কবিতার কচিপাতা ২

শুদ্ধিকরণ

              অর্পিতা ঘোষ



মাটির ঘরের মেয়ে, পেয়েছিলাম এক কৃষ্ণ...

দিয়েছিলাম নিজেকে সঁপে,

কথা দিয়েছিলাম, থাকবো রাধা হয়ে,

স্বপ্নের কদমবনে বসবো হাতটা ধরে,

শুনবো বাঁশির সুর বিভোর হয়ে।

কথা সে পায়নি শুনতে –

গেল সে নিরুদ্দেশে হারিয়ে,

যে ডানা উড়তে চেয়েছিলো তাকে সঙ্গী করে,

সে ডানার পালক গেছে ঝরে।



মেঠো পথ দিয়ে এগোয়, কাদামাটি মেখে...

 সমাজ বিদ্রুপ চাউনিতে চেয়ে থাকে।



গঙ্গায় তর্পণ করি, শুদ্ধিকরণের শেষে...

আকাশে বকের ডানায় মন উড়ে যায়,

নিজেকে দেখি লক্ষীবাঈ

       চোখে বিদ্যুৎ চমকায়।







দূরের জনপদ

রথীন পার্থ মণ্ডল



তোমার চোখে তারাদের ভিড়! 

তাই ওদিকে আর বিশেষ যাই না.. 



ইদানীং খুব বেশি বলতেও ইচ্ছা হয় না 

আমার

ধরে নিই, আমি 'আ' বলতেই তুমি 

বুঝে নেবে...





খেলা 

রথীন পার্থ মণ্ডল



বারবার পড়ন্ত বেলা পশ্চিমে ঢলে পড়া সূর্য

আর নারীর কনে দেখা আলোয় গোধূলি লগন আসে



যতনে সাজিয়ে রাখা শাড়ি খুলে রোদে মেলে ধরা

নিজস্ব উচ্ছ্বাস। আমার সম্মুখে শুধু ধুলো ও বাতাস



উষ্ণ আপ্যায়নের আড়ালে বিজ্ঞাপনী প্রচারের কৃতকৌশল

অনন্তকালের যত ধূসর পান্ডুলিপির যেন কবে উন্মোচন



গোবেচারা রাখালের শেষ বাঁশি বেজে গেছে কবে ?

এবার তোমার পালা 

এভাবেই জলখেলার দিন শেষ হবে।





নিরন্ন জটিল অঙ্কে ভরপেট কেন সুখী নয়

এ হিসাব মেলাতে বসে শুধু দেখি বিস্ময়।





গোপন কোণ



প্রনব রুদ্র





ভালো খারাপের মাঝে

লালন করি গোপনে

বুকের মাঝে সঙ্গোপনে

সে থাকে কজন জানে?



সবার ভেতরই আছে জ্বালা

সহজ নয় যে তা ভোলা

ওরে ও পাগল মন

যাহ্ উড়ে যা যেখানে যেমন

মন কেমন যাহ্ যাহ্



####



এবং সত্য



প্রনব রুদ্র





বুদ্ধি কম দূরে থাকি

বুঝি কম চেপে হাসি।



দূরে দূরে খুঁজে আসি

তার জন্যই বুক ভারী

সোনাখোঁচা মন

আজো চাতকই…



বুদ্ধি নেই-ই বলে

সত্যি ভালোবাসি।



###





বেহিসাবি বাঁচা



প্রনব রুদ্র



একটা জীবন চাই সব কাটাকুটির পর

 তালপাতা হাতে সূর্যের কাছে বসে হাওয়া দেব।

 বলবো, এতো কেন রাগ তোমার? এতো কেন তাপ? কেন এতো আগুন শরীরে বলোতো!

তোমাকে ছাড়া তো জীবন চলে না

এ সংসারও অচল, একটু শান্ত হও।

ভালো বাসো।

ভালোবাসাই জীবনের উৎস আর শেষ বিন্দু। 



দীর্ঘ পথচলতি বেদনা মাঝে মাঝে

উঁইপোকার মতো একটানা

ক্রুরর ক্রুরর শব্দে কুরেকুরে খায়।



            একটাই জীবন চাই। একটাই।

তাতে আর কিছু মশলাপাতি থাকুক বা না থাকুক। ভালোবাসা থাক। আর তাকে বিরহ বার বার পোড়াক। 







তুমি



বিধান চন্দ্র রায়



তোমার প্রতিটি অঙ্গ এক একটি কালজয়ী প্রতীক

তোমার প্রতিটি স্পর্শ এক একটি মহাকাব্যের সমান।



তোমার শরীরের ঘ্রাণে লাজুক হয়ে ওঠে

                              আমার প্রিয় গন্ধরাজ,

তোমার মনের উদারতার কাছে

                              আকাশ ক্ষুদ্র হয়ে যায়,

তোমার পথ চলার গভীরতা

                              সমুদ্র করে অনুসরণ।



তোমার প্রতিটি কথা এক একটি মতবাদ হয়ে যায়,

তোমার প্রতিটি চিৎকার এক একটি বিপ্লব নিয়ে আসে।





বয়ে চলা জীবন।



অরুন্ধতী চৌধুরী



তারপর রাত শেষে দিন এলো হেসে। আমরা জীবন কে শুরু করে দিলাম আবার নতুন করে ভালোবেসে। আমাদের দিন চলার হিসাব শুরু হলো সূর্য কে সঙ্গে নিয়েই। যা বুঝতে পারিনি ,তা সহসা যেন বোঝার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, আমাদের কাছে যারা ধরা দিলো অবশেষে তাদের কে নিজেদের অস্তিত্ত্ব বোঝানো গেল না, আর যারা দূর দুরন্ত থেকে বিদায় নিয়েছে বহুদিন হলো তারা কালবৈশাখীর মতো এসে বুজিয়ে দিয়ে গেল শিকড়ের সারতত্ব। 

আমরা দোপাটি চারার মতো পাপড়ি বিছিয়ে বসে থাকি .....

প্রিয়জনের কাছে আবার চলে ঠিক যাই কিন্তু ফিরে যেতে পারি না আর কোনদিন ই।।



জীবন

পার্থ চক্রবর্তী



জীবন যুদ্ধ চলছে আজ বিভিষিকার প্রান্তরে 

মাটি কামড়ে জীবন, মরন আসছে নিতে কাহারে

মরনই যে আরম্ভ, তা মানতে বাধা কই?

শেষ যাত্রায় তাই সবাই ছড়িয়ে দেবে খই।



অদৃশ্য শত্রু আজ পাল্টেছে তার মুখ

সেই মানুষই ছিল তার শত্রুর অভিমুখ,

যুদ্ধে দয়া মায়া আর সততার ভিড় বাড়ছে,

শুধু সমাজের মাথারাই খালি পিছনে হাটছে।



ক্যামেরার ফ্ল্যাশগান ধরে রাখছে সেসব গান

সুযোগ পেলে সুর বেঁধে ধরবে কলতান

অন্যায় অবিচার অসত্যর ধুলিস্যাতে হোক ধুলিয়ান,

প্রেম আর ভালবাসাতেই বেজে উঠুক মনুষ্যতের জয়গান।







অপশক্তি নিপাত যাক



     সৈয়দ আসরার আহমদ



সুন্দর এই পৃথিবীতে সুন্দর নদী আমাজন

আরও সুন্দর তার অববাহিকা

সুন্দর মিসিশিপি ও মিশৌরী 

আরও সুন্দর তাঁর অববাহিকা

সুন্দর ভলগা 

সুন্দর রাইন

সুন্দর হোয়াংহো আর তার অববাহিকা

সুন্দর কঙ্গো ও তার অববাহিকার জনপদ

সুন্দর ব্রক্ষ্মপূত্র আর তার অববাহিকা

সুন্দর সিন্ধু নদ ও তার অববাহিকা

কিন্তু তার চেয়ে আরও বিস্ময় আমার গঙ্গা মা

কৃষ্ণা কাবেরী আর গোদাবরী

আর তার চারপাশে গড়ে ওঠা জনপদ আমার মাতৃভূমি

এত সুন্দর নদী এত সুন্দর দেশ এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

সব কিছুকে চুরমার করছে সাম্প্রদায়িক কিছু লোক

নিপাত যাক,ধ্বংস হোক দেশের সংহতি বিনষ্টকারী অপশক্তি ।









জলের ধর্মে শুকতারা বাঁচে....



পারমিতা ভট্টাচার্য



অগোচরে আমি সারারাত লুকোচুরি খেলি

জোৎস্নাস্নাত মেঘের কেশবিন্যাশে.....



মুহূর্তরা উত্তরফাল্গুনী চোখে আঁকে

সময়ের খসে পড়া খড়কুটো,বল্কল.....



গভীর রাতের প্রহরে প্রহরে ডেকে ওঠে

পাখি, কী বলে ওরা জানো?

জানা নেই কারো, 

জানা নেই কারো কতো কতো কলঙ্ক নিয়ে চাঁদ হাসে!!

কতো শব বুকে জমা রেখে স্বচ্ছতোয়া পুণ্যকুণ্ড হয় !!

কতো পাঁক ঘাঁটলে পঙ্কজ হয়ে একটি শিশিরবিন্দুর প্রেমিকা হওয়া যায়!!



গভীর রাতে মিথ্যারা ঘুমিয়ে পড়ে......

রাত বাড়লে মিথ্যার পাহাড় হরিণ শাবকের মতো পেলব হয়ে যায়

হাসনুহানার গন্ধ- ছায়ায় মৃত্যুপুরী আবার জেগে ওঠে,

শিশিরসিক্ত লোহি আস্তিনের ধুলো ঝেড়ে বলে উঠে

"অনেক তো রাত হলো,এবার অন্ততঃ স্লিপিং পিলটা খাও....."



এতো প্রেম কোথায় রাখি বলতে পারো!!

কোথায় লুকিয়ে রাখি এতো ঝড়!!

কোন খুঁটে জারিত করি এতো আগুন!!



প্রবল জ্বরে কবিতায় জলপটি দেয় অভিমান,

ভিজে ওঠে ডাইরির পাতা,

একটা মেয়ে কেনো প্রেমাঙ্কুরে শেল বেঁধে জানো??

স্পর্ধিত ভগ্নাংশ যদি এতটুকুও থেকে থাকে

তবে স্বরচিত পংক্তিকে কখনও শুকতারা হতে দেয়না সে........

জলের ধর্ম অট্টহাস্যে ফেটে পড়লে   

হীরের নেকলেস খুলে রাখে শুকতারা 

তার পরিবর্তিত অবস্থানে......





সনেট- অব্যক্ত বৈশাখ

-- শ্রী কালপুরুষ 



একটা প্রলয় চাই-ই, কালবৈশাখী

যেখানে মহামারীর ধূলিসাৎ হবে,

মৃত্যুর বেদনাটা তবেই তো মুছবে

বৈশাখেরই অপেক্ষায় ঝরছে আঁখি।

একটা মাস সেই জন্যই তুলে রাখি,

ইতিহাস আমাদেরই জয় লিখবে

মুক্তির কবলে কত না প্রাণ বাঁচবে!

রোজ মেঘ ছায়া মহমারিই তো দেখি।



চলো মনের বন্ধনে করি অঙ্গিকার,

আমরা বিজয়ের মাসে মুক্তি পাওনা,

এই নব আনন্দ ত্যাগের উপহার,

এ সুখের বদলে তুলে দাও আহার,

প্রকৃতিকে, আমাদেরই  মিটছে দেনা

বৈশাখ আছে, সূচনায় নবযুগের।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮