ধারাবাহিক সন্দীপ
সৈনিক বিদ্রোহ
১।।
ছোটবেলা থেকে খুব ইচ্ছে ছিল সৈনিক হওয়ার ।। কাশ্মীরে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা কাশেম আলি দীর্ঘ দিন ধরে সীমান্তে চলতে থাকা অশান্তি , যুদ্ধ আর গোলাগুলি দেখেই বড় হয়েছে ।। যদিও এসব তার বিন্দুমাত্র ভাল লাগত না তবু লোকমুখে ভারত পাকিস্থানের বিভিন্ন গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া কাশেমের কাছে এই ভারত , মায়ের থেকে কোন অংশে কিছু কম ছিল না ।। সমাজের হিংস্র রূপ যথারীতি কাসেমকে খুব অল্প বয়স থেকেই করে তুলেছিল পাকিস্তান বিরোধী আর তাই হয়ত এই সেনাবাহিনীর প্রতি তার টান এত প্রখর ।।
কাশ্মীরের অশান্তি কাশেমের ভবিষ্যৎ কে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিতে পারে এই ভেবে , কাশেমের আব্বা তাকে দিল্লিতে চাচা র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় ।। সেখানেই একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাকে ।। রহিম চাচা ছিলেন খুবই অনুশাসন প্রিয় এক ব্যক্তি কিন্তু এমনিতে তিনি মানুষ হিসাবে খুবই ভাল ।। তারই তত্বাবধানে কাশেমের পড়াশোনাও চলত ।। এককালে রহিম সাহেব ছিলেন রেলের একজন নামকরা আফিসর , কত লোক রেলের সমস্যা নিয়ে আসতেন তার কাছে ।। তিনি কিন্তু কাউকে না বলতেন না , যথাসম্ভব সাহায্য করতেন ও পথ বাতলে দিতেন ।। বর্তমানে অবসর জীবন তার কাটে কোচিং করিয়ে ।। পুরোনো দিল্লিতে তার একটি কোচিং সেন্টার চালান যেখানে বিনামূল্যে ছাত্র ছাত্রীদের পড়ান তিনি , ভিরটাও কম হয় না ।। কাসেমকেও সেই কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ে যান তিনি এবং সেখানেই তার পড়া লেখার দেখাশুনা করেন ।।
পড়ার বই ছাড়াও তিনি কাসেমকে নানা গল্পের বই কিনে দিয়েছিলেন , যেগুলো পড়ে কাশেমের ফাঁকা সময় বেশ কেটে যেত ।। বন্ধু বলতে তো কেউ ছিল না তার , তাই এই বই আর চাচা কে নিজের দোস্ত মেনে নিয়েছিল সে ।।
চাচা তাকে একটা জিনিস প্রায় বলত , " দেখ মানুষের সাথে মানুষের মত ব্যবহার কর , সে যেই হোক না কেন ।। হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান এসবই আমাদের তৈরি ।। আল্লাহ আর ভগবান একই ।। " কাসেমের কাছে কথাগুলো শুনতে ভাল লাগলেও হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেত -- তবে এত যুদ্ধ কেন ? কারণটা কোনদিন খুঁজে না পেলেও , সে বিস্বাস রাখত একদিন এর উত্তর সে খুঁজে বের করবেই ।। আর সেদিন সে সমাজটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে তুলবে , যুদ্ধ হীন একটা পৃথিবী যার পরিধি একটা গোলাকার বলের মত , ভাগ থাকবে না কোন ।।
চাচার তত্বাবধানে কাসেম নানা বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে লাগলো ; কিন্তু যে বিষয় কাসেমকে বেশি আকৃষ্ট করতো তা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভারতের ইতিহাস ।। ইতিহাসের নানা অধ্যায় তার জলের মত মুখস্ত হয়ে গেছিলো ; আর দেশভক্তি সে ছিল দেখার মত ।। জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার মর্যাদার পাশাপাশি মানুষের কষ্টে বরাবরই ঝাঁপিয়ে পড়ত কাসেম ।। এসমস্ত দেখে তার চাচাও মনে মনে খুবই খুশি হত ; তাকে সরাসরি কিছু না বলতে পারলেও আল্লাহর কাছে রোজ দুয়া করতো যেন কাসেম এই একই রকম থাকে চিরকাল ।।
দেখতে দেখতে কাসেম আজ বেশ বড় হয়ে উঠেছে ।। গত বুধবার সে আঠারোয় পা দিল ।। একদিন দুপুরে কাসেম একলা বসে বসে বই পড়ছিল ; ঠিক সেই সময় রহীম চাচা ঘরে এসে ঢুকল ।। চাচাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই কাসেম বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে উঠে এল চাচার দিকে ।। “ হঠাৎ এই সময়ে ।। আজ পড়ান নেই তোমার ? “ , চাচাকে প্রশ্ন করল কাসেম ।। কাসেম ভাল করে জানত চাচা দুপুর দুটোর আগে বাড়ি আসার সুযোগ পায় না ।। এতগুলো ব্যাচ থাকে যে নাস্তা করার ফুরসত হয় না , বাড়ি কি আসবে !
“ তবিয়ত ঠিক যাচ্ছে না বেটা , তাই আজ সবাইকে ছুটি করে দিলাম ।। তাছাড়া একটা কথা খুব সাতাচ্ছে আমায় বেশ কিছুদিন ধরে ।।“ চাচা উত্তর দিল ।। রহীম চেয়ার ছেড়ে উঠে এল চাচার দিকে ।। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞাসা করলো ; কি হয়েছে চাচাজান ? বল আমায় ; কি হয়েছে ? কেউ কিছু বলেছে ? “ চাচা একটু মুচকি হেসে বলল ,” না রে , কেউ কুছ বলে নি ।। আসলে আমি একটা জিনিস ভাবছিলাম ।। তোর জন্মদিনে কোনদিন তোকে কুছু দিই নি ; তাই তোকে কোই তউফা দিতে চাই ; মাঙ্গ তুই যা চাস ।। “
চাচার কথায় কাসেম বেশ চিন্তায় পড়ে গেল ।। কি চাওয়া যায় ! এদিকে না চাইলেও চাচা কষ্ট পাবে ।। অনেক ভেবে সে বলল ; “ দু দিন বাদে ঈদ ।। আমি বরং ওই দিন চেয়ে নেব ।। “ চাচা আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।। কাসেম আবার আগের মত বইটা খুলে পড়তে শুরু করে দিল ।।
১।।
ছোটবেলা থেকে খুব ইচ্ছে ছিল সৈনিক হওয়ার ।। কাশ্মীরে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা কাশেম আলি দীর্ঘ দিন ধরে সীমান্তে চলতে থাকা অশান্তি , যুদ্ধ আর গোলাগুলি দেখেই বড় হয়েছে ।। যদিও এসব তার বিন্দুমাত্র ভাল লাগত না তবু লোকমুখে ভারত পাকিস্থানের বিভিন্ন গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া কাশেমের কাছে এই ভারত , মায়ের থেকে কোন অংশে কিছু কম ছিল না ।। সমাজের হিংস্র রূপ যথারীতি কাসেমকে খুব অল্প বয়স থেকেই করে তুলেছিল পাকিস্তান বিরোধী আর তাই হয়ত এই সেনাবাহিনীর প্রতি তার টান এত প্রখর ।।
কাশ্মীরের অশান্তি কাশেমের ভবিষ্যৎ কে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিতে পারে এই ভেবে , কাশেমের আব্বা তাকে দিল্লিতে চাচা র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় ।। সেখানেই একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাকে ।। রহিম চাচা ছিলেন খুবই অনুশাসন প্রিয় এক ব্যক্তি কিন্তু এমনিতে তিনি মানুষ হিসাবে খুবই ভাল ।। তারই তত্বাবধানে কাশেমের পড়াশোনাও চলত ।। এককালে রহিম সাহেব ছিলেন রেলের একজন নামকরা আফিসর , কত লোক রেলের সমস্যা নিয়ে আসতেন তার কাছে ।। তিনি কিন্তু কাউকে না বলতেন না , যথাসম্ভব সাহায্য করতেন ও পথ বাতলে দিতেন ।। বর্তমানে অবসর জীবন তার কাটে কোচিং করিয়ে ।। পুরোনো দিল্লিতে তার একটি কোচিং সেন্টার চালান যেখানে বিনামূল্যে ছাত্র ছাত্রীদের পড়ান তিনি , ভিরটাও কম হয় না ।। কাসেমকেও সেই কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ে যান তিনি এবং সেখানেই তার পড়া লেখার দেখাশুনা করেন ।।
পড়ার বই ছাড়াও তিনি কাসেমকে নানা গল্পের বই কিনে দিয়েছিলেন , যেগুলো পড়ে কাশেমের ফাঁকা সময় বেশ কেটে যেত ।। বন্ধু বলতে তো কেউ ছিল না তার , তাই এই বই আর চাচা কে নিজের দোস্ত মেনে নিয়েছিল সে ।।
চাচা তাকে একটা জিনিস প্রায় বলত , " দেখ মানুষের সাথে মানুষের মত ব্যবহার কর , সে যেই হোক না কেন ।। হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান এসবই আমাদের তৈরি ।। আল্লাহ আর ভগবান একই ।। " কাসেমের কাছে কথাগুলো শুনতে ভাল লাগলেও হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেত -- তবে এত যুদ্ধ কেন ? কারণটা কোনদিন খুঁজে না পেলেও , সে বিস্বাস রাখত একদিন এর উত্তর সে খুঁজে বের করবেই ।। আর সেদিন সে সমাজটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে তুলবে , যুদ্ধ হীন একটা পৃথিবী যার পরিধি একটা গোলাকার বলের মত , ভাগ থাকবে না কোন ।।
চাচার তত্বাবধানে কাসেম নানা বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে লাগলো ; কিন্তু যে বিষয় কাসেমকে বেশি আকৃষ্ট করতো তা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভারতের ইতিহাস ।। ইতিহাসের নানা অধ্যায় তার জলের মত মুখস্ত হয়ে গেছিলো ; আর দেশভক্তি সে ছিল দেখার মত ।। জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার মর্যাদার পাশাপাশি মানুষের কষ্টে বরাবরই ঝাঁপিয়ে পড়ত কাসেম ।। এসমস্ত দেখে তার চাচাও মনে মনে খুবই খুশি হত ; তাকে সরাসরি কিছু না বলতে পারলেও আল্লাহর কাছে রোজ দুয়া করতো যেন কাসেম এই একই রকম থাকে চিরকাল ।।
দেখতে দেখতে কাসেম আজ বেশ বড় হয়ে উঠেছে ।। গত বুধবার সে আঠারোয় পা দিল ।। একদিন দুপুরে কাসেম একলা বসে বসে বই পড়ছিল ; ঠিক সেই সময় রহীম চাচা ঘরে এসে ঢুকল ।। চাচাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই কাসেম বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে উঠে এল চাচার দিকে ।। “ হঠাৎ এই সময়ে ।। আজ পড়ান নেই তোমার ? “ , চাচাকে প্রশ্ন করল কাসেম ।। কাসেম ভাল করে জানত চাচা দুপুর দুটোর আগে বাড়ি আসার সুযোগ পায় না ।। এতগুলো ব্যাচ থাকে যে নাস্তা করার ফুরসত হয় না , বাড়ি কি আসবে !
“ তবিয়ত ঠিক যাচ্ছে না বেটা , তাই আজ সবাইকে ছুটি করে দিলাম ।। তাছাড়া একটা কথা খুব সাতাচ্ছে আমায় বেশ কিছুদিন ধরে ।।“ চাচা উত্তর দিল ।। রহীম চেয়ার ছেড়ে উঠে এল চাচার দিকে ।। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞাসা করলো ; কি হয়েছে চাচাজান ? বল আমায় ; কি হয়েছে ? কেউ কিছু বলেছে ? “ চাচা একটু মুচকি হেসে বলল ,” না রে , কেউ কুছ বলে নি ।। আসলে আমি একটা জিনিস ভাবছিলাম ।। তোর জন্মদিনে কোনদিন তোকে কুছু দিই নি ; তাই তোকে কোই তউফা দিতে চাই ; মাঙ্গ তুই যা চাস ।। “
চাচার কথায় কাসেম বেশ চিন্তায় পড়ে গেল ।। কি চাওয়া যায় ! এদিকে না চাইলেও চাচা কষ্ট পাবে ।। অনেক ভেবে সে বলল ; “ দু দিন বাদে ঈদ ।। আমি বরং ওই দিন চেয়ে নেব ।। “ চাচা আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।। কাসেম আবার আগের মত বইটা খুলে পড়তে শুরু করে দিল ।।
Comments
Post a Comment