কভার কাহিনী ৩






শিশু ও শৈশব


এক চিলতে রোদ্দুর সকালের আকাশে । মেঘমুক্ত , দূষণমুক্ত মন । একটি স্বচ্ছ কাঁচ । এই সময়টাকেই শৈশব বলা হয় । শিশু মনস্তত্ব বুঝতে গেলে মানুষ জীবনের এই সময় কালকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে । আর তার জন্য যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন সেটি হল নিজেকে শিশু করে তোলা । এখন আপনারা নিশ্চই ভাববেন শিং ভেঙে বাছুরের দলে কিভাবে নাম লেখাই ? না না সেটা করতে হবে না । শুধু যুক্তি তর্ক বাদ দিয়ে ওদের কাজ কর্মগুলো অনুসরণ করুন । দেখবেন ওই সময়টাকে নিজের মধ্যে আবার ফিরে পেয়ে গেছেন ।
আমি কিছু উপমার মধ্যে দিয়ে শিশু অবস্থার বর্ণনা দেবো । আশা করি তোমাদের বুঝতে খুব সুবিধে হবে ---
১. শিশু মন একটি ফাঁকা পাতার মতন । সেখানে আপনি যা লিখবেন , শিশুটিও তাই শিখবে । এবার বেশ কিছু ঘটনা ভেবে দেখা যাক । যখন মোবাইল এত জনপ্রিয় ছিল না , তখন শিশুরা ছোটবেলা থেকে মোবাইল পেতো না হাতের সামনে । কিন্তু ফুটবল পেতো , বই পেতো , ক্রিকেট ব্যাট পেতো । ফলে তারা বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বই পড়া , খেলাধুলা করার নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়তো । মাঠ মুখি ছিল সে যুগের শৈশব । আবার ঘরে ঘরে টেলিভিশন পেতো কিন্তু কেবল টিভি পেতো না । ফলে ওই দুরদর্শনের মধ্যেই ডুবে যেত ওরা । এর থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার বলা যায় মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে যে জিনিসটি হাতের সামনে পায় , তাই দিয়েই তারা তাদের চরিত্র বপন করে । শৈশবের এই গুনটির মধ্যে দিয়ে আপনিও নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন । নিজের মোবাইল , টেলিভিশন থেকে সরে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠুন । সে কাজ আপনার অফিসের হোক বা বাড়ির । দেখবেন আপনাদের হাত ধরেই কর্ম সংস্কৃতি আবার ফিরে আসবে ।
২. এবার একটা পরিবারের কথা ভাবুন যেখানে বাবা বা মা সিগারেট খায় , মদ পান করে বাড়ি ফেরে , অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে । সেই বাড়ির শিশুটি তাদের দেখে কি শিখবে ? সেও সিগারেট , মদ এসব কেই নিজের নেশা বানিয়ে বড় হয়ে উঠবে , তাই না ?
৩. শিশুরা অন্যদের অনুকরণ করে থাকে । তাই তার সামনে ভাল ভাল কাজ করুন । দেখবেন আস্তে আস্তে তারাও আপনাদের অনুকরণ করছে । যেমন ধরুন আপনি স্বপরিবারে ঘুরতে যান প্রায়ই । বাড়ির শিশুটিও ভ্রমন পিপাসু হয়ে উঠবে । এবার আপনি ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতি কে নিজে অনুভব করার অভ্যাস করেন ও শিশুটিকেও সেই বিষয়ে সেখান , দেখবেন শিশুটি কি সুন্দর প্রকৃতিকে অনুভব করতে শিখে নেবে ।
৪. শিশুরা বিশ্বাস করে সকলকে । আপনি যখন কোন মন্দিরে গিয়ে শিশুটিকে নমো করতে বলেন । তখন শিশুটি আপনাকে প্রশ্ন পর্যন্ত করবে না , কেন করতে বলছেন আপনি । সে জাস্ট আপনাকে বিশ্বাস করে নমো করবে । এই বিশ্বাস ব্যাপারটা আজ আমাদের মধ্যে বড্ড অভাব । কথায় আছে , বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু ; তর্কে বহুদূর । তবু আমরা এই তর্কের মধ্যেই নিজেদের জড়িয়ে রেখেছি অনন্তকাল ধরে । শিশুদের মধ্যে থেকে এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে হিংসা রেষারেষি বন্ধ করতে পারে ।
সুতরাং , শিশু মানসিকতা আমাদের মধ্যেও বিস্তারের কতটা প্রয়োজন রয়েছে দেখা গেল । এর উপরে প্রতিটা বাবা মা র নৈতিক কর্তব্য হয় শিশুদের সঠিক জিনিস শেখানো । ভুল শেখালে তার প্রভাব শিশুর মধ্যে ভুল ভাবে পড়তে পারে । শিশুটি অন্য কাজের মধ্যে দিয়ে সমাজের ক্ষতি করতে পারে । কাজটি যদিও আলাদা কিন্তু শিক্ষা কিন্তু সেই অতীতের পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা । শিশুদের স্বার্থহীন হতে সেখান । শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবা অভ্যাস করালে শিশু নিজের উন্নতি নিয়ে এতটাই ভাবতে শুরু করবে যে একদিন সে আপনাকেও ভুলে যাবে ।
সময় খুবই কম আর শিশুকে ভবিষ্যৎ সমাজের প্রতিনিধি আপনিই গড়ে তুলতে পারেন । এবার সিদ্ধান্ত আপনার হাতে ।
















সন্দীপ দাস

Comments

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮