দীর্ঘ গল্প
আশ্রয়
প্রথম পর্ব
শুভম গাঙ্গুলী
“ঐশি ঘুম থেকে উঠে পরও মা, সকাল হয়ে গেছে স্কুলে যেতে হবে” হাঁক পারলো পিউ।
হাঁক শুনে ঐশি বাবাকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করলো।
পিউ যখন দেখলো ঐশি কিংবা শৈবালের কোনো সারা শব্দ পাচ্ছে না, তখন নিজে এলো ওদের ঘুম থেকে তুলতে।।
“সকাল ৮টা বাজে কতো কাজ পরে আর এদের দেখো বাপ, মেয়ে গলা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে” নিজের মনে বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো পিউ।
এবার শুরু হলো কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙানোর যুদ্ধ।
ঐশি বলে বাবা না উঠলে আমিও উঠবো না। শৈবাল বলে “উঠে পরও মা, স্কুল যেতে হবে। আমার স্কুল বিশ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে তাই আমি একটু ঘুমোলে আপত্তি নেই।
অনেক কসরত করে দুজনকে ঘুম থেকে তুলে, স্নান করিয়ে খায়িয়ে স্কুলে আর অফিসে পাঠালো পিউ।।। এবার একটু শান্তিতে বসতে পারবে সে।। তবে বেশিক্ষণ বসলে চলবে না কারণ এখন রান্না না চাপলে, শেষ হতে অনেক বেলা হয়ে যাবে।।
ওদিকে স্কুলের টিফিনের ঘন্টা পড়েছে। ঐশি বাকি বন্ধুদের সাথে বসে টিফিন খাচ্ছে।। খাচ্ছে কম বরং খাওয়াচ্ছে বেশি।
হঠাৎ তার নজরে এলো ইমনের নতুন পেন্সিলবক্স ও কালার বক্সটা।
‘কে দিয়েছে তোকে এইগুলো?’ ইমনকে জিজ্ঞেস করলো ঐশি।
“এগুলো আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমা দিয়েছে” বললো ইমন।
“ঠাকুরদা, ঠাকুমা কে?” জিগ্যেস করলো ঐশি।
“এবাবা তুই এটাও জানিস না। বাবার বাবা কে ঠাকুরদা ও মা কে ঠাকুরমা বলে” বললো ইমন।
“ঠাকুরদা, ঠাকুরমা থাকলে খুব মজা হয়না?” খুব আগ্রহ নিয়ে জিগ্যেস করলো ঐশি।
“মজা মানে, অনেক মজা, ওরা কতো আদর করে, গল্প শোনায়, আবদার করলে জিনিষ কিনে দেয়।“ বললো ইমন।
৭ বছরের ছোট্ট ঐশি যেনো সেই মুহূর্তে একটা স্বপ্নের জগতে চলে গেলো……….. সে দেখল সেও যেনো তার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলছে ঠাকুরমার কাছে গল্প শুনছে।😊 কিন্তু কিছুতেই তাদের স্পর্শ করতে পারছে না সে।।
হঠাৎ তার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো ইমনের ধাকায়।।
“কিরে কি ভাবছিস”? জিগ্যেস করলো ইমন।
ঐশি বললো আচ্ছা আমার ঠাকুরমা দাদু কোথায়? আজ এই প্রশ্ন করবেই সে তার বাবার কাছে।।
স্কুল শেষে ঐশি দেখলো ইমনের ঠাকুরদা এসেছেন ওকে স্কুল থেকে বাড়ী নিয়ে যেতে। এবং দেখা মাত্রই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঐশির।
সে অপেক্ষা করতে থাকলো কতক্ষণে বাড়ী যাবে।।।
দ্বিতীয় পর্ব
আচ্ছা মা আমার ঠাকুরদা, ঠাকুরমা কই? ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রশ্ন করলো ঐশি।
মায়ের কাছে কোনো জবাব না পেয়ে একই প্রশ্ন করলো ল্যাপটপে ব্যস্ত বাবাকে।।
প্রশ্নটা শুনে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো শৈবাল।
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো “অনেক দূরে”।
আর আমার দাদু, দিদা? আবার প্রশ্ন করলো ঐশি।
প্রশ্নটা শুনে বিছানা থেকে উঠে পড়লো শৈবাল।
শৈবালের দিক থেকে ঐশীকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পিউ বললো “তারাও অনেক দূরে আছে সোনা।। নাও এবার ঘুমিয়ে পরও তোহ দেখি।।” আর সেই সঙ্গে আড়চোখে দেখেনিলো শৈবালের গতিবিধি। প্রশ্নগুলো শোনার পর সে যেনো কেমন মন মরা হয়ে পড়েছে।।
ঐশীকে ঘুম পাড়িয়ে শৈবালের কাছে উঠে গেলো পিউ।
শৈবাল এর ইতস্তত ভাব দেখে তার পিঠে হাত দিলো পিউ। শৈবালের চোখের জল সব বুঝিয়ে দিলো পিউকে।
তার দুজনেই জানতো যে একদিন না একদিন এই প্রশ্নের সমুখীন হতে হবে তাদের। কিন্তু তারাই বা কি কর বলবে ঐশীকে যে তারা দুজনেই অনাথ।
শৈবালের বাবা ও মা একটা দুর্ঘটনায় মারা যান তারপর থেকেই ও মানুষ হয়েছে অনাথ আশ্রমে।
আর পিউর জন্মের আগেই বাবা মারা যান ও তিন বছর বয়সে তার মা। তারপর থেকেই মামার কাছেই তার বড়ো হয়ে ওঠা। মামার কাছে শুনেছে তার মা নাকি পরীর মতো দেখতে ছিলো।
কিন্তু ছোট্ট পরী ঐশীকে তারা এটা বোঝাবে কি করে।
পরদিন সকালে breakfast টেবিলে ঐশি বললো। বাবা আমার ঠাকুরদা ঠাকুরমা চাই চাই।।
হায় কপাল দাদু ঠাম্মা কোথায় পাবো।। বললো শৈবাল।
কেনো বাজার থেকে কিনে দেবে, যেমন তুমি আমাকে বাজার থেকে এনেছিল।। বললো ঐশি।
পিউ আর শৈবাল একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি আদানপ্রদান করলো।।
তারপর কিছু বিব্রত হয়েও নিজেদের সামলে নিলো দুজনে। আর তারপর বললো, ধুর বোকা মেয়ে এরম হয় নাকি কোনোদিন।
কেনো হবেনা? তোমরাই তো এতদিন বলতে আমাকে বাজার থেকে এনেছো।। তাহলে আমারও দাদু ঠাম্মা চাই, বাজার থেকে।
এতদিনে ওরা দুজন বুঝলো যে এতদিনের যে জবাব তারা দিয়ে এসেছে, সেই জবাবেই আজ তাদের সামনে প্রশ্ন হয়ে দন্ডায়মান।
তা বলে বাজার থেকে দাদু ঠাম্মা?
এখনের জন্যে ঐশীকে ক্ষান্ত করতে শৈবাল আর পিউ কোনো পথ না পেয়ে বললো “দেখছি কি করা যায়, আগে তুমি খেয়ে নিয়ে স্কুলে যাও”।
তৃতীয় পর্ব
অনেক চিন্তাভাবনার পর তাদের দুজনের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
অনাথ বাচ্চাদের যেমন বাবা মা নেই সেরম অনেক বাবা মা আছেন যাদের সন্তান নেই। সেই রোক্ষম এক জুটিকে দত্তক নিলে কেমন হয়।
কিন্তু মুশকিল হলো এরম জুটি তারা পাবে কই? ঘোর অনিশ্চিত বেপার।
ছোটবেলার অনেক বন্ধু ছিলো শৈবালের। কারণ সে অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়। বড়ো হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে অর্থ সে নিজে কিছু যোগাড় করে এবং সেই সূত্রেই তার সাথে পরিচয় হয় ফাদার জোসেফের সঙ্গে। শৈবালের জীবনের নানান ওঠা পড়ার সাক্ষী এই ফাদার। সে ঠিক করলো এই বিষয়ে ফাদারের সঙ্গে কথা বলবে। ফাদারের উপদেশ নিতে পিউ আর শৈবাল হাজীর হলো চার্চে। ফাদার সব কথা শুনে তাদের বিড়ম্বনার কথা বুঝতে পারলেন এবং তাদের বললেন যে এই পরিস্থিতি তে তাদের সাহায্য করতে পারে হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী। তারা যেনো তাদের সমস্যার কথা তাকে বলে এবং যেনো বলে তাদের, তিনি পাঠিয়েছেন।
কথামতো শৈবাল আর পিউ, হাফিজ সাহেবের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সব বিষয়ে শুনে হাফিজ সাহেব বললেন, “ওহ এই বেপার? যাও তোমরা বাড়ী ফিরে যাও, বাবা পেয়ে যাবে তোমরা”।
কি ভাবে? জিগ্যেস করলো পিউ।
আমার একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে সেখানে এরম অনেক মানুষ থাকেন যাদের কারুর কেউ নেই, আবার কারুর কেউ থেকেও নেই।
এদের মধ্যে থেকে যাকে ভালো লাগে তাকে নিয়ে চলে যাও তোমরা।
“ধুর ওরোম যাকে খুশি নিয়ে যাওয়া যায় নাকি” বললো শৈবাল। তার চেয়ে বরং আপনি বলে দেন আপনার চোখে কে এমন মানুষ যার সঙ্গে আমাদের প্রয়োজন মেলে।
আছে একজন যার সাথে তোমাদের প্রয়োজন মেলে। কিন্তু তিনি যে………….
কি হলো? কিন্তু তিনি কি? উত্তেজনার সাথে জিগ্যেস করলো শৈবাল।
হাফিজ সাহেব বললেন, তিনি যে মুসুলমান ধর্মে বিশ্বাসী। আর আপনারা তো হিন্দু।।।
হা হা হা হা হা ওহ এই বেপার। বলে হাসতে থাকে শৈবাল আর পিউ।
না না হাফিজ সাহেব সে বিষয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে ধর্ম হলো একটা আধারের মতো যার বিশ্বাস অতলস্পর্ষি।
যেমন আমি ফাদারের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই ক্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ও আমার স্ত্রী হিন্দু ধর্মে। এবং এই দুই ধর্মের আধারে বেড়ে উঠছে আমাদের মেয়ে ঐশি।
এবার না হয় আধার টা আর একটু শক্ত হবে।
হাফিজ সাহেব তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো আলী খানের। তিনি পেশায় প্রাক্তন স্কুল মাস্টার, পরে প্রধান শিক্ষক হয়ে অবসর নেন। শিশুদের সাথে সময় কাটাতে তার ভালোই লাগে।
পরিচয় পর্ব শেষ হতেই পিউ বলে, “বাবা আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন বাবা, আজ থেকে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। আমাদের একটা মেয়েও আছে বাবা। ওর নাম ঐশি। এইযে ওর ফটো দেখেন।“ বলে নিজের মোবাইল টা তার দিকে এগিয়ে দিলো পিউ।
প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে ঐশির ছবি দেখে কিছু বিশেষ কথা মনে পড়ে যায় আলী সাহেবের।
চতুর্থ পর্ব
সকাল বেলা ঘুম চোখ খুলে সামনে একজন অপরিচিত মানুষকে দেখে চমকে ওঠে ঐশি।
তুমি কে ? জিগ্যেস করলো ঐশি
আমি যে তোমার ঠাকুরদাদা গো দিদিভাই। 😊
শুভ জন্মদিন দিদিভাই😊💐
দাদুকে জড়িয়ে ধরলো ঐশি।❤️ এবার আর চিন্তা নেই তার। তারও ঠাকুরদা আছে, সেও এবার সবাইকে স্কুলে গিয়ে বলবে।
শুধু ঠাকুমার কথা ভেবে একটু মন খারাপ হলো ঐশির। ওহ কিছু নয়।
কপাল মন্দ না হলে, হয়তো সেটাও হয়ে যাবে।
দিনে দিনে আলী সাহেবের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো ঐশির।
তার সাথে খেলা, তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। রাতে তাকে কাছে নিয়ে ঘুমানো। আরো কতো কি।।
এই দৃশ্য দেখে শৈবাল আর পিউয়ের চোখে জল এসে গেলো। এই ভরা সংসারে যদি মা কে পাওয়া যেতো তাহলে তো আর কথাই ছিলো না।
একদিন বিকেলে চায়ের আড্ডায় পিউয়ের ইশারার শৈবাল, আলী সাহেবকে জিগ্যেস করলো আচ্ছা বাবা আপনার আমাদের সাথে থাকতে কেমন লাগছে?
কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো?
“না না বাবা তোমাদের সাথে থাকতে খুবই ভালো লাগছে আমার। বৌমার আদর্যত্নের কোনো ত্রুটি নেই। তুমিও বৌমার সাথে সমান তালে তাল রাখছো।“ বললো আলী সাহেব।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কোনা টা যেনো চিকচিক করে উঠলো আলী সাহেবের।
পিউ আর শৈবালের নজর এরালোনা সেটা।
“কি হলো বাবা আপনার চোখের কোনায় জল কেনো?” জিগ্যেস করলো পিউ।
“না মা, ওহ কিছু নয়। আজ খুব নাসিমার কথা মনে পড়ছে। ঠিক এই রক্ষম একটা ভরা সংসারে স্বপ্ন দেখেছিল সে।“
নাসিমা কে বাবা? প্রশ্ন করলো শৈবাল।
নাসিমা আমার স্ত্রী।
তিনি কোথায় আছেন বাবা? জিগ্যেস করলো পিউ।
“সে অনেক কথা মা, শোনো তাহলে। আমার তিন সন্তান। দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে।
বড়ো ছেলে পড়াশোনা করতে বিদেশে গেছিলো, আমিই পাঠিয়েছিলাম তাকে। কিন্তু বিদেশ থেকে আর ফেরেনি সে। শুনেছি সেখানেই একটি মেয়ে কে ভালোবেসে বিয়ে করে সে। তাদের নাকি একটি ছোট মেয়েও আছে ঐশির মতো। তোমরা যেদিন প্রথম আমার সঙ্গে দেখা করলে সেদিন ছোট্ট ঐশির ছবি দেখেই আমার নাতনীর কথা মনে পড়ে যায়। তাই তোমাদের হ্যাঁ করে দি।
আমার মেজো ছেলে কোনো কাজ কর্ম করেনা, আমার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তাকে একটা ফোনের দোকান করে দিয়েছিলাম।
সেখান থেকেই একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ এবং তাকে বিয়ে করে ঘরে আনে সে।
মেয়ের বিয়ে হয়েছে আট বছর হলো।
আমি আর আমার স্ত্রী মেজো ছেলের কাছেই থাকতাম। কম রোজগারের জন্যে ছেলের সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছিলো। আর তাই সে একদিন তার ছোটো বোনকে ঘরে ডাকে।
তারা দুজনে ঠিক করে আমি এবং নাসিমা তাদের দুজনের কাছে থাকবো। তারপর থেকেই আমরা আলাদা। পরে আমার মেজো ছেলের ইচ্ছায় আমি এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসি আমার বাকি জীবনটা কাটাতে। আর নাসিমা রয়ে গেলো মেয়ের কাছে।
অনেকদিন দেখিনি তাকে। তোমাদের দেখে আজ খুব মনে পড়ে গেলো তার কথা।
কথাগুলো শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো দুজনের। রাতে শুতে যাওয়ার আগে তারা দুজনে ঠিক করলো যে, মাকে খুঁজতেই হবে তাদের।
পরেরদিন আলী সাহেবের মেয়ে ফাতিমাকে ফোন করলো শৈবাল। এবং জানালো যে সে ব্যাংক থেকে ফোন করছে। তার বাবা মারা গেছেন এবং তার বাবার একটা সঞ্চয় করেছিলেন যার নোমিনী হলো নাসিমা বিবি। তাই তিনি যেনো কাল তার মা কে নিয়ে ব্যাংকে চলে আসেন।
শৈবাল একটি বহুজাতিক বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার। তাই সে তার চাকরীর এর চেয়ে ভালো সদ্ব্যবহার করতে পারতো না।
পরেরদিন ফাতিমা এলো ব্যাংকে কিন্তু তার সাথে তার মা নেই।
শৈবাল বললো আপনার মাকে আনলেন না?
“আসলে মা আমার সঙ্গে থাকেন না। মা আমার সঙ্গে থাকুক সেটা আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পছন্দ করতো না। তাই মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বাধ্য হই।“ বললো ফাতিমা।
“আপনাদের লজ্জ্বা করেনা, যে বাবা মা আপনাদের বড়ো করতে জীবন পাত করেছেন, তাদের জীবনের শেষ দিন গুলোতে তাদের আপনারা আলাদা করে দিলেন” 😪 বললো শৈবাল।
“আপনাদের মতো সন্তানের চেয়ে, নিঃসন্তান থাকা ভালো” বললো শৈবাল।
আপনাদের জীবনের আশ্রয় গড়ে দিয়ে তারা নিজেদের আশ্রয় হারালেন, এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে😪।
কোথায় আছেন নাসিমা বিবি? আমি তার সাথে দেখা করতে চাই। আর হ্যা, আপনাদের বাবা মারা যাননি, তিনি আমার বাড়ীতে আছেন আর এই সব সঞ্চয় ঠোনচয় কিছু না। আপনাকে ডেকে আনতেই আমার এই পরিকল্পনা। বললো শৈবাল।
দুদিন পর। সকালবেলা
ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য হলো ঐশি। কে যেনো আলতো হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখে একজন মহিলা তার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন।
“কে তুমি প্রশ্ন করলো ঐশি”?
ইনি যে তোমার ঠাকুমা গো দিদিভাই।। বললেন আলী সাহেব।।
ঠাকুমাকে পেয়ে আনন্দের সীমা রইলনা না ছোট্ট ঐশির।
আর এভাবেই শৈবাল আর পিউয়ের আশ্রয়ে হয়ে উঠলো পরিপূর্ণ।
ওহঃ হ্যাঁ আপনাদের তোহ বলাই হয়নি শৈবাল আর পিউ একটা বাড়ী কিনেছে।
নাম দিয়েছে “আশ্রয়” গৃহপ্রবেসের দিন সবাইকে আসতে হবে কিন্তু, অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়ে ও সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখে।
প্রথম পর্ব
শুভম গাঙ্গুলী
“ঐশি ঘুম থেকে উঠে পরও মা, সকাল হয়ে গেছে স্কুলে যেতে হবে” হাঁক পারলো পিউ।
হাঁক শুনে ঐশি বাবাকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করলো।
পিউ যখন দেখলো ঐশি কিংবা শৈবালের কোনো সারা শব্দ পাচ্ছে না, তখন নিজে এলো ওদের ঘুম থেকে তুলতে।।
“সকাল ৮টা বাজে কতো কাজ পরে আর এদের দেখো বাপ, মেয়ে গলা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে” নিজের মনে বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো পিউ।
এবার শুরু হলো কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙানোর যুদ্ধ।
ঐশি বলে বাবা না উঠলে আমিও উঠবো না। শৈবাল বলে “উঠে পরও মা, স্কুল যেতে হবে। আমার স্কুল বিশ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে তাই আমি একটু ঘুমোলে আপত্তি নেই।
অনেক কসরত করে দুজনকে ঘুম থেকে তুলে, স্নান করিয়ে খায়িয়ে স্কুলে আর অফিসে পাঠালো পিউ।।। এবার একটু শান্তিতে বসতে পারবে সে।। তবে বেশিক্ষণ বসলে চলবে না কারণ এখন রান্না না চাপলে, শেষ হতে অনেক বেলা হয়ে যাবে।।
ওদিকে স্কুলের টিফিনের ঘন্টা পড়েছে। ঐশি বাকি বন্ধুদের সাথে বসে টিফিন খাচ্ছে।। খাচ্ছে কম বরং খাওয়াচ্ছে বেশি।
হঠাৎ তার নজরে এলো ইমনের নতুন পেন্সিলবক্স ও কালার বক্সটা।
‘কে দিয়েছে তোকে এইগুলো?’ ইমনকে জিজ্ঞেস করলো ঐশি।
“এগুলো আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমা দিয়েছে” বললো ইমন।
“ঠাকুরদা, ঠাকুমা কে?” জিগ্যেস করলো ঐশি।
“এবাবা তুই এটাও জানিস না। বাবার বাবা কে ঠাকুরদা ও মা কে ঠাকুরমা বলে” বললো ইমন।
“ঠাকুরদা, ঠাকুরমা থাকলে খুব মজা হয়না?” খুব আগ্রহ নিয়ে জিগ্যেস করলো ঐশি।
“মজা মানে, অনেক মজা, ওরা কতো আদর করে, গল্প শোনায়, আবদার করলে জিনিষ কিনে দেয়।“ বললো ইমন।
৭ বছরের ছোট্ট ঐশি যেনো সেই মুহূর্তে একটা স্বপ্নের জগতে চলে গেলো……….. সে দেখল সেও যেনো তার ঠাকুরদার সঙ্গে খেলছে ঠাকুরমার কাছে গল্প শুনছে।😊 কিন্তু কিছুতেই তাদের স্পর্শ করতে পারছে না সে।।
হঠাৎ তার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো ইমনের ধাকায়।।
“কিরে কি ভাবছিস”? জিগ্যেস করলো ইমন।
ঐশি বললো আচ্ছা আমার ঠাকুরমা দাদু কোথায়? আজ এই প্রশ্ন করবেই সে তার বাবার কাছে।।
স্কুল শেষে ঐশি দেখলো ইমনের ঠাকুরদা এসেছেন ওকে স্কুল থেকে বাড়ী নিয়ে যেতে। এবং দেখা মাত্রই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঐশির।
সে অপেক্ষা করতে থাকলো কতক্ষণে বাড়ী যাবে।।।
দ্বিতীয় পর্ব
আচ্ছা মা আমার ঠাকুরদা, ঠাকুরমা কই? ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রশ্ন করলো ঐশি।
মায়ের কাছে কোনো জবাব না পেয়ে একই প্রশ্ন করলো ল্যাপটপে ব্যস্ত বাবাকে।।
প্রশ্নটা শুনে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো শৈবাল।
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো “অনেক দূরে”।
আর আমার দাদু, দিদা? আবার প্রশ্ন করলো ঐশি।
প্রশ্নটা শুনে বিছানা থেকে উঠে পড়লো শৈবাল।
শৈবালের দিক থেকে ঐশীকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পিউ বললো “তারাও অনেক দূরে আছে সোনা।। নাও এবার ঘুমিয়ে পরও তোহ দেখি।।” আর সেই সঙ্গে আড়চোখে দেখেনিলো শৈবালের গতিবিধি। প্রশ্নগুলো শোনার পর সে যেনো কেমন মন মরা হয়ে পড়েছে।।
ঐশীকে ঘুম পাড়িয়ে শৈবালের কাছে উঠে গেলো পিউ।
শৈবাল এর ইতস্তত ভাব দেখে তার পিঠে হাত দিলো পিউ। শৈবালের চোখের জল সব বুঝিয়ে দিলো পিউকে।
তার দুজনেই জানতো যে একদিন না একদিন এই প্রশ্নের সমুখীন হতে হবে তাদের। কিন্তু তারাই বা কি কর বলবে ঐশীকে যে তারা দুজনেই অনাথ।
শৈবালের বাবা ও মা একটা দুর্ঘটনায় মারা যান তারপর থেকেই ও মানুষ হয়েছে অনাথ আশ্রমে।
আর পিউর জন্মের আগেই বাবা মারা যান ও তিন বছর বয়সে তার মা। তারপর থেকেই মামার কাছেই তার বড়ো হয়ে ওঠা। মামার কাছে শুনেছে তার মা নাকি পরীর মতো দেখতে ছিলো।
কিন্তু ছোট্ট পরী ঐশীকে তারা এটা বোঝাবে কি করে।
পরদিন সকালে breakfast টেবিলে ঐশি বললো। বাবা আমার ঠাকুরদা ঠাকুরমা চাই চাই।।
হায় কপাল দাদু ঠাম্মা কোথায় পাবো।। বললো শৈবাল।
কেনো বাজার থেকে কিনে দেবে, যেমন তুমি আমাকে বাজার থেকে এনেছিল।। বললো ঐশি।
পিউ আর শৈবাল একে অপরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি আদানপ্রদান করলো।।
তারপর কিছু বিব্রত হয়েও নিজেদের সামলে নিলো দুজনে। আর তারপর বললো, ধুর বোকা মেয়ে এরম হয় নাকি কোনোদিন।
কেনো হবেনা? তোমরাই তো এতদিন বলতে আমাকে বাজার থেকে এনেছো।। তাহলে আমারও দাদু ঠাম্মা চাই, বাজার থেকে।
এতদিনে ওরা দুজন বুঝলো যে এতদিনের যে জবাব তারা দিয়ে এসেছে, সেই জবাবেই আজ তাদের সামনে প্রশ্ন হয়ে দন্ডায়মান।
তা বলে বাজার থেকে দাদু ঠাম্মা?
এখনের জন্যে ঐশীকে ক্ষান্ত করতে শৈবাল আর পিউ কোনো পথ না পেয়ে বললো “দেখছি কি করা যায়, আগে তুমি খেয়ে নিয়ে স্কুলে যাও”।
তৃতীয় পর্ব
অনেক চিন্তাভাবনার পর তাদের দুজনের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
অনাথ বাচ্চাদের যেমন বাবা মা নেই সেরম অনেক বাবা মা আছেন যাদের সন্তান নেই। সেই রোক্ষম এক জুটিকে দত্তক নিলে কেমন হয়।
কিন্তু মুশকিল হলো এরম জুটি তারা পাবে কই? ঘোর অনিশ্চিত বেপার।
ছোটবেলার অনেক বন্ধু ছিলো শৈবালের। কারণ সে অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়। বড়ো হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্যে অর্থ সে নিজে কিছু যোগাড় করে এবং সেই সূত্রেই তার সাথে পরিচয় হয় ফাদার জোসেফের সঙ্গে। শৈবালের জীবনের নানান ওঠা পড়ার সাক্ষী এই ফাদার। সে ঠিক করলো এই বিষয়ে ফাদারের সঙ্গে কথা বলবে। ফাদারের উপদেশ নিতে পিউ আর শৈবাল হাজীর হলো চার্চে। ফাদার সব কথা শুনে তাদের বিড়ম্বনার কথা বুঝতে পারলেন এবং তাদের বললেন যে এই পরিস্থিতি তে তাদের সাহায্য করতে পারে হাফিজ উদ্দিন চৌধুরী। তারা যেনো তাদের সমস্যার কথা তাকে বলে এবং যেনো বলে তাদের, তিনি পাঠিয়েছেন।
কথামতো শৈবাল আর পিউ, হাফিজ সাহেবের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সব বিষয়ে শুনে হাফিজ সাহেব বললেন, “ওহ এই বেপার? যাও তোমরা বাড়ী ফিরে যাও, বাবা পেয়ে যাবে তোমরা”।
কি ভাবে? জিগ্যেস করলো পিউ।
আমার একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে সেখানে এরম অনেক মানুষ থাকেন যাদের কারুর কেউ নেই, আবার কারুর কেউ থেকেও নেই।
এদের মধ্যে থেকে যাকে ভালো লাগে তাকে নিয়ে চলে যাও তোমরা।
“ধুর ওরোম যাকে খুশি নিয়ে যাওয়া যায় নাকি” বললো শৈবাল। তার চেয়ে বরং আপনি বলে দেন আপনার চোখে কে এমন মানুষ যার সঙ্গে আমাদের প্রয়োজন মেলে।
আছে একজন যার সাথে তোমাদের প্রয়োজন মেলে। কিন্তু তিনি যে………….
কি হলো? কিন্তু তিনি কি? উত্তেজনার সাথে জিগ্যেস করলো শৈবাল।
হাফিজ সাহেব বললেন, তিনি যে মুসুলমান ধর্মে বিশ্বাসী। আর আপনারা তো হিন্দু।।।
হা হা হা হা হা ওহ এই বেপার। বলে হাসতে থাকে শৈবাল আর পিউ।
না না হাফিজ সাহেব সে বিষয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে ধর্ম হলো একটা আধারের মতো যার বিশ্বাস অতলস্পর্ষি।
যেমন আমি ফাদারের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই ক্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ও আমার স্ত্রী হিন্দু ধর্মে। এবং এই দুই ধর্মের আধারে বেড়ে উঠছে আমাদের মেয়ে ঐশি।
এবার না হয় আধার টা আর একটু শক্ত হবে।
হাফিজ সাহেব তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো আলী খানের। তিনি পেশায় প্রাক্তন স্কুল মাস্টার, পরে প্রধান শিক্ষক হয়ে অবসর নেন। শিশুদের সাথে সময় কাটাতে তার ভালোই লাগে।
পরিচয় পর্ব শেষ হতেই পিউ বলে, “বাবা আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন বাবা, আজ থেকে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। আমাদের একটা মেয়েও আছে বাবা। ওর নাম ঐশি। এইযে ওর ফটো দেখেন।“ বলে নিজের মোবাইল টা তার দিকে এগিয়ে দিলো পিউ।
প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে ঐশির ছবি দেখে কিছু বিশেষ কথা মনে পড়ে যায় আলী সাহেবের।
চতুর্থ পর্ব
সকাল বেলা ঘুম চোখ খুলে সামনে একজন অপরিচিত মানুষকে দেখে চমকে ওঠে ঐশি।
তুমি কে ? জিগ্যেস করলো ঐশি
আমি যে তোমার ঠাকুরদাদা গো দিদিভাই। 😊
শুভ জন্মদিন দিদিভাই😊💐
দাদুকে জড়িয়ে ধরলো ঐশি।❤️ এবার আর চিন্তা নেই তার। তারও ঠাকুরদা আছে, সেও এবার সবাইকে স্কুলে গিয়ে বলবে।
শুধু ঠাকুমার কথা ভেবে একটু মন খারাপ হলো ঐশির। ওহ কিছু নয়।
কপাল মন্দ না হলে, হয়তো সেটাও হয়ে যাবে।
দিনে দিনে আলী সাহেবের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো ঐশির।
তার সাথে খেলা, তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। রাতে তাকে কাছে নিয়ে ঘুমানো। আরো কতো কি।।
এই দৃশ্য দেখে শৈবাল আর পিউয়ের চোখে জল এসে গেলো। এই ভরা সংসারে যদি মা কে পাওয়া যেতো তাহলে তো আর কথাই ছিলো না।
একদিন বিকেলে চায়ের আড্ডায় পিউয়ের ইশারার শৈবাল, আলী সাহেবকে জিগ্যেস করলো আচ্ছা বাবা আপনার আমাদের সাথে থাকতে কেমন লাগছে?
কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো?
“না না বাবা তোমাদের সাথে থাকতে খুবই ভালো লাগছে আমার। বৌমার আদর্যত্নের কোনো ত্রুটি নেই। তুমিও বৌমার সাথে সমান তালে তাল রাখছো।“ বললো আলী সাহেব।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কোনা টা যেনো চিকচিক করে উঠলো আলী সাহেবের।
পিউ আর শৈবালের নজর এরালোনা সেটা।
“কি হলো বাবা আপনার চোখের কোনায় জল কেনো?” জিগ্যেস করলো পিউ।
“না মা, ওহ কিছু নয়। আজ খুব নাসিমার কথা মনে পড়ছে। ঠিক এই রক্ষম একটা ভরা সংসারে স্বপ্ন দেখেছিল সে।“
নাসিমা কে বাবা? প্রশ্ন করলো শৈবাল।
নাসিমা আমার স্ত্রী।
তিনি কোথায় আছেন বাবা? জিগ্যেস করলো পিউ।
“সে অনেক কথা মা, শোনো তাহলে। আমার তিন সন্তান। দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে।
বড়ো ছেলে পড়াশোনা করতে বিদেশে গেছিলো, আমিই পাঠিয়েছিলাম তাকে। কিন্তু বিদেশ থেকে আর ফেরেনি সে। শুনেছি সেখানেই একটি মেয়ে কে ভালোবেসে বিয়ে করে সে। তাদের নাকি একটি ছোট মেয়েও আছে ঐশির মতো। তোমরা যেদিন প্রথম আমার সঙ্গে দেখা করলে সেদিন ছোট্ট ঐশির ছবি দেখেই আমার নাতনীর কথা মনে পড়ে যায়। তাই তোমাদের হ্যাঁ করে দি।
আমার মেজো ছেলে কোনো কাজ কর্ম করেনা, আমার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তাকে একটা ফোনের দোকান করে দিয়েছিলাম।
সেখান থেকেই একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ এবং তাকে বিয়ে করে ঘরে আনে সে।
মেয়ের বিয়ে হয়েছে আট বছর হলো।
আমি আর আমার স্ত্রী মেজো ছেলের কাছেই থাকতাম। কম রোজগারের জন্যে ছেলের সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছিলো। আর তাই সে একদিন তার ছোটো বোনকে ঘরে ডাকে।
তারা দুজনে ঠিক করে আমি এবং নাসিমা তাদের দুজনের কাছে থাকবো। তারপর থেকেই আমরা আলাদা। পরে আমার মেজো ছেলের ইচ্ছায় আমি এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসি আমার বাকি জীবনটা কাটাতে। আর নাসিমা রয়ে গেলো মেয়ের কাছে।
অনেকদিন দেখিনি তাকে। তোমাদের দেখে আজ খুব মনে পড়ে গেলো তার কথা।
কথাগুলো শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো দুজনের। রাতে শুতে যাওয়ার আগে তারা দুজনে ঠিক করলো যে, মাকে খুঁজতেই হবে তাদের।
পরেরদিন আলী সাহেবের মেয়ে ফাতিমাকে ফোন করলো শৈবাল। এবং জানালো যে সে ব্যাংক থেকে ফোন করছে। তার বাবা মারা গেছেন এবং তার বাবার একটা সঞ্চয় করেছিলেন যার নোমিনী হলো নাসিমা বিবি। তাই তিনি যেনো কাল তার মা কে নিয়ে ব্যাংকে চলে আসেন।
শৈবাল একটি বহুজাতিক বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার। তাই সে তার চাকরীর এর চেয়ে ভালো সদ্ব্যবহার করতে পারতো না।
পরেরদিন ফাতিমা এলো ব্যাংকে কিন্তু তার সাথে তার মা নেই।
শৈবাল বললো আপনার মাকে আনলেন না?
“আসলে মা আমার সঙ্গে থাকেন না। মা আমার সঙ্গে থাকুক সেটা আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পছন্দ করতো না। তাই মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বাধ্য হই।“ বললো ফাতিমা।
“আপনাদের লজ্জ্বা করেনা, যে বাবা মা আপনাদের বড়ো করতে জীবন পাত করেছেন, তাদের জীবনের শেষ দিন গুলোতে তাদের আপনারা আলাদা করে দিলেন” 😪 বললো শৈবাল।
“আপনাদের মতো সন্তানের চেয়ে, নিঃসন্তান থাকা ভালো” বললো শৈবাল।
আপনাদের জীবনের আশ্রয় গড়ে দিয়ে তারা নিজেদের আশ্রয় হারালেন, এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে😪।
কোথায় আছেন নাসিমা বিবি? আমি তার সাথে দেখা করতে চাই। আর হ্যা, আপনাদের বাবা মারা যাননি, তিনি আমার বাড়ীতে আছেন আর এই সব সঞ্চয় ঠোনচয় কিছু না। আপনাকে ডেকে আনতেই আমার এই পরিকল্পনা। বললো শৈবাল।
দুদিন পর। সকালবেলা
ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য হলো ঐশি। কে যেনো আলতো হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখে একজন মহিলা তার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন।
“কে তুমি প্রশ্ন করলো ঐশি”?
ইনি যে তোমার ঠাকুমা গো দিদিভাই।। বললেন আলী সাহেব।।
ঠাকুমাকে পেয়ে আনন্দের সীমা রইলনা না ছোট্ট ঐশির।
আর এভাবেই শৈবাল আর পিউয়ের আশ্রয়ে হয়ে উঠলো পরিপূর্ণ।
ওহঃ হ্যাঁ আপনাদের তোহ বলাই হয়নি শৈবাল আর পিউ একটা বাড়ী কিনেছে।
নাম দিয়েছে “আশ্রয়” গৃহপ্রবেসের দিন সবাইকে আসতে হবে কিন্তু, অবশ্যই মুখে মাস্ক পড়ে ও সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রেখে।
Comments
Post a Comment