অপরাজিত ১০

অপরাজিত ১০



নিবেদনে সম্পাদক

Suffrage isn’t Simple

August 18, 1920. In the third row of the legislative chamber in Nashville, Tennessee, 24 year-old Harry Burn sits with a red rose pinned to his lapel. He's there to vote on the 19th Amendment, which will determine if women nationwide will be able to vote. Burn’s shocking, unexpected vote, “yes,” will turn the tides of history, even though women had already been voting for decades before 1920, and many women still won't be able to vote for decades to come. So, what did the 19th Amendment actually do for women in America? And what, on this 100th anniversary, does it show us about our own right to vote today?

The Birth of Hip Hop

August 11, 1973. At 1520 Sedgwick Avenue in the Bronx, 18-year-old DJ Kool Herc plays his first New York City party. The dance floor is packed, the energy is wild, and Herc gives the performance of a lifetime featuring one very specific innovation on the turntables. Herc and the partygoers don’t know it yet, but this event will go down in history as the birth of one of the most popular musical genres to date—hip hop. How did this party give way to a multi-billion dollar industry? And how has hip hop become so much more than the music?

Killing Fairness

August 4, 1987. The Federal Communication Commission’s leadership has come together in Washington D.C. to decide the fate of a vital issue: fairness. For the previous 40 years, the FCC has attempted to ensure that TV and radio broadcasters present both sides of the political issues discussed on their airwaves. But by the 1980s, the political landscape has changed, and the Fairness Doctrine will soon be no more. Today, we talk to two of the major players who fought on both sides of this great debate to explain what the Fairness Doctrine actually did, why it died, and where exactly that leaves us today.

Convert or Leave

July 31, 1492. In cities, towns and villages across late medieval Spain, whole districts have emptied out. Houses abandoned, stores closed, and synagogues—which until recently had been alive with singing and prayer—now sit quiet. Exactly four months earlier, the King and Queen of Spain issued an edict: by royal decree, all Jewish people in Spain must convert to Catholicism or leave the country, for good. Why were the Jews expelled from Spain? How did Spaniards, and then the world, start to think of religion as something inherited, not just by tradition, but by blood? And how does this moment help us understand the challenge of assimilation today?

Public Enemy #1

July 22, 1934. John Dillinger, America's most famous outlaw, is gunned down by federal agents outside the Biograph Theater in Chicago. Dillinger's death is the final act in a crime spree that involved multiple prison breaks, dozens of bank robberies, and more than one violent shootout. But despite all the money Dillinger stole and the deaths he caused along the way, the public still adored him. How did a man named “Public Enemy #1” become a national darling? And how did the pursuit of John Dillinger make way for the modern FBI?

Destroyer of Worlds

July 15, 1945. It happened within a millionth of a second. In the New Mexico desert at 5:30 in the morning, a group of scientists watched in anticipation as the countdown began. It was silent at first, yet hot and unbelievably bright. Then came the sound. The first-ever atomic bomb explosion... was a success. How did scientists working on the Manhattan Project create what was then the most powerful weapon in history? And how did the bomb’s existence forever change our sense of what human beings are capable of?

Operation Mincemeat

July 10, 1943. 150,000 British and American soldiers storm the beaches of Sicily in the first Allied invasion of Nazi-controlled Europe. But the Nazis…aren’t really there to put up a fight. Hitler thought the invasion was coming for Greece. The Nazis have been tricked by two British Intelligence officers and a covert deception plan. How did their operation— which involved a corpse, false identity, and a single eyelash—change the course of WWII?

The Big Stink

July 30th, 1858. London is a world city, a global center of trade and commerce. But there’s something less glamorous going on in this bustling metropolis: the smell. Every inch of the city smells like rotting, human waste. And this smell is actually killing people. But no one is doing anything about it. Until today. How did short-term thinking lead to a deadly problem? And how did an unlikely leader finally get London out of this very literal mess?

Pride & Protest

June 28, 1970. Hundreds of people start to gather on Christopher Street in Manhattan’s West Village for an anniversary celebration. One year earlier, in that very same spot, the Stonewall Inn was raided by police, sparking a revolution. Now, LGBTQ+ people have come here again, not to riot but to march in celebration of who they are and just how far they have come – something that might have been unthinkable if Stonewall hadn’t taken place. How did the Stonewall riot have such a huge impact on queer activism, and how did the community go from raid to parade in just a year?

Freedom Summer, 1964
June 21, 1964. James Chaney, Michael Schwerner and Andrew Goodman, three civil rights activists in their early twenties, are reported missing in Mississippi. They are part of the first wave of Freedom Summer, a massive voter registration campaign in the racist heart of the South, Mississippi. The first interracial movement of its kind, the project was led by black southern organizers and staffed by both black and white volunteers. The movement’s leader, Bob Moses, joins this episode to explain how the disappearance of those three men brought the Civil Rights movement into the homes of white Americans – and what Freedom Summer can teach us about moving the wheels of progress today.

To Fight a Virus, and Win

May 14, 1796. Edward Jenner puts a theory to the test: can contracting one disease save you from another? Jenner goes down in history as the man who brought us one of the greatest advances in modern medicine: the vaccine. Its discovery led to the eradication of smallpox, a virus that killed an estimated 300 million people in the 20th century alone and one of two diseases to ever be defeated. But the story of that first vaccine begins long before Jenner was even born. How did an unlikely trio in Colonial America pave the way for Jenner’s life-saving innovation? And how did a strange sequence of events help us defeat one of the oldest and deadliest diseases in human history?

The Deadliest Pandemic in Modern History

April 5, 1918. The first mention of a new influenza outbreak in Kansas appears in a public health report. That strain, later called the Spanish Flu, would go on to kill at least 50 million people worldwide. In a time before widespread global travel, how did this disease spread so far, so fast? And what does it teach us about fighting pandemics today?


সম্পাদকীয়

সুমন ঘোষ


"ধূলামন্দির" কবিতায় কবিগুরু লিখেছিলেন- "মুক্তি? ওরে, মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে!' বর্তমান পরিস্থিতির নীরিখে দাঁড়িয়ে আমরা সমগ্র বিশ্ববাসী, সত্যিই  মুক্তির সন্ধানে ব্যস্ত করেছি নিজেদের। কিন্তু যদি আমাদের দেশ ভারতবর্ষের কথায় বলি, তাহলে সদ্য আমরা স্বাধীনতার 74 তম  বর্ষে পদার্পন করেছি, তাহলে এখনও কেনো চলছে এই মুক্তির খোঁজ? উত্তর টা কারোর অজানা নয়,  আমরা মুক্তি চাইছি একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস কোভিড-19 এর হাত থেকে, যা মহামারী থেকে অতিমারীর রুপ ধারণ করেছে স্বল্পকিছু সময়ের মধ্যেই। সমগ্র বিশ্বে আজ প্রায় 2 কোটি 18 লক্ষ  মানুষ এই ভাইরাসের কবলে বন্দি আর তারই সাথে মৃত্যু নদীর ওপারে চলে গেছেন প্রায় 7 লক্ষ 73 হাজার 95 জন। তাই এই ভয়াবহতা থেকে এবং মৃত্যুমিছিল কে ঠিকিয়ে আমাদের জিততে হবেই, এই অঙ্গিকারে আমরা বিশ্বাসী হয়েছি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব চিরতরে মুক্তির স্বাদ পাওয়ার, কিভাবেই সম্ভব এই অজানা শত্রুকে পরাজিত করে আবার সেই সুস্থ স্বাভাবিক পৃথিবীর রুপ-রস-গন্ধকে উপভোগ করার? উপায় আমরাই বের করেছি। সেইজন্যই, সব মতভেদ কে তুচ্ছ করে, জাতি-ধর্ম- বর্ণকে অগ্রাহ্য করে গ্রাম ছাড়িয়ে শহর;শহর ছাড়িয়ে দেশ; দেশ ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্ব আজ একজোট হয়েছি আর মানবতার জয়ধ্বনি উঠেছে-                                                                 "হঠাৎ অতিমারীর দেশে, রব উঠল অবশেষে, 'মিশাইল নয়, ভ্যাকসিন্ চাই, দাম্ভিকতা নয়,মানবতা চাই', অহংকারের ঘরে ঝুলিয়ে তালা,শুরু তাই মানুষ হবার পালা।"                   
হ্যাঁ,এই সম উত্তর এসেছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার থেকেও ভ্যাকসিন্ অর্থ্যাৎ টিকা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকা থেকে জানা গেছে যে প্রায় 29 সংস্থা তাদের হিউম্যান ট্রায়াল এবং 138 সংস্থা প্রি-হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে।সে যাই হোক এই লড়াই এ সামিলে সমগ্র বিশ্ব তো বটেই, আমাদের দেশ ভারতবর্ষ  ও তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন্ গুলির বিষয়ে আলোচনা করা যাক। 'AIMS' ও 'PGI' রোহতক এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- ভারত বায়োটেকের এর তৈরী "কোভ্যাক্সিন" এর প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল সফল ও তার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মেলেনি এই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই- ভ্যাকসিন্ তৈরীতে "আত্মনির্ভর ভারত", ঘোষিত হয়েছিল। এইবার ভ্যাকসিন্ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি দেশের সেরা ওষুধ প্রস্তুত কারক সংস্থার গুলির সাথে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন। কিন্তু কেনো দেশীয় সংস্থার উপর এত ভরসা দেখাচ্ছেন কেন্দ্রের এই কমিটি, চিকিৎসক- বিজ্ঞানীরা? কারণ রাশিয়ার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন্ "স্পুটনিক-5" এবং চিনের আবিষ্কৃত ক্যানসিনো বয়োলজিক্স কর্পোরেশন- কোভিড ভ্যাকসিন্ "Ad5-nCov"এর রপ্তানি শুরু হলেও, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এবং অনান্য বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা। তাদের এই তরিঘড়ি করে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন্ কে কার্যত অস্বীকার করেছেন তারা।কিন্তু আবারও প্রশ্ন উঠেছে কেনো? তার উত্তর হিসাবে বলা যায় এই ভ্যাকসিন্ এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল এখনও সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাজারজাত করণ কে গ্রিণ সিগন্যাল দিয়েছেন ওই দুই দেশের প্রেসিডেন্ট এবং সাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকরা। তাই আমাদের দেশের মানুষ ভরসা রাখছেন দেশীয় সংস্থা গুলির উপরেই। সেইসঙ্গেই ভ্যাকসিন্ পেতে চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষারত আজ আমরা সকলেই। এমত অবস্থায় মোট পাঁচটি সংস্থার সাথে আলাদাভাবে আলোচনায় বসেছে কেন্দ্রের এই কমিটি। এই পাঁচটি সংস্থা যথাক্রমে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট, ভারত বায়োটেক, জাইদাস ক্যাডিলা, জেনোভা ফার্মাসিটিক্যালস্ এবং হাইদ্রাবাদের সংস্থা বায়োলজিক্যালই। যাইহোক এই সংস্থা গুলির সাথে কেন্দ্রের এই সংস্থার আলোচনার মূল বিষয় গুলি হল এই- ভ্যাকসিন্ তৈরীতে তাঁদের হিউম্যান্ ট্রায়াল ঠিক কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে, এর জন্য ঠিক কি কি সমস্যার মধ্যে তাদের পড়তে হচ্ছে এবং সমস্যা এড়িয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন্ কে বাজারজাত করতে কি কি সাহায্য প্রয়োজন। তাই এই বৈঠকের আশাব্যাঞ্জক ফলাফল আমরা নিশ্চিত রুপে পাব এই আশা রাখা যায়। কিন্তু ভ্যাকসিন্ আবিষ্কার নিয়ে এত তৎপরতার মাঝেই আবারও মনখারাপ করা তথ্য পাওয়াতে উদ্বিগ্ন হয়েছেন বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা এবং তাই নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়েছে। কি সেই খবর জেনে নেওয়া যাক। মালয়েশিয়ায় এক নতুন প্রজাতির ভাইরাস এর সন্ধান মিলেছে হঠাৎই, এই নতুন ধরণের কোভিড ভাইরাসের নাম- "D614G"। বিজ্ঞানী দের দাবি ভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেইন বর্তমানে পাওয়া প্রায় 6 ধরণের স্ট্রেইন এর অস্তিত্ব মিলেছে তার চেয়ে প্রায় দশগুন বেশি সংক্রামক ও ভয়ংকর। মালয়েশিয়ার সাস্থ্য অধিকর্তা নূর হিশাম আবদুল্লাহ সেই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন- " সাধারণ মানুষ কে এখন আরও সতর্ক হতে হবে।না হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সমস্ত লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাবে।"                                                 সবশেষে এই সম্পাদকীয় কলমে এই কথায় বলে শেষ করব, সব কিছুর পরেও আমাদের ভরসা রাখতে হবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপর,তাঁর আর্শীবাদে খুব শীঘ্রই এই ভয়বহতার হাত থেকে চিরতরে মুক্তি পাব এবং সব বন্দিদশা অতিক্রম করে খোলা আকাশে আবারও বুকভরা নিঃশ্বাস নেব। তাই ভরসা আমাদের রাখতেই হবে, সাথে "চরৈবেতি" মন্ত্রে হতে হবে দীক্ষিত।           




কভার কাহিনি

সন্দীপ দাস 

বিশ্বকাপের শেষ ছক্কাটা কে না মনে রেখেছে । ওই ছক্কার হাত ধরেই ঝাড়খণ্ডের তরুণ নবাব ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল বিশ্বসেরা ট্রফি । এবার মনে করে দেখুন যোগিন্দর সিংহের বলে শ্রীশান্তের হাতে লুফে নেওয়া সেই ঐতিহাসিক ক্যাচের মুহূর্ত । নতুন ফরম্যাটের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে অধিনায়ক উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে এই তরুণ বলারের হাতে বল তুলে দিতে পেরেছিলেন , তিনিই তো বিশ্বরত্ন । এছাড়াও এশিয়া কাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে আই সি সি র চার ট্রফি যিনি নিজের নামে করে নিয়েছিলেন , তিনিই আমাদের ক্যাপ্টেন কুল , মাহি ।
ধোনির যে খেলার প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রবল আগ্রহ ছিল , তা আমরা জেনেছি তার বায়োপিক দেখে । এখানে নায়ক আর এক মি.কুল , সুশান্ত সিং রাজপুত বা পর্দার ধোনি । ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বলিউডে পা রাখা ছেলেটি ছোট পর্দায় অভিনয় করার সময় থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে , তিনি ভবিষ্যতের নায়ক হয়ে উঠতে চলেছেন । ঠিক যেন ধোনির মতোই এই উত্থান তার । মাহির দুরন্ত ১৮৩ রান , তাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে , সারা দেশকে এক আগাম সন্দেশ দিয়ে দিয়েছিল যে মাহির চওড়া কাঁধেই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ।
তারপর ইতিহাস আর ইতিহাস শুধুই । একদিকে ধোনির শিখর জয় , আর অন্যদিকে সুশান্তের অভিনয় আর মিষ্টি হাসির জাদু ভারতীয়দের মধ্যে এক নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছিল । মাঠের মধ্যে ধোনি আর পর্দার ওপারের সুশান্তের জীবন ধারা যেন একদম একই --- আর বাইরে ?
অদ্ভুত মিল সেক্ষেত্রেও । দুজনেই মিশে যেতে সক্ষম সাধারণ মানুষের সাথে । সকলকে হাসি খুশি প্রদান-ই যেন উভয়ের লক্ষ । তারপর একদিন এলো সেই মুহূর্ত । ধোনি স্রোতে মিশে গেল , সুশান্ত ধারা । তৈরি হলো মাহির বায়োপিক । ধোনির ভূমিকায় সুশান্ত সিং রাজপুত । কোন ভাবেই মনে হলো না যে ধোনি এই সিনেমায় নেই । সুশান্তের অভিনয় ধোনিকে প্রতি মুহূর্তে এনে উপস্থিত করছিল বড় পর্দায় । তাদের চলন বলন কথার ধরন সবই যেন মিলে মিশে একাকার ।
বলিউডের ধোনি হিসাবে পরিচিত হলেন সুশান্ত ।

লকডাউনের এই মুহূর্ত দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে সুশান্তের মৃত্যু । আত্মহত্যা নাকি খুন সে নিয়ে তদন্ত চলছে । এ সম্ভাবনাই উজ্জ্বল যে সুশান্তের হত্যা করা হয়েছে । তাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিসর্জনের পথে । অন্যদিকে ধোনির অফফর্ম বারবার তাকে বোর্ডের সামনে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে । অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন আগে , দল থেকেও বাদ দেওয়া নিয়ে জল্পনা প্রবল হচ্ছিল । ঠিক সেই সময় ১৫ই আগস্ট ২০২০ , সন্ধ্যে ৭:২৯-এ ধোনি অবসর গ্রহণের ঘোষণা করে নিজেকে স্বাধীন করে দিলেন সমস্ত বন্ধন থেকে । রুপোলি পর্দার ধোনি সব বন্ধন ছিন্ন করে বিসর্জনের পথে গেছিলেন আগেই , বাস্তবের ধোনিও এবার দলের বন্ধন ছিন্ন করলেন --- এ যেন তার সুশান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম ।
পিছনে হাজার হাজার স্মৃতি রেখে ধোনিরা এভাবেই স্বাধীন হয়ে যান ; কেউ গ্রহনে আবার কেউ বিসর্জনে ।





দীর্ঘ কবিতা


বিরহ প্রেম একাকীত্ব

বিকাশ দাস (মুম্বাই)

আর ক’টা দিন সবুর করো
সময়কে একটু ধরে রেখো ।
আর লাঞ্ছনা নয় পাকা সোনার মতো
অঢেল সুখ তোমার গা ছুঁয়ে আসবে ।
শুধু একটা ভালো চাকরি হতে দাও ।

তুমি আপাততঃ পা ভিজেয়ে রাখো আলতায়,
প্রতিদিনের দুঃখ কষ্টকে নিজের মতো করে মাথার বালিশ করো ।
খাঁ খাঁ করে যদি বুকের ভেতর
দু’টি কতক কবিতা লেখো আমার কথা ভেবে
তোমার কাজলের আঁচে ।

দেখবে শুকনো আঁধারের ডানায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে ভালবাসা
আকাশ হয়ে উঠবে তোমার ছাদে ।
ভালবাসার তাউসে ময়লা জমতে দিওনা ।
পারো যদি আপাততঃ অল্প একটু কেঁদে নিতে পারো
অনেকটা হালকা লাগবে ।

আমি বসে নেই ।  সত্যি বলছি ।
তোমার কথা ভেবেই অনেকটা হেঁটে এসেছি
দু’হাতে প্রথানুযায়ী প্রার্থনা করেছি তোমার কুল দেবতাকে ।

তোমার সাঁজো শাড়ির ভাঁজে যে সুখ ছড়িয়ে রেখেছো
ঝেড়ে ফেলো না ।
চালগুঁড়োর আলপনা এঁকে রেখো রোজকার মতো

তোমার উঠোন বাড়ির  ঘর দুয়ার চৌকাঠ কাছে থাকার ভীষণ টানে ।

সন্ধ্যা পাতা মুড়িয়ে টাটকা ফুলে মালা নাই বা গাঁথলে
শুকনো ফুলের শেষ সুখটুকু
কুড়িয়ে নেবো  আমরা একদিন ।
চাঁদনী রাত তখন ও তোমার শোবার ঘরে গোধুলির সানাই নিয়ে হাতে ।

অবাধ সংসারে বেদনার দংশন
ভোরের শিশিরের মতো শীতল হবে,
উপচে পড়বে ভালবাসা-প্রেম ।

সার্থক হবে সিঁদুর ছূঁয়ে থাকা তোমার প্রশস্ত কপাল ।
ঘুমের জাজিমে একটু কাত হয়ে নাও খোলা চুলের গন্ধে ।
এখন ভরদুপুর । জানি এটা টানা পোড়েনের সময় ।

ঘুমের ঘামে চুল ভিজলে নাকি এলোমেলো ভাবনায় মাথা ধরে না ।
তুমি নাকি সারা রাত ঘুমোওনি, মশারির চারকোণ

তোমার বাঁধা চুল দেখে দিব্যি বুঝেছিলাম ।

নিজের অসুখ একান্ত নিজের বলে মনে হয় তোমার ।
পায়ের নিচে কাঁটা তবু মুখ রাকাড়ে না তোমার ।

বিয়ে হলো ন’মাস বিয়ের কাঠ এখনও পুড়ছে নিবিড়ে ।
চোখের আকুলতায় তুমি এ’সব কথা বল না তোমার পুরুষ বন্ধুকে ।

মাস বাড়লে বছর বাড়ে  দিন ফুরোলে মাস ও ফুরোয় ।
এমনি করে দেখো এক মহাসময় আসবে সোয়াস্তির রঙ নিয়ে ।

সে দিনও তোমায় ইঞ্চি পাড়ের তাঁত সিল্ক বেশ মানাবে ।
আপাততঃ আটপৌরে শাড়িতে তোমার শরীরটা ভিজিয়ে নাও ।

পৃথিবীর গায়ে জ্বর থাকলেও তোমার পছন্দ অপছন্দ বেছে নিতে অভাব থাকবে না ।

আজ যতটুকু আছে ততটুকু টুকড়ো টুকড়ো করে জুড়ে নিও

গোপন অব্তংসার রঙ ।
চোখের পাতায় সুখের ছিঁটে নাই বা পড়লো ক 'ফোঁটা চোখের জলে

ভিজিয়ে নিও তোমার দু’হাতের তালু ।
বড়ো কাছাকাছি থেকো আমার
পাথরের মতো ঘুমিয়ে থেকো ছেড়ে আসা আমার কোলবালিশে ।



এখন অভিমানে গা ভাসিয়ে নিও না এখন গড়ার সময় মুহূর্ত ।
সেই বেলা তোমার চোখের বিছিন্ন কাতর কাজল
আমাকে অনেক কিছু বলেছিলো

তোমার নাকি বাড়ি উঠোন হেঁশেল করে সারাক্ষণ কাটে ।
জেনো, এ কাটায় রক্তক্ষয় হয় না
তবু তোমার চিকন হাসি চৌকাঠ জুড়ে

জানলার শিকেয় সূর্যের কাকপ্রতীম বিভা ।
দিল্লি থেকে আর ক’টা দিন পরে খবর পাবো তার অপেক্ষায় বসে আছি ।
তুমিই বলেছ,   তোমার এখানেই হবে একটা চাকরি,

হবে অন্নসংস্থান ।
তোমার বিরহে আমার ভালোবাসা সাজিয়ে সারাদিন থাকি বিভোর

নিয়ে হাতে আমার বায়োডাটা ।

***



এখন আমি একা

বিকাশ দাস (মুম্বাই)

তোমাকে দেখেছি সাত সকালে
যখন পুবের আকাশ ঘাম ছিলো তরল আলোয়।
ছ্যাতলা ধরা পুকুর পারে
বাঁধানো সিড়িতে বসে  চিকন চুলের গোছাখানি
উল্টে পাল্টে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলে নিজস্ব কায়দায়।

অনন্ত পিপাসায় পুকুরের শ্যাওলার মতো আমিও দেখেছি তোমাকে বারবার
অকারণে দেখার একটা আলাদা স্বাদ যেমন।

রুপোর তোড়ায় বাঁধা তোমার পায়ের পাতা ডুবিয়ে ছিলো সবুজ জলে,
অলজ্জ জল তোমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুখ পেয়েছিলো
অধিকার আঁকড়ে রাখার মতো
আর বাকি মানুষের মতো সেদিন আমারও ঈর্ষা হয়েছিলো।



রোজ তোমায় দেখে চোখ জুড়িয়েছি
চোখ জুড়ানোর আড়ালে আমার বুক পুড়েছিলো
অনেকদিন পর হদিশ পেয়েছিলাম ।

তোমার দু’পায়ের নিচে রাঙা পথের
আলতা ধুলো লেগে লেগে আকাশ হয়েছিলো
অবান্তর চঞ্চল তোমার নুপুরের ছন্দে  উলসে দিয়েছিলো আমার শরীর।

ছোটো ছোটো রোদ বৃষ্টি খুব সাবধানে বাঁধা শাড়ির আঁচল খুলে
জোড়া পদ্মের নির্জন সরোবরের খোলা ঘাটে দেখেছিলাম আমার বাসাবাড়ি।

সময়ের মতো আমিও চলেছিলাম দ্রুত ঢালা অন্ধকারের বুক নিংড়ে
তোমার চিবুকে উগরে থাকা বাতাস গন্ধ মাধুরী
ঠিকরে পড়েছিলো  আমার শরীরের পোশাকে,
মধুলগ্ন  সন্ধার চৌকাঠে থমকে এসে দাঁড়িয়েছিলো ।
তোমার মৌন ইশারায় চাঁদ ধুয়েছিলো, তার দু’চোখ তোমার গা ভেজানো পুকুর জলে

হারিয়েছিলো নিজেকে সেই অতলান্তে ।

রূপ লোভাতুর পলকহীন আমার দু’চোখ
ডুবেছিলো পা  নাচানো জল তরঙ্গে ।

এখন দেখতে পাচ্ছি
সূর্য সপ্তরাঙা বর্ণচ্ছটা নিঃশেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে
পৃথিবীর সবুজ পালঙ্কে ।
আর
আমি এখন একা।



দীর্ঘ কবিতা

সুভাষ কর

কোণারকের বিশ্বাস-বার্তা

গাড়ীটা পুরী থেকে কোণারকে ঢোকার মুখে
বৃদ্ধ উপযাচক হয়ে আবারো বলতে শুরু করল;
তার নববিবাহিত পুত্র আর পুত্রবধূর উদ্দেশ্যে -
যেমনটি বলেছিল তাদের বিয়ের পরের দিনটায়,
বলেছিল নিজের উপলব্ধির কথা -
ভালবাসার সাথে বিশ্বাসের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক,
স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়াদির সাথে লড়াইয়ের পার্থক্য।
গাড়ীতে গায়ে গা ঘেঁষা নৈকট্যে বসা প্রৌঢ়া স্ত্রী -
কৌতূহলী কৃত্রিম লজ্জায় মুখখানা কাচুমাচু -
নিষেধ-ইশারা নিয়মমাফিক চলছিলই।
তবুও বৃদ্ধ আজ বড়ো নাছোড়বান্দা, একগুঁয়ে।
তার অকপট শব্দমালা অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায়ই
মন্দির-চত্বরে নেমে টিকিট কাটার পর্বও শেষ হয়।
হাঁটাপথে দৃশ্যমান মন্দিরের নান্দনিক কারুকার্য।
গাইডেরা সরল বিশ্বাসী ট্যুরিষ্টদের কানে ঢালছে
রাজমন্দির জুড়ে কালাপাহাড়ের ক্রোধকাহিনী-
সূর্যদেবের পূজোয় বিঘ্নের ছেদো সব গল্প-গাঁথা।
সব ছাপিয়ে দেয়ালের ভাস্কর্যে অপূর্ব প্রেমলিখন,
বিশ্বাস-নির্ভর যুগলের একসত্তায় হারিয়ে যাওয়া-
আলিঙ্গনবদ্ধ দেহের অস্থিমজ্জায়, পরতে-পরতে।
নগর-সভ্যতার প্রেমহীন কাম-লালসার বিপরীতে
ব্যাভিচারহীন দেহাস্বাদনের শৈল্পিক প্রতিবাদ;
মানুষ-মানুষীর সমর্পণী ভালবাসার সুদৃঢ় ঘোষণা।
কিন্তু এদিকে ওরা কারা?  কিছু উদ্‌ভ্রান্তের দল-
মূর্খ কিংবা অত্যাধুনিক উগ্র বেপরোয়া তৎপরতা,
উন্মাদপ্রায় ফিসফিসানি খিস্তি-খেউড়,
‘পর্ণো’র ছত্রছায়ায় সেল্‌ফির ফায়দা তোলা যেন।
অবশ্যি ওদিকে আরো কিছু নরনারী চোখে পড়ে-
ওদের একের কাঁধে অপরের সাহসী হাত,
তারা অপলকে নান্দিক যুগলমূর্তি দেখে,
শিক্ষা নেয় নিজেদের বন্ধনকে দৃঢ়তর করার,
ঝড়ঝঞ্ঝায় এভাবেই পরস্পরকে জড়িয়ে রাখার।
বৃদ্ধ চায় উত্তরসূরীরা শেষোক্ত দলের হয়ে বাঁচুক-
মানবিক প্রেমে শরীরি যে ভূমিকা অনস্বীকার্য,
ঈশ্বরের সৃষ্টিতেই যে শরীর-সম্পৃক্তির অনুমোদন -
তার অস্বীকারে কোন নৈর্ব্যক্তিক প্রেমে কাজ কি?
এই বার্ধক্যেও সংকোচের সব বিহ্বলতা কাটিয়ে
এই বৃদ্ধ বর্তমান প্রজন্মকে দেখতে চায় স্থিতপ্রেম,
তাই বুঝি বৃদ্ধ স্বীয় ঔরসজাত পুত্রের, আর-
তারই ভালবাসার বন্ধনে স্বেচ্ছায় ধরা দেয়া
নিগুঢ় স্নেহাবৃতা পুত্রবধূর গাইড হতে চেয়েছিল,
চেয়েছিল প্রজন্মান্তরে এক ধারাবাহিক সঞ্চালন -
শরীর-মন-আত্মায়, দুর্লভ জীবনের সমগ্র সত্তায়
ভালবাসার অমোঘ মন্ত্রকে গেঁথে নেবার
বিশ্বাস ও মর্যাদার সহজ দীর্ঘস্থায়ী যাদু-কাঠির।
---------•---------


বিশেষ কবিতায়

টুকরো কিছু

             ✒ হেমন্ত সরখেল। 

(১)
নিরাভরণা
নাভিকুণ্ডে নাক ডুবিয়ে দেখি
মা মা গন্ধ

যৌনতা ভুলে মাতৃত্বে ফেরত আসি।

(২)
এ এক অদ্ভুত চর
পালাবদলের পরেও শুধু জেগে থাকে
মিথ্যের দাসত্ব

খিদের পাশবালিশ অর্ধনারীশ্বর।

(৩)
প্রতিটা কর্তব্য পালনের ফাঁকে
দেখার অভ্যাস চুপিসারে

শতকরা হিসেবে সুনাম খাবি খাচ্ছে তো মগডালে ?

(৪)
ধরা পরে যাওয়ার পর
ক্ষমা যতই উদার হোক

ঘৃণার আমৃত্যু নামকরণ হয়ে যায় রক্তবীজ।

(৫)
ক্যারাম খেলতে শিখলে
সুবিধা এই

এক ঢিলে লুকানো কয়েক শিকারে দক্ষতা জন্মায়।

(৬)
যুদ্ধ করেছি দু'জনেই
তুমি পেয়েছ অবিশ্বাসের মন্ত্র

আমি তোমায় দেখে বিশ্বাসে বাঁচা শিখেছি।
               ★★★


যুধিষ্ঠির এবং একটি স্ত্রী লিঙ্গ

             ✒ হেমন্ত সরখেল।

ঔরস যেখানে ফাঁটা চপ্পলের মতো পড়ে থাকে স্বামীর অধিকার নিয়ে
সেখানে দেবতার আশীর্বাদে হঠাৎ মরে যায়
প্রতিবেশী দেবর
সতীত্ব রক্ষায়।

তারপর জটার ঔরসে জন্মালে কাল
আদালতে বিছানা, চাদরে দাগ, বেলুনে ফুটো,
কাঠে কাঠ
অর্ডার অর্ডার অর্ডার...

সে ই সত্য
যা সর্বাধিক চরম সুখী করেছে তোমায়
তুমি ছাড়া আর কেউ যে তোমায় ঠিক ঠিক মাপতে পারবে না।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পুষ্পবৃন্তে
একান্তে রাখো হাত
ভাবো, কী করবে।

সত্যের জন্য নাকি সর্বস্বান্ত হওয়া যায়?
                   ★★★★★


কবিতা

দুই লাইনের ৫ টি অণু কবিতা

ড.মহীতোষ গায়েন
------------------
১)কথোপকথন-১

শরীর জুড়ে মহুয়া ফুল,শরীর জুড়ে কালো;
ও মেয়ে তোর শরীরে কি বিদ‍্যুৎ চমকালো ?

২) কথোপকথন-২

শরীর জুড়ে কাশফুল তোর,শরীর জুড়ে আলো,
ও ছেলে তোর সন্ধ্যেবেলার চরিত্র কি ভালো ?

৩)   কামনা

হাত কাটে কাটুক
জীবন থেকে সুখ কেটো না।

৪)   আকাশ

'ওই' আকাশের মাঝে
আমার হৃদয় বাঁচে।

 ৫)  মন

সীমান্তের ওপারে দেখ      খসে পড়ে তার
মনের গভীরে বাড়ে         ভালোবাসার চারা।


ভালোলাগার নাতিশীতোষ্ণতা
           -মৌতৃষা পাইন

মেলামেশা,
ভালোলাগার নাতিশীতোষ্ণতা,
অস্পৃশ্য কে স্পর্শ করার চুম্বকীয় আকর্ষণ।
সবটা কৃত্রিম।
পুরোটাই যাযাবর বেশে,
পার্থিব দুনিয়ায়-
হন্যে হয়ে, ঘুরে বেরানো।
রুগ্ন অনুপ্ররেণায়,
পার্থিব সুখের খোঁজ।
নিখুঁত ভাবে দেখো!
ফ্যাকাশে, দিশেহারা মুখগুলো,
ভণিতার ভান্ডার।
সম্পর্কের সুগন্ধি ধারণে ব্যর্থ,
অস্থায়ি তাসের ঘর।
তবুও ক্লান্ত মনে,
দগদগে ঘা চেপে,
শরীর বাঁচে নিয়মিত।


পুজো
     -- অরুন্ধতী চৌধুরী

সেই ভোর পাঁচ টার সময়ে উঠেছি। তারপর স্নান সেরে মাসির বাড়ি এলাম। তারপর এখানে এসে আলপনা দিলাম, পুজোর জোগাড় করতে বসলাম। এখানে এসে তারপর পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।
আমি কখনোই এর আগে কোনোদিন ও উপোস করি নি , কিন্তু এইবারে করলাম , কিন্তু কেন করলাম জানি না , আমি কখনো রাস্তায় যাবার সময়ে বা মন্দিরে সামনে জোরহাত করিনি কিন্তু ভক্তি আমার অন্তরে ছিল। অথচ আমি উদযাপনে বিশ্বাসী ভীষণ ভাবে বিশ্বাসী।
আমি মনে করি প্রতিটা বিষয়ে প্রতিটা লক্ষে প্রত্যেকটা মানুষ উদযাপন করুক , আমাদের বেঁচে থাকা টাকে উদযাপন করুক, আমাদের প্রতিটা হাসি আর প্রতিটা কান্না এর একটা উদযাপন হোক।
পৃথিবীর এই কলুষিত জগতে একটা পসিটিভ শক্তি খুব আসা দরকার সেটা পুজো করেও আসতে পারে আবার নিজেদের দৃঢ় সংকল্পে নিজেদের বিশ্বাসে আসতে পারে, আমি মনে করিনা নাস্তিকতার কোনো মানে আছে , যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে সে আস্তিক আর যে নিজেকে বিশ্বাস করে সে আরও বড় আস্তিক কেননা জীব এর মধ্যে এই ভগবানের বাস। জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
তাই এই পৃথিবীর বারুদ আস্তাকুড়ে কোথাও একটা পসিটিভ শক্তি নিশ্চই আছে । কোথাও না কোথাও নিশ্চই আছে,শুধু তাকে খুঁজে বের করার যে প্রয়াস ।সেই সময় সেই তিথিটাই  আমার কাছে  শান্তির, তাই -ই উদযাপনের ।


প্রেম
   --- কৌশিক ঘোষ

জঙ্গল নদী ও কবিতার ত্রিকোনপ্রেম সুরেলা বংশীধ্বনির মতো ভেসে আসে
আমি ও নেশা ঢলে পড়তে থাকি সূর্যাস্তের মতো -

নিরস্ত্র নাগরিক কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলি
এও এক কাব্যের অংশ কিংবা গল্পের |

কবিতা এসো বসো
একটু মদ খাও
‘চরিত্রহীন’  আমি মানুষ ভালোবেসে
পোড়খাওয়া-গ্রাম, দেহপ্রসারিনী-শহর ও ধূসর-সভ্যতা ছাড়িয়ে পাখিদের ঘরে ফেরা দেখি -
আকাশে চাঁদ স্তনের মতো ঝুলে থাকে
সন্ধ্যাতারা যেন আমারই ধুঁকছে
অন্ধকারে জোনাকি প্রেমিকার মতো আসে, রংলাগায় –
দ্বিচারিনী হয়ে দিনের আলোয় ডুবে যায় |


বিদায়
সত‍্যব্রত ধর


কারাগারের রুদ্ধ আলোর গতিতে,
চায়ের উষ্ণ পরশ বৃদ্ধতা বাড়ায়।
হঠাৎ নিরপরাধের রক্তে সত্য বোঝাই বাক্সের,
তেল চিটচিটে গাঢ় সন্ধ্যা নামে।

ওদিকে কবিদের সময়ের অভাবে উপন্যাসে,
সিগারেটের ধোঁয়া সহযোগীর তৃষ্ণা জাগায়।
কিন্তু অসহযোগের বিচ্ছুরিত চাহিদার সেলাইতে,
আদিম সখ্যতা অন্ধকার বয়ে আনে।

তবে প্রতিবেশী মগজের আসল অস্ত্র,
লতাময় ফুলের খোঁজ করে রোজ।
এখন ফোনের রিংটোনেই পথ দেখায়,
বস্তাবন্দী কিছু স্বপ্নের শেষ পরিণতি।

শেষে ভাঙা পাহাড় বেয়ে ধেয়ে আসা বুনো মেঘ,
নির্বিকার ভাবে উত্তর ঝরিয়ে দেয় সর্বত্র।
তখন পাশে না থাকা রক্তিম ভোরগুলো,
একাকী বিদায় নেয় মুখোশের সুবিধায়।


নীরব আর্তনাদ
       ---- তিয়াসা জানা

কিছু মানুষরূপী গিরগিটির রং পাল্টানোর তাড়নায়

তাজা প্রাণগুলো ক্লান্ত !

সেই দিনও আকাশে সূর্যের তেজ ছিল,

শুধু বাচ্চাটা মা বলে ডেকেও সাড়া পায়নি।

জন্ম পরিচয়হীন বাচ্চাদের নামের তালিকায় হয়তো আর একটি নাম লেখা হতে পারে?

 শুধুমাত্র স্টেশন চত্ত্বরের চেনা কুকুরগুলো গেয়েছিল শেষ কীর্তনের গান।

 তখনো হয়তো কেউ কেউ তীব্র যন্ত্রণায় সুরা পান করে বেসুরো সুরে শব্দের সঙ্গে শব্দের সঙ্গমে ব্যস্ত- বাচ্চাটা একইভাবেই হাতে রুটি  নিয়ে বসে আছে মায়ের কোলের ভেতর।

 তখনো জানতো ক্লান্তির ঘুম; ঘুম থেকে উঠলেই আমি আর মা রুটি খাব।

 চুপচাপ প্রানটি বেরিয়ে গেল!

 বিনা চিকিৎসায় ;পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি ফেরবার তাগিদায়  ।

ধূসর বিবর্ণ বেহাগের সুরে চুপচাপ একটি মায়ের মৃত্যু হল!!


সময়
   ---- হাওয়াই মিঠাই

সময় বড়ই অদ্ভূত, সে গড়িয়ে যায় তটিনীর স্রোতের বেগে।
    কখনও ভালোমানুষি সেজে আমাদের দেখায় অনেক আশা।
      আমরা তাতেই বুক বাঁধি ও  জীবন পথে এগিয়ে যায় ভাবনাহীন উন্মত্ত হয়ে।
    যখন সে মুখোশের আড়াল থেকে খারাপমানুষি সেজে আমাদের বিব্রত করে, আমরা গালিগালাজ করি।
     আমরা কিন্তু আমাদের আসল সত্তায় ফিরে আসি।
    ভালোকে বুকভরে গ্রহণ করি, খারাপটাকে কিন্তু দুচোখের বিষ মনে করি, তার পরে যে ভালোটা আছে তার অপেক্ষাটা আমাদের দ্বারা হয় না।
      সময়ের কাছে আমরা ঠিক কাঠপুতুল, তার ঈশারায় আমরা নাচি।
     সেই আসল বিচারক, সে ভালোমন্দের ভেদাভেদটা ভালোই করে দিতে পারে।
     সবকিছুই সময়ের নাগপাশে আবদ্ধ,
     তার কঠিন আঘাতে আমরা হয়ে পড়ি দগ্ধ।
     তার হাতধরেই আমরা হাঁটি এই ক্ষুদ্রজীবনে,
  তার গতি কখনো স্তিমিত হয়ে পড়েনা আমাদের মরণে।


শর
  --- শতদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

অসংখ্য শর বিঁধে রয়েছে শরীরে
মেঘের বুক চিরে ছুটে আসছে সেই শয়ে শয়ে শরের মিছিল
শরের মুখে বিষন্নতা মাখিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে এক অজ্ঞাত তীরন্দাজ

 শরবিদ্ধ হয়ে একলা হাঁটতে হাঁটতে
 দু হাত রেখেছি বুকের ওপর,  পাঁজর জুড়ে বাসা বেঁধেছে ক্ষত
 এক বুক যন্ত্রনা নিয়ে মেঘনাদকে অন্বেষন করেছি বারবার..


তবুও প্রগাঢ় তিমির ভেদ করে হেঁটে চলেছি সুখসন্ধানে

দু-কূল ছাপিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী নদীকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছি
সে চুম্বন করেছে দেহপট
বন্ধু ভেবে ক্লান্ত পায়ে এগিয়েছি তার দিকে

একচিলতে উপশমের আশায় ছুঁয়েছি তার অশান্ত, ক্লান্তিহীন গতি
আঁজলাভরে জল তুলেছি
পরম বিস্ময়ে দেখেছি  জলের গায়ে অসংখ্য ক্ষত বুদবুদ হয়ে আছে।


অভিমান সমাচার
নাহার আলম

চলে যাবার কালে নাছোড় বঞ্চনা
দিয়ে যায় মোহিনী ছায়ার বিদায়ী মায়া।
অচেনা মূঢ়তায় পোড়োবাড়ির মতো
ধেয়ে আসে বিস্তর - হা হা নির্জনতা!
স্বর্গচ্যুত এক চিলতে রক্তমাখা হৃৎপিণ্ড আমার
নতুন দিগন্ত চায়, ফেলে সকল কালবেলা ;
সৃষ্টিতে স্বাধীন--
টিয়াঠুঁটো কলমে আঁকিবুকি করে বেপথু পথিকের
সরল পথ এক, শ্রেণিহীন খোলামেলা।

চুম্বনের মিহি কাঁথায় ঢেকে যায়
বারুদ প্রণয়-কলহের একাল সেকাল ত্রিকাল-ও!
রোজের সামাজিক বিজ্ঞাপনে ঝুলে থাকে তবুও.....
মন খারাপের অভিমানী বাতাস!
ছায়ারা ফেরে না আর--
এবেলা ওবেলা কিংবা শেষ বেলায়ও;
ক্যাকটাস আদরে শুধু পড়ে থাকে মায়াময়
এক মুগ্ধ ছায়া--
নিজেরই কাছে একেলা, সারাবেলা...


চুপকথা
     ----- লিজা লিনকন

মন কেমনের ঘড়িতে চারিদিকে শুধু নীরবতার প্রাচীর
চুপ কথারা বলে চলে মনের কথা
একলা প্রহর থাকে শুধু অনন্ত অপেক্ষায়
এক পশলা বৃষ্টির—
হটাৎ আসা সেই ক্ষণিক ভিজিয়ে দেওয়া বৃষ্টি !
প্রজাপতির রঙিন ছোঁয়াতে দখিনা বাতাসে মিষ্টি গন্ধ
পশ্চিমী আকাশে আগত মেঘ–রোদ্দুরের মিলন ক্ষণ,
গোধূলী লগ্নে শরীরী খেলায় মুগ্ধ করা সৌন্দর্যে অপ্রাপ্তির অভিযোগ কোথায় ?
শয়ে শয়ে মেঘের পালকি চলেছে দুলকি চালে মন দিগন্তে
বিষাদ ঘন নকশি কাঁথা পরে থাকে কিছু বলতে না পারার সীমান্তে।


ঘুঙুর
        ---অনিমেষ মন্ডল

হিম রাত্রি যখন ডুবে যায় এঁদো পুকুরের পাঁকে
হেমন্তের মাঠে মাঠে শিয়ালেরা উলু ধ্বনি দেয়,
    জলাজঙ্গলে কারা যেন হেঁটে যায়
           জোনাকি আলো জ্বেলে।

ঘুমের শরীরে আত্ম শিহরণ ওঠে
চেতনার অলিন্দে দীর্ঘ ছায়া নেমে আসে,
জানালার শিয়রে বসে থাকে কালপেঁচা
বিশীর্ণ হাত পেতে তীক্ষ্ণ নখর ছুঁই।

অনেক হাতড়েও তোমাকে খুঁজে পাইনা
কীভাবে হারিয়ে যাও বোধের গভীরে?

কত দিন ফুরিয়ে গেছে কাচাসোনা রোদে
জীবনের শিকড়ে মাটির ঋণ বেড়ে চলে শুধু
অতলে তলিয়ে গেছে মাছরাঙা ভোর...

বিষাদী রাতে যখন মেঘ নদী ভেসে যায়
            তারাদের সাথে,
নিজেরই ভেতরে হেঁটে চলি কুয়াশার মতো

উতলা আবেশ ছিঁড়ে ঘুঙুরের শব্দ ওঠে
ধীর পায়ে হেঁটে যাও আমারই গোপনে...


পুনর্জন্ম
অর্পিতা ঘোষ

ভাতের আশায়, ভালোবাসা দিলাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে,
সম্মোহনী দৃষ্টিতে আগুন জ্বালায়,
ফুলের সৌরভে আসে কতো মৌমাছি,
তৃষ্ণার্ত বুক নিয়ে, মধু খায়।
আমার চারিদিক ভরে যায় ঝলমলে আলোয়
পেছনে আপনজন ডাকে মুখপুড়ি !
সামনে ঐশ্বয‍্যের করে বড়াই।
হা পিত্তেস করে বসে থাকি একটা মনের,
নীল স্রোত বয়ে যায় শিরায়।
আসেনা কেউ, ধরেনা হাতটা আঁকড়ে–
প্রেম ছিল বিষাক্ত, বোধহয়...
জানলাম, তারা সবাই ছিল শকুন
মাংসের লোভে, প্রয়োজন মিটিয়েছে তখন।

বিদায়ী ভাষণ দিই,
বুকের আগুনে পুড়ে হোয় ছাই,
গায়ে মাখি ভস্ম রেণু, নতুন জন্মের আশায়,
দূরের অনাথ আশ্রমে, শিশুদের মাঝে খুঁজে তা পাই।
প্রতিটা শিশুর জন্মদিন পালন করি, নিজের আত্মজা ভেবে,
নতুন জীবন দিতে চায় ওদের প্রতিটা জন্মদিনে..


বাঘ
---- সমাজ বসু

ইদানিং বাঘেরা ছুটে আসছে জনবসতির দিকে--
ক্ষুধা নিবৃত্তি ছাড়া, মানুষের চেয়েও
বেশি হিংস্র হতে চায় তারা--
সবাই জানুক, বাঘের প্রতি তাদের ভয়টা অমূলক নয়,
আর মানুষ---
নানারকম হিংসার পাঠ শেখায় বাঘেদের--
জাতপাত, জমিজমা আর বিষয় আশয়ের পাটীগণিত,
অথচ--
বাঘেদের গোবর পোরা মাথায় এসব কিছুই ঢোকে না--
অবশেষে স্লেট পেন্সিল ফেলে, সন্ধ্যে নামার আগেই
বাঘেরা ফিরে যায় গভীর অরণ্যে--

তবু--
মানুষের কাছে এক ভয়ানক হিংস্র জন্তুর নাম--
বাঘ।


এর নাম জীবন
             ---- হামিদুল ইসলাম।
                             
শৈশবে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি বাড়ির উঠোনে
অন্ধকার আলোছায়া
মাথা তোলে কৈশোর
এখান থেকেই দানা বাঁধে রঙিন ভাবনা
রঙিন স্বপ্ন    ।।

পেরিয়ে যায় জীবনের দিনগুলো
এরই মধ্যে যৌবন এসে দাঁড়ায় ঘরের বারান্দায়
পৌরুষে তার প্রাপ্তি স্বীকার
কখনো আকাশ গর্জায়
নদীর জলে বান   ।।

বানে ভাসে তরী
পেরিয়ে আসি সমস্ত বাধা
সমস্ত উৎকণ্ঠা
জীবন এখানে খোলামেলা আকাশ
সঙ্গী একজন অপরিচিতা বাংলার চির সুন্দরী   ।।

ওকে নিয়ে স্বপ্নগুলো সাজাই
সংসার গড়বো বলে দুহাত তুলে ডাকি
সে চলে যায় সুদূর সমুদ্র তীরে
তার জন্যে অচেনা বন্দরে দিই পাড়ি
সব ইতিহাস  ।।

ধীরে ধীরে বুঝি এর নাম জীবন  ।।


প্রেমিক বিকেল
     © কোয়েল খাসনবীশ
দেখো,
সেই সিঁদুরে লাল মেঘে
তোমার আমার লুকোচুরি;
বিদায় বেলার সবুজ পাঁকে
লাল শাপলার আঁকিবুকি।
বিষণ্ণ মনে রঙের খেলা
আবছায়া আগামী ;
আলতো সুরে মেঘমল্লার
বেসুরো আমি।


অনিন্দিতা ফিরে এসো
                 মানস চক্রবর্ত্তী 
      -------------------------------------------------
      -------------------------------------------------
                অনিন্দিতা ফিরে এসো
               বসন্ত প্রায় শেষ হতে চলল
                 মানে আরো একটা বছর
         আমাদের সুনন্দার বিয়ে হয়ে গেল
                    আনিসুরের সঙ্গে |
          মুসলমান আপত্তিটা টিকল না |




                    তুমি প্রায়ই বলতে -
  শীতের রাতে গাঁদা সুন্দরী যুবতীর মতো |
অথচ তোমাকে দেখাতে পারলাম না আমার গাঁদার বাগানটা
 চাপা , ঝুমকো , টিরা , রক্তগাঁদা সবই ছিল |




কচি হরিণ শিশুর মতো রোদ খেলা করে   আমার ছাদে
 যুবতীর মতো নরম শরীর নিয়ে
  জ্যোৎস্না আসে আমার বেলকনিতে |
জোনাকি , বৃষ্টি , গোধূলি , বসন্ত বাতাস
  মাঝরাতে স্ত্রীকে ঘুম থেকে তুলে
চুমু খাওয়ার মতো ছুঁয়ে দিয়ে যায় আমাকে | 
         বিশ্বাস করো অনিন্দিতা ,
       আমার রোমান্স আসে না  |



তোমাকে আমি কত ভালোবেসেছিলাম
   তা তো আর বোঝানো গেলো না ,
 কাল তপুদার বাড়ি গিয়েছিলাম
ওর মেয়ের গানের দিদিমণি সুখলতা
 হারমোনিয়াম বাজিয়ে শুনাল- " ঘরেতে ভ্রমর এল গুণগুনিয়ে "
কোনো মেয়ের মুখে রবীন্দ্রসঙ্গীত অনেকদিন বাদে শুনলাম
তাই একটু কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম
                ব্যস ঐ টুকুই
তারপর হাত জোড় করে ভদ্র ছেলের মতোহাসিমুখে আবার রাস্তায় |




ট্রাফিক জ্যামের মতো জীবন মাঝে মাঝে থামতে চায়
যেমন আজ সন্ধ্যায় চেয়েছিল সুখলতার কাছে
বই আর বউ এর প্রতি পুরুষের একটা আকষর্ণ চিরকালের
সাহিত্য সম্মলনে সুন্দরীদের সুললিত কণ্ঠস্বর
             আমি প্রায়ই শুনি
                 আর দেখি
কলেজে পড়তে আসা বাহারী শাড়ি পরা সব মেয়েদের  |
 কিন্তু সবই আজ হট্টগোল বলে মনে হয়




     আমার এই যে নিঝুম বসে থাকা
          অলস শুয়ে থাকা  আর
সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর দিকে নিরব চেয়ে থাকা থেকে
         আমাকে মুক্তি দাও অনিন্দিতা
                তুমি ফিরে এসো |
                   ফিরে এসো | 



১৫ ই আগস্ট
----- ঋতব্রত গুহ

এক টুকরো থেকে দু টুকরো

দু টুকরো থেকে চার টুকরো

বিভাজিত দেশ

বিভাজিত হৃদয়

আমার দেশের নির্নিমেষ ক্ষয় মিশে আছে


প্রতিটি ১৫ ই আগস্টের সকালে ।



নীরব
 ----- মধুমিতা দাশগুপ্ত

আকাশের বুকে মুখ লুকিয়েছিল
নরম তিতির।ওর বুকের ধুকপুকুনিতে
লিখেছিল আকাশের নাম।
আজ সে বুকে অন্য ঝড়।
তিতিরের ঘর ভেঙেছে ঝড়ে।
এপথ থেকে অন্য পথে খড়কুটো
খুঁজে বেড়ায়।পুকুর ঘাটে বসে চাঁদের
আলোয় আকাশ দেখা হয়না।
এখন তিতির নীরব একা।
আজ সব কথা রেখে আসে
পুকুর ঘাটে।ছোঁয়া যাবেনা কোনদিন ।


স্থাপত্য. 
দীপঙ্কর সরকার

হেলে পড়ছে চাঁদ দিগন্তে অপার
ভুল জ্যোৎস্নায় ছুটে যাচ্ছে হাওয়া ।
খিল খিল হাসি যেন মহাফেজখানা
স্তব্ধতা ভেঙে জমাটি আসর এখন
জনতার ভিড়ে ঠিকানা হারিয়ে পথ
খুঁজে ফেরে কারুকার্যহীন নিরলস মগ্নতা ।


  গোপনতা 
    ----- দীপঙ্কর সরকার

সাওযা়র খুলে স্নানের দৃশ্য তোমার
লুকিয়ে দেখেছি বহুবার । তুমি কেমন
জল ঢালো পোশাক বদলাও সতর্কতায়
সাবান ডলো গোপন অঙ্গে আলতো
ছোঁয়া ও হাত ।

তোযা়লে দিয়ে জল ঝাডো় চুলের
কপালের টিপ তুলে লাগিয়ে রাখো
রঙিন দেওয়ালে -- এ সবই লূকিযে. চুরিযে.
দেখেছি আমি মানিনি অজুহাত ।


সমুদ্রিকা........প্রশান্ত গভীর অহমিকা
             ----- সঞ্জয় চক্রবর্তী

থরে থরে জমানো চোখের কোণে ঈর্ষা ।
সমুদ্রিকা পেয়েছি তোমাকে অনেক বৃষ্টি ঝড়ে,
শরীরে শরীরে ।
মন তো কবেই গেঁথে রেখেছ তুতেনখামেনের পিরামিড প্রাচীরে ।
ফ্যারাও সাম্রাজ্ঞী তুমি কল্পনার অমোঘ খেয়ালে ।
জন্মগত মিশরের মানুষী হয়ে উঠতে চেয়েছিলে তুমি । নিষ্ঠুর বাস্তব । স্বখাত-সলীলে,
পড়েছ নিরুপায় তুমি, টোল পড়া গালে ।

মনের খবর ছিনিয়ে নিতে আমি, খাজুরাহো প্রবাহে গা ভাসিয়ে ভালোবেসেছি ।
মনিয়া পুষেছি শিকল ছাড়াই, গভীর নিশিযাপনে থাকে সে আমার মনের কাছাকাছি ।

একবার সিঁদুরলেপা কপালে টিকলি পড়াতে দাও ।
আমার শিহরিত দশ আঙুল তন্ত্রসাধনায় মত্ত ।
জগৎ অভ্রান্ত । লোকারণ্যের ভ্রান্তিতে
আমি হন্যে হয়ে তিরুপতিতে ।
মন পাব মিতে ।
আশার চাতক কঠোর কোমল বাস্তবতার ভিত্তিতে
বেঁচে রয়েছে প্রতীক্ষারত মৃত্যুময় জীবকূলের সারিতে ।


প্রিয়তমা
---- অমলেন্দু কর্মকার

না হয় তোমার গন্ধ
বিষণ্ণ বাতাস হয়ে বয়ে যাক
হৃদয়ের ভাঙা কূল ছুঁয়ে ।

আবার প্রেমের দ্বন্দ্ব
আসন্ন বৃষ্টি র ঘায়ে ধুয়ে যাক
থেকো ফের প্রিয়তমা হয়ে।

আবার ফুটুক ফুল
বিদীর্ণ হিয়ার কুঞ্জে, পায়ে পায়ে
লেগে থাক মাতাল মহুয়া।

আবারও অলি'র কুল
গেয়ে যাক পুষ্পে-পুঞ্জে , প্রিয়তমা
গুঞ্জরিয়া নাচুক মাতিয়া।


    ...এবং স্বদেশ
        ----- সুমেন চৌধুরী।
             
আকাশে কালো মেঘের বিষ,
ঘরে ঘরে মৃতশিশুর মায়ের কান্না,
বস্তিতে এখনো-
রাতজাগা ভাতের প্রার্থনা,
চিলেকোঠায় শুকনো স্তন্যে প্রতিপালিত
এদেশের শৈশব।
স্যাঁতস্যাঁতে নিষিদ্ধ পথে আতর ছিটানো
রাতজাগা পাখিদের ভিড়।
শাল-শিমূল-হিজলের ডালে
কৃষকের ঝুলন্ত দেহ,
মরা মাংসের গন্ধে উন্মাদ
চিল-শকুনের দল।
খাঁ খাঁ রোদ্দুরে চৌচির মাটি,
বাদামী ঘাসে বসে
সুদিনের স্বপ্ন আঁকে আগামীর ভূমিপুত্র।

সোনালী জ্যোৎস্না মুছে দেয় রাতের অন্ধকার,
স্বাধীনতার সূর্য্য উঠে।
বিউগলে বাজে ভারত বন্দনা-
"সারে যাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্থা হামারা"।
গানে গানে "সুজলাং সুফলাং শস্যশ্যামলা" হয়
আমার মাতৃভূমি।

তবুও স্বদেশ...! তবুও স্বাধীনতা...!
সত্যি "ভারতবর্ষ এক আশ্চর্যবোধ,
এক প্রশান্ত অনুভূতি"।     


 শোক প্রস্তাব
   ----- দেবদাস কুণ্ডু

তোমাকে ফিরতে নিতে এসেছিলাম
কমলা হলূদ মেশা এই সন্ধ্যায়
তুমি ফিরে গেছো
কে তা জানতো
এখন সন্ধ্যা তারা রাখবে শোক প্রস্তাব।           


প্রবন্ধ

স্বাধীনতা
 ----  টুলটুল দেবনাথ (শিপ্রা)

আমরা কতটা স্বাধীন
*******************
কী অর্থ বহন করে এই শব্দ "স্বাধীন"?
স্বাধীন অর্থাৎ স্বীয় অধীন অথবা আমি বা আপনি নিজের অধীনে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা অন্যের অধীনে নয়।এই স্বাধীন শব্দের সাথে জড়িত শব্দ স্বাধীনতা। এ শব্দে আমরা নিজের দেশ স্বাধীন এই কথাই বুঝি।নিজের দেশে যখন আমরা নিজেরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারি, নির্দ্বিধায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে পারি, অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারি, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি তখন আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্থক হয়। বস্তুত সেটা দেখা যায় না, তাই সন্দেহ থেকেই যায় আমি বা আমার দেশ কতটা স্বাধীন?

   স্বাধীনতা শব্দটির ব্যাপ্তি বিরাট পরিসরে।কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে পরিবারে সমাজে বা দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন সে কথা কিন্তু সকলেই কম বেশি উপলব্ধি করতে পারি।
   দেশের স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসে এখানে তুলে এনে লাভ নেই। অনেক কষ্টের বলে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এ কোন নতুন কথা নয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীন দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন?
   আমরা সেই স্বাধীন দেশে আছি যেখানে যোগ্যতা মূল্যহীন। সুচারু মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ তার যোগ্য পদ মর্যাদা পায় না, কেন? আমরা স্বাধীন? তাই? দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব কাদের উপর? স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব কারা নিয়েছেন? সাধারন একটা অসুখের বিল লক্ষ  টাকায় দাঁড়ায়, কেন? এটা স্বাধীন দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা?একজন গরিব পরিবারের রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে অনেক হেনস্থার শিকার হতে হয়, কেন? কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সেই রোগী মারা যায়, এবং তারা দায় অস্বীকার করেন, কেন?
   সরকারি স্কুলের শিশুদের দু'জোড়া ইউনীফর্ম দেওয়া হয় বছরে। কিন্তু একবারও বিচার করে দেখা হয় না যে ইউনিফর্ম জোড়া সরকারের তরফে বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা আদৌ বাচ্চারা পড়তে পারবে কিনা? এটা স্বাধীন দেশের সিস্টেম? যদি বাচ্চাদের দু'জোড়া জামা না দিয়ে একজোড়া একটু ভালো কোয়ালিটির দেওয়া হতো অথবা যদি প্রতিটি স্কুলে বাচ্চাদের মাথা পিছু কিছু টাকা দিয়ে দেওয়া হতোঅথবা বাচ্চাদের শরীরের মাপ নিয়ে একটা নির্দিষ্ট দর্জির দোকান থেকে সেই ইউনিফর্ম জোড়া  বানিয়ে দেওয়া হতো তাহলে হয়তো সরকারের ইউনিফর্ম দেওয়ার পেছনে খরচ করা টাকা জলে যেত না। একটি বাচ্চা একজোড়া ইউনিফর্ম দিয়েই কোনরকমে একটা বছর কাটিয়ে দিতে পারত। ওই ঢিলে ঢালা পোশাক পড়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। এবং বাচ্চারা পড়তেও চায় না সেই পোশাক অতঃপর বাবা-মাকে খরচ করে বাচ্চার জন্য পোশাক বানাতে হয়। এত লক্ষ টাকা খরচ করে বাচ্চাদের পোশাক দেওয়ার পর যদি সেটা কাজেই না লাগে তবে সে দেওয়ার মানেটাই কি আর খরচ করার মানেটাই কি?এই অপব্যয় কাজে লাগলে বুঝতে পারতাম যে আমরা স্বাধীন দেশে রয়েছি আমাদের বাচ্চারা স্বাধীন দেশের স্কুলে যাচ্ছে।
   স্বাধীন দেশের সরকারি স্কুলের অনলাইন ক্লাসের রুটিন এগারোটা থেকে একটা আবার তিনটা থেকে পাঁচটা। সপ্তাহে 5 দিন। কিন্তু শিক্ষকদের কোনদিন দেখা যায়নি। শুধু 1-2 পাতা
 জেরক্স মেসেজ আকারে।আর এই মেসেজটা করতে মাত্র 2-4 সেকেন্ড ব্যয় হয়। এভাবে কি পড়া হয়?
 প্রশ্ন হল স্কুল চলাকালীন কত ঘন্টা পড়ানো হয় এবং কিভাবে পড়ানো হয়? এটা কি অনলাইন ক্লাসের নামে প্রহসন নয়? এই হলো আমাদের স্বাধীনদেশের সরকারি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা।

স্বাধীন দেশে অবৈধ প্রেমেও ছার। ডাস্টবিনে স্তূপাকারে অবৈধ প্রেমের পরিণতি। এটাই স্বাধীনতা?
একটা মেয়ে একা পড়তে অথবা অন্যকোন কাজে যাওয়া আসা করার সময় যে ছেরখানির সম্মুখীন হয় সেটা কি ওই দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা? ছেলের সামনে মায়ের শ্লীলতাহানি বাবার সামনে মেয়ের ইজ্জত লুট এটাই তো আমাদের স্বাধীন দেশের চিত্র! ছ বছর বয়সী মেয়ের ধর্ষণ করে খুন এটা কোন স্বাধীন দেশের চিত্র হতে পারে? স্বাধীনতা মানে কি যা ইচ্ছে তাই করা যায়? উশৃংখলতা কে স্বাধীনতার আওতায় পড়ে? যদি না হয় শক্ত হাতে কেন অন্যায় দমন করছে না প্রশাসন?

স্বাধীনতা মানে কি সাম্প্রদায়িকতা? ধর্মের নামে রাজনীতি, স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা, সামাজিক অরাজকতা এসব স্বাধীনতার কোন স্তরে পরে! কেউ কি বলতে পারে?

 স্বাধীনতা হোক  সম্প্রীতি, সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য। স্বাধীনতা হোক ভালোবাসার বন্ধন। স্বাধীনতা হোক মানবতা। স্বাধীনতা হোক ভাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন। স্বাধীনতা হোক  বন্ধুত্ব। সব অরাজকতা দূর করে সবাই প্রাণের টানে মিলিত হোক। শান্তি আর ঐক্য বিরাজ করুক সর্বত্র। শাসক এবং জনগণের মধ্যে গড়ে উঠুক এক নিবিড় বন্ধন। মানুষের সাথে মানুষের আত্মিক বন্ধন ঘটুক। মানুষ মানুষের জন্য এই কথাই সত্যি হোক। স্বাধীনতা নিয়ে আসুক শান্তি হাসিখুশি আনন্দ নিয়ে আসুক বিশ্বাস ভরসা।


গল্প ও অনুগল্প

মাঝখানে কেন বর্ডার

           আবদুস সাত্তার বিশ্বাস

     দেওয়াল ঘড়িতে এখন ভোর তিনটে বেজে পাঁচ মিনিট।এক ঘুম পেড়ে উঠে রাত পেচ্ছাব সেরে এসে টিউব লাইটের আলোয় দেওয়াল ঘড়িটা দেখে নিয়ে ফের শুলো আবু।ও ফের ঘুমানোর চেষ্টা করল।করলে পরে মিনিট পনেরোর মধ্যে চোখ দুটো বুঁজে এল।এই সময় টেবিলের উপর রাখা স্মার্টফোনটা বেজে উঠল। ফোনের তীব্র আওয়াজে আবুর চোখ দুটো খুলে গেল। সে ঈষৎ বিরক্ত হল।এতরাতে আবার কে ফোন করল! নিশ্চয় শালা আলি হবে।মাঝে মাঝে সে হঠাৎ হঠাৎ রাতে ফোন করে।কোন প্রয়োজন ছাড়াই ফোন করে।করে ফোনে শুধু ডিস্টার্ব করে। আর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। আবুর তাই ধারণা, আজকেও সে তাকে ডিস্টার্ব করার জন্য ফোন করেছে।অতএব ফোনটা আবু ধরল না।চুপ করে শুয়ে থাকল।আর ফোনটা বেজে বেজে কেটে গেল।এ কি!এক মিনিট হতে না হতে ফোনটা আবার বেজে উঠল। আবু এতে থেকে বুঝল,শালা আলি তাকে আজ আর ঘুমাতে দেবেনা। আজ আর ঘুমাতে দেবেনা।সে তাই আবারও চুপ করে থাকল।ফোনটা বেজে বেজে এবারও কেটে গেল।এবার দিয়ে ফোন কেটে যাওয়া দু-বার হল।আবু তখন ভাবল,ফোনটা এবার বেজে উঠলে সে ধরবে।আলির নম্বর হলেও ধরবে।না হলেও ধরবে। রাতে পরপর তিনবার কেউ ফোন করা মানে বুঝতে হবে কোন বিপদ সংবাদ সে জানাতে চায়।আবু ভাবতে ভাবতে ফোনটা আবার বেজে উঠল।আবু তখন বুঝে নিল,নিশ্চয় কোন বিপদ সংবাদ কেউ জানাতে চাইছে।ফলে আবু এবার আর চুপ করে  থাকল না।টপ করে বিছানার উপর উঠে বসে সে তাড়াতাড়ি করে মশারির ভিতর থেকে একটা হাত বের করে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা তুলে নিল।নিয়ে নম্বর দেখল।না,এটা আলির নম্বর নয়।এটা একটা অজানা নম্বর।আবু ফোনটা ধরল,"হ্যালো!"
     "কে,আবু ভাইয়া?"
     "হ্যাঁ।"
     "আমি নোরা বলছি।"
     নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আবুর বুকের ভেতরটা হঠাৎ কেমন ধড়াস করে উঠল। এতরাতে বাংলাদেশ থেকে ফোন! কারো কিছু হল না তো!

                 দুই

      বজলুর ইসলাম নামে আবুর এক চাচা বাংলাদেশে থাকেন।কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার জুনিয়াদহ গ্রামে।অনেক দিন আগে তিনি সেখানে চলে গেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও অনেক আগে।গিয়ে সেখানে তিনি বিয়ে শাদি করে সেখানকার নাগরিক হয়ে গেছেন।ভারতে শুধু মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন। বেড়ানো হলে আবার দেশে ফিরে যান।
      যাইহোক, কিছুদিন থেকে তিনি ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের ডাক্তাররা কি অসুখ ধরতে পারেন নি।ফলে তিনি মাস তিনেক আগে একবার চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন।এসে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি এটা জেনে গেছেন যে,তাঁর লাং ক্যানসার হয়েছে।অতিরিক্ত ধূমপান করতেন বলে তাঁর এই অসুখটা হয়েছে।কেন হয়েছে সে বিষয়ে ডাক্তাররা যদিও কিছু বলেননি।তিনি সেটা নিজে নিজে অনুমান করেছেন।যাওয়ার দিন তিনি তাই খুব কেঁদেছেন।তাঁর ক্যানসার হয়েছে।তিনি আর বাঁচবেন না।বিশ্বের পবিত্র দেশ ভারতে তিনি আর আসতে পারবেন না।ভারতের মানুষের সঙ্গে তাঁর আর দেখা হবেনা। তাঁকে দেখে সেদিন বোঝা গিয়েছিল জন্মভূমির প্রতি তাঁর কি যে মায়া আর কি যে টান!কিন্তু ও দেশের নাগরিক হওয়ায় সেখানে তাঁকে ফিরে যেতেই হয়েছে।যেতে মন চেয়েছিল না তবু যেতে হয়েছে।জন্ম ভিটায় সকলে মিলে একসঙ্গে বসবাস করার মতো সুখ যে পৃথিবীতে কোত্থাও নেই। যাওয়ার সময় চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি সেটা বলে গেছেন। এবং ব্যাগে করে এখানকার কিছু মাটি ভরে নিয়ে গেছেন। মারা যাওয়ার পর এই মাটি গুলো তিনি কবরে তাঁর ছিটিয়ে দিতে বলবেন।
      তাহলে কি তিনি মারা গেছেন!নোরা সেই সংবাদ জানানোর জন্যই কি তাহলে এতরাতে ফোন করেছে!আবুর মনে প্রশ্ন জাগল।
     "হ্যালো!"
     "হ্যাঁ নোরা, বলো।"
      এই নোরা হল ওই বজলুর ইসলামের ছোট মেয়ে।আর আবুর হল চাচাতো বোন।
      ধরা ধরা গলায় নোরা বলল,"আব্বা মারা গেছে। খবরটা সবাইকে জানিয়ে দিও।"
      "কি!"আবু চমকে উঠল।
      "হ্যাঁ।"
      "কখন?"
      "ঘণ্টা খানেক হল।"
      আবুর মুখ থেকে তখন আপনি বেরিয়ে গেল,"ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজেউন..."হঠাৎ কোন মৃত্যু সংবাদ শুনলে এই দোয়াটা পড়তে হয়।তারপর আবু হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। ও ফোনটা রেখে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে মশারির ভিতর থেকে বেরিয়ে খবরটা  সকলের কানে পৌঁছে দিল।বাড়িতে কান্না আরম্ভ হয়ে গেল।এখন বাংলাদেশে যাবে কি করে? যেতে হলে যে পাসপোর্ট ভিসা কত কিছু প্রয়োজন।এত তাড়াতাড়ি এত সব তৈরি করবে কিভাবে? হায়!মাঝখানে কেন বর্ডার!


চাকরি
লেখক - শ্রীকান্ত মালাকার

অমর জেঠু গামছা কাঁধে নিয়ে বারান্দায় বসে আছেন।গৌরি জেঠিমা রান্না সেরে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জেঠুকে দেখে অবাক হয়ে বললেন,"কি গো, স্নান করতে এখনো যাওনি।অনেকক্ষন তো হল বাড়ি ফিরেছো"।জেঠিমার কথা শুনে জেঠু থতমত খেয়ে বললেন,"হুম যাচ্ছি"।
---তোমার কি হয়েছে খোলসা করে বলো তো।জানি এখন ব্যবসায় মন্দা তা বলে মন খারাপ করে বসে থাকলেই হবে না সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে।
---কি করে খুঁজবো,বয়স তো কম হয়নি, পরের দোকানে কাজে লাগবো তাও বোধয় পেরে উঠব না।ছেলেটা একটু যদি মানুষ হতো দু'বেলা খাবারের চিন্তাটা কমসে কম দূর হত।
---তুমি ওকে শুধু দোষো কেন?ও তো প্রানপন চেষ্টা করছে চাকরি না পেলে কি করবে! ওর দ্বারা হবে না এটাই শুধু বলে যাও,ওকে ভরসা দাও না কেন?
--- তুমি মাথামোটার মতো কথা বলো কেন ?পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করছে পেয়েছে কিছু ?আমার সঙ্গে দোকানে গেলে একটু হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। এই মাসে হাতে কিছুই নেই ,তাই আজ ব্যাংকে গিয়েছিলাম; দেখলাম সঞ্চয় বলতে 55729 টাকা মাত্র।যা বসে খেলে খুব জোর 8 মাস।
এমন সময় জেঠুর ছেলে মৈনাক দা বাড়ি এলো হাতে একটি খাম নিয়ে। তাতে লেখা আছে পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণীর অস্থায়ী কর্মচারী মানে পিওন হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে।চিঠি পড়া শেষ করে যে জেঠিমার হাতে দিয়ে কোন কিছুই না বলে গামছা হাতে পুকুরের দিকে এগিয়ে গেল জেঠু আগে।জেঠু,জেঠিমার চোখে মুখে তখন খুশির আভাস।
--- এমএ,বিএড পাস করে শেষে পিও়ন এর কাজ করবো তাও আবার অস্থায়ী।
নিচু স্বরে বলতে বলতে মৈনাক দা পুকুরে ডুব দিল।।


দেখাশোনা

         সায়ন্তী সামুই

উচ্চমাধ্যমিক শেষ হতে না হতেই অবনীবাবু, বড়ো মেয়ে অনিতার পাত্র দেখা শুরু করেছেন। অনিতার রূপ-সৌন্দর্য্যে কমতি থাকলেও বুদ্ধি তুখোড়,তবু বাবার কথায় সব ভুলে অগত্যা সব মেনে নেওয়া।

― মা, পড়াশোনায় বেশ ভালো বুঝলাম। তবে--
গাঁয়ের রং, চেহারা আর উচ্চতা আমার সরকারি চাকুরিজীবী ছেলের সাথে মানানসই নয়, বললেন সুবীরবাবু। তবে তোমার বাবা যদি কিছু, ওই আর কি সামান্য টাকা আর গয়নার পরিমানটা বাড়ান ভেবে দেখতে পারি।
ভেবে জানাবেন।

( আট বছর পর )

 মেডিক্যাল ক্যাম্প - এর ভিড় ঠেলে বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালিকা মিনতি চেয়ারে বসালেন, সাথে বললেন,

 ― জেঠু ইনি আমাদের এই ক্যাম্পের উদ্যক্তা,ডঃ এ. মিত্র,খুব বড় ডাক্তার। রোজগারের বেশিরভাগ টাকা এখানে দান করেন। ওনার উদ্যগেই বিনামূল্যে এই ক্যাম্প।

সুবীরবাবু তাকিয়ে দেখলেন ডাক্তারের পোশাকে তার সামনে অনিতা। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলেন।
―  অনিতা বলল, কাকু কেমন আছেন? কি সমস্যা বলুন।


রেহাই   
    ---- রণজিত্ পাণ্ডে

----------------------------------
আমার সঙ্গে যখনই দেখা হত দেখতাম ঘনাদা ভীষণ ব্যস্ত, কারণ জিজ্ঞেস করলেই বলত আর বলিস না  ভাই , পরিবারের কাজে গ্রামের  বাড়ি যেতে হচ্ছে। জমি জমা দেখভাল না করলে হবে?
কখনো ইলেকট্রিক বিল হাতে নিয়ে ছুটছে ,আমাকে  দূর থেকে হাত উচিয়ে চেঁচিয়ে বলত আজ আসছি রে ভাই , পরে কথা হবে ।
              ঘনাদা এমনই ব্যস্ত সংসার নিয়ে ,নিজে স্ট্যান্ড  করতে পারেনি , কখনো ব্যাঙ্ক, কখনো পোস্ট অফিস, কখনোবা পড়শির সাথে সীমানা নিয়ে বচসার জেরে থানার  ডাক সামলানো,ইত্যাদি ইত্যাদি  কাজ নিয়েই ব্যস্ত । ঘনাদা মেজ ভাই, তাকে  সবাই বেশ মেজাজি বলেই জানত। কারণ সে কখনো জ্ঞানত  অন্যায় করতোও না ,অন্যায় সহ্যও  করতো না। কম কথা বলে, অবসরে তবলা ঠুকে, কখনো কখনো একটু আধটু  কবিতা টবিতাও লেখে। লিখে সবার আগে আমাকে দেখাতো, দেখতাম লেখায়  বেশ দম আছে।
                 দাদা  বড় ব্যবসায়ী, অন্য ছোট ভাই দুটো বড় অফিসার। তাদের পারিবারিক দায়িত্ব পালন করার মতো তাদের কোনো সময় নেই। তাই ঘনাদাকেই করতে হয়। ঐ প্রত্যেক পরিবারে একজন যেমন থাকে আর কী!
               তবে গৃহিণীদের ইগোকে গুরুত্ব দিয়ে এক বাড়িতেই ভিন্ন ভাবে বসবাস করত সকলেই । বাবা  বড় দাদার কাছে থাকলেও মা ঘনাদাকে ছাড়েননি।
ঘনাদার আদর্শ আমাকে বেশ অক্সিজেন দিত। বড় অভাবেও ঘনাদা মাথা নীচু করতো না কখনো । যা করেই হোক সম্যক সমস্যা সামলে নিত। বাবার চিকিত্সা বাবদ নার্সিং হোমের বিল, জমির পার্টিশন মামলার উকিল ফি,পারিবারিক দুর্গা পুজোর বড় অঙ্কের টাকা, অন্য কেও না দিলেও ঘনাদা কষ্ট করে  অংশ মতো ঠিক দিয়ে  দিত।তাতে ঘনাদাকে যে আমার কাছে  টাকা ধার নিতে হত ,তা আমি ও সে ছাড়া কেউ টের পেত না। কারণ ও ছিল উচ্চশিক্ষিত ও পানচুয়্যাল।

            ঘনাদার পেশা ছিল  কোয়াক ডাক্তারি।তাতে তার কোনো ভাবে সংসার চলে যেত। বাবার পেনশনের টাকা, গ্রামের জমির ফসলের টাকা, বাবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হত।কারণ পারিবারিক দুর্গা পুজো বেশ ব্যয়বহুল । কোনো ভাইই সেই  টাকা নিত না। তবে ঘনাদার বৌকে তার বাবা যে এক লক্ষ টাকা দিয়ে ছিল ,তা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিল বড়দাদা।সে টাকা আজও পায়নি। ঘনাদাকে সে কথা শুনতে হয় মাঝে মধ্যেই।শুনতে হয় তোমাদের পরিবারের কারও কৃতজ্ঞতা বোধ নেই ,বিবেক বোধ নেই। ঘনাদা শুধু মুখে বলত বকোনাতো  একদিন সব শোধ করে দেব।
           
        ঘনাদা  মাঝে মাঝেই আমাকে  বলত, জানিস আমি  ধীরে ধীরে  ডিপ্রেশনের দোর গোড়ে পৌঁছে যাচ্ছি।
আমি ওর কথা শুনে অধিকার ফলিয়ে  বকেওছিলাম । আজে বাজে সব চিন্তা করো না তো!
সে শুধু মুখ ছোট করে হাসি হাসি মুখ করেছিল, হাসতে পারেনি।

     ঘনাদা ইনকাম বাড়ানোর জন্য প্রায়ই  ইউ টিউবে  অল্প পুঁজির ব্যবসার আইডিয়া দেখত ,আজও  সারাদিন ছুটোছুটির পর বিছানায় শুয়ে  কলম তৈরির মেশিন দেখছিল,
মা এসে জিজ্ঞেস করল  ,ঘুমোচ্ছিস নাকি রে? হঠাত্ সেই শব্দ শুনে বলল, না গো মা  ,কেন? কিছু বলবে?
  বলছি, তোর বাবা তোকে ডাকছে।
ঘনাদা বলেছিল,চলো আসছি।
ঘনাদা গিয়ে দেখল যে সেখানে মা ও বড়দাদা খাটে বসে রয়েছে   বাবা  বিছানায় শুয়ে ।  ঘনাদা ঘরে ঢুকতেই বাবা বললেন ,শোন গ্রামের বাড়ির জমি তোর দাদা কে লিখে দিচ্ছি। মা পরামর্শ মতো পাশ থেকে বলেছিল, বড় ছেলের দায়িত্ব তো বেশি, তোর দাদুও  তোর বাবাকে দিয়েছিল।বড়দাদার মুখে কোনো রা শব্দটি নেই ।  ঘনাদা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে,   একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে শুধু  বলেছিল,   "রেহাই"।



"সাডেন্ ভিসিট্ টু অ্যা ওয়ান্ড্যার ল্যান্ড্"
                  ----- সুমন ঘোষ

তড়িঘড়ি করে উঠতে বাধ্য হল সুদীপ, আর উঠেই মুখে একটা বিরক্তির ভাব; ধূর! এতো সকাল সকাল কে ডাকছে...'মা', ও 'মা', বেশ কয়েকবার বলতে গিয়েও বলতে পারল না,শুধু গোঙানির আওয়াজ বেরোলো মুখ থেকে।  হঠাৎ কি হল গলার, সত্যি কাল অতগুলো আইসক্রিম না খেলেই হতো। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করেনি আশপাশের পরিবেশ টা, একি! কোথায় শুয়ে আছে সে আর মা, বাবা সব গেলো কোথায়? আজ তো ওদের অফিস নেই। যাইহোক এরা কারা? এই বলে নামতে গিয়ে আরও অবাক, কোথায় তার মার্বেল পাথরের মেঝে,সব যে শূন্যতা! ভীষণ বিস্ময়ে চিৎকার করতে যাবে,পারল না। আর সামনের রাখা বড়ো স্ক্রিনে নিজের শরীরটা দেখার পর আঁৎকে উঠল সুদীপ। না,না এ কিভাবে সম্ভব, এ হতে পারে না,একবারেই না। রাগে; অভিমানে,বিরক্তিতে কাঁদতে শুরু করল, কিন্তু আবারও গোঙরানির আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরল না। এতক্ষণে সকালে ঘুম ভাঙানোর আওয়াজটার কথা খেয়াল হল সুদীপের।দেখল বাঘের বাচ্ছার মতো দেখতে একটা অদ্ভুত এক প্রাণী  অক্সিজেনের সিলিন্ড্যার আর মাস্ক হাতে দাঁড়িয়ে একবারে ঠিক তার পাশেই।  পিপিই কিটের মতো কি যেন পরে আছে,চোখে চশমা,হাতে গ্লাভস্ এর মতো কিছু একটা আর বারবার কি একটা ভাষায় বোঝাতে চাইছে আমায় অক্সিজেন মাস্কটা পরে নেবার জন্য ঠিক যেমনটা মা করত, সকালে ঘুম থেকে তুলে নিজেই ব্রেকফ্রাস্ট টা বেডরুমে নিয়ে আসত আর বলত উঠ খেয়ে নে। ততক্ষণে সুদীপের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে,তাই দেখে ওই অদ্ভুত প্রাণীটি অক্সিজেন মাস্কটা পরিয়ে দিয়েই কোথায় একটা চলে গেলো। সুদীপের কোনোকিছুই বোধগম্য হল না, ভাবল যায় একটু পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখি। রুম থেকে বেরোতেই আরও অবাক, ঠিক পরেশ জেঠুর গরুটার মতো দেখতে একটা প্রাণী। হাতে কি একটা যন্ত্র, সামনে প্রোজেক্টার আর ল্যাপটপের এর মতো কিছু একটা নিয়ে কি একটা ভাষায় কথা বলছে, আর সামনে অভিকদের বাছুরছানা মুঙলি আর অতনু দের জঙলি র মতো দেখতে প্রাণীগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছে সব। যেন কোনো বিশেষ বিষয়ে ক্লাস চলছে ওদের, তা হঠাৎ সুদীপ কে দেখে ওরা সবাই ভয় পেয়ে গেল আর নিজেদের মধ্যে কি আলোচনা করতে শুরু করল। তা শুনে যে অদ্ভুত প্রাণীটি ওদের শেখাচ্ছিল সে বেশ একটু রেগে গিয়ে বকা দেবার মতো করে কিছু একটা বলল আর সবায় আবার পড়ায় মন দিল। বেশখানিকটা অবাক লাগলেও বেশ ভালোলাগতে শুরু করল সুদীপের, যেন স্বপ্নে দেখা কোনো কল্পের দেশ। সুদীপ কিছু একটা ভাবছে,হঠাৎ তাকে একপ্রকার ঠেলে দিয়ে অনেকটা জলহস্তীর মতো দেখতে প্রাণীটা দৌড়াল, আর কচ্ছপের বাচ্ছার মতোটা তার পিছু পিছু। এদিকে একটা রুমে আবার একটা বড়ো স্ক্রিনে সবাই একসাথে বসে দেখছে কি সব। সুদীপ উঁকি দিয়ে দেখল কাঠবেড়ালী,শিয়াল,রাজহাঁস,গন্ডার আরও সবপ্রাণী গুলো হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। আর স্ক্রিনটার দিকে তাকাতেই দেখতেই বেশ অবাক হল, সেখানে মানুষ মাস্ক পড়ে ঘুরছে,কেউ আবার না পড়ে; চারিদিকে চিৎকার,হাহাকার করছে সবাই। আগুন লেগেছে কোন একটা জায়গায়,ভূমিকম্প হচ্ছে আর বড়োবড়ো বাড়ি গুলো একে একে ভেঙে পড়ছে; অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ, কিন্তু এরা সেগুলো দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। এবার ভীষণ রাগ হলো সুদীপের, হ্যাঁ তার পৃথিবীর মানুষ গুলো মারা পড়ছে একে একে আর এরা হাসছে, কার্টুন হচ্ছে নাকি! সুদীপের মনে হল একটা কিছু হাতের কাছে পেলে স্ক্রিনটাই ভেঙে দিত সে। এদিকে আবার তুমুল কান্ড বেঁধেছে, হঠাৎ সাইরেনের মতো কি একটা বাজল আর হাতির মতো দেখতে প্রাণী গুলো দৌড়দিল একটা রুমের দিকে, মনে হল এমারজেন্সি কোনো ঘটনা ঘটেছে। তারপরেই একটা বড়ো অ্যাম্বুলেন্সের মতো কিছু একটা এল, আর তার থেকে পুরোটাই পিপিই কিটের মতো কিছু একটা পরে সিংহের বাচ্ছা গুলো নামল গলায় কি এক ঝোলানো,ঠিক যেন তার বাবার স্টেথোস্কোপটার মতো। আর তারা তার দিকে দৌড়ে আসছে, যেন তাকে বেঁধে নিয়ে যাবে। সুদীপ এবার কাঁদতে শুরু করল, আর বলতে লাগল মেরো না,মেরো না আমায়,ছেড়ে দাও,আমি যাব না কোথাও। ঘুমটা ভাঙল মা এর গলার আওয়াজে, " কি রে চিৎকার করছিস কেনো,কে নিয়ে যাচ্ছে তোকে?" ততক্ষণে পড়ার টেবিলে ঘর্মাক্ত অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করল সুদীপ আর সামনে খোলা চার্লস ল্যাম্বের " Dream Children: A Reverie".     


কাঠুরিয়ার দেশ
       ----- আবদুল রাহাজ

দেশটার পুরো অংশটাই ছিল ঘন বনে আবৃত হলে সেখানে কাঠুরিয়ার বসবাস করত। দেশের ছোট ছোট জনপদ বা গ্রামগুলির মানুষ অত্যন্ত প্রান্তিক। বনের কাঠ কেটে তা বেছে জীবন জীবিকা উপার্জন করতো সংসার চালাতো। দেশটিতে মানুষগুলো ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে পারস্পরিক মেলবন্ধনে বসবাস করত এই দেশটিতে একটা দারুণ ব্যাপার ছিল বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ও বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করতো ফলে এই দেশটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য জীবনযাত্রা ছিল অতীব মেলবন্ধন। দেশটির মধ্যে একটি বড় জনপদ বা গ্রাম ছিল নামটি তার সূর্যপুর এখানে দেশের বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করত তারা ছিল বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন ভাষাভাষী হলেও সবাই মিলেমিশে বসবাস করত। জনপদ গ্রামীণ আশেপাশের পুরোটাই ছিল ঘন জঙ্গলে আপনারই তো আবৃত। আর পূর্বদিকে ঘন জঙ্গলের ভিতরে ছিল একটি নদী নাম তার মধুমতি সে যেন প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে হেলিয়ে দুলিয়ে বয়ে চলেছে। ঘন বনের মধ্য দিয়ে একটা সরু রাস্তা চলে গেছে রাস্তাটা ছিল মেঠোপথ রাস্তার যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা ছোট্ট বাজার ছিল গ্রামের লোকেরা সেখানে গিয়ে  নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও কাঠ হাটে নিয়ে গিয়ে বেঁচতো এই ছোট্ট হাট-বাজার টা তাদের কাছে ছিল অত্যন্ত প্রিয়। ঘন বনের মধ্যে এক জায়গায় বিস্তৃত মাঠ ছিল সেখানে সবাই আনন্দের সহিত চাষবাস করতো। তারা সবাই বেশ সুখে শান্তিতে বসবাস করত ওই গ্রামে। গ্রামটিতে প্রান্তিক মানুষের বাস বেশিরভাগ মানুষ বনের কাঠ সংগ্রহ করে আর তা বেঁচে সংসার চালান। সকাল হলে বাড়ির পুরুষেরা ছেলেরা পান্তা ভাত খেয়ে চলে যেত গভীর জঙ্গলে কাঠ কাটতে অনেক বাড়িতে আবার কেউ চিন্তা করতেন তারা ফিরবে তো এই আশায় বাড়িতে যে যার কাজে নিযুক্ত হয় বেলা শেষে পরিজনেরা বাড়িতে ফিরলে মুখে চওড়া হাসি আবার কেউ না আসলে গোটা গ্রাম শোক স্তব্ধ হয়ে থাকতো। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা বাড়িতে বাবা-মার কাছ থেকে ছোটবেলায় প্রকৃত শিক্ষা লাভ করত তারপর তারা গ্রামের সৌন্দর্য ঘন বনের আবৃত মায়াময় অপরূপ মায়াবী পরিবেশ দেখে  তারপর মধুমতি নদীতে তৃপ্তি ভরা বাতাস বাতাস স্নান সবই যেন শৈশবের বেড়ে ওঠার খেলার সাথী তাদের খুব আনন্দে তাদের দিন কাটতো। তারপর একটু বড় হলে চলত বাবা-কাকার সাথে গভীর বনের কাজের সন্ধানে যাওয়া কাঠ কাটা এভাবেই চলে আসছে তাদের ধারাবাহিকতা যে আজও তাদের কাছে চির বন্দিত হয়ে আছে। যেখানে নিজের নিজের নিজের ভাই বোনের মত মিলেমিশে থাকতো এরপর একসাথে সারা জীবন একই সাথে বসবাস করে। কাঠুরিয়াদের উৎসব ছিল নামটি তার ইতিকথা সে যেন দেখার মত।সেই দেশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সেখানে এসে মিলিত হতো সর্বধর্ম নির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে উৎসবটি সুন্দরভাবে পালন করত। এইভাবে কাঠুরিয়া বিস্তৃত ঈদের দিনের পর দিন ঘন আবৃত অরণ্যে কুলে বসবাস করছে এই সমস্ত মানুষ। তারপর একবার এক বছরে নেমে এলো ঘোর অনাহার দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে শুরু করল মৃত্যু মিছিল অনেকে সজন পরিজনদের হারাতে শুরু করে সবাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদে আর বিদায় দেয় তারপর দেখতে দেখতে জনমানব শূন্য হওয়ার মতো অবস্থা এরপর আস্তে আস্তে সেই দুর্ভিক্ষ কয়েক মাস চলার পর কাঠুরিয়া দেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল বেশ কিছু দিন পর সূর্যপুরে কাঠুরিয়া পরিবারের একটা মায়ের কোলে জন্ম নিল ফুটফুটে সন্তান তারপরে আস্তে আস্তে কাঠুরিয়া দেশে অনাহারে দুর্ভিক্ষ কেটে গেল তার নামটি ছিল শুভ আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরল কাঠুরিয়া দেশ শান্তিতে ফিরলো চারিদিকে আসলো সুখের দিন মধুমতি নদী ফুলে-ফেঁপে উঠে রাপন রূপ প্রকাশ করে চলেছে। ঘন অরণ্য নতুন পাতার সমাহারে সবুজের ঘনঘটায় এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে চারিদিকে এদিকে মাঠের ফসল প্রকৃতি হেলায় দুলায় বেড়ে উঠেছে সবমিলিয়ে কাঠুরিয়া প্রদেশ সে এক শান্তির আবহ তৈরি হয় ও পাড়ার শহরের নারেন সরেন ভুটিয়া ইসলাম দা একসাথে ফুটবল খেলে নদীতে স্নান করে জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে আর জানান দেয় কাঠুরিয়া দেশ সর্ব ধর্মের এক মিলন মহান স্থান যা সবার মধ্যে বিরাজ করে আছে। কাঠুরিয়া দেশের এই ঘনবন অরন্যের মধ্যে একটা বুড়ি বৃদ্ধা বসতি এলাকা থেকে ঘন বনের মধ্যে থাকতো বয়স প্রায় নব্বই ছুঁয় ছুঁয় গ্রামের মানুষ সবাই তার নাম দিয়েছিল কান্ত বুড়ি।বয়স হওয়ার কারণে চামড়া গুলো সব গুটিয়ে গেছে আর শরীরটা হয়ে গেছে হালকা ছিপছিপে। কাঠুরিয়া বাসীর কাছে জানা যায় যে এই এত বড় জনপদে এই বুড়ি বহুকাল ধরে এখানে বসবাস করছে। একবার কাঠুরিয়া দেশেতে ফুটফুটে সন্তানটি জন্মেছিল সে বড় হল হয়ে বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে সেই বুড়ির বাড়ির সামনে দাঁড়ালো সে মনে মনে ভাবল এই বনের ভেতর কি আবার ঘর করে থাকে তার কি ভয় লাগে না। তখন বিকাল বেলায় সূর্যের দুর্বল  ঘন বন ভেদ করে পড়ছে এমন সময় সেই ছেলেটি বলল কে গো ওই ঘরে এই বনে একা একা থাকো তোমার ভয় করে না তখন এক বুড়িমা ক্ষীন শরীর নিয়ে হাতে একটা লাঠি নিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো বলল আমাকে তুমি চেনো আমি যে কান্ত বুড়ি ও আচ্ছা তুমি ভয় পেয়ো না এসো আমার ঘরে একটু হেসে বলল তুমি আমার এখানে আসবে আমি তোমার গল্প শোনাবো আচ্ছা সেই ছেলেটি অবাক চোখে দেখল তার গো তার ঘরে সব পুরানো জিনিসে ভর্তি তখন বুড়ি মা বলল কি দেখছ বাছা আজকে তুমি যাও কাল এসো কারণ এখনই সন্ধ্যা নেমে আসবে তখন সেই ছেলেটি ঘন বনের মধ্যে দৌড় দিয়ে বাড়ি চলে গেল তার পরের দিন সকালবেলা তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে বলতেই তারা ভয়ে ভয়ে বলল তুই যা বাবা আমি যাব না। তারপর দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়ার পর একটু শুয়ে রৌদ্রে তীক্ষ্ণ তা উপেক্ষা করে তখন প্রায় পড়ন্ত বিকেল সেই সময় সেই ছেলেটি চলে গেল বুড়িমার বাড়িতে তখন বলল বুড়িমা ও বুড়িমা বাড়িতে আছো আমি এসছি তো তারপর বুড়ি মা বলল ও ও এসো এসো এখানে বসো। দাঁড়াও তোমার সাথে একটা গল্প করি বুড়ি বললো অনেকদিন আগে এখানে যে মধুমতি নদী দেখছো সেখানে আগে তার দুই ধার পার দিয়ে বসতি ছিল আমাদের বাবা দাদারা ছিল এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব তখন এসব জায়গা ছিল ধুধু ময়দান মরুভূমির মতো তারপর বেশ কয়েকদিন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে করতে হঠাৎ একদিন ঝড় বৃষ্টি শুরু হল তারপর মধুমতি নদীতে আমাদের সব সলিল সমাধি হয়ে গেল সেদিন আমি বাড়ির বাইরে ছিলাম ওই যে বন আছে ওই বনের ভিতর কাঠ ভাঙতে গিয়েছিলাম তারপর দেখি জলের স্রোত সঁ সঁ করে আসছে তখন আমি একটা বড় গাছের উপর আশ্রয় নিই তারপর বেশ কয়েকদিন থাকি তারপর আস্তে আস্তে জল কমায় চারিদিকের চারিদিক ভূমিতে ছোট কয়েকটা বছর কয়েকদিন পর সেখানে দেখা গেল ঘনবন তৈরি হলো একবার অনেক মানুষ এখানে এসে বসবাস করতে লাগল দেখতে দেখতে জনবসতি তৈরি হলো আস্তে আস্তে সব দুঃখ বেদনা চেপে অতীতকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকে এই গভীর বনে । তারপর ছেলেটি বলল এই হল বিস্তৃত ঘটনা তারপর বুড়ির শরীরটা যেন খারাপ লাগছে একটু শুয়ে পড়ে ঢলে পড়লেন পড়লেন মৃত্যুর কোলে চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে যেখানে তার আর দুঃখ-বেদনা তার কাছে আসবে না আসবে শুধু শান্তি আর শান্তি। এই বলে চলে গেল বুড়িটি তারপর এই ছেলেটি সেখান থেকে দৌড় দিয়ে বাড়ি ফিরে এলো ‌। এরপর বুড়ির সমাধি থেকে ঘন ঘন বিস্তৃত এই দেশ বা গ্রাম সূর্যপুর হয়ে উঠল প্রকৃতির মহামায়া সৌন্দর্যের অধিকারী যা প্রকৃতির বাড়িতে রয়ে গেল উদ্জ্বল নক্ষত্রের প্রতীক হয়ে রইল কাঠুরিয়া প্রদেশের প্রতিটি মানুষের ।


মেয়ের_জন্মদিন_আর_বৃদ্ধাশ্রম
অর্পিতা_ঘোষ_চক্রবর্তী

আজ তৃষার জন্মদিন, পঁচিশ বছর পূর্ণ হল তৃষার,
কিভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল পঁচিশ টা বছর ,এইতো গত বছর মাঘ মাসে তৃষার বিয়ে হয়েছে,
তার আগের প্রায় দশটা বছর শুধু তৃষা আর আমি দুজন দুজনের জন্যই বেঁচে ছিলাম, তৃষার বাবা বারো বছর আগে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান । তারপর আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল আমার ওই মেয়ে তৃষা, কষ্টের মধ্যেও বেশ ভালোই ছিলাম দুজন দুজনের জন্য, তৃষার বাবার পেনশনের টাকায় সংসার চলত আমাদের ,অভাবের সংসার । আজকালকার দিনে আট হাজার টাকায় কি হয়? সংসার খরচ, মেয়ের পড়াশোনা, সব মিলিয়ে মোটামুটি সুখেই ছিলাম আমরা।

তৃষার বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন প্রতিবছর তৃষার জন্মদিনের আগের দিন থেকেই তোড়জোড় চলত, ওর বাবা প্রতিবছর তৃষার জন্ম দিনের আগের দিন ছুটি নিতেন, সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়তাম, সুইমিংপুল ,ইকো পার্ক ,চিড়িয়াখানা ,জাদুঘর সব ঘুরে কোন রেস্তোরা তে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেলে বাড়ি ফিরতাম, তারপর সন্ধ্যেবেলার থেকেই বেলুন ফোলানো চলত, ঠিক রাত বারোটায় ঘুমন্ত মেয়েকে টেনে তুলে কপালে চুমু খেয়ে অনেক গুলো চকলেট দিয়ে হ্যাপি বার্থডে জানাতেন ওর বাবা আর আমি,
আর পরের দিন সকালে মন্দিরে পুজো দিয়ে এসেই আমি নিজের হাতে কত কি রান্না করতাম, আমার হাতের পায়েস মেয়েটা খুব ভালোবাসে, দুপুরবেলায় সেইসব রান্না, পায়েস তৃষার সামনে রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করতাম, আর সন্ধ্যেবেলায় কেক কাটতো তৃষা, রাতে বাইরে খাওয়া দাওয়া ।

ওর বাবা যে বছর মারা গেলেন সে বছর ওর জন্মদিন করিনি, পায়েস রান্না করে দিয়েছিলাম শুধু, তার পরের বছর থেকে আমরা মা আর মেয়ে মিলে ঠিক আগের মতই সব করতাম, আর তার সাথে তৃষার বাবার উপস্থিতি ভীষণ মিস করতাম ।
তৃষার বিয়ের পর এবছর প্রথম জন্মদিন আর আমি এই বৃদ্ধাশ্রমে বসে বসে স্মৃতিচারণা করছি,,,
নানা বৃদ্ধাশ্রমে আমার মেয়ে পাঠায়নি আমাকে, আমি ইচ্ছা করেই এসেছি, জামাই বাড়িতে কি আর বেশিদিন থাকা যায় বলুন?
চার মাস আগে আমার অসুস্থতার খবর পেয়ে তৃষা আর জয়ন্ত ছুটে আসে, তৃষা কান্নাকাটি করে আমাকে জোর করে ওর শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়, আমি একদম যেতে চাইনি, কিন্তু আমার মেয়ে আমার বারণ শোনে না, অগত্যা আমি তৃষার সাথে ওই বাড়ি যায় । তৃষার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুব ভালো মানুষ, এক মাস পর আমি সুস্থ হয়ে যায় খানিকটা, তৃষা বলে "মা তোমাকে আর একা থাকতে হবে না, তুমি আমাদের সাথেই থাকবে"

আমার তো তৃষা ছাড়া আর কেউ নেই তাই আমি রাজি না হলেও আরো কিছুদিন থেকে যায় ওর শ্বশুর বাড়িতে ।
হঠাৎ একদিন রাতের বেলায় হালকা আওয়াজ কানে ভেসে আসে, ভালো করে শোনার চেষ্টা করি, না না আমি কান পাতি নি ! শুধুই শোনার চেষ্টা  করি, জয়ন্ত আর ওর বাবা-মা এরমধ্যে আমাকে নিয়ে কথাবার্তা চলছে, আমিও বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম ঠিকই বলছেন ওনারা,
জামাইয়ের বাড়িতে শাশুড়ির থাকাটা মানায় না।
দুদিন পরে আমি তৃষার কাছে বায়না করি, বলি সামনে যে বৃদ্ধাশ্রম টা আছে আমাকে ওখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তৃষাকে অন্য কোন বিষয়ে বিন্দুমাত্র আঁচ করতে দিইনি,
তৃষা রেগে যায় আমার ওপর, আমি ওকে বুঝিয়ে বলি জামাই বাড়িতে শাশুড়ির থাকতে নেই আরো অনেক কিছু, তৃষা তাও রাজি হয়না,
বৃদ্ধাশ্রম এর কথা শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, বলে  "মা, আমি মেয়ে বলেই কি আমার কোনো দায়িত্ব নেই তোমার প্রতি?"
"আমি মেয়ে বলেই কি আমার এই বাড়িতে থাকতে তোমার লজ্জা?"আরো অনেক কিছু, আমার মেয়ের সংসারে আমার উপস্থিতিতে যদি অশান্তি হয় সেই ভয়ে আমি এক প্রকার জেদ করেই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসি।

বৃদ্ধাশ্রমে আসার আজ তিন মাস পর তৃষার জন্মদিন, পুরানো স্মৃতি রা ভিড় করছে চোখের সামনে, ছোট্ট তৃষার আধো আধো কথা বলা, ওর হাসি, ওর প্রথম মা ডাক, সব এক এক করে মনে পড়ছে।
আমার মেয়েটা হয়তো আজ খুব ব্যস্ত, সমস্ত কিছু সেরে আজ একবার হলেও ও ঠিক আসবে আমার কাছে, এই আশাতেই একটুখানি পায়েস বানিয়ে নিয়ে বসে রয়েছি ।

আচ্ছা, যদি একটা ছেলের বাবা মাকে দেখাশোনা করা বৌমার দায়িত্ব হয় তবে একটা মেয়ের বাবা মাকে দেখার দায়িত্ব কার?
বৃদ্ধাশ্রম এর এই ঘরে বসে এটাই আমার একমাত্র প্রশ্ন।



ভিন্ন স্বাদের স্বাধীনতা
কবিরুল ( রঞ্জিত মল্লিক )
   
           মালদার বামনগোলার অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে সৌমিতা ছোট থেকেই স্বাধীনভাবে  বাঁচতে শিখেছে।

       শ্বশুড়বাড়িতে এসেই এই প্রথমবার হোঁচট খেল। হস্তক্ষেপ হল স্বাধীনতার। স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছাটাই যেন মাটি হয়ে গেল। কোথাও যেন একটা কিছু না পাওয়ার খেদ।

      স্বাধীনতা যে পরম সুখ সেটা সৌমি বুঝেছিল। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটা পড়লেই বুকের মধ্যে একটা স্বাধীনভাবে বাঁচার  দামামা বেজে ওঠে।

       আজ শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখতেই মনে হল যেন সেটা চোট পেল। মনের  মধ্যে বেড়ে ওঠা " চেতনার নজরুল "  যেন শ্বশুড় বাড়ির ভারী  গম্ভীর আলমারির পিছনে লুকিয়ে পড়ল। দম বন্ধ হয়ে ছটফট করতে শুরু করল।

      স্বামী মস্ত বড় এমএনসির কর্ণধার হওয়াতে বিভিন্ন জায়গাতে যেতে হয় আর সেই সুবাদে পার্টিতে অ্যাটেণ্ড করতে হয়।  সেই জন্য সৌমিতার অনেক সমীকরণ বদলে গেল।

       শ্বশুড়বাড়িতে এসেই ফতোয়া জারি হল। সৌমিতার শাড়ি পড়া চলবে না। জিনস্ টপ পড়তে হবে। শাঁখা সিঁদূরতো একদমই নয়। ঐগুলো এখন নাকি ব্যাক ডেটেড। অন্তর্বাসের ফিতেটাও একটু উন্মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণ খাওয়া ছেড়ে কন্টিনেন্টাল ধরতে হবে। শুধু তাই নয় বর অর্ক যেহেতু পার্টিতে যায় সেইজন্য সৌমিকে মদ্যপান করতে হবে। শ্বশুড়বাড়িতে মাঝে মাঝেই  মদের আসর বসে। আর সেই জন্য সৌমিকে এই সব ব্যাপারে একটু সড়গড় হতেই হবে।

     সব শুনে সৌমির তো দম বন্ধ হবার মত অবস্থা।এই নিয়ে অর্কের সাথে অশান্তি কম হয়নি।

      বিয়ের পর বেশ কিছু মাস কেটে গেছে।
     ....... ......   ......   ........ ..........   
     
              আজ মিস্টার খাস্তগীরের বাংলোয় বিশাল বড় পার্টি। বিদেশ থেকেও নাকি অনেকে আসছেন। শ্বশুড়বাড়ির সকলেই গেছে। সৌমিকে কেউ নিয়ে যায়নি।ও নাকি আনস্মারট্। ঐ সব জায়গায় একদম বেমানান।

      এদিকে সন্ধ্যের  আগেই মিসেস খাস্তগীরের ফোন। সৌমিকে আসতেই হবে পার্টিতে। মিসেস খাস্তগীর সৌমিকে যে ভীষণ স্নেহ করেন।

      সন্ধ্যের পর পরই পাট ভাঙ্গা শাড়ি আর খোপায় বেল ফুলের মালায় নিজেকে মুড়ে জাইলো গাড়িটার স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে সৌমির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব।

    শ্বশুড়বাড়ি সকলেই অবাক। বর হাঁদার মতন চেয়ে চেয়ে সৌমিকে দেখছে। একটা পর একটা বিদেশী প্রতিনিধিদের সাথে সৌমিতা কখনো ইংরাজী কখনো স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলছে। সৌমি যে এত সব করতে পারে সেটা কেউই ভাবতে পারেনি। সবাই থ হয়ে গেছে।

                   সৌমিতার চোখে মুখে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার উচ্ছ্বাস। একটা খুশীর জোয়ার।

       একটু পরেই ধুতি পাঞ্জাবী আর শাড়িতে সুসজ্জিত হয়ে খাস্তগীর দম্পতি উপস্থিত হলেন। উনাদের এই পোষাকে দেখে সকলেই স্তম্ভিত। শুধু তাই নয়। এই প্রথম পার্টিতে সুরা বর্জন। খাবারেও বাঙালীয়ানার ছোঁয়া।

       নেপথ্যের কারিগর সেই সৌমি। সৌমিতায় খাস্তগীর দম্পতিকে এইসব আয়োজন করতে বলেছেন।

      মিসেস খাস্তগীর সৌমিকে একটা গান গাওয়ার অনুরোধ করতেই সৌমি স্টেজে উঠল। আর সবাইকে অবাক করে শুরু করল -

     " আমি বাংলায় গান গায়
       আমি বাংলার  ...... ........
         ....... ....... ...........
        ........   ........    ...........
       আমি আমার আমিকে ...... .......
        ........ ...........
       ........ খুঁজে পাই
      ......... ........... ......... ........... "

        সৌমির চোখে মুখে একটা স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বাদ। ভিতরের " চেতনার নজরুল " টা যেন বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে এসেই  ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। সবাইকে সে শোনাচ্ছে স্বাধীনতার বাণী ,  মাথা উঁচু করে চলার উপপাদ্য।

       পার্টি শেষ হতেই জাইলো গাড়ির চাকায় শ্বশুড়বাড়ির সকলের অহংকারকে পিষে ফেলে হুস্ করে বেরিয়ে গেল প্রেসিডেন্সীর সেরা ছাত্রী সৌমিতা সেন (চৌধুরী)।
      .....    .......   .......     ........

        দেখতে দেখতে স্বাধীনতা দিবস চলে এল। সৌমিতার পাড়ার ক্লাবে এবার বিশাল বড় অনুষ্ঠান। সৌমি ঠিক করেছে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।
                                  ..   .....   ...... ........
       
       স্বাধীনতা দিবসের দিন সৌমি প্রভাতফেরীতে  পা মেলেছে। রক্তদান শিবিরেও রক্তদান করেছে। তারপর  স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশের এক বিখ্যাত কবির কবিতাও আবৃত্তি করেছে।

        সন্ধ্যেবেলায় শহীদ ক্ষুদিরামের জীবনী অবলম্বনে এক সুন্দর নৃত্যনাট্যও পরিবেশন করেছে।
               " এক বার বিদায় দে মা  .......   .........
                হাসি হাসি পড়ব ফাঁসি দেখবে ভারত বাসী
                             ........     ......  .........       "

      সৌমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখেছে। এইভাবে বাঁচার মধ্যে ও একটা আলাদা রসদ খুঁজে পাই।যেটা ওর হিমোগ্লোবিনকে চাঙ্গা করে।

       শ্বশুড়বাড়িতেও আর তেমন অশান্তি  নেই। সৌমির বর অর্ক সৌমিকে বেশ সমীহ করে চলেন।
                    .......   ......    ......  ............
     
               আজ বিশ্বকর্মা পুজো। বসতির ছেলে গুলো সকাল বেলায় সৌমি আন্টি বাড়িতে এসে হাজির। ওদের পড়নে ছেঁড়া প্যান্ট , মুখে বুরুণ্ডির ক্ষুধা । কিন্তু চোখ ভিসুভিয়াসের মতন জ্বলছে। ওদের হাতে ঘুড়ি লাটাই।

               সবাইকে নিয়ে সৌমি ছাদে উঠল। হাওয়ায় ওর চুল গুলো উড়ছে।

                     লাটাই হাতে ধরে একটার পর একটা ঘুড়ি ছেড়ে দিল।

                  ঘুড়ি গুলো কি সুন্দর আকাশে উড়ছে। হাওয়ায় দুলছে। ঠিক সৌমির মতন। বাঁধনহীন। তাই  দেখে বসতির ছেলে গুলোর  দারুণ  উল্লাস।

               " ভো কাট্টা ! ভো কাট্টা !:
      স্বাধীনতার স্বাদ সত্যিই বড় মধুর।



নিখিলের প্রাপ্তি
     ---- সুমনা রায়(রুচিরা)

বহুদিন হলো, জয়া আর নিখিলের সুখশয্যায় দেওয়াল উঠেছে। সময়ের আবডাল কত কিছুই না বুঝিয়ে দিয়ে যায়। নাহ্, নিখিল আর পেরে উঠছে না নিজের সাথে; আজ তারও অনন্তকাল চলার চেষ্টায় মত্ত হয়ে থাকতে থাকতে দুদণ্ড বসতে ইচ্ছা করছে, তৃতীয় চোখ হারানোর পথে।
রবিবার কাটিয়ে আজ বড়ো ব্যস্ত সে, সকাল সকালই উঠে পড়েছে আজ। সাড়ে সাতটার মধ্যেই স্নান সেরে নিয়ে একরাশ দ্বিধাগ্রস্ত অসন্তোষ নিয়ে বাজারে বেরিয়েছে সে। অফিসে যাবেনা সে আজ; পথে সেই পূর্বেকার কোলাহল, বিরাট বিপুল জনস্রোত। বাকি দিনের মত সাবধানে যতসম্ভব কমখরচাই করেছে সে। আচ্ছা,
           কেউ কি মৃত্যুর আগে স্নান করে?
আত্মহত্যা করবে জেনেও কেউ কি বাড়ির জন্য ভালোমন্দ মাছ-মাংস কিনে আনে?
আসলে বয়স যখন পাল্লায় ভার দেয়, তখন পাগলামোরা চাপা পড়ে। তাও প্রতিদিনের ব্যস্ততার ভিড়ে ক্লান্ত নিখিল যত্ন করে জয়াকে ভালোবেসে যায়। ফিরে পাওয়ার আশা হয়তো তার মরে গেছে, কিন্তু জীবনে চলার পথে এমন এক মানুষেরও প্রয়োজন পড়ে যে খোঁজ রাখবে; রাত বাড়লে ঠিক কোন ব্যাথাগুলো প্রবল হয়। লড়াইটা দোষারোপের নয়; তার মনে পড়ে যায় সেই প্রথম দেখা, খানিক জোর করেই খোঁপায় মালা গুঁজে দেওয়া, চুপিচুপি  ভালোবাসা দিবস পালন করা...না জানি আরও কত কি! স্মৃতির আরশিও ঝাপসা হচ্ছে দিন দিন, স্বভাবদোষেই জয়া ঠিকই ভুলে গেছে। জয়াকে আজকাল নিখিল ঠিক চিনে উঠতে পারেনা;
   এই মানুষটাই তার শরীর-মন সম্পৃক্ত করে রেখেছিল এতদিন!
   কত প্রেম, কত যুদ্ধ, কত বিষাদ!
   এই মানুষটার কাছেই সে আজকাল এত অসহ্য হয়ে উঠেছে!
বিছানাও আজ দুর্বিষহের গল্প শোনায়। আসলে শব্দেরা ফুরালে শুধু কান্নাটাই পড়ে থাকে। কিন্তু তাকে কি কাঁদতে আছে? শুধু কালের পর কাল ধরে ক্লান্ত অবসরে জমানো কিছু শোক, যা পৃথিবীর বুকে সাজাতে গিয়ে অজান্তেই মৃত্যুর কাঁধে জীবন হাসতে হাসতে মাথা এলিয়ে দেয়।
 অদৃষ্টের কি চাওয়া কে জানে?
সারাদিন ঠায়ে বসে থাকে নিখিল। একাকীত্বের প্রহরে মনখারাপের কিছু প্রাচীন শোক যেন ভর করেছে আজ। তিমিরাচ্ছন্ন বদ্ধ ঘরে আজ জয়া ও আলো দুজনেরই প্রবেশ নিষিদ্ধ। সিগারেটের সুখটানে আচ্ছন্ন সে, শরীর বেয়ে এক অভিমানী শীতল স্রোত হেসে খেলে বেড়াচ্ছে যেন। ভাবার শক্তি হারিয়ে হঠাৎই ডুকরে কেঁদে উঠলো মধ্যবিত্ত ঝুলন্ত শরীর। ওই দূরে প্রেমের মন্নন্তর যেন এক নিদারুণ অট্টহাসি হাসছে, পানকৌড়ির দল শামুকের খোল ভেঙে যেন সুখ প্রাপ্তির নেশায়।
শুধু বদ্ধ ঘরের বন্ধ মনের এক পত্র হাওয়ায় গা ভাসানোর চেষ্টায়, "প্রতি বছর আমার কবরে কিছু সাদা গোলাপ আর একরাশ কোঁকড়ানো বিলাপ রেখে যেও প্রিয়ে; একটু কাজল পরে আসবে, দুচোখ ভরে দেখবো তোমার ওই কাজল কাল চোখদুটো। নিজেকে কখনও রঙহীন করে তুলো না, বসন্তকে আসতে দিও। শুধু ভালোবেসে বৃদ্ধ হওয়াটা বাকি রয়ে গেল।।"



মোহজাল
বাপ্পা ধর


তোমায় খুব মিস্ করছি ----
আমিও গো ।
বলো না কবে আসবে আমার কাছে ?
আর কয়েকদিন পরেই 2- nd ইয়ার পরীক্ষা শেষ , তারপর বাবা কে ম্যানেজ করে আসবো । মা কে তো বললেই না করে দেবে ।
আজ ৩ - মাস হলো মোহিনীর সঙ্গে ঋষভের পরিচয় হয়েছে ফেসবুকে । খুব সুন্দরী মোহিনী, বেশ আধুনিক ।এক কথায় যাকে বলে attractive । রিকোয়েস্ট টা ঋষভই পাঠিয়েছিল। কোন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড নয় । এফ্-বি ঘাঁটতে ঘাঁটতে মোহিনীর ফটো টা কাছে আসে। সবুজ পাহাড়ের গায়ে কিছু টা হেলান দেওয়া পোস্ট টা। একটা black narrow জিন্সের প্যান্ট আর স্কাই কালারের টপ , একটা হাত ওপরে তুলে হেলান দেবার জন্য স্কাই ব্লু টপ টা পেটের কাছে একটু উঠে যাওয়ায় নাভির কিছুটা দেখা যাচ্ছিল । ঋষভ ভীষণ খুশি হয়েছিল । কলেজের প্রায় সব ছেলের ই গার্ল- ফ্রেন্ড আছে । ওর  নেই । ঠিক পছন্দই হয়নি কাউকে মোহিনীকে দেখেই একেবারে প্রেমে পড়ে গেল। মোহিনী ওর থেকে প্রায় দুই বছরের বড়। এটা নিয়ে দু- একবার মোহিনী বলেও ছিল । কিন্তু ঋষভ মানতে চায়নি । কখনো বা তেন্ডুলকর আবার কখনো বা সৈয়ফ আলির উদাহরণ দিয়ে ছিল ,এমনকি নেপোলিয়ান কেও ছাড়েনি      টেনে আনতে । শেষে ওর ভালোবাসার কাছে হার মানে মোহিনী । এই তিন মাসটা তিন বছরের মতো ছিল । সারাক্ষণই ফোনে থাকতো। মোহিনী সারাক্ষণ খোঁজ নিত ঋষভের । ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত । অবশ্য ভাগগিস Jio কানেকশন ছিল । নয়তো বেকার ঋষভ খুব মুশকিলে পড়ে যেত ওর ভালোবাসার কাছে ।রাত  ভোর হয়ে যেত কিন্তু ওদের কথা শেষ হত না । অবশ্য শুধু কথাই নয় ভিডিও  কলও করতো ওরা । দুজনেই যথেষ্ট বড়। তাই ভিডিও কল শুধুমাত্র শালীনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো তা মোটেও না ।আলাদা রুম ছিল ঋষভের । তাই বন্ধ ঘরে ওদের conversation বা ভিডিও কলের সমস্ত সীমাই পাড় করে যেত। 2- nd ইয়ার পরীক্ষা শেষ হতেই, ঋষভ বাবা- মাকে রাজি করাল দার্জিলিং যাবার জন্য । বলল কলেজের বন্ধুরাও সব যাচ্ছে ।তাই বাড়ি থেকে তেমন একটা বাধা দিল না। সকাল বেলায় একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে তিন দিনের জন্য ঋষভ চলল। কয়েকদিন ধরেই মোহিনীর  সঙ্গে ঋষভের প্ল্যানিং হয়ে গেছিল  বাড়ির সবাই জানতো ঋষভ বন্ধু দের সাথেই যাচ্ছে । কিন্তু ঋষভের প্ল্যান ছিল অন্য । মোহিনী বলেছিল কাউকে বলতে না।ওই তিন দিন কেউ থাকবে না বাড়িতে  শুধু মোহিনী আর ঋষভ ।উফ্ ভাবতেই বারবার শিউরে উঠছিল ঋষভ । ঋষভ বারবার জানতে চেয়েছিল কি নিয়ে যাবে সে মোহিনীর জন্য । মোহিনী পুরোপুরি না করেছিল । বলেছিল একদম খালি হাতে আসতে । এই তিন দিন তো মোহিনীর বাড়িতেই তো থাকবে । তাই কিছু যেন না আনে। আর আনলে কিন্তু সে রাগ করবে । কেবল বারবার রিকোয়েস্ট করেছিল ঋষভ যে এখানে আসছে তা যেন কেউ না জানে ---- তাই করেছিল । শুধু বাবা- মা জানতো । কারন নিউ-জলপাইগুড়ি অব্দি তো টিকিট টা বাবাই  কেটে দিয়েছিল।
NGP - তে নেমেই ঋষভ দেখল , মোহিনী দাঁড়িয়ে রয়েছে । রেড টপ আর ব্লু স্কার্টের জন্য পরি মনে হচ্ছিল । এমনিতেই অপূর্ব সুন্দরী ছিল মোহিনী । একে সামনে থেকে দেখে ঋষভ চোখ ফেড়াতে পাড়ছে না । মনে মনে খুশি হল এই ভেবে কোলকাতার গুরুদাস কলেজে হাজার খুঁজলেও এমন সুন্দরী কেউ নেই । কি বলবে ভাবছিল । মোহিনী এগিয়ে এসে হাগ করল ঋষভকে , গালে হালকা করে kiss ও করলো ।ঋষভ এর আগে ভিডিও কলেই করেছিল মোহিনীর  সাথে কিন্তু সরাসরি এই প্রথম ।স্টেশন থেকে দুজনে বেড়িয়ে এল। একটা গাড়ি  দাঁড়িয়ে ছিল ।মোহিনী বলল হ্যামিল্টন গঞ্জ যাব। দুজনেই পিছনের  সিটে বসল। মোহিনী ঋষভের হাতটা নিজের কোলে নিল।ঋষভ বাইরেটা দেখতে লাগল । মোহিনী ই বলল, ওর বাসা হ্যামিলটন গঞ্জ---- হাসিমারার থেকে খুব কাছে। বলল কাল আমরা ফুলশিলিং হয়ে নেপালে যাব কেমন । ঋষভ কিছুই চেনে না ।কেবল বাইরে দিয়ে চা বাগান আর ঘর বাড়ি দেখতে লাগল ।ওরা হ্যামিল্টন গঞ্জে  মোহিনীর বাড়িতে পৌঁছাল ।সুন্দর একতলা বাড়ি ।লক খুলে ভেতরে ঢুকলো।খাবার আগেই আনান ছিল ।মোহিনী বলল তুমি স্নান করে ফ্রেস হয়ে এসো।খাবার খেয়ে নাও আগে ।স্নান করে এসেই মোহিনীকে জড়িয়ে ধরল ঋষভ ।মোহিনী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, আদর করার জন্য পুরো তিন দিন আছে ।একটু খেয়ে রেস্ট নিয়ে নাও আগে।মোহিনী খেল না ।ঋষভ খাবার খেয়ে বেড রুমে গেল ।মোহিনী ও পাশে শুয়ে ঋষভকে জড়িয়ে ধরল ।কিন্তু খুব ঘুম পাচ্ছিল ঋষভের ।শরীর যেন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না হয়তো রাস্তার ক্লান্তি ।১২- ঘন্টা পুরো ট্রেন জার্নি করে এসেছে ।মোহিনীকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ল ।
ছেলেটা NGP- তে নেমে সেই যে কল করেছিল, তারপর আর কল না করায় বাবা- মা  অস্থির হয়ে গেল ।বিকেলে ওর বন্ধুদেরা বাড়ি খুঁজে খুঁজে বাবা পৌঁছাল ।সব বন্ধুরা অবাক হয়ে গেল শুনে ।ওরা তো জানেই না ঋষভ NGP গেছে।রাতে দুজনেই ছুটলো পুলিশ স্টেশন । FIR করান হলো কিন্তু কিছুই তো বলতে পারল না  ছেলে কোথায় গেছে,  ফোন switch off । বড় বাবুর কথায় ওরা বাড়ি ফিরে এল।কোথায় খুঁজতে যাবে কিছুই তো জানা নেই ।তিন দিন পর বড় বাবু ডেকে পাঠাল ঋষভের বাবা- মাকে ।বলল বাগডোগরা থেকে একটা খবর এসেছে ।একটা লাশ পাওয়া গেছে ।দার্জিলিং যাওয়ার পথে খাদে ।আপনার ছেলের  সঙ্গে মিল আছে তাই  ডেকে পাঠালাম ।ঋষভের বাবা- মা আর দেরি না করে চলল বড় বাবুর সঙ্গে গেল বাগডোগরাতে।দেখেই মা চিৎকার করে উঠলো ।হাঁ ওটা ঋষভ ই ছিল ।কি বীভৎস অবস্থা ।পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়ে বাগডোগরা পুলিশ বলল, ঋষভের দুটো চোখ বের করে নিয়েছে, তার সঙ্গে কিডনি এমনকি হার্ট টাকেও বের করে নিয়েছে ।তারপর ঋষভকে খাদে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।বড় বাবুর তৎপরতায় ওরা লাশ নিয়ে পরের দিন ই বাড়ি ফিরতে পারল।পুলিশ বলল আজকাল নাকি অরগ্যান চোরের একটা গ্রুপ অ্যাকটিভ রয়েছে এই এড়িয়াতে ।ওটার তল্লাশি চলছে ।আজ ১৩ দিন হয়ে গেল ঋষভ আর নেই ।ওর বাবা প্রতিদিন ই থানায় যায় খোঁজ নিতে ----------- কিন্তু --------


কয়েক_লাইনের_পাঁচটি_ভুতের_অনুগল্প
অনুষা ঘোষ

গল্প-১
#পোড়া_গন্ধ
আরে এই মাংস পোড়া গন্ধ টা আসছে কোথা থেকে। ওহ হ্যাঁ মনে পড়লো আমার বরই তো আমাকে কাল কে রাতে রান্নাঘরে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারলো। তারপর দিলো চম্পট। আর তারপর থেকেই আমি এখানেই পরে আছি।

গল্প-2
#কফি
-ছাড়ো আমাকে। না না আমি খাবো না। বলছি আমি খাবো না।
-না শালি তোকে খেতেই হবে।
জোর করে বিষ প্রয়োগ করা কফি শুভাংসু তার নতুন বিয়ে করা বউ অহনা কে খাওয়ালো। আর তাতেই অহনার মৃত্যু ঘটলো। এর পর তার দেহ টা বাগানে আম গাছ টার পাশে পুঁতে দিল। অহনা কে না মারলে এত সম্পত্তি শুভাংসু  আত্মসাৎ করত কি ভাবে।
এর কয়েক দিন পর।
-শুভাংসু  কফি খাবে?
কাঁপা গলায়... -অঅ অ হহ নাআআআ । ত্তু তুমিই?আমিই তো তোমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলেছি তাহলে?
-আজকে আমি তোমাকে মারবো শুভাংসু । খুব যত্ন করে। যেমন করে আমাকে মেরেছিলে।
সকাল বেলা-
পুলিশ এসে শুভাংসুর দেহ উদ্ধার করে । এবং অদ্ভুত ভাবে অহনার পচা গলা দেহ আম গাছের গোড়ায় পড়ে আছে। আম গাছের গোড়ায় কবর দেওয়ার গর্ত টা এখনো সুস্পষ্ট।

গল্প-৩
#পারফিউম
-উফঃ পারফিউমের সেই গন্ধ। তার মানে অংশী এসেছো তুমি।
-আর কতো দিন এই ভাবে আমাকে আসতে হবে প্রিয়ম।
-যত দিন না তোমার সাথে আমাকে নিয়ে যাচ্ছ।
-আমি এখন পরলোক বাসী। টা হয় না।
-তাহলে তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে অংশী।
-এবার আমাকে ভুলে যাও প্রিয়ম।
-তা সম্ভব না।
-তাহলে আসতেই হবে তোমাকে এইভাবে।
-আমার যে কষ্ট হয় এইভাবে আসতে।
-তাহলে তোমার সাথে নিয়ে চলো। তুমি না আসলে আমি এমনি ই মরে যাবো।
পরের দিন সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত প্রিয়মের দেহ উদ্ধার হলো।

গল্প-৪
#লুচি_মাংস
-ও মা । মা আমার না একটু লুচি মাংস খেতে ইচ্ছা করছে । তোমার হাতের মাংস লুচি যেন স্বর্গ।
-না সোনা আমাকে ক্ষমা করো।
- ও মা দাও না বানিয়ে লুচি মাংস।
-এবার তুমি আমাকে রেহাই দাও সোনা। তুমি মারা গিয়েছো আজ বছর চারেক হলো।
একটা ফ্যাস ফ্যাসে হাসি হেসে মিলিয়ে গেলো ছোট্ট তিতান।

গল্প-৫
#সিতা_হার
ভারী গয়নার সুন্দর সিতা হার টা গলায় দিয়ে আয়নায় নিজেকে পরম তৃপ্তি ভোরে দেখছে পামেলা। উফঃ এই বাড়ির বউ হতে কম কাঠ খড় পোড়াতে হয়নি পামেলা কে। এই বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এই সিতা হার ছিল তার দিদি শাশুড়ির শাশুড়ি মায়ের তারপর থেকে এই সিতা হার ক্রমান্বয়ে এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের বাড়ির বউ এর গলায় সজ্জিত হয়েছে।
আয়নায় ভেসে উঠলো তিস্তার মুখ টা। কি বীভৎস সেই মুখ। সাদা হয়ে যাওয়া মনি হীন চোখ, মুখের এক পাশ টা খোবলানো, একটা চোখ নেই, শূন্য চক্ষু কঠোর, মুখ সাদা, সারা শরীরে জায়গায় জায়গায় খোবলানো আর সেই অংশ থেকে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।
-তুমিইইইইই ?
-খুব অবাক হচ্ছ তাই না?
-আআআ মাররর কাছে কে এ এ এ ন ও ও ও ? এসেছো।
-প্রতিশোধ নিতে। অনুপমের স্ত্রী তিস্তা দত্তর জায়গা নিতে আর এই বাড়ির বউ হতে যে ভাবে তিস্তার খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর পুকুরের জলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলে। আমি ও তোমাকে সেই নরক যন্ত্রনা দিয়ে মারবো। তিস্তা ফিরে এসেছে পামেলা তোমাকে শাস্তি দিতে। সেদিন জলের মাছ আমার শরীর টা কে খুবলে খেয়েছিল। উফঃ সে কি যন্ত্রনা। আমি সাঁতার জানতাম না। তা ছাড়াও আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলে উঠে আসার কোনো উপায় ছিল না। অনুপমের ভালো বন্ধু ছিলে তাই সহজেই ওর সন্দেহ তোমার ওপর হলো না। আমার মৃত্যু টা কে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিলে। কি ভাবছো আমি ছেড়ে দেবো?
-আমায় ক্ষমা করো তিস্তা বড় ভুল হয়ে গেছে।
তারপর তিস্তা তার ধারালো নখ দিয়ে পামেলার গলার মাঝামাঝি গেঁথে দিলো। তারপর সারা শরীর থেকে মাংস খুবলে নিল। শেষে পামেলার পেট টা দুটো হাত দিয়ে চিড়ে ফালা ফালা করে দিল।



ধারাবহ

রেল কলোনির আড্ডা
      ----- সন্দীপ দাস

সত্তরের পাশে ৭১ ও ৭৩ নম্বর রাস্তা পার করতে করতে প্রায়ই ভাবতাম , এরা বুঝি হিসাব জানে না । তাই ৭২ নম্বরটা হিসাব করে নি । কিন্তু তার পরেই ৭৩ এর মোড়ে পৌঁছে তিনটে জিনিসের আকর্ষণ আমাকে কেমন যেন সব ভুলিয়ে দিত ।


ক) পন্ডিতজীর পানের দোকান । প্রতি রবিবার দুপুরে  মাংস ভাত খেয়ে বাবার সাথে গিয়ে হাজির হতাম সেই পানের দোকানে । বাবাকে দেখলেই পন্ডিতজী বুঝে যেত দুটো মিষ্টি পান আর আমার ফাউ হিসাবে পাওনা ছিল এক মুঠো মৌরি আর চেরি । সেই মৌরি চেরির স্বাদ আজও ভুলতে পারি নি । আজকাল অনেক মশলা দিয়ে তৈরি দামি দামি মিষ্টি পানের স্বাদ ওই সাধারণ পানের কাছে হার মানতে বাধ্য । পন্ডিত জি খুব সুন্দর রাম চরিত মানস পাঠ করতেন । অনেকবার শুনেছি সেই সুর আর যত শুনেছি ততই হারিয়ে গেছে তার মাধুর্য্যে । পন্ডিত জির বাড়ি ছিল ৭১ নম্বর রাস্তায় আর তার বাড়ি যেতাম শুধুমাত্র তার পোষা কুকুরটিকে দেখবো বলে ।


খ) ৭৩ এর শিব মন্দির । পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই শিব মন্দির আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি বহন করে । যখনই মন খারাপ হয়ে যেত তখনই এই মন্দিরে এসে বসে থাকতাম । এক অদ্ভুত শান্তি ছিল মন্দির জুড়ে । বাবার মুখে শুনেছি মন্দিরটি আগে ছোট্ট মতন ছিল , পরে সেটিকে বড় মন্দির করা হয় । শিবরাত্রি ও নীলের উপসে সেই মন্দিরে কতবার গেছি তার হিসেব নেই । আর তাছাড়া নর্থের শিব মন্দির ছিল আমার কাছে মন পরিবর্তনের এক অমূল্য জায়গা । পাহাড়ের ওপরে বসে সাঁওতাল পরগনার রূপ দেখতে দেখতে কোথায় যে হারিয়ে যেতাম তার ঠিক ঠিকানা ছিল না কোন । চারিপাশের সবুজ ধানক্ষেত আর অন্য পিঠে গড়ে ওঠা নগর সভ্যতা আমাকে অনায়াসে আকৃষ্ঠ করতো বার বার । সেই শিব মন্দিরের পাশে ছিল একটা রাম ও হনুমান মন্দির । জন্ম অষ্টমী ও রাম নবমিতে সেখানে ভিড় উপচে পড়তো বরাবরই ।


গ) সাঁওতাল গ্রাম ও তাদের সংস্কৃতি । সাঁওতাল পরগনায় কত বিকেল , কত সকাল আমি কাটিয়েছি তার হিসেব নেই । সেই আল , ধানের শীষ তুলতে যাওয়া , সেই কাঠের ব্রিজ , সেই মাটির ঘর , সেই গোবরের গন্ধ , সেই ভুট্টার স্বাদ , সেই গরম গরুর দুধ , সেই বিহুর আনন্দ , সেই মনসা পুজোর খাসি খেতে যাওয়া আর সবার ওপরে সেই সাধারণ আদিবাসী পরিবারগুলো আজও আমাকে টেনে নিয়ে যায় আমার স্বপ্নের শহর চিত্তরঞ্জন ।


৭৩ এর এই তিনটি জিনিস ছাড়াও যেটা আমার খুব মনে পড়ে সেটা হল ৭৩ এর গাছ , পাখি ও সবচেয়ে বেশি ছেলেবেলার দিনগুলো । ছট থেকে দোল , ঈদ থেকে ক্রিস্টমাস এই শহর সবার সাথে মিলে উৎসবে মেতে উঠতো বারবার আর এই ৭০ , ৭১ ও ৭৩ আমার কাছে এই ঘটনার সবচেয়ে বড় স্বাক্ষী । এখানকার মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধ আজও মনকে ভীষন টানে । আর এই সব অভিজ্ঞতা নিয়েই তো স্বপ্নের শহর নির্মাণ হয় ।


আমার কোয়ার্টার থেকে ছেড়ে আসা একদিক আজ ঘুরে এসে মন বেশ ভারাক্রান্ত । তাই বাড়ি ঢুকে পড়বার কোন চান্স নেই এখন । বরং ওভালের দিকটা যেটুকু বাকি ছিল সেখান থেকে আবার একবার ঘুরে আসা যাক । আর ফেরার পথে সানসেট এভিনিউ এর মহুয়ার বুক চিরে দেখে নেব সূর্যাস্তের লাল মুখখানা । তাহলে চলুন , লেটস গো ।


ওভালের সাথে জড়িয়ে আছে আমার ছেলেবেলার অনেক স্মৃতি । ১৫ই আগস্টের আগে বৃষ্টি হওয়া যেন প্রকৃতির থেকে পূর্ব নির্ধারিত ছিল আর তার ফলে পরের দিন মাঠের কাদা ঢেকে ফেলতে লাল পাথর গুঁড়ো কি করে ভোলা যায় । সাদা জামা প্যান্ট এর অবস্থা যে কি হতো তা একমাত্র চিত্তরঞ্জন বাসীরাই জানে । এদিকে কাক ভোরে স্কুল থেকে হাঁটা পথে ওভাল যাত্রা শুরু হত । তারপর সেখানে এটেন্ডেন্স নেওয়া হতো । কিছু কিছু বিচ্ছু ছেলে অবিশ্যি আগে ভাগেই মাঠে পৌঁছে যেত এবং সুযোগ বুঝে নিজের স্কুলের দলে এসে মিশে যেত । কারুর চেনবার বা ধরবার জো ছিল না ।


এই একই ঘটনা দেখা যেত ২৬সে জানুয়ারি । ফ্ল্যাগ হোস্টিং , জি এম এর ভাষণ , মার্চ পাস্ট , মাস ড্রিল , ইন্টারস্কুল স্পোর্টস এ সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যেত ওভালের ওই গোলাকারের মধ্যে । এছাড়া বাবার মুখে শুনতাম কোন এক সময় ওভালের এই মাঠে এককালে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রাদল আসতো । আর সত্যি বলতে চিত্তরঞ্জন চিরকালই শিল্পীদের মাতৃস্থান হয়ে থেকে গেছে । অগুনতি শিল্পী এই চিত্তরঞ্জনে জন্মেছে , বড় হয়েছে ; আবার অনেক শিল্পী কর্মসূত্র ধরে একসময় এসেছিল এই রেলশহরে । ভাবা যায় ওভালের ওই পরিধির মধ্যে আশা ভোঁসলে , রাহুল দেব বর্মনের মত নামি শিল্পীরাও অনুষ্ঠান করে গেছেন । সত্যিই এই শহরের বহুমুখী দিক আকৃষ্ট করে যতবার তার দিকে ফিরে তাকাই । তবু চিত্তরঞ্জন সব সময় একটাই মন্ত্র শিখিয়েছে সবাইকে , দূরে যাওয়ার মন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে  , নিজের পায়ে দাঁড়াতে । রেল ইঞ্জিনের এই শহর তাই তো রেল সুবিধা দিয়ে গেছে আমাদের বারবার যাতে যাতায়াতের সমস্যা না হয় । উন্নতির দিকে যাত্রা , প্রগতির দিকে যাত্রা । আর যাত্রা বললাম যখন তখন শ্রীলতার মাঠ কি ভোলা যায় । রাত জেগে যাত্রা দেখার সুযোগ আমার আজও হয় নি কিন্তু বড়দের মুখ থেকে শুনেছি , কত নামি দামি শিল্পীরা ছুটে এসেছে চিত্তরঞ্জনে শো করতে । তাদের মধ্যে কিছু নাম বলছি , কুমার শানু , নচিকেতা , রবি ঘোষ , পি সি সরকার প্রভৃতি ; কারন সব নাম নিলে চিত্তরঞ্জন ভরে যাবে তবু নাম শেষ হবে না । ওভালের পাশেই  চিত্তরঞ্জন গেস্ট হাউস ও তার সামনে অবস্থিত শিশু বিহার স্কুল । এই ৬৩ নম্বর রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেও ১ নম্বর গেটে পৌঁছানো যায় । সেক্ষেত্রে পথে দেখার মত দাঁড়িয়ে সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল । এই ১ নম্বর গেটে যাওয়ার আরো দুটি রাস্তা আছে যার একটি অফিসার কলোনি বা সানসেট এভিনিউ আর একটি ম্যানগ্রোভ এভিনিউ বা মূল বাস রাস্তা । সে দুটি সম্বন্ধে পরে বলবো একদিন ।


ম্যানগ্রোভ এভিনিউ আর গণপতি এভিনিউ একই রাস্তার দুটো নাম । গণপতি হাট সংলগ্ন রাস্তার নাম গণপতি এভিনিউ আর ১ নম্বর গেট থেকে ওভাল অবধি এই রাস্তার নাম ম্যানগ্রোভ এভিনিউ । ওভালের ঠিক উল্টো দিকে এস পি ইস্ট বাজার আর বাজারের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে রঞ্জন সিনেমা ও বাসন্তী ইনস্টিটিউট । রঞ্জন সিনেমাটি বর্তমানে আধুনিকতার ছাপ লাগলেও , পুরোনো হলে বাবার হাত ধরে দেখা ইংরেজি সিনেমা দেখার মজা আজও মনে লেগে আছে । তখন হলটিতে নতুন সিনেমা লাগতো না । রিলিজ হয়ে যাওয়া সিনেমা অনেক হাত ঘুরে এসে পৌছাত হলের পর্দায় । তবু লোকের আগ্রহ কোন ভাবেই কম ছিল না । তাছাড়া রঞ্জনে মাঝে মাঝে জলসার আসর বসতো । হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর মত নামি শিল্পীও এই রঞ্জনে জলসা করে গেছেন । এস পি ইস্ট মার্কেট থেকে বাস রাস্তা ধরে গণপতি এভিনিউ ধরে হাঁটলে পৌঁছে যাওয়া যায় এরিয়া ২ ডিস্পেন্সারি র সামনে । এই ডিস্পেন্সারির ঠিক পাশেই এক কালে মহিলা মহলের দুর্গাপুজো হতো । এই পুজোর বৈশিষ্ঠ ছিল সম্পূর্ণ পুজোটি মহিলা দ্বারা পরিচালিত ছিল এবং পুজো কমিটিতে কোন পুরুষ সদস্য ছিল না । বেশ কিছু বছর পুজো হওয়ার পর পুজোটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যায় । তবে এর স্মৃতি আমার মনে আজীবন জ্বলজ্বল করবে ।


এই পথ ধরে আর একটু এগিয়ে গেলেই এস পি নর্থ মার্কেট । এই বাজার এর বেশ কিছু স্মৃতি পরের পর্বে আলোচনা করবো , কেমন ।
নর্থের বাজারে ঢুকেই পড়লাম যখন তখন আজ আর কোন কথা বলবো না । বরং একটা কবিতা হয়ে যাক আজ । আরে আরে মুখ ভার করলে চলবে ? চিত্তরঞ্জনে এলে আড্ডা না দিয়েই চলে যাবে ? চিত্তরঞ্জন মানেই তো আড্ডার শহর । চিত্তরঞ্জন মানেই তো হুল্লোড়ের শহর । শীতের সন্ধ্যে বেলা সকলে গোল করে বসে আগুন সেঁকা আর গরমে ঘরে কে ঢুকবে ? ভেতরটা ভ্যাপসা । পাপাই , বুকু , মিঠু , ফুচান , আমি , পুকান , পোষন সবাই বোস আজ । আড্ডা দেবো জমিয়ে । সামনে না পারি এই বইয়ের পাতায় সকল চিত্তরঞ্জন বাসীর মহা আড্ডা । সবার আমন্ত্রণ কেন ? কারন এ শহর ভেদাভেদ জানে না তাই । কবিতাটা আমার সাথে বলো , পুরোনো প্রেমিকার কথা মনে পড়ে যাবে । পুরোনো প্রেমিকাটা কে ভাবছো তো ? দুর্গা পূজার এই নর্থের বাগানেই একটা ঝালমুড়ি খাইয়ে চারদিন চুটিয়ে গল্প করেছিলে যার সাথে ভলেন্টিয়ারের বেঞ্চে বসে বসে । তার কথায় বলছি গো । এবার আসর শুরু করি তাহলে আজকে ?


নর্থ মানেই রাত জাগা আড্ডার মহড়া
নর্থ মানেই চা সিগারেট , মিষ্টি আর সিঙ্গারা
নর্থ মানেই মন্টু ঘোষ
নর্থ মানেই ডালপুরি , রসগোল্লা
নর্থ মানেই অজানতিক ফুটবল
আর স্কাউটে র ছেলে ছোকরা ।
নর্থ মানেই দুর্গা পুজো - প্রস্তুতি থেকে বিসর্জন
নর্থ মানেই বিশাল ঠাকুর - মেলায় বসে বসে
ভাজা সেই বাদাম ভোজন ।
নর্থ মানে বন্ধু হয়ে যাওয়া মুহূর্ত
নর্থ মানে পাশের বাড়ির খবর রাখা
নর্থ মানেই দেওয়ালির খুব ভোরে
ক্যান হাতে মণ্ডপে মণ্ডপে ভোগ আনা ।
নর্থ মানে দোল খ্যালে - হিন্দু থেকে মুসলমান
নর্থ মানে ঈদের সিমুই , বড়দিনের কেক
আর একটা পুরোনো নেশা , নতুন বোতলে সিল করা ।


( ক্রমশঃ )


ENGLISH SECTION

POETRY

After The Life-
                Akshay Banerjee

I know, untill I'm not sent to peace;
I'll never able to taste the peace.
There'll no way to have a pitch,
but,it surely going to stop the flow of glitch.
So, compelling one to remember, is one
of those, right:
You know, "they" will reminisce positively,
once when you'll become a sprite.
Such shaping fantasies,that can't be apprehended,
the reasons beneath those things, can't be comprehended.
Poverty of warmth will commence you
towards the insouciance;
but, you'll become the impresario of the life
full of cold-livered predominance.


Having lost the childhood...
---Amit Kumar jana


He has lost those days.
when he was of tender age,
He's going to be a man.
And having a lot of plan.

He have to forget those joys,
Meaningless thoughts and toys.
Inspired by someone,
And making out the significance of life,
And to succeed he have to strive and strive.

His playground is now battlefield.
Now he's not a player ,
Toys become weapon,
He is now a soldier.

He intends to know the mystery.
And being a fighter,dreams of victory,
Having indomitable spirit,no fear,
He can dare any danger.


EVERY NIGHT I STAND ALONE
                 ---- Paramartha Banerjee

Every night I stand alone
On the tangent of the four crossing roads,
Next to my door;
Every night I stand all alone there
When the neighbourhood fall asleep,
When the stars tired of blinking,
When the stray dogs are looking for shelter,
And when the night resting on its wings.
I go there bare footed
Where those four roads are eagerly awaiting me;
I do stand on the tangent,
The four start moving.
They have waited the long whole day for me.
I don’t know if the road from east is moving to west or it’s vice versa.
I don’t know if the road from north is moving to south or it’s vice versa.
But I feel beneath my feet,
they are moving.
When the earth is sleeping,
When there’s nothing to move on them,
When there’s nobody to hurt their soul,
They start moving by themselves.
Standing on the tangent
I do start moving with them too.
We don’t know the direction,
We don’t know even the destination,
We just embrace the loneliness with our hearts & souls.
We stand all alone in the dead night,
We stand all alone.


 A Shrouding Time           
          Wribhu Chattopadhyay

 A pale ochre line shrouds the moment
and only hearses are on the queue.
Epitaphs and elegies embezzle the snivel,
 and memory oscillates to and fro.
I am within these four walls, and trying to live
among the cadavers of my kith and kin.
Only the unrecognised figures of special body wig are
 seen in scurry. Night nudge like a snail and life too.
I have not heard the temple bell for so long time,
even the Gods are behind the bar.
Hacking, sneezing and fever cripple my land.
I have to touch my own chest,
if it throbs still.



 You cannot be             
         Wribhu Chattopadhyay

Scattered bread and flesh blot of blood
like the curry and you cannot be blamed.
Freight, head light and shriek and then
the catastrophe, but you cannot be blamed.
Weary feet and tottering of several miles
and perspiration is only an option for drinking,
but you cannot be blamed.
When line is just a cot and stone is
a synonym of cushion,
when home coming is an urge
but is measured as a gag,
and life is just a number
but still, you cannot be blamed.


                                 
         





       






Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ৮