কবিতার কচিপাতা ২.১
অসুখ
অমিতাভ দাস
কোথায় লুকিয়ে আছ মুখ,কোথায়?
নাকি ছিলেই না কোনোদিন?
তোমাকে জন্ম দিয়েছে
ভয় থেকে
ভক্তি থেকে
ধর্ম থেকে
ব্যবসা থেকে
লাভ আর প্রচুর গল্প রঙিন!
তুমি কোথায়?
নাকি ছিলেই না কোনোদিন?
পাতাঝরার ঋতুতে দিনরাত চোখ রাখি তারাখসায়,মৃত্যুমাখা নীরবতায় আকন্ঠ ডুবে অথচ ফিরে আসছে ঝাঁক ঝাঁক প্রজাপতি,ঝকঝকে আকাশ নীলে দৃষ্টি হচ্ছে লীন!
তুমি কোথায়?
নাকি ছিলেই না কোনোদিন?
সমস্ত উপাসনালয় ঘিরে 'না' এর পাঁচিল
প্রেম নেই,খেলা নেই,নেই কোনো আয়োজন,সৎকার দেখে দেখে বিষিয়ে উঠছে মন,কে শুধবে চৌকাঠে প্রাগযুগ থেকে বলি হতে থাকা ক্লান্ত রক্তঋণ!
কোথায় তুমি?
নাকি ছিলেই না কোনোদিন?
দেওয়ালে ঠেকছে পিঠ,চাপ নিতে নিতে ভেঙে যাবে যে কোনোদিন,তবুও দাঁতে চেপে দাঁত টিকে যাওয়া সভ্যতা যদি সাদা ক্যানভাসে এঁকে ফেলে অসুখের মুখ,
তা দেখে চমকে উঠবে ভয়,ভক্তি আর নানান গল্প রঙীন!
তোমাকে স্বার্থ অনুযায়ী গড়ে নেয় সব্বাই
আসলে কল্পনাগুলো ভীষণ অস্তিত্ববিহীন!!
প্রেমিক
- কোয়েল
প্রেমিক না,
আমি একজন ভালোবাসার মানুষ চাই।।
যে সারাদিন ক্লান্তি হাওয়ায় উড়িয়ে,
হাজারো ব্যস্ততার মাঝে ছোট্ট একখানা মেসেজে
আমার সারাদিনের খোঁজ টুকু নেবে।
প্রেমিক না,
আমার একজন ভালোবাসার মানুষ চাই।
যে আমার নিস্তব্ধতার মাঝেও,
আমার মধ্যে হয়ে চলা কালবৈশাখীর অনুমান করতে পারবে।
প্রেমিক না,
আমি একজন ভালোবাসার মানুষ চাই।
যে আমার হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা চোখের জল এর গতিবেগ টা অনুধাবন করতে পারবে।
প্রেমিক মানুষ না, আমি একজন ভালোবাসার মানুষ চাই।
যার সামনে নিজের খারাপ টা নির্দ্বিধায় জাহির করতে ইতস্তত বোধ করব না ।।
আমি প্রেমিক চাই না, ভালোবাসার মানুষ রূপে একজন বন্ধু চাই
যে আমার সকল রাগ অভিমান শেষেও
হাত টা শক্ত করে ধরে গভীর রাত শেষে নতুন সোনালী আভা একসাথে দেখবে ।
নিশ্বাস
সুজিত রেজ
_________
সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে শোনা যায়
সুষুম্নাসংগীত
ছেদনগ্রন্থির ভয়াবহ আর্ত চিৎকার
সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে মাপা যায়
খরতাপ হলাহল
মসৃণ হলাহল আলো-আগুন
সকালের প্রথম নিশ্বাসে বোঝা যায়
পরিবাহী নাক নল মাত্র
আরও গভীরের ফুসফুস চিতল ঝরোখা ।
_________
সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে শোনা যায়
সুষুম্নাসংগীত
ছেদনগ্রন্থির ভয়াবহ আর্ত চিৎকার
সকালের প্রথম চেতন নিশ্বাসে মাপা যায়
খরতাপ হলাহল
মসৃণ হলাহল আলো-আগুন
সকালের প্রথম নিশ্বাসে বোঝা যায়
পরিবাহী নাক নল মাত্র
আরও গভীরের ফুসফুস চিতল ঝরোখা ।
কবরে রাজপ্রাসাদ
সৈকত গোস্বামী
------------------------------ ---------------------------
করিডর ভেঙে দেখছে শালিক
কচু পাতায় সামাণ্য জল,
একটা ইঁদুর হেটে চলে গেলো
পাখির কিচিরমিচির অনর্গল।
বট গাছটা করছে চুম্বন
ইটের শরীর ঘিরছে প্রায়,
স্নানঘরে রাজার বাথটপ শুয়ে
অহংকার সে তো অভ্যাসের দায়।
আংসিটাও আছে একই রকম
ঝাড়বাতিগুলো মিউজিয়ামে,
কার্নিসটা আজ হয়েছে হাসপাতালে
পাখির জন্ম হয় সেখানে।
বেশ তো ছিলো সব হারিয়ে
বটবৃক্ষকে সঙ্গী করে,
রাজার সৈন্যদল নেই বলেই কি
প্রোমোটার এলো বন্দুক ধরে।
স্তম্ভ জানে সময়ের মূল্য
স্মৃতির পাঁজরে আধুনিকতার ফাঁস,
বটবৃক্ষ এখন রাজ্যের সৈন্য
বুলডোজারের ছোঁয়ায় নিমেষে ইতিহাস।
ঘোড়ার আস্তাবল বদলে গেলো
অশ্বের বদলে গাড়ির সোরুম,
কতো নর্তকীর জীবন কেঁদেছে
বাইজিখানা আজ পার্লার রুম।
সেনাপতি এখন সিকিউরিটি গার্ড
দূরবীনের বদলে সিসিটিভি,
তালপাতার পাখাগুলোর ভীষন অভিমান
আমায় ছেড়ে,এসিকে কেনো নিবি।
অগ্রগতির চাকা হাসে মুখ টিপে
পিলারের হা মুখ স্মৃতিস্তম্ভ গিলে খায়,
রাজবাড়ির মৃতদেহ কবরে শুয়ে পড়ে
ফুলের বদলে সপিংমল ফুটে যায়।
পেন্ডুলাম
সন্দীপ ভট্টাচার্য
আমাদের মাঝে এখন এক অশান্ত পেন্ডুলাম,
আক্ষেপ থেকে গেলো
ফুৎকারে হৃদয় উড়িয়েও
প্রেমিক হতে পারলাম না,
শুধু থুতু চেটে খেতে না পারার অবান্তর অভিযোগে
আদতে ভালোবাসার কোনো সংবিধান হয়না
যেখানে লেখা থাকবে
প্রেমিকের চোখময় শুধু উপাসনা শান্তি
আর প্রণয়িনীর শরীর জুড়ে
আরব্য উপন্যাস
তাই অগত্যা
আত্মসম্মান কে ধরে নিয়েছিলাম সর্বজনীন একক
ঠিক তখনই , ফুটো চাঁদ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে
শেষ হলো জোছনার কোলাজ
আর অজ্ঞাত মুহূর্তরা বলে গেলো
নিজেকে চিনতে সবসময় আয়না যথেষ্ট না।
রঙের বিন্দু-
শ্রীজা দত্ত
হাজার রঙের আলো তুমি,
সবার মাঝে থাকো!
শীতের দিনে মেঘের পড়ে -
বৃষ্টি গায়ে মাখো।
ক্ষনিক রোদের ছটার মাঝে,
হাঁসতে থাকো রোজ!
শিশির ভেজা ঘাসের ওপর-
রাখো মনের খোঁজ।
জনগণের কোলাহলে,
ছড়িয়ে থাকো তুমি!
তোমায় খুঁজি তোমায় দেখি-
তুমিই আমার দামী।
তোমার কাছে আমিই সহজ,
অন্যজনের চেয়ে!
কেমন আছো তুমি এখন-
আমায় ভুলে গিয়ে।
সাপলুডো
সমাজ বসু
একানব্বই থেকে দু দুটো সাপের মুখ এড়িয়ে কিছুতেই যাওয়া হয় না,
একশ'র দরজায়--
দরজার ওপারে উন্মুক্ত নীল আকাশ--
প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য।
হঠাৎ মনে হয়--
বিরানব্বইয়ের সাপ শীতঘুমে আচ্ছন্ন,টের পায়নি-
তিন পা এগোতেই তক্ষক, তক্ষক জানে--
আমি পরীক্ষিত,
ছিয়ানব্বই থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে সাত-এ।
এভাবেই সারা জীবন উত্থান পতনের এই সাপলুডোয়
কিছুতেই একশ'র দরজা পেরিয়ে বুক ভরে
শ্বাস নিতে পারি না,পরম নিশ্চিন্তে......
বিষণ্ণ প্রেম
অর্পিতা ঘোষ
কুয়াশা ঘেরা গলিতে আজ সম্পর্ক গুলো ইতিহাস
রাস্তার বাঁকে আবেগী ভালোবাসা ফেলেছে দীর্ঘশ্বাস |
বিষন্নতার ধূসর মেঘ জমেছে জীবন সাগরের কিনারায়,
বেনামে রয়ে যাব প্রিয় তোমার স্মৃতির মলিন পাতায় |
বিলীন হওয়া পরিচিত সুরের থমকে যাওয়া নিঃশ্বাস,
তোমার মিথ্যে ভালোবাসার শ্বাসরোধে আমার জীবন্ত লাশ |
তোমার কবিতার অন্তমিলে নাই বা রইলাম আমি,
আমার মনবন্দরের আঙিনায় তুমি আজও ভীষণ দামি |
অসুখ রাতে অভিমানী বালিশ মাখে ক্লান্ত নোনাজল,
বালিঘর ভেঙে থেমে গেছে সৈকতের অশান্ত কোলাহল |
পরিযায়ী পাখিরা আবসন্ন ডানায় উড়ে গেছে বহুদূরে ,
শূন্য খাঁচা ধুঁকছে আজ অবহেলার বিষাদ জ্বরে |
পার্থ চক্রবর্তী
শুধু চিনে নাও পৃথিবী,
কে তোমার কাছাকাছি,
কি আর করবে ভেবে
মনের ভিতর গুমোট গুমরে
বোলতার গুনগুন আবার শুনবে
বেঁচে যদি আবার ফিরে এলে।
চাক ভাঙ্গা মধুর স্বাদ ফিরে আসবে
জিহ্বার জিহাদ আসবে দখলে
ততদিন শুধু গুছিয়ে তরী বাও
লোভ, হিংসা, দ্বেশ সাথে নিয়ে নাও
মানুষই নাকি গড়বে ইতিহাস
এসব এখন দুরাশার অবকাশ
ঈশ্বরও এতক্ষনে ফেলছে দীর্ঘশ্বাস
নতুন নিশ্বাসে বোধহয় পুরোবে আশ।
আমফান
কাবেরী তালুকদার
আসছে ছুটে আমফান
ঐ ভুমধ্য সাগর থেকে
করবে সব তছনছ শুধু ভুমি টুকু রেখে।
ঊড়বে বাড়ির টিনের চাল
গাছ পরবে ভেঙে
লাইট পোষ্ট ও পরতে পারে
ওটাতো একঠেঙে।
নারকেল গাছ নুইয়ে পরে ভুমির উপরে,কি যানি কোন মন্ত্রবলে
আবার দাড়ায় সোজা ,হয়ে।
আসছে ঝর সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টি
এতকাল তো এসব ছিলো না
এ কি অনা সৃষ্টি।
কালবোশেখি আর আসেনা
পথ ভুলেছে বুঝি
এখন ওসব ব ইয়ে লেখা
বড়দের মুখে শুনি।
এলো আমফান, দৌড়ো দৌড়ো
দৌড়ে যা ঘরে ঢুকে
থাকরে পরে পাখির ছানা
বাচলে পরে নিস তুই তুলে বুকে।
গাছেদের সব হাত পা ভাঙছে
মুন্ডু যাচ্ছে ঊড়ে
যাক যেতে দে ,তুই শুধু থাক
আমার বুকটি জুরে।।
হঠাৎ বৃষ্টি
ভাস্কর
হঠাৎ বৃষ্টি আসলে তোমার কথা মনে পড়ে প্রিয়তমা
তুমিও আমার জীবনে হঠাৎ আসা বৃষ্টি।।
বৃষ্টিরা মাটির সাথে একাত্ম হয়ে যায়
তুমিও চাইলে আমার সাথে একাত্ম হতে পারো।
বৃষ্টিরা রৌদ্রে পুড়ে উবে যায়
তুমিও চাইলে উবে যেতে পারো।
তুমি আমার স্ব-ইচ্ছায় বাধা বৃষ্টির জল
চাইলে বাঁধ ভেঙে তুমিও মুক্ত হতে পারো।।
Comments
Post a Comment