অপরাজিত ৬

অপরাজিত অনলাইন 
সংখ্যা - ৬ 




সম্পাদকীয় 


 বর্ষা বলতে যা , শেষ অব্দি তা এসেই গেল। আগের সম্পাদকীয় তে বর্ষা লিখেছিলাম , সে রথের রশি হাতে বেরিয়েছিল দেশ পরিভ্রমণে। তার গড়িমসি করে আসায় অভিমান হয়েছিল বিস্তর।
তার চেয়েও বড়ো, ফেলে আসা প্রতি বছরের নস্টালজিয়া নিয়ে। নতুন বাংলা বছরের বর্ষবরণ, গ্রীষ্মের তাপদাহ সন্তাপ , বারান্দা জুড়ে জামপাতার হাওয়া সবই যেন মায়ের হাতের এক বাটি পায়েসের আস্বাদ নিচ্ছে আমাদের নিঝুম জিহ্বা,
আর গড়ানো স্বাদগ্রন্থি থেকে গড়িয়ে পড়ছে দীর্ঘ প্রতীক্ষা-- সকালের আলোর গায়ে । 

যে বিকেলের লালিত্যে অবকাশ-শিল্পী-মন ডুব দিয়ে শিল্প গড়তেন,  আজ যেন জীবনভিক্ষু সেজে  অনন্ত প্রতীক্ষা তার -- নিহিত একটা আগুন--  আনন্দ মৃত্যুর। এক মৃত্যুর উৎসব। নিত্যবিরচিত অবকাশ এখানেও......

          আমার অক্ষমতা গুলো যেন রোজকার জীবনের আনাচে কানাচে লুকিয়েছিল। তারা আজ এই উৎসবের প্রাক্কালে অক্ষরের পোশাক গায়ে চাপিয়ে নেমে পড়ল সদলবলে শিল্পে সাজবে বলে। এক অভূতপূর্ব কারুকল্প, যার হাওয়ায় হাওয়ায় দেখ হাহাকারের গান।
         আমি অভিভূত না কি তারা অনাহূত এ দ্বন্দ্বে আজ নাই-ই বা মাতলাম। শুধু তারিয়ে তারিয়ে দেখলাম তাদের প্রদর্শনীর নান্দনিকতা। 

তুমি কখনো প্রান্তে নেহাতই অনাদরে বেড়ে ওঠা ঘাসের শেকড়ের বিলাপ শুনেছ ; যেখানে বৃষ্টি তার শেষ ফোঁটার লালিত্যটুকুও দিতে কার্পণ্য করে! তারও পাঁজরের কান্না থেকে বেরিয়ে আসে অনাদরের বিষাদ পলক নিমীলিত রাগ : ক্রমে সে উত্তাপ প্রকৃতির স্বৈরতন্ত্রের প্রাচীরে জাগায় ভীষণ কাঁপন। খসে পড়ে নিরূপায় বাহুল্য গুলো ঝুর ঝুর ।
জানো ,সেদিন উল্কা পতন হল, তার কণাতেও ছিল উত্তাপ। তবুও শেষ বিন্দুটুকু বিষাদের জয়গানে উচ্ছ্বসিত। 
কেও জানে না , হয়ত কোনো একদিন, এক বিমর্ষ কবির কাব্যগ্রন্থে উচ্চারিত হবে নুইয়ে পড়া ঘাসের নির্গুন খিদের যাপন ; যা বাড়িয়ে তুলবে এই বর্ণময় পৃথিবীরই বিজ্ঞাপনের চমক ! যেমনভাবে স্বর্গের অপ্সরা খিদে বাড়িয়ে তোলে মুনি ঋষিদের। 
হে ভ্রান্ত  জীবনসত্ত্বা, এই উন্মাদ সময় 
বীজের গায়ে জেগেছে অঙ্কুর---
এখানে শিল্প সৃষ্টি হচ্ছে এসো না এখন, পরম জন্মক্ষণ.......
আমি বৃথাই দেখি শ্মশানে শ্মশানে আগুনের নাচন.......
 :::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
                                  মৌসুমী মুখোপাধ্যায় 


                                    পাতা : ১ 


কভার কাহিনী 


প্রিয়
       সুশান্ত,                                                                                
               
                  হয়তো ভালো আছো অজানা কোনো   দেশে। আজ তোমায় কিছু কথা বলার আছে,জানি নক্ষত্রের আড়ালে থেকে তুমি শুনছো। "Life and Death,it is not in our hand, we can decide how to live our Life" সারাজীবন মনে থাকবে তোমার এই শেষ বলা কথাটা।না এটা কোনো ডায়ালগ্ নয়,এটা জীবনাদর্শ,যা তুমি প্রমান করেছো নিজের জীবনে।নইলে বিহারের পাটনা থেকে স্বপ্নের শহর মুম্বাই, সফরটা তো সোজা ছিল না। কতজন পারে বলোতো নিজের প্যাশনের জন্য নামি ইঞ্জিয়ারিং কলেজ,ডিগ্রি,উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে পিছনে ফেলে এরকম সংগ্রাম করতে।সব অনিশ্চয়তাকে সাফল্য দ্বারা নিশ্চিত করতে,কজন পারে।আজ রিলিজ হল তোমার শেষ মুভির ট্রেলর্ টা,আমরা তোমার অনুসরণ কারীরা আজ ভীষণ কেঁদেছি, সত্যিই' দিল্ আজ বড্ড বেচারা' আমাদের।তোমার প্যাশন আজ আমাদের শূন্যতা দেয়নি বরং পরিপূর্ণ করেছে। তারা খুঁজতে খুঁজতে তারার দেশে কেন হারিয়ে গেলে বলো তো?জানি অভিমান হয়ে ছিলো। তবু কেনো? বুঝি,এই উত্তর টা আর কোনোদিনই পাব না। 'সত্যিই "জন্ম,মৃত্যু আমাদের হাতে থাকে না।কিন্তু কিভাবে বাঁচব সেটা আমরাই ঠিক করি।" সিলভার স্ক্রিনে এই বলা কথাটা বার বার শুনতে চাই আমরা।দেখতে চাই ওই ভুবন মাতানো হাসিটা বারবার। আর বলব- "ভালো আছি,ভালো থেকো,আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।" পারলে ফিরে এসো,অন্য নামে,অন্য কোনো স্থানে। তোমায় সারাজীবন এই ভাবেই মনে রাখব।
                                                               
                                                         

                                                        ইতি---
                            তোমার এক অনুরাগী ভক্ত                               
                                        সুমন ঘোষ


                                    পাতা - ২ 


কবিতা 


আমার প্রেমের অবসন্ত 
                      কোয়েল 

কোনো এক অবসন্তে যদি আকাশ জুড়ে মেঘ করে আবার ,
আমি তোমার অগোচরে তোমার নামের চিঠি লিখব,
ঠিকানা হবে আমাদের সেই পুরোনো প্রেমের ঠেক।।
সবার তো আড্ডার ঠেক হয়, 
আমাদেরটা একটু আলাদা- প্রেমের ঠেক।
যেখানে গল্প ছিল এক গুচ্ছ, 
উভয়ের হাতের স্পর্শ ছিল 
গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে দুজনের ভাগাভাগি ছিল, 
পাঞ্জাবির বুক পকেটে ছিল তোমার দেওয়া কলম, 
তোমার মায়াবী ঘন কালো চুলে বাঁধা ছিল সুগন্ধি জুঁই।
বৃষ্টিরা ঝরে পড়তো অবান্তর আমাদের শরীর ছুঁয়ে। 
অবসন্তেও ছিল এক অদ্ভূত বসন্তের গন্ধ। 
আমরা নিজেদের অদৃশ্য আলিঙ্গন খুঁজে নিতাম সেই বৃষ্টির স্পর্শে
আমাদের প্রেমটা, 
ঠিক আজকালকার প্রেমের মতো ছিলোনা ;
মান অভিমান ছিল, তবে মন কষাকষি ছিল না। 
আশা ছিল, তবে চাহিদা ছিল না। 
তবে সেদিনের বর্তমান যে, 
আজকের অতীত ;
সময় যে দেরি করে না। 
তবে স্মৃতি গুলো ঠিক থমকে দাঁড়ায়;
যেমন আমি আর তোমার স্মৃতি 
আজও একই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। 
শুধু কোনো এক প্রেমের বসন্তে নয়, 
বাকি সকল অবসন্তেও। 
আসলে, 
আমরা ভালোবাসায় ছিলাম, অভ্যাসে নয়।। 




সাদা কালো ছবি

সমাজ বসু

চোখ বন্ধ করলে আজও চোখের পাতায় ভেসে ওঠে
দেশভাগের সাদা কালো মলিন দৃশ্য।--
কাঁটাতার অতিক্রান্ত অজস্র ছিন্নমূল মানুষের 
পায়ে পায়ে হেঁটে আসা 
অনিশ্চিত আশ্রয়ের সন্ধানে--
একরাশ গহীন অন্ধকারে নিদারুণ ক্ষিপ্রতায় খুঁজে ফেরা
এক টুকরো মাটি---
        এক চিলতে আকাশ---
এক চিলতে আকাশের নিচে, ফেলে আসা গাছ পাখি ও মসৃণ উঠোনের
সুখ স্মৃতি মুছে--
আরো একবার টুকরো টুকরো স্বপ্নের ক্লান্তিহীন বীজ বপন,
আরো একবার--
প্রাণ ভরে ফিরে পাওয়া জীবনের পরম স্বাদটুকু।-

চোখ বন্ধ করলে আজও চোখের পাতায় ভেসে ওঠে.......




আলোক তৃপ্তি
               অর্পিতা ঘোষ

রাত আসেনা ঘরে...
পরিযায়ী হয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে
ঠিকানা দেয়নি আমায়
সভ্যতাও নিস্তব্ধ নিথর
শুধু গাছেরা জেগে আছে আমার সাথে
ওদের তো নেই কোনো মনখারাপ
তারার আলো গায়ে মেখে কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার অপেক্ষায়,
ভোর হলেই পাপড়ি দেয় মেলে
সকালে সূর্যের সোনালী হাসির সাথে খেলবে,
পাতারা খুশিতে মাতে, ক্লোরোফিল গায়ে মেখে সতেজ হবে বলে।

আমার নেই কোনো অপেক্ষা
প্রতি রাতে একটা করে তারা খসে পরে,
আটপৌরে জীবন মুক্তির কামনায় নিঃশেষ হবে একদিন,
ধীরে ধীরে মাটি হবো, মাটিতে মিশে
কালক্রমে কোনো উদ্ভিদ জন্ম নেবে আমার বুকে,
মনোহর রূপ নিয়ে পাতা আর ফুলে ফুলে ভরবে
দীপ‍্যমান হয়ে তৃপ্তি পাবো সেদিন
           পৃথিবীর কাছ থেকে।




বিষাদ ঝরে পড়ে
   আবদুস সালাম

হাহাকার বুনি বিশ্বাসের মাটিতে
অচেনা গ্রামের সীমানা জেগে ওঠে
ঈশ্বর  
পান করে ধর্মের নিকোটিন 
মেঘ ডেকে যায় মানবিক মাঠে

মানুষ মানুষ নিয়ে খেলা করে 
রক্তাক্ত হয় পার্থিব‍্য উঠোন
প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই আকাশে
হাওয়ায় উড়ছে তলোয়ারের নিশান

অন্ধকারে খুলে যায় পোশাক
শুনি উল্টো ধারাপাতের গল্প
উল্লাসের  বাঁশি বেজে উঠলে বিষাদ ঝরে পড়ে মনুষ্য বাগানে



অন‍্য কথা
আবদুস সালাম

আহ্বান করি বিবেক কে
খুব ঘুম হলো     এবার জাগো
ভাঙাচোরা সম্পর্কগুলো মেরামত করে নাও
বড্ড একা হয়ে পড়ছি দিন দিন

মৃত বিবেকের ঘরে আমাদের ঘর
উৎসবের নির্বীজ অন্ধকার প্রবাহিত হয় ক্ষয়াটে সময়ের হাত ধরে

প্রয়োজন আছে বলে গলা ফাটায়
খাঁয় খাঁয়  সব তৃষ্ণার্ত  বালিয়াড়ি
দেশ জুড়ে প্রতারকের সংসার

একটা নতুন দিনের চিকচিক আশা
নতুন বাঁশি নতুন সুরে বাজলেও
বিশ্বাস উড়ে যায় মেঘ হয়ে

দলেদলে চাতকেরা তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে তাকিয়ে আছে
এক্ষুনি বর্ষা নামবে দেখে নিও ।



ফুলস্টপ.
সত্যব্রত ধর

প্রতিষ্ঠান বিরোধী অসংখ‍্য বিবেকের দাগ,
আয়নাতে মরু শহর আঁকে দেখে...
জ‍্যামিতির বৃত্তীয় সরলরেখার কম্পাসে,
গ্রন্থকীট শেষ রাতে খুন হয়...!
উৎসাহী কিছু পতঙ্গের দল প্রতিহিংসায়,
গোপনে নিষিদ্ধ বিদ্রোহে মাতে।
দেশদ্রোহী অগ্নিকুন্ডের ধোঁয়ার নেশায়,
যুবসমাজ হঠাৎ ভ‍্যানিশ...!
ঘুম ঘুম ম‍্যাজিক ছেঁড়া লাইটার জ্বেলে,
কন্ঠ পরিষ্কার করে বজ্জাতের দল।
ট‍্যাক্সির মার্জিনে সুখচর বোরলিন মাখা বেশ‍্যা,
মুখরোচক মুখোশে গা ঢাকে...!
প্রলম্বিত ভারী বিচ্ছেদ অর্থের জোরে মাঝরাস্তায়,
জলছাপ মিলনের পদবী লুকায়।
শরীরি পরীক্ষার বিনোদন গুটি গুটি পায়ে,
রোজ সকালে লেখে ফুলস্টপ।


'কে বলে তুমি প্রাক্তন"
          - নৈর্মিষা প্রামানিক

কে বলে তুমি প্রাক্তন?
তোমাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাসন?
তবে তোমায় কেনো খুঁজে পাই -
তিতাসের পাড়ে একাকিত্ব ঢেউয়ের মাঝে,
আর তোমার জন্য রোদ পুষে রাখি হৃদয়ে।

কে বলে তুমি প্রাক্তন?
তোমাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাসন?
তবে আমি কেন শুনি -
হাওয়ার শিসের মতো কানে কানে বলো "আমি আছি",
তোমাকে খোলা চুলে দুহাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরি।

কে বলে তুমি প্রাক্তন?
তোমাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাসন?
তবে তোমায় কেনো অনুভব করি -
অনুতাপ ভরা হৃদয় আগুনের তেজে,
আর আমি নিজেকে পুড়িয়ে শুদ্ধ হই নীরবে।

কে বলে তুমি প্রাক্তন?
তোমাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাসন?
তবে তোমায় কেনো দেখি -
কর্মহীন পূর্ন মহাকাশে গড়া বসতে,
তোমার জন্য জাগি নিদ্রাহীন নিঃসঙ্গ রাতে।

কে বলে তুমি প্রাক্তন?
তোমাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাসন?
তবে তোমায় কেনো ফিরে পাই -
তোমার দেহ মেশে থাকা শেষ সাড়ে তিন হাত জমিতে,
সেখানে আবার প্রেমে পড়ি তোমার স্মৃতির রাজ্যে।

প্রাক্তনকে যবে খুঁজে পাবে প্রত্যহের ক্রিয়ায়,
সেই দিন নির্বাসন দেখাবে প্রত্যাবর্তনের গতি।
তাই আমি প্রাক্তনকে আঁকড়ে ধরি,
আমি প্রাক্তন নিয়ে বাঁচি,
আর প্রতীক্ষায় থাকি নব-রূপের আলাপের ক্ষনে।



                                   পাতা - ৩


প্রবন্ধ 


এসো হে বৈশাখ 
                                   -শেখ আসমত 

"এসো হে বৈশাখ, এসো এসো 
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে |
মুমূর্ষুরে দাও উড়য়ে 
 বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক 
 এসো এসো "------- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান এখন বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে| নতুন বছরের প্রথম দিন আজ বাঙালির প্রাণের আর মনের মিলন ঘটার দিন| পুরনো সব বিভেদ, জরা আর দুঃখকে ভুলে আজ বাংলা এই চলমান সালকে বরণ করে নেবে |

 জীর্ণ তাকে বাদ দিয়ে প্রকৃতি গাইছে নতুনের গান| চারিদিকে লাবণ্যের জোয়ার, আনন্দের কালোচ্ছাস ! নিম্নে শস্য প্রান্তরে সবুজের সমারোহ| অরণ্যের  পাতায় পাতায় সবুজের ছড়াছড়ি| দিগন্তবিস্তৃত বোরো  ধানের ক্ষেতে রৌদ্র পুলকিত সোনালী ঢেউ| নদীতীরে লাস্যময় ! শুভ্র ভাটফুলের গুচ্ছে লীলায়িত মৃদু চামর | প্রাণে প্রাণে লেগেছে আনন্দের দোলা| প্রকৃতিতে মাতাল সমীরণ| নতুন বছরে প্রার্থনা একটাই-বৈশাখের শক্তিতে মঙ্গল আর শুভ যেন ভরিয়ে দেয় সবার জীবন |একই শক্তিতে বাঙালী যেন পরাভূত করতে পারে সব অশুভ শক্তিতে |প্রার্থনা যা কিছু গ্লানিময় -জীর্ণ ও যা কিছু পুরনো -তা বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে হোক ছাই| গ্রীষ্মের এই তাপস নিঃশ্বাস বায়ে পুরোনো বছরের সব নিষ্ফল সঞ্চয় উড়ে যাক দূরে, যাক দূর দিগন্তে মিলিয়ে| মুছে যাক গ্লানি, মুছে যাক জরা| অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা| এসো-এসো-এসো-হে-বৈশাখ|

 বঙ্গ প্রকৃতির ঋতুরঙ্গশালার প্রথম ঋতু নায়ক গ্রীষ্ম| বর্ষ চক্রের প্রথম দৃশ্যেই ক্রুদ্ধ দুচোখে প্রখর বহি:জ্বালা নিয়ে রূদ্র আবির্ভাব ঘটে এই মহাতাপসের নির্দয় নিদায় সূর্য কঠিন হাতে ছুড়ে মারেন তার নিদারুণ খরতপ্ত অগ্নিবান| প্রখর তপন তাপে জীবধাত্রী ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যায় | চৌচির হয়ে যায় তার তৃষ্ণাত্ব প্রান্তর| গ্রীষ্মের মরু- বসনায় ধরিত্রীর প্রাণরস শোষিত হয়ে কম্পিত শিখায় উড়তে থাকে মহাশূন্যে| এই দারুণ দাহন বেলায় স্তব্ধ হয়ে যায় সকল পক্ষী কাকলি| কোথাও প্রাণের চিহ্নমাত্র নেই| নেই শ্যামলতার  আভাস| সর্বত্রই এক ধূসর মরুভূমির  ধুধু বিস্তার সমগ্র জীবজগতে নেমে আসে এক প্রাণহীন, রসহীন, পান্ডুর বিবর্ণতা | তারই মধ্যে একদিন ধুলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল নিয়ে তপঃক্লিষ্ট, তপ্ততনু ভীষণ ভয়াল গ্রীষ্ম অপরাহ্নের দিকে ডাক দেয় কালবৈশাখীকে |শুধু অনন্ত রূপময়ী বাংলার আকাশেই দেখা যায় এই রূপ নায়কের সেই রুদ্র সুন্দর রূপ | গ্রীষ্ম ফুলের ঋতু নয়, ফুল ফোটাবার তাড়াও নেই তার !সে শুধু ফলের ডালা সাজিয়ে নিঃশব্দে বিদায় নেয় সে |

সব না-পাওয়া বেদনাকে ধুয়েমুছে আকাশ বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ| নতুন স্বপ্ন, উদ্যম ও প্রত্যাশার আলোয় রাঙ্গানো নতুন বাংলা বছর| শুভ হোক নববর্ষ|

 তাই সবশেষে কবির ভাষায় বলতে পারি-

 এসেছে বৈশাখ মাস আজি এই ধরা তলে
 বর্ষ নিয়েছে বিদায়, বিদায়ের অশ্রু জলে|
 বৈশাখের আগমনে জাগে নব নব আশা, 
 পুরাতন বর্ষে জমা যত বিষাদের ভাষা|
 এসো হে বৈশাখ আজি এই ধরণীর পরে
 আবির্ভাব তব শীতের কুয়াশা যাক সরে|
 মুছে যাক গ্লানি আর জড়তা  ঘুচে যাক
 নিয়ে এসো রুদ্র প্রচন্ড উত্তাপ হে বৈশাখ!
 এসো হে বৈশাখ আজি হোক তব আগমন
 রুদ্র প্রখর বানে বানে, উত্তাপ করো বরিষণ|
 কুয়াশা ধরা সকালে রবির প্রথম প্রভা দিয়ে
 এসো হে বৈশাখ এবার প্রচণ্ড উত্তাপ নিয়ে|



গল্প 



ঘুণ পোকা

                   আবদুস সাত্তার বিশ্বাস

                                 এক

      আরাবুল তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাকালেই একটি মাঠ দেখতে পায়।বিরাট একটি মাঠ। পাম্পের মাঠ।পাম্পের জলে এই মাঠের সমস্ত জমি চাষ হয় বলে গ্রামের মানুষ মাঠটিকে  'পাম্পের মাঠ' বলে।আবার অন্য মাঠের তুলনায় এই মাঠে ফসলও খুব ভালো হয় বলে এই মাঠের জমির দামও খুব বেশি।এই মাঠেই আরাবুলের দশ বিঘা জমি রয়েছে।দশ বিঘা জমি।ডাকলে কথা বলে যে জমি।বিকেলে রোদ কমে যাওয়ার পর আরাবুল একবার মাঠে নামবে ভাবল।জমি দেখতে মাঠে নামবে।

                                দুই

       আরাবুল এখন গ্রামে থাকেনা।শহরে থাকে। শহরে তার শ্বশুর বাড়িতে থাকে।তা থাকলেও গ্রামে তার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি রয়েছে।ঘর বাড়ি ও পুকুর, বাগান থেকে শুরু করে মাঠান জমি। গ্রাম থেকে সে কিছুই নিয়ে যায়নি শহরে।তার বন্ধু নূরুল দেখাশোনা করে।শহরে যাওয়ার সময় আরাবুল তাকে দেখাশোনার ভার দিয়ে গেছে।তবে বছরে একবার করে আরাবুল গ্রামে আসে।এই জৈষ্ঠ মাসে।আম,কাঁঠাল পাকার সময়।যখন আসে নূরুল তাকে ফসলের সব হিসাব ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেয়।এবং ফসল বিক্রি করে টাকা দেয়।আরাবুল দু-দিন চার দিন গ্রামে থেকে তারপর আবার শহরে চলে যায়।নিজের বাগানের গাছে পাকা টাটকা কিছু ফল নিয়ে ব‍্যাগ ভর্তি করে।

                               তিন

      শহরে যাওয়া আরাবুলের পাকা বারো বছর চলছে।বারো বছর একেবারে কম সময় নয়। একটা যুগ।তার আগে আরাবুল গ্রামেই ছিল। গ্রামের মাঠ,ঘাট,বন-জঙ্গল,নদী-নালা সব তার আপনজন ছিল। বাবার সঙ্গে সে জমিতে চাষবাস করত।পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছিল না।ফলে পূর্বপুরুষের পেশা বাবার সঙ্গে চাষবাসে নেমেছিল।তারপর হঠাৎ একদিন তার বাবা মারা গেলে আরাবুল একা হয়ে গেল।তারপরই সে চাষবাস ছেড়ে শহরে চলে গেল।
     আরাবুলের স্ত্রী রোজি বিবি।বিয়ের পরে রোজি বিবি।তার আগে সে রোজি খাতুন ছিল।সে ছাড়া আরাবুলের শ্বশুর শাশুড়ির আর কেউ নেই।না কোন ছেলে না কোন মেয়ে।রোজিই একমাত্র।সেই হিসেবে রোজির মা-বাবার দেখভালের দায়িত্ব কিন্তু রোজির উপরই পড়ে।কিন্তু দূর থেকে সে তাঁদের দেখভাল  করবে কিভাবে?অতএব উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য তারা শহরে চলে যায়।
     কিছুদিন হল রোজির মা মারা গেছে।রোজির বাবারও শরীর খুব একটা ভালো নেই।কবে যে চলে যাবেন!তবু যে ক'টা দিন বেঁচে আছেন দেখভাল তো করতেই হবে।তারপর যেদিন নেই হয়ে যাবেন তারা গ্রামে ফের ফিরে আসবে।কারণ আরাবুলের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সবকিছুই গ্রামে।গ্রামে তার বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই রয়েছে।রয়েছে তার পুরনো কত স্মৃতি।যেকারণে আরাবুল আবার গ্রামেই ফিরে আসবে।কিছু কিছু মানুষ থাকে গ্রামের মানুষ হয়েও তারা গ্রামকে মেনে নিতে পারেনা।অবহেলা করে।শহরকেই বেশি পছন্দ করে।আরাবুল তাদের দলে পড়েনা।শহরের চাইতে গ্রামকেই তার বেশি ভালো লাগে।গ্রামকেই সে বেশি পছন্দ করে। গ্রামেই সে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।কথায় আছে না, গ্রাম স্বর্গ!সে আবার তাই গ্রামেই ফিরে আসবে।এসে পূর্বপুরুষের পেশা চাষবাসে আবার মন দেবে।কারণ ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান জীবিকাই হল চাষবাস।অতএব কাজটা সে ছাড়বে না।আঁকড়ে ধরে থাকবে।

                                চার
  
     সে এলেও তার দুই ছেলে গ্রামে আসবে না।বা আসতে চাইবে না।কারণ তাদের জন্ম যে গ্রামে নয়,শহরে।তারা বড়ও যে হচ্ছে শহরে।পড়াশোনাও করছে শহরে।শহরের ইট,পাথর, সরু গলি আর বদ্ধ হাওয়াই যে তাদের কাছে এখন অত‍্যন্ত প্রিয় হয়ে গেছে।ফলে গ্রামের পরিবেশ যতই মনোরম হোক।গ্রামের আকাশ যতই উদার হোক।গ্রামের মাঠ যতই খোলা হোক। গ্রামের নদী কুলকুল করে যতই প্রবাহিত হোক। গ্রাম যতই স্বর্গ হোক।তবু তাদের গ্রাম ভালো লাগবে না।গ্রামে মন বসাতে পারবে না।গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না।এই জন্যই তারা গ্রামে আসতে চাইবে না।তারা আসতে না চাইলে আরাবুলও তাদের আসার জন্য পীড়াপীড়ি করবে না।কারণ গ্রাম যতই স্বর্গ হোক সুযোগ সুবিধা কিন্তু শহরেই বেশি।তাই তারা না আসতে চাইলে না আসবে। আরাবুল তাদের আনবে না।শহরেই রেখে দেবে।তার শ্বশুর মশাইয়ের যে বাড়িটায় তারা এখন রয়েছে ওই বিরাট বাড়িটা তার শ্বশুর মশাই আগেই আরাবুলের দুই ছেলের নামে লিখে দিয়েছেন।নাহলে মৃত্যুর পর তাঁর ভাই ভাইপোরা যদি ভাগ পেয়ে যায়।যেকারণে আরাবুলের ছেলেরা যদি শহরে থাকতে চায় তো থাকবে।তার কোন আপত্তি নেই। গ্রাম থেকে তারা মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে ছেলেদের শুধু দেখে আসবে।

                                 পাঁচ

     শহরে যাওয়ার আগে আরাবুল তার বিষয় সম্পত্তি যেমন--- পুকুর, বাগান এবং মাঠান জমি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিল।গ্রামে এসব রেখে সে শহরে যাবে কি করে?গেলে এসবের কি হবে? পুকুর ভর্তি মাছ।তবু পুকুরে একটা মাছ থাকবে না।সব শালা বারো ভূতে ধরে খাবে।বাগানে যত ফল হবে একটাও ফল পাকতে দেবেনা।পাকার আগে কাঁচাতেই শালা ভূতেরা সব পেড়ে খেয়ে নেবে।শুধু গাছের ফল পেড়েই খাবেনা।গাছের ডাল ভেঙে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ছাগল দিয়ে পাতা খাওয়াবে।যেন ভূতেদের সব বাপেদের গাছ! যখন যা ইচ্ছা তাই করবে!ফলে গাছ মরে যাওয়ার ভয় থাকবে বেশি।গাছ তো আর এমনি এমনি মানুষ হয়নি।কষ্ট করে মানুষ করতে হয়েছে।গাছ মানুষ করতে তার বাবাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছোটবেলায় সে তার বাবাকে গাছের পিছনে প্রচুর মেহনত করতে দেখেছে।গাছ লাগানোর পর গাছের কি যত্ন নেওয়া!গরু,ছাগলে মুখ দেবে বলে বাঁশের রেলিং দিয়ে গাছ ঘিরে রাখা থেকে শুরু করে সকাল-সন্ধ্যা দু-বেলা গাছের গোড়ায় জল দেওয়া।গাছ যাতে মরে না যায় এবং তাড়াতাড়ি সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে পারে।ঠিক ছেলে মানুষ করার মতো করে তার বাবা গাছ মানুষ করেছেন। আর সেই গাছ,সেই বাগান ভূতেরা নষ্ট করে দেবে!না,এ হতে পারেনা।কোনভাবেই এটা হতে দেওয়া যাবে না।তার বাবা আজ পৃথিবীতে বেঁচে নেই ঠিকই।কিন্তু তার বাবার সম্পদ তো বেঁচে রয়েছে।হঠাৎ মরে যাওয়ার কারণে সে তার বাবার অন্তিম সেবা করতে পারেনি।কিন্তু তার জন্য যে সম্পদ তার বাবা রেখে গেছেন সেই সম্পদের সে ঠিকই যত্ন নেবে।বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ সে কোনভাবেই নষ্ট হতে দেবেনা।আর তারজন‍্যই সে নূরুলকে দেখাশোনার ভার দিয়ে গেছে।ফলে ভূতেরা কিছুই করতে পারেনি।হয়তো চেষ্টা করেছিল।ওইসময় নূরুল তাদের টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল বলে পারেনি।যেকারণে আরাবুলের এখন খুব ভালো লাগছে।খুব ভালো লাগছে।

                                   ছয়

     আরাবুল শহরে যাওয়ার দিন কতেক আগে নূরুল একবার তার কাছে তার বাড়িতে এসেছিল। আরাবুল তখন ঘরে বসে তার বাবার পু্রনো রেডিওটা দীর্ঘদিন না বাজানোর ফলে নষ্ট হয়ে পড়েছিল বলে সেটা মোছা ঘষা করে শহরের ভালো মেকানিকের কাছে নিয়ে গিয়ে সারিয়ে নিয়ে আবার বাজাবে বলে মোছা ঘষা করছিল। কিন্তু রোজি ঘরের বাইরে ছিল।নূরুল সেই সময় বাড়িতে এসে আরাবুলকে দেখতে না পেয়ে রোজিকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,"আরাবুল আছে গো?"
    "আছে।"
    "কোথায়?"
    "ঘরে।"
    নূরুল তখন তাকে ডেকে দেওয়ার কথা বলেছিল,"একটু ডেকে দাও।"
     রোজি আরাবুলকে ডেকে দিয়েছিল,"তোমাকে ডাকছে গো।"
     আরাবুল বেরিয়ে এসেছিল,"কে,নূরুল?"
     "হ‍্যাঁ।"
     "কি হল,বল।"
     "তোর কাছে একটু এলাম।খুব দরকার।"
     "কি দরকার,বল।"
     "তোর কাছে একশোটা টাকা হবে?থাকলে দে। ময়েজ সেখের দু-দিন কাজ করেছি পয়সা পাইনি।কাল বিকালে দিবে বলেছে।দিলে কালই তোকে দিয়ে যাবো।"
    "নিয়ে যা।"বলা মাত্র আরাবুল তাকে টাকাটা বের করে দিয়েছিল।টাকাটা নিয়ে নূরুল চলে আসতে গিয়েছিল।ওইসময় আরাবুল তাকে বলেছিল,"চলে যাচ্ছিস?"
     "হ‍্যাঁ।কিছু বলবি নাকি?"
     "বলতাম তো।"
     "খুব জরুরি কথা নাকি?"
     "খুব জরুরি না।আবার খুব জরুরি।"আরাবুল বলেছিল।
     নূরুল তখন বলেছিল,"কথাটা কাল শুনলে হবেনা?"
    "আজ খুব ব‍্যস্ত আছিস নাকি?"
     "আজ একটু ব‍্যস্ত আছি।বাজার যেতে হবে। শ্বশুর এসেছে।"
     "ঠিক আছে, যা তাহলে।"
      নূরুল চলে এসেছিল।

                                   সাত

    পরের দিন কথামতো নূরুল ঠিকই এসেছিল। নূরুল যে আসবে সে বিষয়ে আরাবুলের মনে গভীর বিশ্বাসও ছিল।কারণ আগেও নূরুল অনেকবার তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। এবং যেদিন দিয়ে যাবে বলেছে দিয়ে গেছে।কথার কোনদিন খেলাপ হয়নি।যাইহোক,নূরুল এসে টাকাটা দিয়ে আরাবুলকে  বলেছিল,"টাকা এক্ষুনি পেলাম।পেয়ে অমনি তোকে দিতে চলে এলাম।"
    আরাবুল টাকাটা নিয়ে বলেছিল,"এক্ষুনি পেয়ে এক্ষুনি দিতে চলে এলি?পরে দিলেও হতো।"
    নূরুল তার উত্তরে বলেছিল,"সে হতো।কিন্তু আমার কাছে কেউ টাকা পেলে আমার ভালো লাগেনা।মানে মনে শান্তি পাইনা।মন শুধু কখন শোধ করব করব করে।তাছাড়া অভাবের সংসার। কখন কোন দিকে খরচ হয়ে যাবে।তখন দিতে পারব না।কথার দাম থাকবে না। কথার দাম ঠিক রাখলে পরে এলে আবার পাবো।"
    আরাবুল বলেছিল,"তোর চিন্তাটা অবশ্য মন্দ না।কথার দাম রাখলে তার আলাদা একটা মূল্য আছে।প্রয়োজনের সময় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে।"
    নূরুল বলেছিল,"তুই বলবি কি,সেটা কি আমি জানি না?যাক,কাল কি কথা বলবি বলছিলি? বলবি নাকি?"
    আরাবুল বলেছিল,"হ‍্যাঁ, বলব।বস।"তাকে বসতে বলেছিল।
    নূরুল বসেছিল,"বল।"
    আরাবুল বলেছিল,"তোর শ্বশুর আছে?না চলে গেছে?"
     "চলে গেছে।কাল এসে কালই চলে গেছে।"
     "কাল এসে কালই চলে গেছে!"
     "হ‍্যাঁ।এসে থাকেনা।"
     "যাইহোক।নূরুল?"
     "বল।"
     "তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।"
     "বল,শুনছি।"
     "কথাটা হল,আমরা শহরে যাবো।কবে আসবো তার কোন ঠিক নেই।শ্বশুর শাশুড়ি যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন তো থাকতেই হবে।আমরা ছাড়া তাঁদের তো আর দেখাশোনা করার কেউ নেই। আসল কথা হল,আমরা তাঁদের দেখাশোনা করার জন‍্যই যাবো।"
     "তোর পুকুর, বাগান, গাছ,জমি এসবের তাহলে কি হবে?বাড়িতে মানুষ না থাকলে যে একদিনও ঠিক থাকবেনা।সব লোকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে।"
     "ওই জন‍্যই তো ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।কি করবো বুঝতে পারছি না।তুই একটা কিছু বল না!ওই জন‍্যই তো তোকে বসতে বললাম।"
     মিনিট খানেক চিন্তা করে নূরুল বলেছিল,"তোকে তাহলে এক কাজ করতে হবে।কাউকে দেখাশোনার ভার দিয়ে যেতে হবে।নাহলে কিন্তু কিছুই ঠিক থাকবে না।"
     আরাবুল অমনি নূরুলকে বলেছিল,"কাকে আর ভার দিয়ে যাবো?ভারটা তুই-ই নে না!তোকে আমার অবিশ্বাস নেই।"তারপর বলেছিল,"যা ফল,ফসল আর মাছ হবে তুই খাবি।আর আমার জন্য রাখবি।বছরে একবার করে যখন আসবো তখন হিসাব বুঝিয়ে দিবি "
     "ঠিক আছে।"
     তখন থেকে নূরুল দেখাশোনা করে।

                                আট

     গত পরশু দিন আরাবুল গ্রামে এসেছে।এসে গ্রামে তার যত পুরনো বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ী আছে তাদের সঙ্গে দেখা করেছে।পুকুর, বাগান, গাছ ঘুরে দেখেছে।সব ঠিক আছে।কোন কিছুর কোন ক্ষতি হয়নি।শুধু মাঠেই তার নামা হয়নি। আজ বিকেলে নামবে বলে ঠিক করেছে।ঘড়িতে এখন দুপুর বারোটা বেজে এক মিনিট বাজছে। বছর খানেক বাড়িটা তালাবন্ধ থাকায় উঠোনটা আগাছার জঙ্গলে পুরো জঙ্গল হয়ে আছে। পরশুদিন এলেও সাফ করবার সময় হয়নি। সকালের দিকে পুকুরের জলে জাল টেনে তিন কিলো ওজনের একটা মাছ ধরে নূরুলকে দিয়ে মাছের ঝোল করতে বলে আজ বেলা দশটার পরে সাফ করতে শুরু করেছে।সাফ হয়ে গেলে সাবান মেখে চান করবে।তারপরই নূরুল মাছ ভাত নিয়ে আসবে।খেয়ে ঘুমাবে।তারপর রোদ কমে গেলে বিকেলের দিকে মাঠে নামবে।নেমে সব জমি দেখে সন্ধ‍্যার আগে মাঠ থেকে উঠে আসবে।আকাশে ঠিক ঝিকিমিকি বেলা থাকতে।

                                নয়

     রোদ কমে গেলে বিকেলের দিকে আরাবুলের ঘুম ভাঙলো।এবং কথামতো সে মাঠে নামলো। নেমে জমি দেখে সে সন্ধ্যার আগে মাঠ থেকে উঠে আসতে লাগল।আসতে আসতে হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, সে যে জমিটার আল দিয়ে এখন হাঁটছে জমিটা এক দাগে পাঁচ বিঘা।জমিটা এক সময় তার বাবার নামে ছিল।কিন্তু এখন নেই। এখন একটা নষ্টা মেয়ের নামে রয়েছে।কথাটা মনে পড়ে যাওয়ায় আরাবুল আর ওই জমির আল দিয়ে হাঁটল না।বরং সে জমিতে কয়েকবার "ওয়াক থু,ওয়াক থু" করে ঘৃণার থুতু ফেলল।ও আলে দাঁড়িয়ে জমিতে পেচ্ছাব করে সে অন্য জমির আল ঘুরে মাঠ থেকে উঠে আসতে লাগল।

                                  দশ

     ঘটনাটা আজকের নয়।অনেক দিন আগের পুরনো ঘটনা।আরাবুল তখন ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র ছিল।সেইসময় আরাবুলের বাবা আহমেদ আলি জমিটা ওই নষ্টা মেয়েটাকে লিখে দেন।নষ্টা মেয়েটা হল রাবিয়া বিবি।আরাবুলের গর্ভধারিণী মা।তবু আরাবুলের চোখে সে একটা নষ্টা মেয়ে ছাড়া কিছু না।কারণ নষ্টা মেয়েদের সকল বৈশিষ্ট্য আরাবুল তার মধ্যে দেখেছে।আরাবুল তাই মেয়েটাকে জমি দেওয়ার সময় তার বাবাকে নিষেধ করেছিল,"ওকে জমি দিতে হবে না।ওকে জমি দিবেন না।"
     "কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে জমি দিচ্ছি না। তোর মাকে দিচ্ছি।"
     "তা-ও দিতে হবেনা।আপনার জমি আপনার নামেই থাকুক।"
     "তোর মায়ের নামে থাকলে কি ক্ষতি?আমার নামে থাকলেও পরে তুই পাবি।তোর মায়ের নামে থাকলেও পরে তুই-ই পাবি।তুই ছাড়া আমাদের তো আর কেউ নেই।"
     "জমি নিয়ে যদি পালিয়ে যায়?তখন কি হবে?"
     "কোথায় পালিয়ে যাবে?"
     "মেয়ে মানুষের পালিয়ে যাওয়ার কত জায়গা। ধরে নিন,আপনাকে বাদ দিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেল।তখন আমি আর ওই জমি পাবো? পাবোনা।যে ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাবে এবং সেই ছেলের সঙ্গে তার যতগুলো ছেলে হবে তারা পাবে।"
     "ধুর পাগল, তাই কখনো হয় নাকি?"
     "না হওয়ার কি আছে?হতেও তো পারে। আজকাল চার পাঁচ ছেলের মা-ও পালিয়ে যাচ্ছে।পালিয়ে যাওয়াটা মেয়েদের কাছে আজকাল ফ‍্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
     "তবে সবাই যাচ্ছে না।বলতে পারিস,কেউ কেউ যাচ্ছে।যারা নাম্বার ওয়ান খারাপ মেয়ে তারা যাচ্ছে।তোর মা খুব ভালো মেয়ে।তোর মা যাবেনা।আমি তোকে এটা চ‍্যালেঞ্জ করে বলতে পারি।"
     "খুব ভালো মেয়ে আপনি কি করে জানলেন?"
     "কেন জানব না?তোর মা আমার স্ত্রী না?একটা স্বামী তার স্ত্রীকে যতটা জানবে তার থেকে ভালো পৃথিবীর আর কেউ জানবেনা।"
     "তাই নাকি?"
     "হ‍্যাঁ।"
     "তাহলে জমি দিবেনই?"
     "দিব বলেই তো ঠিক করেছি।এবং কথাও দিয়েছি।তাহলে না দিলে হয়?না দিলে যে তোর মা তোকে এবং আমাকে কাউকেই ভালোবাসবে না।রান্না করে দেবেনা।সবসময় গালিগালাজ করবে।"
     "বেশি ভালোবাসা পাওয়ার জন‍্যই কি তাহলে আপনি জমি দিচ্ছেন?"
     "সেটা বলতে পারিস।"
     "কিন্তু আপনার ছোট ভাই সেফাতুলও যে তার স্ত্রীকে জমি দিয়েছিল।আপনার মতো বেশি ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।এবং আপনার চেয়ে বেশি জমি দিয়েছিল। দ্বিগুণ।মানে দশ বিঘা। নিজের নামে মাত্র কয়েক বিঘা জমি রেখেছিল। কিন্তু আপনার ছোটভাই তার স্ত্রীর কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছে কি?পায়নি।বরং আপনার ভাইকে তার স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে পালিয়ে গেছে।এবং তার হাঁটুর বয়সী একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। সুতরাং ও যে তেমনটা করবেনা তার কি কোন গ‍্যারান্টি আছে?"
     "সেফাতুলের স্ত্রী পাক্কা একটা খানকি মেয়ে ছিল।ওর কথা বলিস না।কিন্তু তোর মা মোটেও ওরকম মেয়ে নয়।একটা পরহেজগার মেয়ে।পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ে।কোরান পড়া জানে।এবং রমজান মাসে পুরো একমাস রোজা রাখে।"
     "এসবের দিক থেকে কিন্তু আপনার ভাইয়ের স্ত্রী পাখি বিবিও কম ছিল না।আসলে সমাজে যারা খারাপ মেয়ে হয় তারা যতই ধর্ম করুক তাদের চরিত্র কোনদিন বদলায় না।অতএব কোন মেয়ের বাহ‍্যিক ধর্ম পালন দেখে তাকে চরিত্রবান ভাবাটা কিন্তু বুদ্ধিহীনের পরিচয়।"
     আরাবুল এত করে বললেও তার বাবা তার বারণ শুনেছিলেন না।জমিটা লিখে দিয়ে তবেই থেমেছিলেন।তারপর বেশিদিন হয়েছিল না।মাত্র ছ'মাসের মাথায় পাড়ার কুমারের সঙ্গে তার মা পালিয়ে গিয়েছিল।কুমার হিন্দু না, মুসলিম।এবং তার আগের বউ,ছেলে ছিল।

                               এগারো

    আরাবুলের মা কুমারের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে তার ঘর করতে শুরু করেছিল।ফলে কুমার তার আগের বউকে তালাক দিয়ে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।তবু আরাবুলের বাবা পরে তাকে আবার নিতে চেয়েছিল।কিন্তু সে আর আসতে চেয়েছিল না।ঘটনাটা শুনতে পেয়ে পরে আরাবুল তার বাবাকে ভীষণ বকেছিল,"আপনি বলে আবার ওই খানকিকে নিতে চেয়েছিলেন? চেয়েছিলেন?"
    "হ‍্যাঁ, চেয়েছিলাম।"
     আরাবুল বলেছিল," কেন নিতে চেয়েছিলেন? আপনার মনে কি ঘৃণা বলে কোন জিনিস নেই? লজ্জা বলে কিছু নেই?"
     "থাকবে না কেন?আছে।"
     "আছে তো নিতে চেয়েছিলেন যে?"
     "আমি ওকে নিতে চেয়েছিলাম অন‍্য কারণে। ওকে দেওয়া জমিটা আবার ফিরিয়ে নেবো বলে।"
     আরাবুল বলেছিল,"আমাদের ভাগ্য ভালো যে,খানকি আমাদের মেরে দিয়ে পালিয়ে যায়নি। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মেয়ে স্বামী সন্তানের মেরে দিয়ে পালিয়ে যায়।সেদিক থেকে আমরা কিন্তু বড় বাঁচা বেঁচে গেছি।আর আপনি ওকে আবার নিতে চেয়েছিলেন?আপনি কি একটা মানুষ?"
      আরাবুলের কথায় তার বাবা কোন উত্তর করতে পেরেছিলেন না।নীরবে শুধু আরাবুলের বকুনি খেয়েছিলেন।এরপর বকুনি দেওয়া শেষ হলে আরাবুল বলেছিল,"আমি কি বলেছিলাম আমার কথা এবার সত্যি হল তো?"
     "আর বলিস না, যে ভুল করেছি এ ভুলের কথা জীবনে কোনদিন ভুলতে পারবো না।সেদিন তোর কথা কেন যে শুনিনি?"
     আরাবুল পরে তার বাবাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল,"যা হবার তা তো হয়েই গেছে।ও নিয়ে আর একদম ভাববেন না।একদম মন খারাপ করবেন না।মানুষের জীবনে যখন বিপর্যয় ঘটে অনিবার্য ভাবেই ঘটে।আমাদের জীবনেও সে রকমই ঘটেছে।"ও পরে বলেছিল,"মন চাইলে আপনি আবার বিয়ে করতে পারেন।আমি আপনাকে বাধা দেবোনা।"
     উত্তরে তার বাবা তখন আর বিয়ে করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।কারণ বিয়ে করে পরে সেই মেয়ে যদি আবার-----

                                  বারো

     আরাবুলের মা যে এ গ্রেডের একটা চরিত্রহীনা মেয়ে ছিল আরাবুল সেটা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ই দেখেছিল।কিন্তু আরাবুলের বাবা সেটা জানতেন না।কারণ তার বাবা যে বাড়িতে থাকতেন না।কলকাতায় রাজমিস্ত্রি কাজের ঠিকাদারি করতেন।বছরে দু-চারবার বাড়ি আসতেন।বাড়ি এলেও বাড়িতে বেশিদিন থাকতেন না।বড়জোর চারদিন।তারপর আবার লেবার, মিস্ত্রি নিয়ে চলে যেতেন।যে ক'টা দিন বাড়িতে থাকতেন আরাবুলের মা খুব চাপে থাকতো।তার বাবার সঙ্গে খুব ভালো ব‍্যবহার করত।বাড়ি থেকে কখনো বের হতো না। কোন পরপুরুষের সঙ্গে মিশত না।কোন পরপুরুষকে  মুখ দেখাত না।নিজের শরীর আর সুন্দর মুখটা পর্দার আড়ালে সবসময় ঢেকে রাখত।ধর্ম কর্ম করত।কোরান পড়ত।নামাজ পড়ত।সে যে একটা চরিত্রবান মেয়ে এবং একটা ভালো স্ত্রী সেটা দেখাত।কিন্তু নিজের কর্মক্ষেত্রে যেই তার বাবা চলে যেতেন অমনি তার মা সব ছেড়ে দিত।তখন কি বা পর্দা করা।কি বা নামাজ পড়া। কি বা কোরান পড়া।সাজগোজ করে আলগা মাথায় অর্ধেকেরও বেশি বুক উদোম করে শুধু পাড়া পাড়া ঘুরে বেড়াতো।আর মাংস বহুল নিতম্বে ঢেউ তুলে।আরাবুলের বাবা তো এসব দেখতে পেতেন না।কিন্তু বাড়িতে থাকতো বলে আরাবুল সব দেখতে পেত।এবং শুনতে পেত।সে তাই একদিন তার মাকে বলেছিল,"মা,বাড়িতে বাবা না থাকলে তুমি অত সাজগোজ করো কেন?দেখতে ভালো লাগেনা।"
     "আমার মন চায় তাই করি।"তারপর বলেছিল,"তোর ভালোলাগার জন‍্য তো আমি সাজগোজ করিনা।তাহলে তোর ভালোলাগলো না লাগলো তাতে আমার কি এসে গেল?"
     "অত পাড়া বেড়াও কেন?মেয়েমানুষের অত পাড়া বেড়ানো ঠিক নয়।লোকে অনেক কথা বলবে।"
     "যে শালা বলবে সে শালাকে তখন দেখে নেবো।"
     "মেয়েমানুষ হয়ে তুমি----"
     "কি ভেবেছিস আমাকে!"
     "তুমি যাই বলো মা,পাড়া বেড়াতে আমার কিন্তু একদম ভালোলাগেনা।"
     "তোর ভালোলাগা না লাগা সেটা তোর ব‍্যাপার।কি বলছিস আমাকে তার?আমার ভালোলাগে আমি পাড়া বেড়াবো।"
      আরাবুল বলেছিল,"ভালোলাগলেও তুমি আর পাড়া বেড়াবে না।"
      "কি বললি!পাড়া বেড়াবো না?"
      "না,বেড়াবে না।আমি তোমাকে নিষেধ করছি।"
      "তুই আমার ভাতার নাকি যে,আমি তোর নিষেধ শুনবো?তুই আমাকে নিষেধ করার কে শুনি!"
      "ছি: মা,ছি:!"
      "তুই যতই ছি-ছি কর,আমি কিন্তু পাড়া বেড়াবোই।তোর নিষেধ আমি শুনবো না।তোর তাতে কিছু বলার আছে?"
      "বাবা এলে আমি তাহলে বাবাকে সব বলে দেবো।দিয়ে আচ্ছা করে তোমাকে মার দিতে বলবো।যাতে তুমি জীবনে আর কোনদিন পাড়া না বেড়াও।"আরাবুল তার বাবার ভয় দেখিয়েছিল।
      তার মা তখন আরাবুলকে বলেছিল,"বলে দিস!তোর বাবাকে আর তোকে তাহলে খাবারের সঙ্গে বিষ দিয়ে মেরে দেবো।আমাকে তোরা চিনিস না তো।আমি কেমন মেয়ে তখন চিনবি।"
     ফলে আরাবুল তার বাবাকে তার মায়ের সম্পর্কে কোন দিন কোন কথা বলত না।তার মায়ের পাড়া বেড়ানো সুতরাং কমেছিল না।তবু তার মায়ের প্রতি আরাবুলের মনে বিশেষ কোন ক্ষোভ ছিল না।ক্ষোভ বাড়লো সেদিন ।যেদিন আরাবুল কুমারের সঙ্গে তার মাকে দেখে ফেলল। এক ঘরে এবং এক বিছানায়।এবং পোশাক ছাড়া অবস্থায়।আরাবুল তাদের দেখে ফেললেও তারা কিন্তু তাকে দেখেছিল না।দেখলে পরে কি যে হতো বলা যেত না।হয়তো তারা তাদের চরিত্রদোষ ঢাকবার জন্য তাকে মেরে দিত।দিয়ে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখত।পরে আরাবুলও আর তাকে কোনদিন বুঝতে দেয়নি যে,সে তাদের কুকীর্তি দেখেছে।সে তাদের গোপন পাপ দেখেছে। সে তাদের গোপন পাপের খবর সব জানে। কিছুদিন বাদে তার বাবা এসেছিলেন।আরাবুল তার বাবাকেও ঘটনাটা বলেছিল না।বলতে তার সম্মানে বেধেছিল।মায়ের এতবড় কুকীর্তির কথা পরমপূজনীয় বাবাকে সে বলবে কিভাবে?কাউকে বলতে না পারার দুঃখে সবসময় সে তাই মনমরা হয়ে থাকতো।যে নারীকে পৃথিবীতে সে শ্রেষ্ট নারী বলে চিনে এসেছে।যে নারীকে সে মা বলে জেনে এসেছে।যে নারীকে সে হৃদয় মন্দিরে অধিষ্ঠিত করে মাতৃ রূপে পূজা করে এসেছে।তার চরিত্রে এত কালিমা!তার চরিত্রে এত কলুষতা!তার চরিত্রে এত পাপ!এত দাগ!বাবাকে সেদিন তার জমি দিতে বারণ করার কারণই ছিল এটা।তার বাবা আসলে বিষয়টা জানতেন না বলেই সেদিন জমিটা দিয়েছিলেন।জানলে পরে কক্ষনো দিতেন না।আরাবুল এখন বুঝতে পারছে যে,বিষয়টা তার বাবাকে জানানো উচিত ছিল। একটু লজ্জা হয়তো লাগতো।তার বাবার শুনে একটু খারাপ হয়তো লাগতো।কিন্তু তার বাবার জমির মধ্যে যেটা সেরা জমি সেই জমিটা হারাত না।তার বাবার নামে থাকতো।তার বাবা মরে গেছেন।সুতরাং এখন তার নামে থাকতো।তার আরো পাঁচ বিঘা জমি বেশি হতো।পাঁচ বিঘা জমির আজকাল কি দাম!সেই ঘুণ পোকাটা আরাবুলকে এখন সবসময় কুরে কুরে খায়।



                                 পাতা - ৪ 



স্বপ্ন আছে নদীর জলে

                   ----- কৌশিক দে 

ঘোষাল ডাক্তার সাংঘাতিক ধরণের রাগি মানুষ। এরকম মানুষ সচরাচর ডাক্তার হিসেবে মানায় না। রোগী দেখার আগে তিনি গভীর ভাবে বলে ওঠেন, বেশি নড়াচড়া করবেন না। যা প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দেবেন , না হলে আমি সঠিক চিকিৎসা করতে পারবো না।

কোনো রোগী ওষুধ খেতে ভুলে গেলে তার আর রক্ষে নেই। চিৎকার করে তার গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো করে ছাড়েন। তবুও মালঞ্চ গ্রামে ঘোষাল ডাক্তার যেন দেবদূত। কলকাতার পাশ করা ডাক্তার গত কুড়ি বছর ধরে এখানে পরে আছে। মাঝে কতজন এলো গেল , কেউই টিকলো না।গ্রাম দেখার শখ পূরণ হলেই তারা পালিয়েছে কলকাতায়।কে আর সারারাত মশার কামড় খেয়ে পরে থাকতে চাইবে এই গ্রামে! তবে ঘোষাল ছিলেন।

আজ সকাল থেকেই তার চেম্বারে পেশেন্ট নেই।শংকর নামের একটি ছেলে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট।সে পাশ করা ডাক্তার নয়।তবে ডাক্তারি শেখার তার খুব ইচ্ছে। ঘোষাল ছেলেটির ইচ্ছে দেখে নিজের কাছে এনে রেখেছে। 

বেলা বারোটা নাগাদ ঘোষাল বেশ বিরক্ত হয়ে উঠে বললো, কি ব্যাপার বল তো! সকাল থেকে একটাও রোগী নেই ! হলো কি !

শংকর বললো, আজ্ঞে আমি সকাল থেকেই ভাবছিলাম বলবো তবে বলতে পারিনি আপনাকে।

ঘাড় ঘুরিয়ে শঙ্করের দিকে তাকিয়ে ঘোষাল বললো, কি ব্যাপার ?

আজ্ঞে, খবর পেয়েছি যে কলকাতা থেকে এক ছোকরা এসেছে সবে পাশ করে। হরিহরমোহন পুকুরের পাশে চেম্বার খুলেছে।যতদূর শুনেছি বিনামূল্যে চিকিৎসা করছে। তাই হয়ত সবাই ওদিকেই ছুটেছে।

একথা শুনেই রাগে ফেটে পড়লো ঘোষাল। বলল,আরে ছাড় ছাড়, অনেক তো দেখলাম। কত এলো কত গেল। এই গ্রামের সব কটা বেইমান। যখন কেউ থাকে না তখন তো আমার কাছেই ছুটে আসে। দেখাচ্ছি মজা। শোন শংকর , এবার থেকে আমার ফিজ ১০ টাকা বাড়িয়ে দে। আর বলবি দিনে ১০ জনের বেশি আমি দেখবো না। মজা দেখাচ্ছি এদের।

দিন গেল , সপ্তাহ গেল। দু-একজন ছাড়া তেমন কোনো রোগী এলোনা তার চেম্বারে। ঘোষালের মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়লো।নিজে বিয়ে না করলেও পেট তো চালাতে হবে।তাই ঠিক করলো নিজেই রোগী সেজে যাবে ওই ডাক্তারের কাছে। গ্রামের লোক যাতে চিনতে না পারে তাই ছদ্মবেশে যাবে আর দেখে আসবে স্বচক্ষে যে কি এমন ডাক্তার সে।

এর দিন দুএক পর ঘোষাল চললো সেই ডাক্তারের চেম্বারে রোগী সেজে। হরিহরমোহন পুকুরের পাশে এসে দেখলো এক ছোট্ট ঘরের সামনে প্রচুর রোগী বসে আছে। সবাইকে উপেক্ষা করে সে ঢুকে গেল ডাক্তারের চেম্বারে। কেউ তাকে বাধা দিলো না। 
ভিতরে ঢুকে সে দেখে একটি অতি অল্পবৈয়সী ছেলে রুগী দেখছে। নিতান্তই ছোট একটি ঘর। একটি টেবিল , যার উপরে সাইনবোর্ড'এ লেখা 'এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়'। এটা দেখে ঘোষাল আরও রেগে গেল। নিজেকে সংযত করে দাঁড়িয়ে রইলো।

ইতিমধ্যে সেই যুবা ডাক্তার তার দিকে তাকিয়ে বলল, একি! আপনি ভিতরে ঢুকে এলেন কেন! আমার রোগী দেখা হোক আপনাকে ডেকে নেব।

দাঁত কিড়মিড় করে ঘোষাল বলল,আমার বিশেষ অসুখ। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমায় তাড়াতাড়ি দেখুন।

রুগীকে ঝটপট ওষুধ লিখে দিয়ে সেই ডাক্তার ঘোষাল'কে তার সামনে বসতে বলল।কানে টেথিস্কোপে লাগিয়ে বলল, কি হয়েছে আপনার? 
প্রথম প্রশ্নটাই ভুল করলেন।রুগী কখনোই বলতে পারে না তার কি হয়েছে। বরং প্রশ্নটা হবে , কি অসুবিধা হচ্ছে আপনার ?
ভুরু কুঁচকে সেই ডাক্তার বলল, বেশ তাই করছি , কি অসুবিধা হচ্ছে আপনার?

আমার প্রেশার ব্রেক করেছে মনে হয়। পেটে ব্যাথা , ক্ষিদে নেই।মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে সিগারেট টানতে ইচ্ছে করে।গায়ে জল পড়লে মনে হয় ফোস্কা পড়ে যাবে। মাঝেমাঝেই হাত -পা সব চুলকাতে শুরু করে।

টেথিস্কোপ নামিয়ে রেখে সেই যুবা ডাক্তার বলল, আপনি নিশ্চই বিয়ে করেননি ?
চমকে উঠে ঘোষাল বলল, এ কেমন প্রশ্ন ? এর সাথে আমার রোগের কি সম্পর্ক ? না , করিনি । কেন ?
বিয়েটা করে নিন। আপনাকে দেখে সুস্থ'ই মনে হচ্ছে। বাকি রোগগুলোও সেরে যাবে একবার বিয়ে হয়ে গেলে। যাইহোক, আপনি এবার আসুন আমার আরও পেশেন্ট দেখার আছে।

মুহূর্তে তেলেবেগুনে রেগে উঠলো ঘোষাল। থরথর করে কাঁপতে কাঁপাতে বলল, ডাক্তার হয়ে আমায় দার্শনিক তত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুদিনের ফচকে জানো , জানো আমি কে ? 

বলতে বলতে মুখ থেকে একে একে নকল চুল দাঁড়ি খুলতে লাগলো সে। গর্জন করে বলতে লাগলো, পাশ করলেই কেউ ডাক্তার হয় না ছোকরা, এর জন্য অভিজ্ঞতা'র দরকার। আমি গত ২০ বছর ধরে যা অর্জন করেছি । আর তুমি কিনা তা ভাঙতে এসেছো ! আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।

দুই

আসিফ ঠিক মতন সোফাটায় বসতে পারছে না। বাড়েবাড়ে এপাশ ও পাশ করছে। সোফার একটা স্প্রিং তার পিছনে ফুটছে।এদিকে সে এই ঘরটা থেকে উঠে যেতেও পারছে না। ঘোষাল ডাক্তার রাগের মাথায় তার চেম্বারে গিয়ে যা করেছে তার জন্য তিনি খুবই অনুতপ্ত। আর তার সেই পাপ কাজের জন্য আজ রাতের ডিনারে ডেকেছে আসিফ'কে। প্রথমে সে আসতে চায়নি , পরে শংকর গিয়ে অনেক অনুনয় করে তাকে নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে।

ঘোষালের এই ঘরটা একদম আসিফের বাড়ির মতন। চারিদিকে ছন্ন ছাড়া ভাব। এইরকম একটা ঘরেই সে মানুষ হয়েছে। জন্ম দিয়েই তার মা মারা যায়।বাবা হোমিওপাথের ডাক্তার ছিলেন। বাড়িতেই চেম্বার ছিল। ছোট থেকেই আসিফ লাজুক প্রকৃতির। ডাক্তারি পাশ করার পর তার বাবা মারা যান। সে তখন বৌবাজার এলাকায় একটা চেম্বার খোলে। কিছুদিনের মধ্যেই তার পসার জমে ওঠে। তবে কলকাতা তার ঠিক কোনো কালেই ভালো লাগতো না। এই হৈ হট্টগোল থেকে সে চেয়েছিল একটু নিরিবিলিতে থাকতে।

মাস দুয়েক আগে সে এই মালঞ্চ গ্রামে পিকনিক করতে আসে তার কিছু বন্ধুর সাথে। ব্যাস , জায়গাটা তার ভালো লেগে যায়। মাটির ঘর , কাঁচা পাকা রাস্তা । সে যেন এই সবই চেয়েছিল । এখানে অনেক শান্তি। তাই কলকাতার চেম্বারে রোজ সকালে রুগী দেখে সে এখানে চলে আসে। জায়গাটা কলকাতা থেকে ট্রেনে  ঘন্টা খানেকের রাস্তা। একটি বাড়িও ভাড়া করে নেয় সে। ভালোই কাটছিলো দিনগুলো , হঠাৎ এই পাগল ডাক্তারটা এমন কান্ড ঘটালো যে সে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছিলো। 

রাত দশ'টায় আসার কথা ছিল তার । সময় মতোই পৌঁছেছে সে। কিন্তু ঘোষাল বাড়িতে নেই। শংকর তাকে খাতির করে এই ভাঙা সোফায় বসিয়ে গেছে। অগোছালো ঘরটা দেখেই বোঝা যায় এখানে কোনোদিন কোনো মেয়েছেলের প্রবেশ ঘটেনি।
দশটা পনেরো নাগাদ ঘোষাল ফিরলো। ঘরে ঢুকেই সে গম্ভীর গলায় বলল, শংকর বাইরে খুব মেঘ করেছে , মনে হয় বৃষ্টি হবে। চেম্বারের দরজাটা একবার দেখে আসো।না হলে গেল বারের মতন সকালে গিয়ে দেখবো ভিতরে সাপ ঢুকে বসে আছে। এরপর আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল, সরি , একটু লেট হয়ে গেছে ভাই। একটা এমার্জেন্সি কল ছিল।

আসিফ কিছু বলল না। শুধু তাকিয়ে থাকলো ঘোষালের দিকে। মানুষটা প্রায় ছ'ফুট লম্বা। দানবের মতন চেহারা। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছিই হবে। কোনো এককালে খুব সুপুরুষ ছিল বোঝাই যায়। 

ঝপ করে ঘোষাল বসল আসিফের কাছে। বলল, এত আড়ষ্ট হয়ে আছো কেন ? আমি কি খেয়ে ফেলবো নাকি ! ঝাড়া হাতপা হয়ে বসো তো ।

ঝাড়া হাতপায়ে কিভাবে বসতে হয় তা আসিফের অজানা । তাই সে আগের অবস্থান নিয়েই বসে রইলো। ঘোষাল পকেট থেকে একখানা সিগারেটের প্যাকেট বের করে বলল, সিগারেট খাও নিশ্চয়ই ?

আজ্ঞে না মানে হা, খাই।

তুমি এত ন্যাকামো করছো কেন মেয়েদের মতন। এত নরম কোনো পুরুষ হয় তা জানা ছিল না। এই আমায় দেখো, আজ পর্যন্ত কাউকে ভয় পাইনি। ক্লাস নাইন'এ একবার পড়াশুনা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জীবন কাটিয়ে দেব।তিনমাস ওই ভাবেই কাটিয়ে দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে দিল্লি পৌঁছে গেছিলাম। যা পেয়েছিলাম তাই খেয়েছি , ভিক্ষা করেছি। রাস্তায় শুয়েছি। বেশ ভালো ছিল দিনগুলো । তারপর হঠাৎ একদিন মায়ের কথা মনে পড়লো। বুকটা কেমন যেন করে উঠলো। তখনই ফোন করলাম বাড়িতে। শুনলাম, ঘন্টা খানেক আগেই মা মারা গেছেন। তারপর বাড়ি ফিরলাম। সেই যে পড়াশুনা শুরু করেছি আজও থামিনি। বুঝলে কিছু ? এই নাও।

বলেই একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো আসিফের দিকে। আসিফ সেটা নিয়ে বসে থাকলো। সে দেখলো ঘোষাল সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে পুরে নিলো। আসিফ বলল, আপনি খান না বুঝি ?

না, খাইনা। তোমার জন্যই এনেছি। বেনসন এন্ড হেন্ডস। একটার দাম তিরিশ টাকা।

এত দামি সিগারেট এখানে পাওয়া যায় ?

না , যায়না , শংকর আজ কলকাতা গেছিলো ওকে দিয়ে আনিয়াছি। নাও ধরাও। আমার কাছে লজ্জা পেও না।

আসিফ সিগারেট ধরাতেই বাইরে বৃষ্টি নামলো। আসিফ বলল, ইস , শংকরদা মনে হয় ভিজে যাবে।

ভিজলে ভিজুক। ওই ছোড়াটাও তোমার মতন কলকাতা থেকে পালিয়ে এসেছে। ব্যাটার নাকি ডাক্তার হওয়ার খুব শখ। দেখি ক'দিন টেকে এখানে ! যাইহোক, এবার তোমার কথা বলো দেখি ! কলকাতা ছেড়ে এখানে এলে কেন ? 

আপনি ভুল করছেন , আমি কলকাতা ছেড়ে আসিনি। ওখানে আমাদের বাড়ি এখনো রয়েছে। আমি প্রায়ই যাই। আর বৌবাজারে আমার চেম্বারও আছে। রোজ সকালে আমি বসি সেখানে। আসলে এই জায়গাটা এত ভালো লেগে গেল যে আর ফিরতে ইচ্ছে করলো না। একপ্রকার বলতে পারেন আমি কলকাতাতেও আছি আবার মালঞ্চতেও আছি।

ছেলেটি যে এত গুছিয়ে কথা বলতে পারে যা জানাই ছিল না ঘোষালের। সে রান্নাঘরের দিকে হাত দেখিয়ে বলল, ওখানে মাছও আছে আবার মাংসও আছে , কোনটা আগে খাবে ?

দুটোই একসাথে । বলেই দুজনে একসাথে হেসে উঠলো। বাইরের বৃষ্টি অনেক ঘনত্ব নিয়ে বেড়ে চলল। 

তিন

ব্যারিস্টার অধীর চৌধুরীর বাড়ি এই গ্রামের একদম উত্তরে। পাশেই ইছামতি নদী। সাদা মার্বেলের এক পেল্লাই বাড়িতে থাকে মাত্র দুজন। সে নিজে আর তার চির রুগ্ন মেয়ে পলি। কি যে রোগ তার কে জানে। জন্ম থেকেই হাড়গিলে চেহারা। হাইকোর্টের থেকে রিটায়ার হওয়ার পর চৌধুরীবাবু চলে আসেন এখানে। ভেবেছিলেন, নদীর পাশে বাড়ি করে মেয়েকে নিয়ে থাকবেন। এতে মেয়ের শরীর ভালো হবে। কিন্ত কোথায় কি ! বছরে দু তিন বার জ্বর আর সারা বছর পেটের রোগ লেগেই আছে মেয়েটার।
ঘোষাল ডাক্তার প্রায় দুবছর ধরে দেখে আসছে পলি'কে। এবার সে ভাবলো একবার আসিফ'কেও নিয়ে যাবে সেই বাড়িতে।
আসিফের সাথে তার এখন খুব ভাব। দুজন মিলে মাঝেমাঝেই রান্না করে খায়। গল্প করে।

আসিফ চৌধুরী বাড়িয়ে ঢুকে একটু হকচকিয়ে যায়। এত বড় বাড়ি সে তার জীবনে দেখেনি। বাড়ির সামনে নগ্ন শ্বেতপাথরের মূর্তি। ভিতরে পেল্লাই সব আসবাবপত্র। আসিফ মাঝেমাঝেই ঢোক গিলছিল। ঘোষাল তাকে পলির কাছে নিয়ে এলো। পলি'র বর্তমানে পেটে ব্যাথা। 

আসিফ দেখলো এক বিঘা জমির মতন বড় একটি খাটে একফালি চাঁদের মতন একটি মেয়ে শুয়ে আছে। কি অপূর্ব দেখতে তাকে। তবে শরীর জীর্ণ । মনে হয় বহুদিন কিছু খায়নি। না খাওয়া মানুষও এত সুন্দর হয় !

আসিফ তার সামনে বসল। পাশে অধীর বাবু আর ঘোষাল ডাক্তার দাঁড়িয়ে। আসিফ কানে টেথিস্কোপ লাগিয়ে বলল, আপনার কি অসুবিধা ?

হো হো করে হেসে উঠে ঘোষাল বলল, যাক , কিছু শেখাতে পারলাম তোমায় তাহলে।
অধীর চৌধুরী কিছুই বুঝতে পারলো না। পলি বলল, আজ্ঞে , পেটে খুব পেইন হয়। খেতে পারিনা কিছু ভালো করে।

আসিফ পলির পেটে হাত দিলো,প্রেসার মাপলো , তারপর বলল,আপনারা একটু বাইরে যান , পেসেন্ট'এর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

অগত্যা ইচ্ছে না থাকলেও অধীর বাবু আর ঘোষাল দুজনেই বাইরে চলে এলো। দরজা বন্ধ করে আসিফ আবার ফিরে এলো পলির কাছে। শান্ত ভাবে বলল, ব্যাথাটা পেটে নয় , তোমার তলপেটে। কে আসে বাড়িতে ? কার সাথে এসব করছো ? তুমি জানো তোমার শরীর এসব নিতে পারে না ?

কাঁদো কাঁদো মুখ করে পলি বলল, প্লিজ বাবাকে কিছু বলবেন না। আপনার পায়ে পড়ি।আসলে লাস্ট বার খুব ধস্তা ধস্তি হয়েছিল । আপনি হয়ত জানেন না আই হ্যাভ বিন রেপট সেভেরাল টাইমস।

চমকে উঠে আসিফ বলল,তাহলে এতদিন চুপ করে আছো কেন? বাবাকে সব খুলে বলো।

বাবাকে বলা যাবে না। কেউ বিশ্বাস করবেনা। সে বলেছে কাউকে জানালে সে আমার বাবাকেই মেরে ফেলবে।

পলির চোখে জল নেই। মুখটা কাঁদো কাঁদো। আসিফ বুঝতে পারলো এই মেয়ে খুব টর্চার হয়েছে বহুদিন। আসিফ বলল, এভাবে আর কতদিন চালাবে ?

জানিনা , তবে আমি কাউকে জানাতে পারবো না। আপনি ডাক্তার বলেই বলতে বাধ্য হলাম। সুইসাইড করার সাহস নেই না হলে অনেক আগেই ....

পলি কথা শেষ করার আগেই দেখলো আসিফ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অধীর বাবু ভ্যাবাচ্যাকা একটা মুখ করে বললেন, কি বুঝলেন ডাক্তার ?

পিছনে ঘোষাল'কে লক্ষ্য করে আসিফ খুব সহজভাবে বলল, বিশেষ কিছুই হয়নি। না খেয়ে না খেয়ে পেটের নাড়ি মরে গেছে।কিছু ওষুধ লিখে যাচ্ছি। নিয়মিত খাওয়াবেন। আমি সপ্তাহে একবার করে এসে দেখে যাবো। চলুন ঘোষাল বাবু।

চার

চাঁদনী চকের মেহবুব বারের প্রায় সবাই আসিফকে চেনে। বিগত ছ'বছর তার এখানে যাতায়াত। রেগুলার কাস্টমার না হলেও তার বিনম্র স্বভাবের জন্য এখানকার সব 'বয়' 'স্টুয়ার্ট' তাকে স্নেহ করে। বা হয়ত খাওয়ার শেষে টিপসটা ভালো দেয় বলে তাকে রেয়াজ করে।

আজকে এই নিয়ে দুটো পেগ হুইস্কি শেষ করল সে। তার কোটা ছ'টা। নিয়মমাফিক একজন স্টুয়ার্ট তৃতীয় পেগ বানিয়ে দিয়ে গেল। একটু হার্ড , অল্প জল আর একটাই বরফের টুকরো।

আসিফ মনে মনে ভাবছে,পলি মেয়েটা তার মাথায় গেঁথে গেছে। একটা অদ্ভুদ ক্যারেকটার। এভাবে রোজ রেপ হচ্ছে অথচ কাউকে কিছু জানাতে পারছে না। ভিতরের রহস্যটা আসিফ ঠিক ধরতে পারছে না। সে প্রথমে ভাবলো মেয়েটাকে বাঁচানো উচিত তারপর ভাবলো এসব ঝামেলায় না জড়ানোই ভালো।

তিন নম্বর পেগটায় চুমুক দেওয়ার পরেই তার কাঁধে একজন হাত রাখলো। আসিফ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দেবেন'দা। এই মানুষটার পরিবারের সাথেই সে মালঞ্চ'তে পিকনিক করতে গেছিলো।

দেবেন বয়সে আসিফের থেকে অনেক বড়। তাও সে আসিফের বন্ধু। এক টেবিলে বসে বহুদিন মদ খেয়েছে। এই বন্ধুত্ব খুব দৃঢ় হয়।

চেয়ার টেনে বসতে বসতে দেবেন বলল, ব্রাদার একাই বসে টানছ , আমায় ফোনটাও করলে না ! ভুলে গেলে নাকি ?
তেমন ব্যাপার না দেবেনদা। হঠাৎ ইচ্ছে হলো চলে এলাম। তোমার ব্যাবসার খবর কি?

একটা রাম'এর অর্ডার দিয়ে দেবেন বলল, ব্যবসা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। চারিদিকে সব ঘুষখোরের দল। প্রোমোটারি করে আর লাভ নেই। মার্কেটে এক গাদা টাকা আটকে। একটা প্রজেক্ট শুরু করার আগেই এই নেতাকে দাও ওই পুলিশকে দাও। উফফ!

এক চুমুকে উইস্কি শেষ করে দেবেন বলল, কি হয়েছে বলো তো তোমার , মুখটা কেমন কালো লাগছে !

তেমন কিছুই না দাদা। 

একটা পার্সোনাল সাজেশন দিচ্ছি , নেবে কি নেবে না তোমার ব্যাপার । বিয়ে করে নাও।

উইস্কিতে একটা চুমুক দিয়ে আসিফ বলল, এখন এসব নিয়ে ভাবছি না দাদা। বৌবাজারের চেম্বারটা নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আছে। ভাবছি একটা ক্লিনিক ওপেন করবো।

দারুন ব্যাপার। পয়সায় কম পড়লে জানিও আমিও পার্টনার হয়ে যাবো।

ছ পেগ শেষ করে আসিফ উঠতে গেলে দেবেন বলল, যাচ্ছো কোথায়? আজ আর ছাড়ছি না তোমায়। আজকে আমাদের সাথেই থেকে যাও। হিয়া তোমায় অনেক দিন দেখেনি। মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলে। আজ তোমায় নিয়েই যাবো।

বাইরে বৃষ্টি। কলকাতায় এবারে বেশ আগেই বৃষ্টি নেমে গেল। আষাঢ় মাসের এখন অনেক বাকি। একটা ছাতায় কোনো মতে দুজনে এসে পৌছালো দেবেনের একতলা বাড়িতে। হিয়া দরজা খুলেই বলল, কাল সূর্য উঠবে তো ! কার দেখা পেলাম !

তরল হেসে আসিফ বলল, বৌদি ভালো আছো ?

রাতে রুই মাছের ঝোল আর ভাত। বাড়ি ফেরার সময় দেবেন মাছ কিনে এসেছিল। হিয়া খেতে খেতে বলল, তোমার সাথে অনেক কথা আছে। কোনটা দিয়ে শুরু করি তাই ভাবছি।

আসিফ বলল, যেটা মাথায় আসছে বলে দাও বৌদি।

আচ্ছা , তাই করছি। চেম্বার কেমন চলছে ?

ভালো। মানে বেশ ভালো।

তা মরতে ওই মালঞ্চে পরে আছো কেন ?

জায়গাটা বেশ নিরিবিলি বৌদি। তার তুমি তো জানোই আমার এই শহরটা ভালো লাগে না।

এত দেখছি দার্শনিকের মতন কথা ! আসিফ ভাই , এক কাজ করো , আমাদের তো দুটো ঘর , ছেলেপুলেও নেই। আর তুমি তো জানোই আমাদের ওসব আর হবেও না। সবাই হাত তুলে দিয়েছে। তাই বলছিলাম , পাশের ঘরটা তো ফাঁকাই থাকে, তুমি এসে থাকতেই পারো। বেশ মজা হবে।

প্রস্তাবটা ভালোই বৌদি। তবে এখনই কিছু ভাবছি না।

হিয়া আর কিছু বলল না। মনে হয় রাগ করেছে।বা অভিমান। ছেলেপুলে নেই। এত বছর বিয়ে হয়েছে। একতলা বাড়িতে সারাদিন একা থাকে। আসিফ এলে মনের মতন একটা সঙ্গী পাওয়া যেত।

আজ রাতে ঘুম আসছে না আসিফের। বুকের মধ্যে পলি নামটা খোঁচা মারছে। কেন ! তা সে নিজেও জানে না। বাইরের ঘরে রাত একটার ঘন্টা পড়লো। ঘুম নেমে এলো পুরো বাড়িতে।

পাঁচ

পলি একা।

এতবড় একটা বাড়িতে সে সম্পূর্ণ একা। নিচের বৈঠকখানার ঘরে অধীরবাবু সারাদিন মামলার উপদেশ দিতে ব্যাস্ত থাকেন। দিন রাত তার কাছে লোক এসেই যাচ্ছে। ওদিকে উপরের ঘরে পলির একমাত্র সঙ্গী তার খাটের পাশের জানালাটা। এখান থেকে ইছামতি নদী খুব সুন্দর দেখায়। পলি ভাবে , এই নদীটা কত বড় অথচ কত সরল ভাবে বয়ে যায় , কোনো অহংকার নেই।
এই নিয়ে পাঁচ বছর পলি মালঞ্চে এসেছে। বি.এ পাশ করে আর পড়া হলো না তার। শরীর দিলো না। তার বাবাও রিটায়ার করলো। তারপর তারা এখানে চলে আসে। এখনও এই গ্রামটা ভালো ভাবে ঘুরে দেখাই হয়নি তার।
এদিকে সে মাঝে মাঝে আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে নিজেকে দেখে। তার রূপ আছে তবে শরীর নেই। হাড় বের করা একটা খাঁচার মতন তার গড়ন। 

আজকেও সে দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে। তবে তার বুকে একটা চাপা যন্ত্রনা। ওই নতুন ডাক্তারটাকে সে ওসব কি বলে ফেললো! যা সত্যি নয় , হঠাৎ কেন বানিয়ে বলতে গেল তাকে ! সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে! নাকি নতুন কোনো মানুষ দেখলে একটু অদ্ভুদ রিএক্ট করছে ! 

কোনো প্রশ্নেরই উত্তর পেলোনা সে। তার তলপেটের ব্যাথা সে তো নিজেই নিয়ে এসেছে। সেদিন রাতে হঠাৎ তার শরীরটা কেমন যেন করে উঠলো। এরকম আগেও হয়েছে। তবে সেই রাতে সে নিজেকে আটকে রাখতে পারছিল না। কি করবে বুঝতে না পেরে তলপেটে বাড়ি মারতে শুরু করলো। কি অদ্ভুদ ! যত সে বাড়ি মারে ততই তার শরীরে হিল্লোল জাগে। এভাবেই চলল বেশ অনেকক্ষণ । তারপর নিজের অজান্তেই তার শরীর ঝিমিয়ে পড়লো। ঘুমিয়ে পড়লো সে।

এই লজ্জার কথাটা সে কেন ডাক্তারকে বলতে পারলো না! ছেলেটি যুবক বলে ! অহেতুক একটা গল্প ফেঁদে দিলো। পলি ঠিক করলো সেই ডাক্তারকে আজকেই সব পরিষ্কার করে বলে দেবে। কিন্তু কি ভাবে ! 

টেবিলের ড্রয়ারে সেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আছে। সেটি বের করে সে দেখলো ডাক্তারের মোবাইল নম্বর দেওয়া। দ্বিতীয় কিছু না ভেবেই সে ফোন লাগিয়ে দিলো।

হ্যালো , ডাক্তার আসিফ রহমান ?
হ্যাঁ , আপনি ?
আমি পলি। আশাকরি চিনতে পারছেন।
ও হ্যাঁ , অবশ্যই। আপনার শরীর ভালো আছে তো ?
সে আছে। আমি আসলে আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। ফোন'এ বলা যাবে না। আপনি আজ একবার আসতে পারবেন আমাদের বাড়িতে ? বিকেল ঠিক পাঁচটায়।
আচ্ছা , চলে আসবো।

চৌধুরী বাড়ির পিছন দিকে একটা সুন্দর ঘাট রয়েছে। যদিও এখানে কেউ স্নান করে না। তবে পলি মাঝে মাঝে এখানে এসে বসে। নদীর জল ছপ ছপ করে বাড়ি মারে তার পায়ে। আজকেও মারছিল। হঠাৎ এক চাকর এসে খবর দিলো একজন দেখা করতে এসেছে। পলি হাত ঘড়িতে দেখলো বিকেল পাঁচটা। সে বলল, তাকে এখানে পাঠিয়ে দে।

আসিফ এসে বসলো সেই ঘাটের পাশে একটা বেঞ্চিতে। সে  দেখলো পলির মুখে জলের প্রতিচ্ছবি। অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে তাকে। পলি নিস্তব্ধতা কাটিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করলো, আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করতে চাই। আশাকরি সঠিক উত্তর দেবেন।
আসিফ হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ালো।

আমাকে কি সুন্দর বলে মনে হয় আপনার ?
হঠাৎ এই প্রশ্ন ?
আমায় উত্তর দিন। আমার উত্তর জানার বিশেষ দরকার।
একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে আসিফ বলল, আপনি সুন্দরী সে বিষয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
আপনাকে যদি বলি সেদিন যে কথা গুলো বলেছিলাম সেগুলো পুরোটাই মিথ্যে , বা একপ্রকারের গল্প তাহলে কি আপনি আমার উপর রেগে যাবেন ?
কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গেল আসিফ। সেই দিনের কথা গুলো সত্যিই তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। নিজের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখেই সে বলল, এত বড় মিথ্যে বলাটা আপনার উচিত হয় নি।হাজার হোক আমি একজন ডাক্তার। আপনার ভুল ট্রিটমেন্ট হতে পারতো আমি যদি কোনো ভুল ওষুধ লিখে দিতাম।

ওষুধ আর আমার উপর কাজ করে না ডাক্তার । যাইহোক, আপনাকে এই কথা গুলো বলতেই ডেকেছিলাম। এখন মনটা হালকা হলো। বলেই তাকালো আসিফের দিকে।

আসিফ দেখলো পলি হাসছে। অদ্ভুদ একটা হাসি। ঠিক স্বাভাবিক না এই হাসি। নাকি এটাও সে গল্প বানিয়ে বলছে ! এই মেয়েটা আসলে কি ! 

আমি উঠি , বলেই আসিফ চলে এলো। মাথাটা আজ তার হঠাৎ গরম হয়ে উঠেছে। কেন সে নিজেও জানে না।

রাস্তায় দেখা হলো শঙ্করের সাথে। সে আসিফকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এসে বলল, স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
আসিফ বলল, একটু তাড়াতড়ি বলো। আমার তাড়া আছে।

আসলে ঘোষাল স্যার ইদানিং খুব চেঁচামেচি শুরু করেছেন রুগীদের উপর। এরকম করলে তো মানুষজন কেউই আসবে না বলুন। আপনি কত সফ্ট কথা বলেন। ওনাকে একটু বুঝিয়ে বলুন না ব্যাপারটা !

বলবো , বলেই হাঁটতে লাগলো আসিফ।

কোনোকিছুর প্ল্যান না করেই সে এসে পৌছালো ঘোষাল ডাক্তারের বাড়ি। এই বাড়ি সব সময় খোলা থাকে। আসিফ সোজা গিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে। হাতের কাছে স্যারিডন নেই। একমাত্র ঘুমই ভরসা। আসিফ ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে এলো। আসিফ ঘুম চোখ খুলেই দেখে ঘোষাল বসে সামনে। মিচকে হেসে তাকে বলল, ঘুমাচ্ছিলে তাই আর ডাকিনি। একটু চা চলবে তো !

আসিফের জবাবের অপেক্ষা না করে ফ্লাস্ক থেকে এক কাপ চা দিতে দিতে ঘোষাল বলল, শুনলাম আজ চৌধুরী বাড়ি গেছিলে !
হ্যাঁ , আপনি কি ভাবে জানলেন ?

শংকর বলল। গেছ ভালো করেছ । পলিকে কেমন দেখলে ? শরীর কেমন আছে এখন ?

মেয়েটার মাথায় প্রবলেম আছে ।

সে কি ! আমি এত দিন যাই তেমন কিছুই তো ধরতে পারিনি । উল্টে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তো কথা বলে মেয়েটা।

এটা আমার ধারণা। আমি নিশ্চিত নৈ। তবে মেয়েটার মধ্যে একটা অদ্ভুদ ক্যারেক্টার লুকিয়ে আছে। আমার উপদেশ আপনিও ওই বাড়ি থেকে বিশেষ করে ওই মেয়েটার থেকে দূরে থাকুন।

ঘোষাল নিজের চা শেষ করে বলল, তোমাকেও বুঝি ওই রেপের ব্যাপারটা বলেছে ?

আসিফ চমকে উঠলো। যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না । সে বলল, আমাকেও মানে ! আপনাকেও কি ....
আসিফের কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘোষাল বলে উঠলো, হুম, মেয়েটির মধ্যে একটা নিঃসঙ্গতা কাজ করে। এ এক অদ্ভুদ রোগ। এই রুগীরা নিজেকে অন্যের কাছে সহানুভূতির পাত্র বানায়। তারপর সে নিজেই নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এটা নিয়ে বিশেষ ভেবো না। আমার সাথেও এই এক ঘটনা ঘটেছে। আমি তো আবার সেই রেপিস্টকে খুঁজে বের করবো বলে প্ল্যান করাও শুরু করে দিয়েছিলাম। হে হে।

আসিফও হাসলো। তবে তার কেমন যেন একটা লাগলো। পলি কি পাগল ! নাকি এসব করে ও আনন্দ পায় ! হয়তো তার নিঃসঙ্গ জীবনে এই ঘটনা গুলোই একমাত্র সঙ্গী ! কে জানে ! জীবনে কিছু জিনিস ইচ্ছে করেই অজানা থেকে যাওয়া ভালো।









Comments

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮