কবিতার কচিপাতা ৩

বিরহে 
সৌরভ মান্না 

জ্বলে থাকুক
যতই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হোক-
হাজার-হাজার,লক্ষ-লক্ষ,কোটি-কোটি 
নির্বাক বিনিদ্র রাত্রি বয়ে যাক,
চির অপলক দৃষ্টিতে ভর করে 
বেঁচে থাকুক-
চঞ্চলতার খোলোস ছেড়ে 
শান্ত মন্থরতায় আশ্রয় নিক,তবু 
আমৃত্যু প্রাণময় হয়ে,আমার 
অভঙ্গুর বিরহে তারার মতো 
মিটি-মিটি জ্যোৎস্নার 
আলোর জাল বিছিয়ে 
নিশ্চুপ হয়ে রয়ে যাও। 



 জীবন
মৌমিতা ভট্টাচার্য্য

ধ্বংসের মাঝেও আমি সৃষ্টির স্বপ্ন বুনি,
আলোর আশায় কাটে মন্দের দিন গুণি।
ঝরা পাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,
নব কিশলয়ের আকুল আহ্বান সেকি...
বাসা হারা পাখিটার চোখ জুড়ে স্বপ্ন ঘোর, 
নতুন আশ্রয়ের ঠিকানায় দেখবে নতুন ভোর।
যন্ত্রণা সয়ে আবারও বাঁচাতে চাওয়া,
কিংবা বাঁচতে বাঁচতে যন্ত্রণা সয়ে যাওয়া...
যদি বা ফিরে আসা অতীতের টানে, 
তবু ছুটে চলা অজানা অনাগতের পানে।
উত্তাল ফেনিল জলরাশি তোলে কত শত ঢেউ,
হৃদয় পাড়ে ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের খোঁজ রাখে না কেউ।
জীবনের প্রতি বাঁকে লেখা হয় বিচিত্র যত গল্প,
অনেকটা তার অজানা, জানাটা খুবই অল্প।
ভেঙেও যখন আবার গড়ি, নতুন করে বাঁচি ;
শত ঝঞ্ঝার পরেও আমি বাঁচতে ভীষণ রাজি।




একাকী বৈশাখে
 অয়ন সরকার


আজ, এই পয়লা বৈশাখে আমি আছি একা হয়ে বসে।
শুধু মৃত্যু দিচ্ছে হাতছানি প্রতিটা নিঃশ্বাসে।
এই আনন্দের মুহুর্তেও সবাই নিরব, হারিয়ে ফেলেছে তারা তাদের হাসি।
কেউ তো বলছে না যে আগত বৈশাখ, তোমায় আমি বড্ড ভালবাসি।
চারিদিক যেন নিস্তব্ধ, সবার মনে চাপা ভয়, যে এই মৃত্যু বুঝি এল চলে।
হৈ হুল্লোড়টা যেন হারিয়ে গেল, সবাইকে না বলে।
আমার হচ্ছে বয়স, দেখেছি অনেক বৈশাখে বৈশাখীদের বিচরন।
আমি এই সুন্দর অনুভূতিকে অনুভব করতে চাই আমরণ।
সকল মানুষ আজ মারনব্যাধির ত্রাসে করছে আর্তনাদ।
আজ সবাই গুনছে তাদের মৃত্যুর প্রমাদ।
আর এখন দুঃখ নয়, বাড়িতে বসেই কাটাবো পয়লা বৈশাখের মুহুর্ত।
চলো সবাই আমরা এক হয়ে ভালবাসা ও কুড়িকে কুর্নিশ জানিয়ে বোঝায় এই বাঙালিয়ানার আসল গুরুত্ব।।



বোদ্ধা

                         বিধানচন্দ্র রায়


                   রক্তের বদলে রক্ত
                   খুনের বদলে খুন ...

                   এই সব হিংস্র পতাকা ছিঁড়ে
                   কে যেন বলেছিল ---
                   চোখের বদলে চোখ
                   সুতরাং
                   জগৎ অন্ধকার।


                   তাই ভাবছি --
                   কতটা নির্বোধ আমি
                   কতটা সুবোধ আমি।




বিলাস
বৈদূর্য্য সরকার 

ঠাণ্ডা আর গরমের মাঝে বসন্ত আসে যেমন
তুমিও তেমন এসো  শৈত্য থেকে  উত্তাপের দিকে,
তবে বাড়াবাড়ি হলে  কোথাকার জল কোথায় গড়াবে
                  কিছুই বলা যায় না।  


এসব বলার মাঝে তুমি হেসে ওঠো অবিকল
আমাদের হারিয়ে যাওয়া কৈশোরের সেই বিস্ময়বোধের মতো। 

সংসার সীমান্তে তুমি জপলে বংশীধারীর নাম
জীবন রাধামুদ্রায় চুষে খায় আমার যৌবন। 
অতঃপর 'কপালে কী আছে' ভেবে চ লেছি গভীরে
যেখান থেকে বড় একটা ফিরতে পারে না কেউ।   



তবু অভ্যেসবশত

তপন রায়চৌধুরী


দেয়ালঘড়িটা ছিল না সেখানে
তবু অভ্যেসবশত
সেদিকেই চোখটা চলে যায় !

অফিসের পাট চুকে গেছে  বহুকাল
তবু অভ্যেসবশত
ঠিক ন’টায়  স্নানঘরের দিকে যেতে হয় !

ভোরে এখন না উঠলেও চলে
তবু অভ্যেসবশত
ঠিক পাঁচটায় ঘুমটা ভেঙে যায় !

ভাবি চুপ করে থাকব
তবু অভ্যেসবশত
কিছু অর্থহীন শব্দ মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় !  

সম্পর্কের উষ্ণতা প্রায় নেই বললেই চলে
তবু অভ্যেসবশত
আরো কিছুদিন মানিয়ে চলা শিখতে হয় !



পশ্চিমের জানালা
অরুণ কুমার সরকার

রাত্রি তখন হয়তো বারোটা হবে
পশ্চিমের জানালা আমি রেখেছি খুলে
চারিদিক নিস্তব্ধতায় ক্লান্তির ঘুম যেন দিচ্ছে 
                                                    ‌‌‌‌         সবাই।

আমার দু'চোখ ঘুমের নিদারুণ অনিহা 
নিয়েছি পেন খাতা কবিতা লিখব বলে।

আমার এ পাগলামো দেখেছে পূর্ণিমা চাঁদ জোছনার 
                                                 হৃদয় খোয়ানো রূপ;
কিছুটা ঠিকরে পড়েছে আমার পশ্চিম জানালায়।

জানালার গা ঘেঁষা নদীটা 
বর্ষায় ফিরে পায় প্রাণ;
রেল লাইন চিরে দেয় তার হাড় জিরজিরে 
                                                               বুক।

পাথরের গায়ে হড়কানো স্রোতের নরম মিষ্টি শব্দ ভেসে
                                                            আসে কানে;
রাত্রি তখন হয়তো বারোটা হবে
পশ্চিমের জানালা আমি রেখেছি খুলে
কবিতা লিখব বলে...




সিঁড়ি

সমাজ বসু


অনেক দিন ফেলে এসেছি সিড়ি ভাঙা অঙ্ক,
আজো সেই ভয়, আড়ষ্ঠতা--
সিঁড়ি বেয়ে উঠি, উঠতে উঠতে কখনও সিড়ির আলো নিভে গেলে আরো ভয়--
কারো ছায়ার অনুসরণ ভেবে বুক কাঁপে--
নিদেন একটা মোমবাতি ধরে না কেউ,
কি অসম্ভব নিকষ অন্ধকার মাখনের মত লেগে থাকে সিঁড়ির গায়ে--
তবু উঠি-- 

পতনের ভয়ে এখন সব সিড়ি গুণে রাখি,
মেপে রাখি আয়তন--
                         কিংবা উচ্চতা....

সিঁড়ি।



হলমার্কা পৃথিবী
--চিরঞ্জিৎ বৈরাগী



কিছু লেখা অমাবস্যার রাত
   কয়েকটা পূর্ণিমার আকাশ

কত কথা গোলাপ-গাঁথা
   অথবা নুড়ি-পাথরের উপত্যকা

কখনো প্রেমের হলমার্কা কবিতারা
    হাঁড়ি কড়াই আর স্টেশনারি

সুদসহ আসল
   সিকির বিনিময়ে আধুলি
      আবার হ্যালো-হাই এর দুনিয়াদারি

স্যাটেলাইটে গুপ্ত পৃথিবী




আমি

পার্থ চক্রবর্তী
------------------------------
সরকারে নেই,  দরবারে আছি 
আচারে নেই, বিচারে আছি 
মনে নয়, মননে আছি 
প্রেমে নয়, ভালবাসায় আছি।

 শক্তিতে নয়, ভক্তিতে আছি
অমৃতে নয়, নৈবেদ্যে আছি
চরণামৃতে নয়, চরনে আছি
সুখে নয়, দুঃখে আছি। 

মুর্তিতে নয়, মুর্তিমানে আছি 
ভুতে নয়, সর্বভুতে আছি 
জ্ঞানে নয়, বিশ্বাসে আছি
মন্দিরে নয়, হৃদয়ে আছি।

আরাধনায় নয়, সাধনায় আছি
কর্মে নয়, কর্মফলে আছি
সকামে নয়, নিস্কামে আছি 
শয়নে নয়, স্বপনে আছি।

ভবে নয়, অনুভবে আছি 
ভাবে নয়, ভাবনায় আছি
অভাবে নয়, তাড়নায় আছি
শুরুতে  আছি আর শেষেও আছি 
আমি আমাতে নেই,  আত্মায় আছি। 




গুচ্ছ পুচ্ছ 



কোয়েল 


১. 
মন খারাপের চিঠি

মন খারাপের চিঠি,
আজ সন্ধ্যায় খামে ভরে, 
 তোমায় পাঠিয়েছিলাম। 
আমার শরীরের সুগন্ধি ছিটিয়ে
চিঠির উপরে লিখেছিলাম
তোমার নাম, 
আবেগ পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে।।
জানতে চেয়েছিলাম,
তুমি কেমন আছো!
আজ আর সেই খোঁজ কেউ নিতে চায়না।।
তোমাকে দেখিনা আজ বহুদিন,
তোমার মনে পড়ে আমায়??
আচ্ছা, আমাদের সেই আঙুলের স্পর্শ,
আমাদের গলা মিলিয়ে একসাথে গাওয়া গান,
আর আমাদের আমলকি বাগানের প্রেম।
মনে পড়ে গো ??
জানো, আমার মনে পড়ে খুব তোমায়।। 
তোমার ঘুম জড়ানো চোখ, 
তোমার রেগে যাওয়া লাল নাক, 
আমার পাগলামি গুলো তে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া,
সবটাই বুকের পাঁজর এ গিয়ে ধাক্কা মারে। 
আর সবচাইতে বেশি মনে পড়ে, 
তোমার অজুহাত দেখিয়ে দূরে চলে যাওয়া ।


২.

মুখোশের আড়ালে

নির্বাক স্বপ্ন গুলোর স্তূপ
আবেগের অট্টালিকায় হানা, 
এক দু পা হেঁটে, 
পূরণ হল সুখের আস্তানা।। 

সময় পাল্টায়,
 মুখোশ এর আড়ালে মুখ অচেনা হয়, 
অচেনার ভিড়ে স্থান তাদের, 
যারা রয়ে যায় ভালোবাসায়।। 

মন খারাপের সামিয়ানায় 
তুমি যে আজ চুপটি করে, 
আবেগ ঘন মুহূর্তরা, 
একছুট দিলো মেঘের ঘরে।। 

নিস্তব্ধ নিশ্চুপ রাত, 
আমাকে গল্প শোনায় তোমার ব্যর্থতার, 
আমি চোখ বুঁজে হেঁটে যাই, 
তোমাতে জন্ম হয় আমার বিষন্নতার।।


৩.

হালকা হাওয়া

আজ কোনো নতুন ছন্দে 
হাতে হাত রেখে  যদি করি সপ্তসিন্ধু পার,
এক গুচ্ছ কথোপকথন, 
ঠোঁট দুটি তে, চলুক বারংবার।।
প্রেমে প্রেমোময়ী প্রেয়সী তুমি,
গানে গানে তুমি সুরোবিতান, 
লাস্যময়ী চলন তোমার, 
নেশার টানে বাঁধব যে গান।। 
মাতাল হাওয়ায় মদের নেশা
সুগন্ধি যেন শিহরণ জাগায়, 
টলমলে পায়ের নূপুর ঝংকার
রজনীগন্ধায় রাত্রি মাতায়।। 
গল্প তোমার, গল্প আমার 
আলিঙ্গনের নতুন আভায় , 
মন্ত্রমুগ্ধ তোমার হাসি 
কাব্যের পাতায় গল্প বাড়ায়।।




বিকাশ দাস 


ইচ্ছে যখন
রাজা হবার ইচ্ছে যখন 
আগে নিজের হাতে মাটি কেটে ফসল ফলিয়ে দেখাও
নেতা হবার ইচ্ছে যখন 
আগে নিজের শিরদাঁড়া  সোজা করে দাঁড়িয়ে দেখাও
মানুষ হবার ইচ্ছে যখন 
আগে নিজের মাথায় অন্যের  মাথা উঁচু করে  দেখাও
বন্ধু  হবার ইচ্ছে যখন
আগে নিজের হারে  বন্ধুর জিৎ     মুখর করে দেখাও
দোসর  হবার ইচ্ছে যখন 
আগে সাগরের নুনে  মিঠে জলের নদী করে দেখাও 
***

চার ফালি মেঘ 
 
এক ফালি আকাশে 
এক ফালি মুখর তোমার হাতে 
এক ফালি গেলাসে 
এক ফালি বৃষ্টি   বহুল রাতে  
এক ফালি বাসরে  
এক ফালি নারীর অন্তর্বাসে 
এক ফালি কোমরে 
এক ফালি শাড়ির সুতোর রাসে । 
এক ফালি নয়নে 
এক ফালি স্বপ্নের লজ্জা ভরে  
এক ফালি শয়নে 
এক ফালি সঙ্গমের শয্যা ধরে । 
এক ফালি পাথরে 
এক ফালি বাঁশের ঝোপ ঝাড়ে 
এক ফালি সাগরে 
এক ফালি নদীর সাঁকোর পাড়ে। 
এক ফালি যৌবনে 
এক ফালি ফুলের ফুসফুসে
এক ফালি দর্পনে 
এক ফালি মুখের রস চুষে । 
এক ফালি সন্ধায় 
এক ফালি ভোরের বাসি ফুলে।  
এক ফালি তন্দ্রায় 
এক ফালি কনের নাভি মুলে । 
এক ফালি বর্গায় 
এক ফালি ধানের ভাতের গন্ধে 
এক ফালি দরগায় 
এক ফালি ঋণের বোঝা স্কন্ধে ।  

***

এক টুকরো ভালোবাসা

এক টুকরো   ঘর জোড়া দীঘল কাঠে 
এক টুকরো   ধান চালের নিমগ্ন ভাতে। 
এক টুকরো   বাসন মাজার পিছল ঘাটে 
এক টুকরো   হাড় খাটুনির নিরন্ন রাতে। 
এক টুকরো   গন্ধ মাখা চিকন রুমালে 
এক টুকরো   শুষ্ক পাতার মিহিন ডালে। 
এক টুকরো   কাঁচা লঙ্কা সাদা নুনে 
এক টুকরো   সাদা মাঠা রমনীর গুণে। 
এক টুকরো   চোর চোর বুড়ি ছোঁয়া খেলা   
এক টুকরো   স্বপ্ন রাঙা রাত্রি লুকোচুরির মেলা। 
এক টুকরো   ঘর সাজানোর পর্দার নকশী রঙে 
এক টুকরো   লাজ জড়ানো নতুন কনের ঢঙে 
এক টুকরো   মুক্তির বর্ণ দু হাতের সফল কর্মে 
এক টুকরো   তৃষ্ণার দহন মানুষ   অমল ধর্মে। 
এক টুকরো   গভীর ধুলোঝড় সাগর হানা বাতাসে 
এক টুকরো   উঠোন বাড়ি সম্পর্ক টানা আকাশে। 
এক টুকরো   মীরার একতারা দু চোখ মাখা অভিমানে 
এক টুকরো   রাধার হৃদয় কাড়া কালার বাঁশির মোহটানে। 
এক টুকরো   গাছের মগ ডালে মগ্ন পাখি মীরার গানে 
এক টুকরো   গাছের আড়ালে মগ্ন  কালা রাধার চানে। 
এক টুকরো   তাপ উত্তাপের আঁচ মাঝ খানে   
এক টুকরো   কাঁপন হানা  হৃদয় হাড়ের টানে। 
এক টুকরো   পোড়ো মন্দিরে  খন্ড শীলা মোহে 
এক টুকরো   রাজপ্রাসাদে দীন দুখিয়ারী দন্ড সহে। 
এক টুকরো   পুরুষের ঔরসে পুণ্য  দাগে 
এক টুকরো   নারীর গর্ভের গর্ব পুণ্য জাগে। 

***

দেবলীনা তুই এলি না

দেবলীনা তুই এলি না 
একলা আমার গোঠে 
একলা আমার ঠোঁটে 
আমার দু’হাতের বেড়ি খুলে দিতে। 
     
দেবলীনা তুই এলি না 
একলা আমার শরীরে 
একলা আমার গভীরে 
তোর কোল আদরে আমায় উলসে দিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
যখন আমি শোবার ঘরে 
সবার চোখ গোপন করে 
শুষ্ক ঘাসের ভেতর দুব্বো খুঁজে নিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
যখন আমি সংকটের মোড়ে 
পেটের তলা   খিদের ঘোরে 
বাসি ভাতে উষ্ণ স্বাদ খুঁজে নিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
বাঁজা গাছের কুঠার কঠিন দাগে 
অল্প-নীর  বৃষ্টি মেঘের অনুরাগে 
নদী ঝিলের বুকে সাগর খুঁজে নিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
আমার বুকের নীরব টানে 
চোখের জলে গোপন চানে 
ভালোবাসা তোর স্বীকার করে নিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
উনুন জ্বেলে হেঁসেল ঘরে 
সংস্কারের দুহাত এককরে 
রোজ নবান্নের উত্সব খুঁজে নিতে। 
দেবলীনা তুই এলি না 
আমার অন্ধ বধির রাতে 
ফুলের গন্ধে অস্থির ঘাতে 
আমার ইচ্ছের ধর্ষণে দাগ খুঁজে নিতে। 
***

এসো তুমি

এসো 
উসনো চালের গরম গলা ভাতে 
এক ঘুম নিয়ে কাঁথায় শীতের রাতে 
তুমি আমার লক্ষীশ্রী   
তুমি আমার ভাগ্যশ্রী। 
এসো 
গুছিয়ে সকল অভাব তোমার হাতে 
সব সুখ টুকু নিংড়ে রোজ দুমুঠো ভাতে। 
এসো 
মির্জা গালিবের শায়রী দুচোখ পেতে 
বুকের পাঁজরে দু’জনের সাথে হৃদয় মেতে। 
এসো 
মেঘের বাজনায় বৃষ্টির জলতরঙ্গ পায় 
কাঁচের চুড়ির ছটা ঠেকলে আমার গায়। 
এসো 
বিকেল ভাঙা সন্ধ্যা রাঙা ঘরের ছাদে 
জড়িয়ে রাতভোর শরীর জাগা উন্মাদে। 
এসো 
মাটির সোহাগ রাঙা কুসুম খোঁপায় ঢেকে 
প্রণয় প্রহর সতর্কের দিন রাত আগলে রেখে। 
এসো 
অমোঘ মেঘের বর্ষার তুলির বর্ণ বাণে   
শাঁখা সিঁদুর সূর্য চাঁদ ভিটে মাটির টানে। 
এসো   
সুখ দুঃখ লাগা চালে ডালের দোসরে 
আমার কবিতায় শব্দের ঝাঁকা উজার করে। 
এসো 
চাল মাপা অন্ন-কৌটোর সংসারে 
স্বর্গ রাখা ঘরের ভেতর দু’হাতের সংস্কারে। 
তুমি আমার লক্ষীশ্রী   
তুমি আমার ভাগ্যশ্রী 



ইদানীং

ঘরে খিল দিয়ে
কার দিকে চেয়ে
নিজের মতো করে ছড়িয়ে আছো
নিঃশ্বাসের ভেতর
ভালোবাসা যতো ভরিয়ে আছো।  

তুমি চলে যাচ্ছিলে
আমায় আলগোছে
বেশ কয়েকটা আলতো চুমু দিয়ে অভিমানে
তোমার এলোচুল শাশ্বত আনন্দ হয় যেখানে

আকাশের নীচে খোলা হাওয়া
অসহায় শরীরের বাগান প্রাণবন্ত
চুমুর দহন
ঠোঁটের আতপতাত সর্বোত্তম
রমণ মরণ 
গুচ্ছগুচ্ছ ঘাসের ডগায় শিশির
রমণপ্রপাত হৃদয়লীন  
রোদের ঝলসানি
চন্দ্রমার মতো যৌবন শরীরে রমণী।

অনেক দিনপর বৃষ্টি দেখলাম
তোমার জানলায় একলা শীত
হাত বাড়িয়ে ডাকছিলো তোমাকে
তখন
তুমি অন্য বৃষ্টির মেঝেতে শুয়ে
ঠোঁটের সব  পুরোনো রঙ ধুয়ে
আঁকছিলে তোমার  নিজের রঙের বিহ্বলতায় 
নিঃসঙ্কোচে
গৃহিণীর শরীর বদলে অন্যের বিষয়ী সুখীর ঈর্ষায়
তোমার ব্যক্তিগত সুখ 

আমার রাত্রি ব্যতিক্রম হাওয়ায়
আমার একলার সংবৃত বিছানায়  
আজও বেশ লাগে তোমার বিয়ের বেনারসি শাড়ি
সেই রঙ সেই গন্ধ সেই ঢঙ  সুতোর বুনোনভারি
যেন বাইশের যুবতী বয়স । ধারাল ছুরি উচ্ছ্বসিত ।
তোমার শরীরের সব খাঁজ শাড়ির প্রত্যেক ভাঁজে
দিনলিপির রোজনামচা প্রনয়সারা বিলোল লাজে

ইদানীং
পৃথিবীর দুয়ার দিয়ে  
আকাশের দুয়ার  দিয়ে
তুলে রেখেছি
তোমার বেনারসি শাড়ি ফুলের ফাঁস সম্পর্কের আঁচ উৎসঙ্গের সারে 
খুব যত্নে দু ‘চারটে  ন্যাপথলিনের গুলি ছড়িয়ে আলমারির অন্ধকারে
সুস্থ আমি তোমার দীর্ঘ সহবাসের ছায়ায় সৌকর্য ঢেলে আমার শরীরে 

***


চুমুর রাত

ভোরের সূর্য রোদের সাজ
আসে ঘরে ভুবন জুড়িয়ে নিতে
অন্ধকারে চাঁদ রাতের লাজ
আদরের বিছানা সাজিয়ে নিতে

তোমার আঁচের হেঁশেলে রাঁধব জ্যোৎস্নার ভাত
চুমুর স্বাদে ঠোঁট চুবিয়ে জুড়াব  ক্ষিদে দিবারাত ।

***

বেঁচে থাকার চুল্লি

প্রথম যেদিন
তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁট 
রেখেছিলাম
সেদিন বুঝেছিলাম  তুমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ
পরক্ষণে তোমাকে ছাড়া শ্বাস নিতে আমার কষ্ট হত 
যেমন
পৃথিবীর ভূমিজ সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল 
চাঁদের আলোর স্পর্শে    সমুদ্র  উজ্জ্বল
মিলন তীর্থ মাটির পাটি
বিনম্র নির্যাতন      স্থির ভয়শূন্য উচ্ছল ।

এসো
জিভের সঙ্গমে
আমার ঠোঁট তোমার ঠোঁট থাক নিরুত্তর
চুমুর উত্তাপে বেঁচে থাকার চুল্লি নিশ্বাসের হাওয়ায়
জীবনের হেঁশেল হেসে খেলে বেঁধে বেঁধে যায় ।

***
দুষ্টুমি

তোমার নিঃশ্বাস আচম্বিত চুম্বনের গহনে
উড়িয়ে দিগন্তে    অন্তহীন রহস্য গোপনে
মোহের দরজা জানালা ভেঙে নিজের মনে
আলাপী আকাশ মেঘবরণ আমার শিহরণে 

তোমার সোহাগ মাখা বিলোল দুষ্টুমি
কবিতার মতো দৃষ্টি কাড়া স্বাধীন ভূমি
সৃষ্টি ছাড়া বৃষ্টি          প্রসন্ন মুখর সৃষ্টি
সঙ্গোপনে লুকানো ঝনৎকারে
উষ্ণ মধুর আলিঙ্গনে   তুষার-শীতল শরীর
নিরাময় 
উচ্ছিত সব কথার স্তব্ধতার  গভীরে হৃদয়
ঋতুময়  
***

তোমায় ছুঁয়ে

এই নাও
তোমায় ছুঁয়ে কথা দিলাম ।
যদি বলো
শীত পেয়েছে, কাঁটা-দেওয়া অন্ধকারের চাদরের তলায়   
আমি দেবো উজার করে আমার চুম্বনের উত্তাপ তোমায় 
যদি বলো
তুমি তৃষ্ণার্ত খরায়, চৌচির অন্তঃস্থল  চাঁদলগ্ন-হাওয়ায়
আমি দেবো উজার করে আমার ভরা-নদীর স্তন তোমায় 




মৌসুমী মুখোপাধ্যায় 

কবিতা ১

মন্দির          

যেখানে তুমি বিগ্রহ সাজিয়েছ মন্দির,ওখানে'ই জাগে তোমার ঈশ্বর ..... 
জানো আত্রেয়ী, 
এই যে সারাটা দিন দু-হাতে খেটে
শহরের প্রান্ত জুড়ে হেঁটে 
মুখের রক্ত তুলে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি, ভুলে--
বাড়ী ফিরি আশ্রয় নিই তোমাদেরই দু-জোড়া আঁখির তীর্থে, 
সব অবসন্নতা খুলে দিই উজার করে 
ও-দুটি মনের ভরা সরোবরে
ডুব দিই, শুদ্ধ হই ভালবাসার জলে
ওই' তো আমার প্রেমের সিংহাসন
ওখানেই আমার স্বর্গ-বাসর , অধীশ্বরের নীরব আসর 
তুমি আর মেয়ে-- সে তীর্থ'ই আমার মন্দির  সেখানে'ই জাগো তোমরা, ঈশ্বর ......
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

কবিতা ২

বিহার

যে অমৃতের সন্ধানে ফিরেছি নগরীর দ্বারে-দ্বারে 
সে বুঝি কোনো মধুরতার স্রোত বিশ্ব সংসারের এক নিঃসঙ্গ গোপন কান্না ; লেখা হয় নি আমার সে বিধিপথের খসড়া
নিঃসীমা পথ হেঁটে চলেছি শুধু--  আমি থেকে আত্মলোকের পথে, যেখানে শেষ হবে এ অন্তর্লীন সাধনা
লেখা হয় নি আজও সে মৃত্যুহীন      
লোনাজলের বাসনা......

:::::::::::::::::::::::::::::::::
কবিতা ৩

হীন অবয়ব           

মনে মনে আজও তার সাথেই পথ হাঁটি
কথা বলি, ফুল কুড়োই
মনে মনে নিঃশ্বাস ফেলি তার বুকে 
মাথা রাখি, জীবনপাঠ কাটাই
দীর্ঘশ্বাস ভাগাভাগি করে নিই নিস্ফল সুখে
কথা দিয়ে রাখি, নিয়ে রাখি তার চেয়েও বেশি 
মনে মনে একসাথে সর্বনাশের খেলায় মাতি 
কানাকানি করে তোলপাড় হয় সমাজ 
বাইরে তখন পা' রাখাই দায়
উঁকি দেয় সহস্র চোখ অযুত প্রতিবেশী 

মনে মনে আজও সে-- হীন অবয়ব, স্বপ্ন নয়
মনে মনে শুধু আর একটা রক্তমাংসের মানুষ গড়া হয় নি 
যাকে দেখি নি তাকে ঈশ্বর মনে হয়। ::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

                              



Comments

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮