গুচ্ছ কবিতা

চন্দ্রিমা তোমাকে

স্মৃতির মূর্ছা
কবিতার শব্দে মেতে
চুপসুরে সিঁড়ি পেতে
রোদ্দুরের ঝিলিকে ছায়ার নিরিখে বৃষ্টির গভীরে
হিজিবিজি আঁকা জ্যোৎস্নার স্নান ভিজে শরীরে
স্কুল শুরুর আগে, স্কুল ছুটির পরে প্ল্যান করে
বুকে জমানো আনচান বলে দিতে ছুটতাম দু’জনের গোপনে  
একদিন ভাব দু’দিন আড়ির আড়াল পেতে থাকতাম আনমনে।   
অনেক দূরের বয়সের অলিগলি চলতে চলতে
চাওয়া পাওয়ার অনুভূতির কথা বলতে বলতে
আজ এক আকাশের নীচে যে যার সংসারের স্বচ্ছল ঘরে।  
কাকভোরে দু’চোখ জাগিয়ে রোজ ছুটতাম ছাদে বলে দিতে
আকাশের প্রথম আলোর ছটাকে,সে কি ভুলে যাবে আমায়?
নাবালিকা চাঁদ বসতো এসে সূর্যাস্ত-সন্ধ্যায় আঙুল চুমে নিতে
ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার অংকের খাতায়।  
কৈশোর যৌবন ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল মাথা রেখে তুলোর বালিশে
নিশ্চুপ বিস্ফোরণ বিধি নিষেধ উপেক্ষার কাছে অকারণ নালিশে
সেদিন আমার ভালোবাসা তুমি ফিরিয়ে দিয়ে ভালো করেছিলে
না হলে তোমায় জ্বলে পুড়ে মরতে হতো অভাবের কষ্ট  গিলে।
আমার বুকের আর্তিগুলো আজও কাঁদে আমার বুকের নিঃশ্বাস ধরে 
তোমার অল্পবয়সী স্পর্শ-ছোঁয়ার আঁচ সংযত আমার অন্তরে অন্তরে।  
 *** 
বিষ

তোকে ভালোবাসি।
জানি। তুইও আমায় ভালবাসিস।
তোকে ছুঁয়ে নিতে যতখানি বৈষম্য ভয়
তোর স্পর্শ-ছুঁয়ে ততখানি আশার অভয়
তোর শরীরে পৃথিবীর সমস্ত গাছের প্রতিচ্ছায়া  
তোর যৌবন আগুনে বৃষ্টির বিদ্যুৎ পাগল মায়া
তোর ঠোঁটের সংস্পর্শে আছে বিষাক্ত বিষ
আমার ঠোঁটে বাজে আনন্দ আসক্তির শিস
ছুঁলে মৃত্যু হবে তবু অসংযত হতে আসি তোর ঘরে
রোজ মৃত্যুর সাথে ভালোবাসার সংযম দোসর করে।
***

বেলা যায় চলে



বিবাহিতরা গেছে মধু চন্দ্রিমায়,কবিতারা উচ্ছন্নে।

গর্ভপাত রাখতে গোপন যুবতীরা গেছে প্রচ্ছন্নে।  

ধনী বাপের উঠতি ছোকরারা মেয়ে-মাগীর নন্দনে।

গাঁ-গঞ্জের কচিকাঁচারা বিকিয়ে যায় কলুষিত বন্ধনে।  

পোয়াতিরা আনন্দ-উদ্বেগ-উল্লাস নিয়ে মাতৃসদনে।

আত্মীয়-স্বজন-পরিজনরা সু-খবর আসার বিকাশনে।

পুরুষ-শিশ্ন ঘাপটি মেরে জন্ম যোনির বিবর খোঁজে। 

ধর্ষণের জ্বালা মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে  বোঝে।

পাখিরা গেছে আকাশে কোন মেঘ-বাদলের দেশে?

জমির জন্য মানুষ নগ্ন। উল্লুকও অরণ্য ভালোবেসে।

গরীবের মৃত্যু বিদ্রোহে।নেতারা ব্যস্ত সম্ভ্রান্ত ভোজে।     

বেলা যায় চলে গরীবের দুঃখ কষ্ট ক’জন বা বোঝে? 

***



বলাৎকার



এসো কবি। 

এখন নির্জলা দুপুর

আমায় নির্ভয়ে নগ্ন কর।

শব্দের  কাঁচি  ছুরি ধর।

মায়াবী গন্ধের ইথার ভর।

আর 

খুবলে নাও শিকড় সমেত আমার উরস খুলে

হোক ভাঙচুর তোমার রিরংসার কলম তুলে।

আর্তনাদ পড়ে থাক একা নিশ্চুপ।

ভালোথাকার ধৃতি শুধু ভালোবাসা নয় বলে

নিয়ে যাও কবিতা শরীর থেকে শরীর  ছিঁড়ে

হোক বলাৎকার; কবিতার চেয়ে বেশি দামি।



***





প্রিয়তমা



দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি

সাংসারিক অভাব লাঘব হবে বলে

এসেছি আর এক অন্য শহরে অন্নসংস্থানে

তোমাকে সাময়িক রেখে দূরের অতলে।

বুঝেছি ভালোবাসা শুধু কাছে থাকা নয়


কাছে থাকা দূরে থাকা 

মেঘ যেন মাটি মাখা কামনার ঝনৎকার সপ্নময়   

বৃষ্টির স্বাদে দূরের ভেতর এলিয়ে হৃদয় পরিণয়।

কাছের যন্ত্রণা   হৃদয়ের রোদন

বিরহ প্রতিধ্বনি হৃদয়ের বোধন

প্রাণের গভীরে গভীরে প্রহর জাগে

ভাবনার সংকেতে তোমারি অনুরাগে

আমি তৃষিত

তুমি  তৃষিত

সম্পর্কের বিস্তর পালঙ্কে দোঁহে

দু’জনের একলার  বিছিন্ন মোহে

বিরহের ধারালো  হাওয়ায় ভালোবাসার মোমবাতি

জ্বলতে থাকে... 

কাঁপতে থাকে...

গলতে থাকে...

পুড়তে থাকে... 

দিলদরিয়া দিগন্তের বসত মহলে এক দু’জনার নিঃশ্বাস উথলে

শুয়ে পাশাপাশি; ছুঁয়ে ভালবাসাবাসি

আগুনে আগুন পোড়ে কাছে বা দূরে থাকার বহ্নিতাপে 

জ্বালার আরাম সুধাময় গোপনের বেড়া হৃদয়ের প্রলাপে।



***



































































Comments

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮