সম্পাদকীয় ২

"জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে " 

কবির দুটি পংক্তিকে স্মরণ করে বলা যায় জন্ম এবং মৃত্যু একে অপরের পরিপূরক।  জন্ম হলে মৃত্যু অনিবার্য।  প্রকৃতির সহজ নিয়মে মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু ইচ্ছামৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আত্মহত্যার পথ অবলম্বনের অন্যতম কারণ মানসিক অবসাদ, ব্যক্তিত্বের সমস্যা,মানসিক রোগ। অন্যান্য কারনের মধ্যে দেখা যায় বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি,দারিদ্র্যতা,পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল,মা বাবার 'পরে অভিমান,প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতারণার শিকার ইত্যাদি। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রেই কারণ থাকে অজানা।এই প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দাশের 'আটবছর আগের একদিন' কবিতার কয়েকটি পংক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে -
"অর্থ নয়, কীর্তি নয়,সচ্ছলতা নয়
  আরো - এক  বিপন্ন বিস্ময়
  আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে                              
                খেলা করে;
          আমাদের ক্লান্ত করে
            ক্লান্ত - ক্লান্ত করে।"
কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই আত্মহত্যার প্রবণতা বহুল লক্ষনীয় , অন্যান্য বয়সী মানুষের মধ্যেও কমবেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। আত্মহত্যার উপায় হিসেবে যেসব পন্থা মানুষ অবলম্বন করে থাকেন সেইসব পন্থার মধ্যে বহুল প্রচলিত বিষপান,ঘুমের ঔষধ,গলায় ফাঁস,নদীবক্ষে ঝাঁপ,বহুতল বাড়ির ওপর থেকে লাফ, রেললাইনে  ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বা শরীর ভাসিয়ে দেওয়া, বর্তমানে মেট্রো স্টেশনে আত্মহত্যা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
                 আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি-যখন কোনো মানুষ নিজ অন্তরে উপলব্ধি করে - এই পৃথিবী থেকে আমার পাওয়ার কিছু নেই এবং এই পৃথিবীকে আমার দেওয়ার কিছু নেই অর্থাৎ এই জগৎ সংসারে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। তখনই সেই মানুষটি জগৎ সংসারের মায়ামোহ কাটিয়ে পাড়ি দিতে চায় না-ফেরার দেশে আর মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
বর্তমান বিশ্ব কোভিড ১৯ আক্রান্ত। এই ভয়াবহ অতিমারীর হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য অধিকাংশ দেশই লকডাউনের ওপর ভরসা রেখেছেন।আর এই লকডাউনে প্রায় অধিকাংশ মানুষ গৃহবন্দি,একই সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পরেছেন অগণিত মানুষ। এছাড়াও দারিদ্র্যতা, ক্ষুধার সঙ্গে সংগ্রাম,বিভিন্ন লোন শোধ করতে হিমসিম খাওয়া,ব্যবসায় ক্ষতি, অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তা ইত্যাদি কারণে  মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে অবসাদ বা ডিপ্রেশন ।এই অবসাদের ফলেই লকডাউনে আত্মহত্যা বেড়েছে অধিকমাত্রায়।
আমরা প্রত্যেকেই অবগত আছি যে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সহজসাধ্য নয়। তবুও আমাদের উচিত যতটা সম্ভব অবসাদ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা। অবসাদ মুক্তির জন্য আমরা অনেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করি আবার অনেকেই পেরে উঠি না। অবসাদের হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করতে পারি যেমন মনোবিদের সাহায্য নিতে পারি এছাড়াও নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখা যেতে পারে,গান শোনা,বই পড়া,যে ব্যক্তি যে বিষয় পছন্দ করেন সেই বিষয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।
সর্বোপরি বন্ধু বান্ধব, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি। সর্বশেষ বলা যেতে পারে আত্মহত্যা  কোনো সমস্যার সমাধান নয়। অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমরা নতুনভাবে, নতুন করে জীবন শুরু করতে পারি।আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে আমাদের বসবাসযোগ্য পৃথিবী।

                         ভাস্কর চক্রবর্ত্তী

Comments

Popular posts from this blog

অপরাজিত -৯

অপরাজিত ১০

অপরাজিত ৮