গর্বিত হল। দূর থেকেও কুন্তলা লক্ষ করে দেখতে পেল সেটা।

আর দেখতে ইচ্ছে করছিল না কুন্তলার। হঠাৎ মনে পড়ল তার ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কথা। বিছানায় বসল ল্যাপটপ কোলে। টিভিটা তখনও চলছিল। চোখটা চলে গেল সেদিকে। স্বদেশবাবুর ছবিটা নেই বটে তবে রিপোর্টারের বক্তব্য তখনও শেষ হয় নি। সে বলেই চলেছে, আমাদের এমন সাহসী যোদ্ধাদের কথা চিরকাল স্মরণ রাখা উচিত। এদের উপযুক্ত ভাবে পুরস্কৃত করার কথাও ভাবা দরকার। এনারা আমাদের গর্ব। এনারাই আমাদের সাহস। আমাদের বল।




মুক্তি
      আবদুস সাত্তার বিশ্বাস        

       বোঝাই সাইকেল টানতে  হাঁপিয়ে গেল মদন। আর তাই তার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,"উফ,কি রোদ আর গরম!"
      মদনের সাইকেলে এখন শপ,মশারি,বিছানার চাদর এসব মাল রয়েছে।গ্রামে গ্রামে হাঁক দিয়ে বিক্রি করে।সকাল বেলায় বেরিয়ে যায়। সেই সন্ধ্যা বেলায় ফেরে।কোন কোন দিন আবার ফিরতে রাত হয়ে যায়।প্রচুর মেহনত হয় মদনের। না থাকে খাওয়ার ঠিক।না থাকে ঘুমানোর ঠিক।
      শুধু রোদ গরমের কারণেই মদন হাঁপিয়ে গেল না।হাঁপিয়ে গেল সে অন‍্য কারণে। সেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্রাম ঘুরে ঘুরে একটা মালও তার বিক্রি হয়নি।না শপ।না মশারি।না বিছানার চাদর।তারমানে সকাল থেকে এ পর্যন্ত তার বউনি হয়নি।তার হাঁপিয়ে যাওয়ার এটাই হল সবচেয়ে বড় কারণ।কেননা,শুধু আজ নয়।পাঁচ দিন থেকে তার কোন বউনি হয়নি।বিশ দিন হল সে বাড়ি থেকে এসেছে। রোজগার হয়েছে মাত্র পাঁচশো টাকা। তা-ও আবার খোরাকে আর পকেট খরচে চলে গেছে।পকেটে এখন পড়ে রয়েছে পঞ্চাশ টাকা।ওদিকে বাড়িতে টাকার দরকার। কাল বাদ পরশু কিস্তি আছে।কাল দু'হাজার টাকা পাঠাতে হবে।তার দু'দিন বাদে আবার দু'হাজার টাকা লাগবে।সে টাকাটাও তাকে পাঠাতে হবে। আর একটা কিস্তি আছে।খেতে না পেয়ে মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মরলেও কিস্তির টাকা মাফ নেই।দিতেই হবে।নাহলে বাড়ি এসে কিস্তির লোক ঝামেলা করবে। কোন কথা শুনবে না। শেষে খুঁটি থেকে গরু খুলে নিয়ে চলে যাবে। যেকারণে যেখান থেকে হোক যেভাবে হোক কিস্তির টাকা জোগাড় করতেই হবে।
        ভীষণ চিন্তা ক্লিষ্ট হয়ে মদন রাস্তার ধারে একটা নিম গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়াল।ও সাইকেলটা গাছে হেলান দিয়ে উপরে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল,"প্রভু,ও প্রভু,তুমি আর কত পরীক্ষা নেবে আমার? আমি যে আর পারছি না।আমি যে ক্লান্ত।তার চেয়ে তুমি আমার মরণ করো।এত দুঃখ, এত কষ্ট, এত চিন্তা আমি আর বইতে পারছি না।তুমি আমার মরণ করো...."
       মদন জোরে জোরে বলল কথা গুলো । বলতে বলতে একসময় সে মাটিতে বসে পড়ল। তার শরীর এখন ভীষণ ক্লান্ত ।মাথা ঝিমঝিম করছে। ঘুম পাচ্ছে।অতএব সে তার মাথা থেকে গামছাটা খুলে ঘাসের উপর টপ্ করে সাট করে পেড়ে শুয়ে পড়ল।এক ঘুম পেড়ে উঠে পরে ফের গ্রামে যাবে। কিন্তু শোওয়ার পরে মদনের চোখে ঘুম এল না। নানান ধরনের চিন্তায় তার চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল।মনে পড়ে গেল তার  জীবনের অনেক কথা। চোখ বন্ধ করে সে তখন কথা গুলো ভাবতে লাগল।ক্লাস নাইন পর্যন্ত সে পড়াশোনা করেছে।পড়াশোনায় সে ভালো ছিল। ক্লাসে প্রতি বছর ফার্স্ট হতো। তখন তার চোখে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন ছিল।আকাশ বিজ্ঞানী । কারণ, আকাশ নিয়ে ভাবতে তখন তার ভালো লাগত।এই সময় তার মা-বাবা মারা গেল। বেঁচে থাকার তাগিদে তাকে এবার পড়া ছেড়ে অন্নের সন্ধানে নামতে হল।স্বপ্ন তার মাঠে মারা গেল।জীবনের সব সাধ আহ্লাদ অপূর্ণ থেকে গেল।পৃথিবীতে জন্ম নিয়েও পৃথিবীর কিছুই দেখতে পেল না।...
         না, মদনের ভাবনা এখনো শেষ হয়নি। সে শুধু একবার নড়ে উঠল মাত্র।ডান কাত থেকে বাম কাত হল।তারপর সে আবার শুরু করল। তার মা-বাবা মারা না গেলে হয়তো তার স্বপ্ন মাঠে মারা যেত না। সে ঠিকই একটা মানুষ হতো। ভদ্রভাবে বাঁচতে পারত।তখন নোংরা একটা মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হতো না।যে মেয়ে স্বামীর সঙ্গে নিরন্তর ঝামেলা করে সে নোংরাই তো। যে মেয়ে স্বামীর আহ্বানে সময় মতো সাড়া দেয় না সে নোংরাই তো।যে মেয়ে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখতে পারে না সে নোংরাই তো।সে যতই ধর্ম করুক তার ধর্ম কাজে লাগবে না। সে স্বর্গ পাবেনা।কারণ, স্বামীর পায়ের তলায় স্ত্রীর স্বর্গ।...
      "কে শুয়ে ওখানে,মদনদা নাকি?"
       ডাকটা শুনে মদন নড়ে উঠল,"হ‍্যাঁ,কে?"
      "আমি বিনয় গো,মদনদা।"
       মদন অমনি তাড়াতাড়ি করে গামছার উপর উঠে বসল,"আপনি!"তারপর তাকে কাছে ডাকল,"আসেন।আসেন।বসেন।"
       সে তখন সাইকেলটা স্ট‍্যান্ড করে মদনের কাছে এসে বসল।এই বিনয়ের বাড়ি হল জিয়াগঞ্জ।সে-ও শপ,মশারি,বিছানার চাদরের ব‍্যবসা করে।গ্রামে হাঁক দিয়ে।সে যে মহাজনের মাল বিক্রি করে মদনও একই মহাজনের মাল বিক্রি করে ।গৌতমবাবুর।তাছাড়া মদন এখন যে বাড়িতে ভাড়া আছে সেই বাড়িতে সে-ও কিছুদিন ভাড়া ছিল। এখন থাকে না।এখন নগর রোডে অন্য একটা বাড়িতে  থাকে। ওখানে তাদের গ্রামের আরো হকার আছে বলে। সেই থেকে মদনের সাথে তার পরিচয়।রাস্তা ঘাটে দেখা হলে কথা বলে।
        মদন জিজ্ঞেস করল,"কেমন আছেন?"
       "ভালো আছি দাদা।খুব ভালো আছি।"
       "ব‍্যবসা কেমন হল?"
       "খারাপ হয়নি।ভালোই হল।হাজার খানেক টাকা লাভ হবে।"
       "খুবই ভালো ব‍্যবসা হয়েছে তাহলে।একদিনে হাজার টাকা লাভ মানে বিশাল।একদিনে এক হাজার টাকা লাভ আমি কোনদিনই করতে পারিনি।"
       "আপনার কেমন হল?"
       "হয়নি।"মদন এক কথায় বলল।
        বিনয় এরপর আর বসল না।উঠে পড়ল।

                                  দুই
 
        মদনের তখন আপনি কান্না চলে এল। সকলের ভালো ব‍্যবসা হয়।শুধু তারই হয় না।তার ভাগ‍্যটাই খারাপ।নাহলে কোম্পানির কাজ করতে যায়?গিয়েই তো মানুষের কাছে খারাপ হয়ে গেল। ঘরবাড়ি ছেড়ে কুলিতে পালিয়ে আসতে হল। কান্দি মহকুমার মধ্যে কুলি একটা জনপ্রিয় জায়গা। এখানে বাগড়ির অনেক মানুষ থাকে। ব‍্যবসা করে।শুধু বাগড়ির নয়।বিহারেরও মানুষ থাকে। এখানকার মানুষ সুখী।সৌদি আরব খেটে পয়সা আছে।তাই এখানে ব‍্যবসা ভালো চলে। সে-ও তাই এখানে চলে আসে।এবং এই ব‍্যবসা শুরু করে। নাহলে যে বাড়িতে থাকলে পরে আমানতকারীরা তাকে ধরে টানাটানি করবে।টাকা চাইবে।টাকা তাদের দেবে কোত্থেকে?তাছাড়া টাকা তো সে খায়নি। কোম্পানির খাতায় জমা করেছে।এখন কোম্পানি যদি পালিয়ে যায় তো সে কি করবে?কিন্তু মানুষ সেটা বুঝতে চায়না।মানুষ সেটা শুনতে চায়না। তারা নাকি কোম্পানি চেনেনা।তাকে চেনে।তাকে টাকা দিয়েছে তারা তার কাছে টাকা নেবে। টাকা দিতে না পারলে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মেরে টাকা আদায় করবে।বাবার টাকা নাকি! যেকারণে সে এখানে  পালিয়ে আসে।....উফ,ওই নোংরা জলে সে কেন যে নেমেছিল?কি ভুল যে করেছে!লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারেনা।

                               তিন
                               
      রোদ এখন একটু কমেছে।আগের সেই তীব্রতা আর নেই।যেকারণে শুধু শুধু বসে মদন আর সময় নষ্ট করল না।উঠে পড়ে গ্রামে গেল।গ্রামের অলিগলি সব ঘুরল।শুধু ঘুরল না।হাঁকের পরে হাঁক দিল,"নেন গো শপ,মশারি,বিছানার চাদর..."
       ঘুরতে ঘুরতে গ্রামেই তার সন্ধ্যা হয়ে গেল। গ্রাম থেকে বেরিয়ে রোডের উপর উঠে অন্ধকার হয়ে গেল। আজকেও তার বউনি হল না।পকেটের পঞ্চাশ টাকা আজ আর পকেটে থাকবে না। বেরিয়ে যাবে।তারপর সে কি খাবে?খালি পকেটে চলবে কি করে?ভাবতে ভাবতে সাইকেল চালাল মদন।আর অমনি সে হুড়মুড় করে পড়ে গেল। সাইকেলের সামনের চাকা রাস্তায় পড়ে থাকা একটা পাথরের উপর উঠে গিয়েছিল। তারপর সে উঠে ফের সাইকেল চালাল।তখন কোন জায়গায় ব‍্যথা বুঝতে না পারলেও খানিক বাদে ডান হাতের কনুইতে ব‍্যথা অনুভব করল মদন। ইচ্ছা করলে সে তখন মোবাইলের লাইট জ্বেলে জায়গাটা ছিঁড়ে গিয়েছে না শুধু লেগেছে দেখতে পারত।কিন্তু  দেখল না। একেবারে রুমে গিয়ে দেখবে বলে। এখন তার পেটে খিদে পেয়েছে।ভীষণ খিদে।সেই সকালবেলায় লবন ছিটিয়ে চারটে বাসি ভাত খেয়ে বেরিয়েছে। সারাদিন আর কিছু খাওয়া নেই।যদিও একবার ভেবেছিল মিষ্টির দোকানে ঢুকে মিষ্টি পাউরুটি কিনে খাবে। অনেকদিন মিষ্টি খাওয়া নেই।কিন্তু খাবে তো খাবে কি দিয়ে?ব‍্যবসা নেই।পকেটে পয়সা নেই।সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও মদন সেটাকে দমিয়ে রাখে।ফলে তার শরীর এখন চলছে না।বোঝাই সাইকেল টানতে তার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। খিদের জ্বালায় পেট জ্বলছে।যেমন দাউ দাউ আগুন জ্বলে।এখন তার মনে হচ্ছে এক হাঁড়ি ভাত সে সব খেয়ে নেবে। যদিও সে বেশি খেতে পারে না।আসলে ভীষণ খিদের সময় বেশিরভাগ মানুষেরই এরকম মনে হয়।মদন তখন ভাবল,অন‍্যান‍্য দিন সে রুমে গিয়ে চান করে তবে রান্না চাপায়।কিন্তু আজ সে রুমে গিয়ে গিয়েই রান্না চাপাবে ।তারপর চান করবে। কারণ ,আজ তার বেশি খিদে পেয়েছে।এত খিদে কোনদিন পায়নি। আজ তার দেরি সইবে না। রোজকার থেকে আজ সে কিছু চাল ধরেও দেবে। ভাবতে ভাবতে মদন 'খুক' করে একবার কাশল। তারপর তার মনে হল,রান্না শেষ হতে হতে তবু দেড় দু'ঘণ্টা লেগে যাবে। অতক্ষণ সে কি থাকতে পারবে? বাঁচবে?যে খিদে তার পেয়েছে।সে কি এ রকম একটা জীবন চেয়েছিল?আজ তার অনেক কিছুই মনে পড়ছে। এমন সময় সামনে একটা লরি আসতে সে দেখতে পেল।লরিটা যদিও এখন একটু দূরে আছে।কাছে এলে সাইকেল নিয়ে একেবারে সে নর্দমায় নেমে যাবে।লরির লাইট ভীষণ তীব্র হয়।সামনে তাকানো যায়না।তখন ভাবলেও পরে সে সে কথাটা ভুলে গেল।কারণ,তক্ষুনি তার পকেটে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। মদন তাড়াতাড়ি করে ফোনটা বের করে কানে ধরল,"হ‍্যালো!"
        "হ‍্যালো।"
        কণ্ঠটা যে তার স্ত্রী প্রতিভার শুনে মদন চিনতে পারল।আর সে তাই বলল,"এখন ফোন রাখ।রোডের উপর আছি।সাইকেল চালাচ্ছি।রুমে গিয়ে ফোন করব।"
        প্রতিভা শুনল না।সে বলল,"পরশু কিস্তি আছে ।মনে আছে তো?"
        "না।মনে নেই।রাখতে বলছি শুনতে পাস না?"
       "কাল দু'হাজার টাকা পাঠিয়ে দিও।মনে করিয়ে দিলাম।"
        মদনের মুখ থেকে এবার খিস্তি বেরিয়ে গেল,"পাঠাতে পারব না।আমার কাছে টাকা নেই।যা করার তুই কর।শালিকে ফোন রাখতে বললে শুনতে পায়না।"
       "বললেই হল না?"
       "হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ, বললেই হল।"মদন গরম করল।
       "আমি তাহলে স‍্যারকে বিয়ে করব।"
       লরিটা এখন আর দূরে নেই।খুব কাছে চলে এসেছে।তখনই তার মাথাটা বনাত করে ঘুরে গেল।নর্দমায় তার নামা হল না।কিস্তি নিতে আসে যে ছেলেটা গ্রুপের মেয়েরা তাকে স‍্যার বলে। মদনের এখন কিস্তির টাকা বলে আর  চিন্তা করতে হবেনা।আমানতকারীদের ভয় তাকে আর তাড়া করবে না। সে এখন স্বর্গে বসে সুখময় ফল খাবে । লাল টুকটুকে পাকা আপেল ফল।পয়সা দিয়ে যা সে কিনে খেতে পারেনি।আর অপ্সরীদের সঙ্গে ফুর্তি করবে মন খুলে। জলঙ্গি থানার সাহেবরামপুর গ্রামে তার বাড়ি ছিল সেটা সে ভুলে যাবে।




                  সেতু                          
                     ঋভু চট্টোপাধ্যায়

খবরটা চাওড় হতে বেশি দেরি হলনা।চেনা জানা প্রায় প্রত্যেকেই একথা সে’কথার মাঝে জিজ্ঞেস করল,‘হ্যাঁরে সুমনদার খবর শুনেছিস?’ শুনে থাকলে ঘাড় নাড়িয়ে বলে ওঠে,‘হ্যাঁ শুনলাম ,শালা গাণ্ডু ছেলে একটা।’ না শুনে থাকলে ‘না রে বা না গো, কি ব্যাপার বল তো, আবার কিছু করল নাকি?’আসলে আমাদের ডেলিপ্যাসেঞ্জারির গ্রুপে সুমনদা মানেই খবর, আর খবর মানে হাসি।সবাইকে যদি হাসতে হয় বা হাসির কথা মনে রাখতে হয় তবে আমাদের কাছে দাদাই টাটকা হাসির খোরাক।মানছি লোকটার কিছুটা সমস্যা আছে।তবে ঠিক মাথার সমস্যা বলা যাবেনা।প্রযুক্তিগত সমস্যা আছে, টেকনিক্যাল প্রবলেম।
গোড়ালির ওপরে প্যান্ট, বেল্ট, মোজা ছাড়া ফুল’শু, ইনকরা ফুল শার্ট, পেতে ছাড়ানো চুল, ডানদিকে ব্যাগ।যেখানে নটার ট্রেনে চেপে দিব্যি সাড়ে দশটায় স্কুল যাওয়া যায়, সেখানে সুমনদা যায় সাতটার ট্রেনে।বাড়ি থেকে আট কিমি সাইকেল চালিয়ে স্টেশন, সেখান থেকে ট্রেন, ট্রেন থেকে নেমে আবার এগারো কিমি সাইকেল চালিয়ে স্কুল যায়। যাতায়াত নিয়ে প্রতিদিন গড়ে আটত্রিশ কিমি সাইকেল। যে কোন লোক শুনলেই চমকে ওঠে।
আমাদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সের দীপু বলে,‘দাদা তুমি ঝুড়ি কিনেছ?কয়েকমাসের মধ্যেই মাথায় ঝুড়ি করে নিয়ে যেতে হবে তো।’
সুমনদা খুব স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে,‘কি ভাই?’
-না মানে সাতটা মহাসাগরের জল প্রস্থে প্রবেশ করবে তো, তাই।
একদিন আমিও বললাম,‘দাদা গো বয়স বাড়ছে প্রতিদিন এই রকম চল্লিশ কিমি সাইকেল করা ঠিক নয়।’
-চল্লিশ নয় তো, আটত্রিশ।প্রতিদিন গড়ে দু’কিমি কম, মাসে ষাট কিমি, বছরে......
-থাক, দাদা বুঝে গেছি।
-না ভাই এই সব ছোটখোটো ব্যাপারগুলো খুব ক্রুশিয়াল।তুমি দেখ না কত দোকানে মালের দামে নিরানব্বই বা উনচল্লিশ থাকে।একটাকা খুব ভয়ানক।
-দাদা আমার ঘাট হয়েছে তোমাকে বলা।
তবে সুমনদার মহিলাদের প্রতি আগ্রহ একটু বেশি রকমের বেশি।কারণে অকারণে বিভিন্ন মহিলাদের সম্পর্কে আলোচনার পাশে তার ঠিকুজি কুষ্ঠির প্রতিও দাদার খুব ঝোঁক।আমাদের স্টেশন দিয়ে যত মহিলা যাতায়াত করেন তাদের প্রত্যেকের ডেটাবেশ দাদার কাছে লোডেড্।কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেই ‘ও ঐ মেয়েটা তো? নতুন পল্লিতে থাকে।বাপের বাড়ি কেষ্টপুর, হাসবেন্ট পুলিশ।একটা ছোট মেয়ে আছে, এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি।’
রানাদা আমাদের মধ্যে খুব সোজাসাপ্টা কথা বলে।সুমনদা রানাদাকে দেখেই চমকে ওঠে, পালিয়ে যায়, এড়িয়ে যায়।রানাদা আবার সুমনদাকে দেখতে পেলেই ডাকে,‘এই শালা শোন। বিয়ে কবে করবি?বয়স তো চল্লিশ ছাড়ালো।’
সুমনদা যতই পালাবার রাস্তা খোঁজে রানাদা ততই তাকে জাপটে ধরে বসিয়ে, বকবক আরম্ভ করে।‘শোন্ সুমন ঈশ্বর তোকে ভালোবেসে একটা যন্ত্র দিয়েছে সেটা তো ব্যবহার করতে হবে। মরলে ভগবান যখন জিজ্ঞেস করবে কি উত্তর দিবি?তোকে একটা কবিতা পড়াব, ‘টু হিস কয় মিসট্রেস’, এসব কথা বলেছে।’
অন্য কেউ হলে সুমনদা বলত,‘আসলে ভাই ঈশ্বরের দেওয়া সব জিনিস পত্র কি ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারি।ঈশ্বর তো হৃদয়ও দিয়েছেন আমার ওটাকে ডাস্টবিন বানিয়ে রেখে দিয়েছি।আর তুমি যা বলছ ওখানে তো স্বয়ং ভগবানের বাস।লিঙ্গ নিজেই ভারতীয় সংস্কৃতিতে শক্তি, সাহসকে বোঝায়, আর যোনি হল সৃষ্টি, জরায়ু তো নারী-শক্তি।দুটো মিলেই তো পৃথিবী।’
-সেটাই তো বলছি।তুমি সেই শক্তিকেই ব্যবহার করছ না।
-ভাই, এই লিঙ্গের এগারোটা আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে, জানো কি?
আমরা থাকলে সুমনদা এভাবেই বলে।রানাদা থাকলে দৌড়ে পালায়।তবে সুমনদা সবাইকে অবাক করে দেয় যেদিন বলে,‘বিয়ে না করা মানে কি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যবহার না করা?’
-কি কি আরেকবার বল। কথাগুলো মনোজ বলে, বয়সে সুমনদার থেকে দশ-বারো বছরের ছোট। কিন্তু ঐ সমস্যা, ডেলি প্যাসেঞ্জার।
 -না মানে শরীরে অনেক অঙ্গ রয়েছে তো অঙ্গ মানে শুধু তো................
-তুমি কথা ঘোরাবে না, তুমি কাদায় পড়ে এখন ঢোঁক গিলছ?আচ্ছা ট্রেনে আমাদের প্লাটফর্ম ঢোকার আগে মেয়েগুলো স্নান করে, তুমি দেখেছ?
-হ্যাঁ।তা না দেখার কি রয়েছে।
‘ব্যাটা জাতে মাতাল। সেই সুজয়দা আছে না সুমনদার বন্ধু, ঐ ব্যাটারও বিয়ে হয়নি। মোবাইল ভর্তি পানু।ট্রেনে কোণে বসে বসে এ’দুটো ঐসব দেখে।’
-এই ভাই এই সব বলা ঠিক নয়।আমি এই সব দেখিনা মনোজ।
-ডাকব সুজয়দাকে।
-মনোজ ছাড়।
সঙ্গে সঙ্গে সন্তু প্রশ্ন করে,‘সুমনদা আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করব?তুমি সেইদিন মেয়েদের টয়লেটে কেন গেছিলে?
-সন্তু ছাড়।সুমনদা  বলে।
সন্তু শেষের কথাগুলো এক্কেবারে ক্রিম।একসাথে সবাই লুফে নিয়ে বলে উঠল,‘সে কি বলছিস, রে কবে বলিসনি তো।’
-নয়নকে বলেছিলাম।চারপাঁচদিন আগে।আমি পরের ট্রেনটাতে আসছি, দেখি ট্রেনের গার্ডটা চেল্লাচ্ছে।আমি ‘কি হল?’জিজ্ঞেস করতেই বললেন,‘দেখুন ঐ ভদ্রলোক লেডিস টয়লেটে ঢুকেছেন।’আমি কাছে যেতেই দেখি সুমনদা।
-শোনো সন্তু, সেদিনের ব্যাপারটা একটা দুর্ঘটনা।আসলে খুব পেয়ে গেছিল।চেপে রাখতে পারিনি ,কেউ তো ছিল না।
-সে তো আমাদের স্টেশনে সেরকম কেউ থাকেনা সুমনদা।
 ও সব কথা বলা ও শোনার মাঝেই মনোজ যে বোমাটা ফাটালো সেটার জন্যে ঠিক তৈরী ছিলাম না।মনোজের সাথে ট্রেনের একই কামরায় ফেরবার সময় কথাগুলো শুনলাম।‘মালটার কি হয়েছে বল তো?’
-কেন, আবার কি হল?
-মালটা তো বাড়ি থেকে সাইকেল করে প্রতিদিন স্টেশনে আসে, তারপর এই এ.টি.এম.কাউন্টারটার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক ভাবে বাসের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-কতক্ষণ?
-আরে সেটাই তো রহস্য।
প্রদীপ বলে,‘সাড়ে সাতটার মধ্যে চলে আসে।’
-সাড়ে সাতটা!মালটা ফুল ম্যাড হয়ে গেছে।
-তারপর শোনো কয়েকদিন আগে গেটের মুখে টিটি ধরেছিল।
-কে বন্ধন?
-কে তা জানিনা, আমাকে নিজেই বলছিল,‘ও নাকি লাইন পেরিয়ে এক নম্বর প্লাটফর্মে এসে লেডিস কামরার দিকে একভাবে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।ব্যাস রেলপুলিশ ধরে ফাইন নেয়।’
-কিছু  বলেনি খ্যাপাটা।
-ও কিছু বলেনি, তবে পুলিশ আর টিটিরা নাকি বলেছে,‘আপনার মত ভদ্রলোক একটাও আমরা দেখিনি, কোন আর্গুমেন্ট ছাড়াই টাকা বের করে দিলেন বিশাল ব্যপার তো।’
এত দূর পর্যন্ত সুমনদা আমাদের যাতায়াতের সময় কাটাবার খোরাক।অবশ্য তার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কিছুই আলাদা বিষয় নয়।আলোচনা আরো জমে ক্ষীর হল যেদিন সন্তু এসে সুমনদার ঐ অপেক্ষা করবার কথা বলে।প্রতিবারের মত আমি খবরটা শুনলাম সব থেকে শেষে।তবে সময় নষ্ট না করে সোজাসুজি তাকেই জিজ্ঞেস করে দিলাম,‘কি ব্যাপার বলতো, কি সব কথা শোনা যাচ্ছে, তুমি কি সত্যিই কোন প্রেম টেম করছ নাকি?’
-না ভাই।এই বুড়ো বয়সে প্রেম করবার কোন মানসিকতা নেই।চাপও নিতে পারব না।
-তাহলে তুমি এই এ. টি.এম কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখ?
-মানুষ গুনি ক’জনার মাথায় চুল আছে, ক’জনের নেই, ক’জনের ভূঁড়ি আছে এইসব আর কি।
-খ্যাপাগিরি কোরো না, বল।
-সুমনদা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,‘ভাই তুমি জান তো আমার একমাত্র বোন মারা গেছে।’
-শুনেছিলাম।সকালে মেয়েকে দিতে গিয়ে, স্কুলের গেটে মারা যায়।
-তার একটা মেয়ে আছে।বোনের হাসবেন্ট তো চাকরি করে, তাই স্কুল না থাকলে ওর বাবা বাসে চাপিয়ে দেয়।আমি স্টেশনে নামিয়ে আমাদের রুটের বাসে চাপিয়ে দি।এইখানে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করি।।
-তাই বলে প্রতিদিন!
-প্রতিদিন নয় তো, সবাই বানিয়ে বানিয়ে বলে।
-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
-স্কুল থেকে ফেরার সময় আমি দাঁড়িয়ে থাকলে তুমিও নজর রেখো।
কয়েকবছর আগে সুমনদার বোন যখন আচমকা মারা যায়, কয়েকমাস সুমনদা দাড়ি কাটেনি।আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,‘কি দাদা, দাড়ি কাটোনি কেন?’সেই হাসিমুখেই জবাব দিয়েছিল,‘ভাই দাড়ি গোঁফ থাকলে বোনটাইতো বলত।ও যখন চলে গেল................’
কয়েকদিন পরে স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখি সেই এ.টি.এম কাউন্টারের কাছে দাদা দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটু গোপনে সুমনদাকে দেখতে লাগলাম।মিনিট দশ পরে চৌদ্দ নম্বর বাস এলে সুমনদা ছুটে গিয়ে বাস থেকে একটা তিন সাড়েতিন বছরের মেয়েকে নামিয়ে আরেকটা বাসে তুলে দিল।আমার সামনে কোথা থেকে একটা লম্বা সেতু খুলে গেল।দুই প্রান্তেই মানুষ, আর মানুষ।সুমনদাকে দেখলাম সেতুর ওপর দিয়ে হাঁঠতে হাঁটতে ভাগ্নির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে।




বিপন্ন মানুষ
রথীন পার্থ মণ্ডল

        দুপুর ফুরিয়ে বিকেল নামল। বকুল গাছের পাতায় বাতাস খেলছে তির তির করে। পড়ন্ত বেলার আকাশ পাড়ে একটু একটু করে গোধূলি নামছে। কিছুক্ষণ পরেই নামবে সন্ধ্যা। মিতা সারাটা বিকেল বাড়ির উঠোনে ফুল গাছের যত্ন করে।জল দেয়, ঘাস পরিষ্কার করে। তখন হলুদ প্রজাপতিগুলো এ গাছ থেকে ও গাছে খেলে বেড়ায়।
         কিন্তু আজ তখনও ফিরল না মিতা। সারাদিন বৃষ্টি পড়ছে। কখনো জোরে, কখনো ঝির ঝির করে। মা বলেছিল আজ না যেতে। কিন্তু মিতা বলেছিল যে, না আজ তাকে যেতেই হবে কারণ আজকে তার ইম্পর্টেন্ট পড়া আছে। সামনে পরীক্ষা।তাই সেই সাতসকালে একটু টিফিন সেরে বেরিয়ে পড়েছিল। টিউটরের কাছে পড়া শেষ করে চলে যাবে স্কুলে।
         মিতার মা একা বসেছিলেন বারান্দায়।একটু পরে বাবা প্রদীপ বাড়ি ফিরলেন। বললেন, "বৃষ্টি নেমে গেল, মিতা ফিরেছে?"
     "না," মা বললেন, " তাই তো ভাবছি।আজ এতো দেরি কেন? তারপর সকাল থেকে যা দুর্যোগ।"
       কাজের মেয়ে মালতীও আসেনি। ওরা থাকে গাঁয়ের শেষে, মাটির ঘরে। সন্ধ্যা ফুরিয়ে রাত্রি এলো তবুও মিতা বাড়ি এলো না। মিতার বাবা টিফিন খেয়ে একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
      "দেখি একবার এগিয়ে।"
      "একটা ফোন তো করতে পারতে ওর স্কুলে?"
      "এখন তো ছুটি হয়ে গেছে।"
      মিতার মা ফোন করলেন বন্ধুর বাড়িতে।
      মিতার বন্ধু বললো, "কাকিমা, বৃষ্টির জন্যে আজ স্কুলে যাইনি। মিতা বেরোতে পারলো ? অবশ্য ওর কথা আলাদা।ও তো ভালো ছাত্রী।"
       বৃষ্টি পড়েই চলেছে, থামছে না। প্রদীপবাবু বললেন, "ছাতাটা নিয়ে একবার থানায় গেলে হয় না?" চিন্তার পাহাড় ওদের মাথায়। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে যেন।
        একটু পরেই একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো। ভিজতে ভিজতে মিতা এসে ঘরে ঢুকলো। নিজেই বলল, "মালতীদের বাড়িটা ভেঙে পড়ে গেছে। মালতী চাপা পড়ে ছিল। সারা গায়ে মাটি কিছুটা লেগেছে। ওকে নিয়ে আমিও হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখন অনেকটা ভালো আছে। ওর কাকা আমাকে রিক্সা করে পৌঁছে দিলেন। বলতো চোখের সামনে এমন বিপদ দেখে স্কুলে যাই কি করে?"
         মিতার বাবা স্তব্ধ। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো বড় কাজ।গর্বে বুক ফুলে উঠলো তাদের। পোষাক বদলে এসে মিতা বলল, "খিদে পেয়েছে, খেতে দাও মা।"



কবিতা


অবুঝ তুমি
   --- সোহিনী শবনম

দূরত্ব অনেকটাই ছিল,
তোমায় দেখার সুযোগ পাই নি তাই;
অজস্রবার কল করেছি,
শুনতে শুধু গলার স্বরটাই।

বোঝোনি তুমি আমার অনুভূতি,
শুধু বুঝলে ভুলটা।
আমি নাকি তোমায় ভালোবাসিনি!
যেহেতু ছিল না দামী উপহারের দাবিদাওয়া।

সিগারেট খেতে বারণ করিনি,
ভাবলে ভালো চাই না তোমার।
আসলে আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম,
তোমার নিজস্ব পূর্ব বদ-অভ্যাসটার।

কৃত্রিম ভালোবাসায় মজলে তুমি,
উপহারে ভরালে তাকে।
এক কথাতেই বুকের কাপড়,
সে তোমার হাতে রাখে।

অতীত হয়েছ এখন তুমি,
কষ্ট পাই না মোটে।
ভালোবাসার যোগ্য মানুষ ভেবে,
ভুলটা আমিই করেছিলাম বটে।

ফেমাস ট্রেন্ডিং প্রেমের মতো,
লোক দেখিয়ে ভালোবাসতে পারিনি।
অচেনা অজানা প্রকৃত ভালোবাসার গুরুত্ব,
বোঝার ক্ষমতা তোমার আজও হয়নি।



পাঁচফুট জীবন
সত‍্যব্রত ধর

মায়ামাখা অজানা ভয় নেশাতুর পেশার টানে,
বোঝাপড়া করে নেয় লালচে দাগের সাথে।
হলদে আভায় উল্কাপাতের উন্মুক্ত আকাশ,
এখন বিকশিত ছায়াপথ ঘিরে রেখেছে।
মনভেজা সপ্তপদী ভাবনারা সস্তায় বিক্রি হয়,
সদ‍্য পরিযায়ী ভেজা রাত্রির কাছে।
সুসজ্জিত অপেক্ষারা প্রাণ ফিরে পায়,
নতুন দেশলাই কাঠির স্বেচ্ছামৃত‍্যুতে।
পাঁচফুট ফ‍্যাকাসে জীবন আনন্দ ভুলে,
লোভ দেখায় অদম্য শান্তির মরীচিকার।
শরীরি ছন্দহীন স্লোগানগুলো গন্তব্য হারিয়ে,
অনাদিকাল ধরে হাঁটছে গহ্বরের পথে।



বন্ধু আমার
         ---- সমাজ বসু 

বন্ধু আমার--
পূব আকাশে সুয্যি ওঠা ভোর,
উছল হাওয়ায় উড়ন্ত এক ডোর।

বন্ধু আমার--
বিশ্বাসেরই ভাল তরোয়ালও,
অন্ধকারে ঝিকিয়ে ওঠা আলো।

বন্ধু আমার--
একদিকে,আর সবাই বিপরীতে,
তাকে নিয়েই সব খেলা তাই জিতে।

বন্ধু আমার--
রাম ও রহিম, মনে এবং প্রাণে,
 বন্ধু আমার, জীবন-অভিধানে।।



কত দিন পর
        —প্রতিমা পাল


ওই তো তারা আসে
ছোট্ট তরী বেয়ে।
ঘন সবুজ মাঠ পেরিয়ে,
পাকা ধানে হাত বুলিয়ে—
ওই তো তারা আসে।
ছোট্ট যে নীড় তাদের
তবু তারা আসে—
নিজের মতো করে
ছোট্ট বাসা বাঁধে,
ওই তো তারা আসে।
দখিনা হাওয়া গায়ে মেখে
ঘুরে বেড়ায় পাড়ায় পাড়ায়,
মনকে মাতাল করে দিয়ে
ছোট্ট তরীটি বেয়ে
ভরা শ্রাবনে মাঠ ঘাট পেরিয়ে
আবার তারা যায়।
কত দিন পর হায়
একটু স্বস্তি পায়
আবার তো একা একা
কাজের পর কাজ দেখা। 


   
 " রাতের রজনীগন্ধা "
                          _______________
                           হামিদুল ইসলাম।
_____________________________________________________
কবিতার চরণে
চরণ রাখি
শাব্দিক চয়ন
প্রতিটি রোমকূপে
প্রতি মুহূর্তে মুখরিত বন্ধন     ।।

জলের স্রোতের সাথে
মিশিয়ে দিই
কবিতার স্রোত
সৃষ্টি প্রতিদিন
আর এক নতুন জীবন   ।।

জীবন ভাঙি
পেয়ে যাই
কবিতার প্রেম
কবিতারা প্রেম করে
প্রতিদিন মনের মানুষের সাথে  ।।

মনের মানুষ সাজে এ মন
প্রেম ভরা হৃদয়
পাগল এখন
প্রেম নিয়ে কেবল সারাদিন মাতে   ।।

হায় মানুষ !
কতো বিচিত্র তুমি
তোমার বেশ
কখনো মুখ ঢাকো
এক নতুন মুখোশে নিরন্তর    ।।

নৈরাজ্য ভাঙি
গড়ি নতুন দেশ
কবিতার জন‍্যে ভালোবাসা
কবিতা আমাকে ভালোবাসে
যেনো রাতের রজনীগন্ধা নিত‍্য সহচর   ।।



*আনমনা*
✒সুবর্ণা বর্মন✒

শীতল স্নেহসুধা দাও।
দাও প্রেম, দাও শান্তি, দাও নতুন জীবন।
আপন দুঃখ আপন ছায়ায়
এই ভুবন মেলার মাঝে মিশি।

দিবস রজনী আমি যেন
কার আশায় বসে থাকি,
আনমনা হয়ে ঘুরে
বেড়াই যদি কারো দেখা পাই।

তৃষিত আকুল আঁখি
পলক পড়িল হলো বিষাদ,
ফেলি শ্বাস, সুখি হবো বলে
যেন হাসি না,
হাসে হ্নদয় বসন্ত বিকচ যৌবন।




মুখোশধারীর কথা 
                কোয়েল 

জন অরণ্য মাঝে হাজার মুখোশধারী একা,
নাকি অদৃশ্য ছায়ায় চোখে আজ ধরেছে মরীচিকা!
অন্ধকার পথে হেঁটে চলেছ আসলে কি ভেবে?
তোমার স্বপ্নে আলোর ছটা অন্য কেউ ছুঁইয়ে দেবে?
তুমি তোমার পরিপূর্ণ রূপ, তুমি যে আসল পূর্ণবতী।
বিশ্বাস আজ বড়ই ঠুনকো, যুক্তির ঝড় তোলো সত্যবাদী।
মায়ায় মোড়া আবেগ আজ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়।
কত মানুষ সঙ্গে আজ, মন যে তবু একলাই রয়।
মনের হদিস রাখবে, এমন কাউকে খুঁজি নাকো আর;
চোখের সেই ভেজা দেয়াল মুছতে কারোর জুড়ি মেলা ভার।
হাসি কান্না জুড়ে পুরোনো রাস্তার শেষ , নতুন পথের আবার দেখা;
দিনের শেষে রাতের তারায় সবাই আমরা আবার একা।
থার্মোমিটার মাপছে যে জ্বর, পারদ আজ তুঙ্গে;
মগজ বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র, পরাজয়ের দায় সঙ্গে।।




জীবলজি
                -কৃষ্ণজিৎ 

বেঁচে আছি
ঝরে যাওয়া হলুদ পাতার মতো,
মেঘেদের বিষণ্নতায় ভরা
ধূসর আকাশের তীব্র আক্রোশে;
এই বুঝি বৃষ্টি নামবে
ভিজিয়ে দেবে আমার শুকনো শরীরটা
দলা পাকানো কান্নার মতো
পরে থাকবো মাটির ওপর
তারপর ধীরে ধীরে ,
হারিয়ে যাবো কালের চক্রব্যুহে...

এখনো বেঁচে আছি ,
কালের যাত্রাধ্বনি প্রতিমুহূর্তে
আঘাত করছে আমার পুড়ে যাওয়া
 শরীরের প্রতিটি কোষে
 তবুও মুক্তি নেই আমার
 যন্ত্রের মন্ত্রনায়
 আমি সান্ত্বনা খুঁজি
 বেঁচে থাকার
বাঁচিয়ে রাখার
 হয়তো বেঁচে যাবো
খেয়ে পড়ে বাঁচার মতো
বাঁচার মতো বাঁচতে পারবো কি?



আঘাত
    ---- -অরুন্ধতী চৌধুরী

কত মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকে কিছু জন।
দৃষ্টি তে দেখি বিস্ময় অপলক নিঃশ্বাস
কত বিস্ময়ে খুঁচিয়ে দেখেছি সেই যন্ত্রণা
যন্ত্রণা কি খালি মেয়েরা এ পায়???
বঞ্চনার শিকার তো ছেলে মেয়ে আজ সবাই,
আসলে কিছু মানুষ আজ ও মিথ্যে লাঞ্ছনার আর প্রবঞ্চনার শিকার হয়।
তারা দেখে মর্মস্পর্শী ফুল এর বীভৎস কুৎসিত চেহারা টা,
ভেঙে পড়ে , নিগড়ে যাওয়া ছেঁড়া
স্বপ্ন গুলো যখন বাজার দরে বিক্রি হয়, অজান্তে  কেউ কিনে ফেলে ভালোবাসার দামে জ্বালিয়ে দিয়ার আলো
অন্ধকারে যে জন  আঘাতের ওপর মলমের প্রলেপ ,সে তো মায়ের মতোই ভালো।



তারিখ 
     ---- পার্থ চক্রবর্তী

তারিখটা না হয় তুমিই মনে রেখো
কবে তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল
সেই কন্ঠ, আর অকপট চাহনি
সেদিন আসেনি মনে কোনো রূপকথার কাহিনী
যত স্পষ্ট কথা, ভুলিয়ে দিয়েছিল গল্পকথা
শুধু শব্দব্রম্ম চুপিসারে বুনেছিল নিপুন নক্সিকাঁথা
আজও যত্নে মোড়া আছে, কিছুই ভুলিনি
চুপিসারে দিনগুলো বয়ে গেছে, খেয়াল করিনি
তবুও তারিখটা আর কিছুতেই আসেনা মাথায়
দিনগুলো মনে আছে, শুধু ক্ষনটা নেই  পাতায়।

যেদিন তুমি প্রথম পা মেলালে সাথে
কত না জানা কথা ফেললে আমার মনে
সারারাত জপেছি মনে, তোমার অদৃশ্য অবস্থানে
বুঝলাম না এত প্রেম এল কেন দ্বারপানে
মনে আছে তোমার সেই দিনগুলো,
তারিখটা না হয় তুমিই মনে রেখো।

শেষ যবে বিকেলে পথ হয়েছিল আলাদা,
বুঝে নিয়ে দুজনের একসাথে চলার কায়দা,
পরদিন দুরুদুরু বুকে মনে চাপ নিয়ে জীবন শুরু,
মনে পড়ে বুধবারে ছিলেন প্রজাপতি ঋষি গুরু
সেদিনও বর্ষা এসেছিলো অপরাহ্নে আশীর্বাদে,
বলেছিল এই তো সবে শুরু, হাত ধরে রেখো যত্নে,
মনে আছে তোমার সেই দিনগুলো?
তারিখটা না হয় তুমিই মনে রেখো।

সংসার সাগর তীরে বেড়ে উঠেছে ঘরের সীমানা,
হাওয়া আর তরঙ্গের সাথে দিন বেশ কাটে দু'বেলা,
লাগেনা ভয়, ঝড়ের সাথে মানিয়ে নিয়ে পথ চলা,
এই তরঙ্গেই আবার মিলিত হবে দুজনের ঠিকানা,
ভবিষ্যতের গল্পটা না হয় থাকুক তার রচিত বয়ানে
শুধু তারিখটা জানিনা, কবে আসবে তার কলমে।




Comments

  1. খুব সুন্দর উপস্থাপনা। সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের যুগে, এই সাধু প্রচষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮