সম্পাদকীয় ৪
"কুরুক্ষেত্রে গীতার পবিত্র শব্দে জেগে উঠেছে চতুর্দিক
কৃষ্ণের সামনে মাথা নামিয়ে বসে পার্থ ;
সময়ের গতি আজ স্তব্ধ
গান্ডীব তার মাথা নুইয়েছে দীনদয়ালের শ্রী চরণে ,
রথের সামনে স্বমহিমায় আবির্ভূত স্বয়ং কৃষ্ণ -- শান্ত রূপ ,
মুখে এক অদ্ভুত তেজ ; বললেন এবার ,
" হে পার্থ , ক্রোধের ভার বয়ে চলা এ পৃথিবীর ধর্ম
কিন্তু সেই প্রকৃত স্বাধীন এখানে ,
যে শত্রুকেও ক্ষমা করতে পারে ;
সেই তো প্রকৃত জ্ঞানী এই মৃত্যুলোকে ||
সময়ের চাকা এগিয়ে চলে যায় ;
দিন কেটে রাত নেমে আসে
অন্ধকার সেই ভয়ংকর সময়েও একটা ছোট্ট প্রদীপ
বড়ো বড়ো মানুষকেও পথ দেখিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় || সময় কিন্তু সব দেখেও ফিরে আসে না আর কোনদিন ; এগিয়ে চলে নিজের খেয়ালেই ||
এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মুখের পরিচয় হয়
হাজার মুখের ভিড়ে ;
শুধু চিনে নেওয়াটুকুই মূল - কে এখানে আসল
আর কে পর ?
ভালোবেসে নিজের করে নিতে পারে কেউ আবার কেউ মুখোশের আড়ালে অভিনয়ের মেডেল পড়তে চায় ||
মোহো নয় পার্থ ; চিনে যাওয়াটুকুই জীবনের লক্ষ্য ||
মনে রেখো ;
সঙ্গ দোষে কিন্তু লঙ্কা নাশ || "
মাথা নত করা অর্জুনের ; ভগবানের কাছে এবার
বিনীত নিবেদন ,
" হে প্রভু , কাম ; ক্রোধ ; লোভ তো ছাড়া যায় ;
কিন্তু এতো দিনের সম্পর্ক , ভালোবাসার বন্ধন --
কি করে ভুলবো এসব ; এবার বলুন ,
এমন মানুষের কি মুক্তি পাওয়া হয় ? "
ছোট্ট হাসি কৃষ্ণের ঠোটে ভেসে উঠলো একবার ; ভক্তের সংশয় দূর করাই তো ভগবানের কাজ !!
বললো নিচু কন্ঠে আবার ,
" মায়ার এই জগতে আমরা সবাই নিদ্রামগ্ন দিনভর ;
জাগলাম যখন , তখন রাত হয়েছে অনেক --
যে সূর্যকে আপন ভেবে খুঁজতে গেলাম ; সে তো ডুবেই গেছে
সেই কবে : তাকে আর খুঁজে কি লাভ ?
সময়ের চাকা এগিয়ে চলে ; দিন কেটে রাত নেমে আসে
সব দেখেও সময় নীরব থাকে ;
ফিরে আসে না আর কোনদিন ;
এগিয়ে চলে নিজের খেয়ালেই " ||
প্রবল বেগে ধেয়ে আসা দ্বাপরের কথাগুলো এক বিশাল সৃষ্টির কথা তুলে ধরেছিল সেদিন । সেদিনের সে অমর সৃষ্টি কাল ভেদী । যুগ যুগ ধরে মানুষকে সঠিক পথে চালিয়ে নিয়ে গেছে যে অমর সৃষ্টি তাই পরবর্তীতে কোথাও গীতা , কোথাও কোরান , কোথাও বাইবেল , কোথাও আবার ত্রিপিটক আর কোথাও অন্য নাম । নাম বদলে গেলেও তাদের বৈশিষ্ট্য এক । তারা প্রত্যেকেই এক একটি জীবন্ত সাহিত্য ।
সাহিত্য কথার অর্থ কি ? সকলের সঙ্গে । কিন্তু বর্তমানে সাহিত্য কি ? দলতান্ত্রিক , গোষ্ঠিবাজ , নেপোর অধীনস্ত একটি ধারণা । কিছু লোকের কলম নিয়ে তৈরি হচ্ছে সাহিত্য । আর বাকিরা ? প্রহর গুনছে নিজেদের সন্ধানের ।
সাহিত্য মানে কেন শুধু রবীন্দ্রনাথ বুঝবো , কেন শুধু সুনীল , শক্তি , শঙ্খ , শ্রীজাত , মলয় বুঝবো । কেন বুঝবো নজরুল বা জীবনানন্দ । কেন বুঝবো শুধু এ যুগের সাহিত্য , ও যুগের সাহিত্য । কেন বুঝবো শুধু শেক্সপিয়ার বা কিটস বা মার্ভেল বা সেলি । কেন বুঝবো শুধু নেরুদা ।
সাহিত্য মানে তো এরিস্টটল থেকে এ যুগের অচেনা দ্বীপে বসে লেখা একটি লেখা । কেন কালিদাস পড়বো না আর হুমায়ুন আহমেদ পড়বো ।
এ তো সাহিত্যের পরাজয় । আমি কোন ম্যাগাজিন চালাই না । আমি একটি পরিবার গড়তে এসেছি । আগেও এটাই করে এসেছে অপরাজিত , এই চার সপ্তাহে তাই করেছি । আগেও তাই করবো । সৎ সম্পাদকরা আসুক না , সম্পাদনা শিখিয়ে যাক ভবিষ্যৎ কে । তরুণ লেখক আসুক না , লিখতে শিখিয়ে যাক প্রবীণদের আর প্রবীণরা আসুক না , নবীনদের লেখা শিখিয়ে যাক । এটাই তো আসল সাহিত্য , তাই না ?
জানেন তো নতুন নতুন লেখা এই চার সপ্তাহ ধরে পড়লাম । নতুন হাতে সম্পাদকীয় ও কভার কাহিনীও পড়লাম । আজ নিজে লিখতে আসার ইচ্ছে ছিল না । তবু এলাম , এই চার সপ্তাহের প্রাপ্তিগুলো ভাগ করে নিতে এলাম । একদিন বলেছিলাম অপরাজিত হোক সাহিত্য । আজ বুঝলাম , সাহিত্যকে হারাবে কে । তারপর দেখলাম নেপোয় দই মেরে গেলো । তখন মনে হল , না , সাহিত্য এখনো পরাজিত । আর তাই এই প্রয়াস । অপরাজিত পুনরায় ফিরিয়ে আনতে বললো শ্রী কালপুরুষ ( Sri Kalpurush ) । যাত্রা শুরু হলো
এই বিশ্বাস নিয়ে ,
কলমের প্রত্যেক আঁচড়ে সাহিত্য আছে । শুধু দেখতে জানতে হবে আর তাহলেই অপরাজিত হয়ে উঠবে সাহিত্য , ঠিক যেমন দশমীর পরে অপরাজিত হয়ে ওঠে পৃথিবী । আমার মনে হয় , সৃষ্টির থেকে বড় সাহিত্য কিছুই হয় না ।
সন্দীপ দাস
সম্পাদক
অপরাজিত পত্রিকা
Comments
Post a Comment